বোমায় ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া শিশুর "আমি আল্লাহকে সব বলে দিব" কথাটি শুনে কি আমাদের অশ্রু ঝরেনি? তুর্কি সৈকতে আইমানের নিথর দেহ দেখে কি "মানুষের" হৃদয় কাঁদেনি? দেহ থেকে খসে পড়া আফগান শিশুর "আল্লাহ, আল্লাহ" অস্ফুট ধ্বনির অর্থহীন পতন কি আমাদের চোখ একটু হলেও ঝাপসা করেনি? বাবাহারা শিশু, শিশুহারা বাবা, মা-হারা মেয়ে, মেয়ে হারা মা'য়ের অশ্রুঢেউয়ে আফগান-সিরিয়া-ইরাক-ইয়েমেন-ফিলিস্তি-কাশ্মির আজ প্লাবিত।এ রক্তের নহর কাদের অঙ্গুলি ইশারায়?
সব হারাদের সব পথ যখন রুদ্ধ হয়ে যায় তখন তার সামনে পথ একটাই খোলা থাকে; তোমার পথও রুদ্ধ করে দেয়া, অন্তত কাটা বিছিয়ে দেয়া। দেশের পর দেশ, জাতীর পর জাতী যারা জ্বালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে, তাদের চিন্তা করা উচিত- কয়েকশ মানুষের আর্তনাদের ভার আমরা সইতে পারি না, ওরা কিভাবে সইবে সর্বহারাদের চিৎকার?
সাতজন ভাষা সৈনিকের রক্তের বদলা নিতে গিয়ে আমরা লক্ষলক্ষ প্রাণের আত্মাহুতি দিলাম, একটি নতুন পতাকা নিয়ে এলাম, দেশ স্বাধীন করলাম। আর, আজকের জঙ্গি নামে পরিচিত প্রতিশোধবাদীরা হারিয়েছে তাদের দেশ, ভাষা, কৃষ্টি, সর্বোপরি মা-বাবা-পুত্র-কন্যাদের। এ সর্বহারাদের রক্তের স্ফুলিঙ্গ আজ বোমার ভাষায় পরিবর্তিত হচ্ছে। ধর্মীয় নেতৃত্ব, বুদ্ধিবাদী সুশীল সমাজের "এসব জায়েজ নয়, এসব উচিত নয়" শ্রুতিবাক্য সর্বহারাদের ক্রোধের দেয়াল টপকাতে পারছে না- পারবে না। ভদ্রলোকের পোষাক পরে, মেদ-বুড়ী আর টাকার থলে বগলের নীচে রেখে, ঠোঁটে একচিলতে হাসি ধরে উপদেশ আউড়ানো যায়; মজলুমের আর্তনাদ কতো ভারি- তা বুঝা যায় না।
আমার সন্তানের প্রতি পাড়া-প্রতিবেশির ধমক আমি সইতে পারি না, মক্তবে হুজুরের শাসানো আমার মাথার খুলি গরম করে দেয়- চোখ লাল হয়ে ওঠে, আমার সন্তানের উপর একটি শক্ত কথায় প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমাদের রক্তে টগবগ স্ফুরণ হয়- তা আমরা টের পাই হামেশাই। কিন্তু, যারা তাদের সুন্দর জনপদ বিরান হতে দেখেছে, টুকরোটুকরো মাংসপিণ্ডের মতো সন্তানদের ঝাঁজরা হতে দেখেছে, তাদের অন্তর্জ্বালা আমরা পড়তে পারি না! আমাদের ঠোঁটে উঠে সুশীল থৈথৈ "এসব ভাল না!" আমি জঙ্গীদের যুদ্ধের সমর্থক নই, আমি তাদের আন্দোলনকে "জিহাদ" বলতে রাজি নই; কিন্তু সুস্পষ্টভাবে বলতে পারি, "তাদের সামনে আর কোন পথই যে খোলা নেই!"
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৭