somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম আলো ও আসিফ নজরুলের মিথ্যাচার ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কাগজের বাঁশেরকেল্লা প্রথম আলো গতকাল একটা লেখা ছাপিয়েছে সুশীল ও 'নদী আইন' বিশেষজ্ঞ আসিফ নজরুলের। শিরোনামঃ 'ব্যতিক্রমী সেক্টর কমান্ডার'। বিষয় মেজর জিয়া। মিথ্যা তথ্য বাজারে চালু করানোর একটা বহুলচর্চিত পন্থা হচ্ছে মিথ্যা তথ্যগুলোর সাথে অধিক সংখ্যক সত্য মিশিয়ে। এই লেখাটা সেরকম। মিথ্যাচারে বোঝাই হলেও ব্যতিক্রমী ভাবে বেশ কিছু সত্য মেশানো। কিছু উদাহরণ দেইঃ
১▐ চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র খালাসের সাথে মেজর জিয়া জড়িত ছিল, এটা স্বীকার করা হয়েছে। তবে তিনি যে বেশ কিছুদিন ধরেই সেই খালাসের সাথে জড়িত এবং খালাস প্রক্রিয়ার গতি ধীর করার কোনো চেষ্টাই করেন নি, সেটার উল্লেখ নেই বরং অর্ধসত্যটার উপস্থাপনা এমনভাবে করা হয়েছে যেন তিনি অস্ত্র খালাস কাজে যাওয়ার সময়ই বিদ্রোহ করেছেন এবং কখনই অস্ত্র খালাস করেন নি। মানে, গণহত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র দেশের মাটিতে আনার কাজের কোনো নৈতিক দায় যেন মেজর জিয়ার নেই।
২▐ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে উদ্দীপ্ত সৈনিক হিসেবেই মেজর জিয়া বিদ্রোহ করেছিলেন - এটা স্বীকার করা। কি তাজ্জব! #হেজাবি (হেফাজত+জামাত+বিএনপি) পন্থী সুশীলের মুখে একি শুনি! বঙ্গবন্ধুকে 'বঙ্গবন্ধু' হিসেবে উল্লেখ করা এবং তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণটিকে সৈনিকদের মূল প্রেরণা হিসেবে স্বীকার করা! এসবই আসিফ নজরুল করেছেন একটা উদ্দেশ্যে - স্বাধীনতা ঘোষণার পাঠককে স্বাধীনতার ঘোষক বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায়।
৩▐ মেজর জিয়াকে ১১ জন সেক্টর কমান্ডারের একজন হিসেবে উল্লেখ করা। অর্থাৎ হেজাবি সুশীলেরা প্রায়ই যে মেজর জিয়াকে মুখ্য সেক্টর কমান্ডার আর বাকিদের নিম্ন বর্গীয় সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দেখাতে চায়, সেটা থেকে আসিফ নজরুল একটু সরে এসেছেন। এই সরে আসাটা শুধু মেজর জিয়াকে ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়।
এখানেও আসিফ সাহেব আরেকটা মিথ্যাচার করেছেন। সেক্টর কমান্ডার ১১জন ছিলেন না। ছিলেন ১৫ জনের অধিক। কারণ, যুদ্ধ চলাকালীন কিছু পদে বদলী হয়েছিল। অন্য কেউ এই ভ্রান্তি করলে সেটাকে ভুল হিসেবে নিতাম। কিন্তু এটা তো স্বয়ং আসিফ নজরুল। মুক্তিযুদ্ধের স্বঘোষিত গবেষক আসিফ নজরুল। গণআদালতের দলিল সংকলক আসিফ নজরুল। উনার এই বেঠিক তথ্যটিকে তাই ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচার হিসেবেই নিতে হচ্ছে।
৪▐ তারিখের ব্যপারে আসিফ সাহেব কিঞ্চিত সত্য কথা লিখেছেন। ২৭শে মার্চে ঘোষণা পাঠের কথা বলেছেন। হেজাবিদের ২৬ তারিখ নিয়ে মিথ্যাচার থেকে এটা কিছুটা সরে আসা। 'কিছুটা' এই কারণে যে, উনি লেখার শুরুতে বলেছেন ২৫শে মার্চ রাতে বিদ্রোহ করার কয়েক ঘন্টা পরেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা শুরু করেন, মানে, ইঙ্গিতে বলে দেয়া ২৬শে মার্চের কথা। হয়তো হেজাবি কমান্ড থেকে পুরোপুরি ২৭ তারিখের ন্যারেটিভে সরে আসার অনুমতি মিলে নাই তাই।
যাই হোক মেজর জিয়ার নিজের ভিডিও ইন্টার্ভিউতে ২৭শে মার্চে কালুরঘাটে যাওয়ার কথা আছে।
লিঙ্ক ▒ Click This Link
হয়তো আসিফ সাহেব মেজর জিয়াকে বেগম জিয়া থেকে বেশী ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন, সেই হক আদায় করতে গিয়েই এই আজগুবি দাবীটার জন্য দুপয়সা ফু দিয়ে রাখলেন। ব্যতিক্রম বটে!
৫▐ মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে 'মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান' এর পক্ষে ঘোষণা পাঠ করেন - এই সত্যটা স্বীকার করেছেন আসিফ নজরুল। তবে এখানেও হেজাবি চুলকানি দিয়ে রেখেছেন, পাঠককে ঘোষক বলার চেষ্টা করেছেন।
৬▐ 'মেজর জিয়া অন্যান্য সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের, এম এ জলিল বা খালেদ মোশাররফের মতো সম্মুখযুদ্ধের অসীম সাহসী যোদ্ধা ছিলেন না' - এই কথা লিখেছেন আসিফ নজরুল। শুধু এই কথাটির জন্যই 'নদী আইন' বিশেষজ্ঞ আসিফ নজরুলকে এই লেখায় যথেষ্ট সম্মানের সাথে সম্বোধন করছি। তবে এই কথাটির জন্য হেজাবি চাকরিটা হারাতে পারেন তিনি। কেউ তাকে উদ্দেশ্য করে বলে ফেলতে পারে- 'চুপ বেয়াদ্দব, আসিফের নামই পাল্টে ওয়াসিফ করে দেব'।
যাই হোক, হেজাবি সুশীলের কাছ থেকে আসা এই স্বীকারোক্তি আসলেই একটি ব্যতিক্রম।
৭▐ আসিফ আরেকজায়গায় বলেছেন, 'শমসের মবিন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিনের ন্যায় তাঁর নিজস্ব কমান্ডের অফিসারদের মতো মেজর জিয়া যুদ্ধ করতে গিয়ে আহতও হন নি'। আউচ!!! জিয়া ভীতু? তাও আবার বয়ানে হেজাব অধ্যাপক! আসলেই ব্যতিক্রম।
তবে এই ব্যতিক্রমটাও আসলে মেজর জিয়াকে ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাতেই করেছেন আসিফ সাহেব। হয়তো বলেছেন, 'ম্যাডাম, কিছু জায়গায় ডিসকাউন্ট দেই, মূল কাজটা করিয়ে নিচ্ছি, আমি আসিফ কসম কেটে বলছি, স্যারকে ঘোষকের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেই ছাড়বো, এনশাল্লা'। আসিফ সাহেব ঘোষক প্রতিষ্ঠায় কিছু যুক্তি দিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে এই লেখার পরের দিকে বলবো, ধৈর্য রাখুন পাঠক।
৮▐ হেজাবি সেলিব্রেটি সুশীল আসিফ নজরুল এরপর বলেছেন '২৫শে মার্চ কাল রাতের পর জিয়ার আগেই চটগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম এ হান্নান বেতারে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন'। এই বাক্যটি পড়ে মনে হলো বলি - 'আমারে কেউ ধর' বা 'আমারে কেউ মাইরা লা'।
এ তো দেখছি পুরো ৫২ তাস বাজি রেখেছেন আসিফ নজরুল, এত এত ডিসকাউন্ট, শুধুমাত্র মেজর জিয়াকে ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়। আসিফ সাহেবের গলায় গোলাপী শিফনের দড়িভাগ্য আছে, থুক্কু, আসিফ সাহেবের কপালে খারাবী আছে। আসল কাজটা করতে না পারলে ম্যাডামের রোষানল থেকে আসিফ সাহেবকে কে বাঁচাবে?
খুব সম্ভবত এই প্রথম কোনো হেজাবি মুখপাত্র এম এ হান্নানের ঘোষণা পাঠের কথা স্বীকার করলেন। তবে এখানেও চুলকানি আছে কারণ এই তথ্যটা দেয়ার আগে উনি ভাসানীকে আরও অনেক আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার ক্রেডিট দেয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। সেই ভাসানী যিনি ৭০ সালের নির্বাচন ভন্ডুল করার চেষ্টা করেছিলেন। যেই নির্বাচনের ফলাফলই ছিল আমাদের স্বাধীনতার জন্য জনগণের দেয়া ম্যান্ডেট। আর, পুরো আইয়ুব আমলে ভাসানীর আপোষ আর পিছে ছুরি মারার কথাগুলো আর নাই বা বললাম।
৯▐ স্বাধীনতার ঘোষণার নবম পাঠক সম্পর্কে আসিফ নজরুল বলেছেন, 'জিয়ার ঘোষণাটির অতুলনীয় প্রভাব পড়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে এটি দেয়া হয়েছিল বলে'। হেজাবিদের বহুল অস্বীকৃত এই সত্যটি স্বীকার করতে গিয়ে আসিফ নজরল যথারীতি একটি ল্যাঞ্জা রেখেছেন, মাইদুল সাহেবের বইয়ের রেফারেন্সে - 'মেজর জিয়া তাঁর প্রথম বেতার বক্তৃতায় (২৭শে মার্চ সন্ধ্যা) নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করলেও পরদিন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শক্রমে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা প্রকাশ করেন'।
ঘোষককে একই সাথে রাষ্ট্রপ্রধানও বানানোর এই রেফারেন্স ব্যবহার করতে গিয়ে আসিফ সাহেব সময়ের তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। এই রেফারেন্স অনুসারে মেজর জিয়ার প্রথম বেতার সম্প্রচারটিই হয় ২৭শে মার্চ সন্ধ্যায়। মানে আসিফ সাহেব নিজেই নিজের এই লেখার অন্য জায়গায় ২৬শে মার্চ প্রত্যুষের বেতার বক্তৃতার দাবীকে বিরোধিতা করে ফেলেছেন।
.
♌ এত এত ব্যতিক্রমের ভিড়ে আসিফ সাহেব কয়েকটি ব্যতিক্রম উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন। যেমনঃ
১▐ মেজর জিয়াউর রহমানই একমাত্র সেক্টর কমান্ডার যিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী দ্বারা (বরখাস্তের আদেশটি বাতিল করে দেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ)। বরখাস্তের কারণ ছিল নিজের নামে ব্রিগেডের নাম রাখার অপরাধ। তাজউদ্দীন আহমেদ বিষয়টি মিটমাট করে জিয়াকে রক্ষা করার জন্য শফিউল্লাহ ও খালেদ মোশাররফের নামের ব্রিগেডের নাম রাখা নির্দেশ দেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তাজউদ্দীন সাহেবকে এর চার বছরের মাথায় প্রাণ দিতে হয় জিয়া গং এর হাতেই।
২▐ জিয়াকে ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আসিফ নজরুল যেই এ কে খোন্দকারের রেফারেন্স দিয়েছেন সেই এ কে খন্দকারই একমাত্র সেক্টর কমান্ডার যিনি সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না।
৩▐ জিয়াকে ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আসিফ নজরুল যেই এ কে খোন্দকারের রেফারেন্স দিয়েছেন সেই এ কে খন্দকারই একমাত্র সিনিয়র অফিসার যিনি বিমান বাহিনীর লোক হয়েও সেনাবাহিনীর পোস্টিং পেয়েছিলেন। সেনা প্রধান কর্নেল রব এর অধীনে উপ সেনাপ্রধান ছিলেন এ কে খোন্দকার।
৪▐ জিয়াকে ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আসিফ নজরুল যেই এ কে খোন্দকারের রেফারেন্স দিয়েছেন সেই এ কে খন্দকারই একমাত্র সিনিয়র অফিসার যিনি মার্চ মাসেও বিদ্রোহ করেন নি। এপ্রিলেও বিদ্রোহ করেন নি। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। সিনিয়র ও বিলম্বে আসা অফিসার হওয়ায় তাঁকে প্রবাসী সরকার উপসেনাপ্রধান নামের একটি গুরুত্বহীন পদে বসায়।
৫▐ গণহত্যার দুটি প্রধান লজিস্টিক্স হলো সৈন্য ও অস্ত্র।
সৈন্য এসেছিল ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে। সেই প্রজেক্টের ডিউটি এ কে খোন্দকার করেছেন মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
অস্ত্র এসেছিল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে। সেই প্রজেক্টের ডিউটি মেজর জিয়া করেছেন ২৫শে মার্চ বা মতান্তরে ২৬শে মার্চ পর্যন্ত।
এই জায়গায় জিয়া ও খোন্দকার উভয়েই ব্যতিক্রম বাকি সকল সিনিয়র অফিসারদের থেকে। আর আজ 'নদী আইন' বিশেষজ্ঞ আসিফ নজরুল জিয়ার জন্য সাক্ষী মানছেন খোন্দকারকে। এটা #পাপিচুস সিন্ড্রোম। যাদের জানা নেই তাদের জন্য উল্লেখ করছি, পাপিচুস = পারষ্পরিক পিঠ চুলকানো সমিতি।
৬▐ এই দেশে অনেক ধরণের সুশীল আছে। হেজাবি সুশীল আছে অনেকে। কিন্তু একটি জায়গায় স্বয়ং আসিফ নজরুল ব্যতিক্রম। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সকল হেজাবি সুশীলের চক্ষুশূল হয়ে উঠলেও, জাহানারা ইমামকে পুনরায় ক্যান্সার আক্রান্ত করার মাধ্যমে হত্যা করার অপকীর্তি আছে কেবল আসিফ নজরুলের দ্বারা।
লিঙ্কঃ ▒ Click This Link
এই ব্যতিক্রমটা অবশ্যই ব্যতিক্রম বিষয়ক লেখায় থাকা উচিৎ ছিল। লেখক না লিখে থাকলে পত্রিকার ক্রেডিট লাইনে লিখে দেয়া উচিৎ ছিল।
৭▐ যুদ্ধের ময়দানে নিজের লোগো ডিজাইন করে সেটা দিয়ে নিজের বাহিনীর লেটারহেড প্যাড তৈরি করে সাহেবী কায়দার কমান্ডার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তো বটেই, পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাসে আর আছে কিনা জানি না। এটাও একটা ব্যতিক্রম। অথচ এটার উল্লেখ নেই আসিফ নজরুলের লেখায়।
লিঙ্কঃ ▒ Click This Link
৮▐ আসিফ নজরুল আরও রেফারেন্স দিয়েছেন গোলাম মুরশিদের বইয়ের। বিতর্কিত সেই বইও প্রকাশ করেছে প্রথম আলোর প্রকাশনী যেই প্রথম আলো আসিফ নজরুলের এই নিবন্ধেরও প্রকাশক। আসিফ নজরুলের লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে ১৯৯১ বা ৯২ সালে প্রকাশিত উপন্যাস 'নিষিদ্ধ মিছিলে' পড়ে। তখন ওপেন সিক্রেট ছিল যে, উপন্যাসটির মূল চরিত্রটি আসলে ছিল তখনকার তুমুল কুখ্যাত ও আসিফ নজরুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোলাম ফারুক অভি। অভির কুখ্যাতির মূল কারণটি ড. মিলনের হত্যাকান্ড, ২৭শে নভেম্বর ১৯৯০। সেই অভির আপন বড় ভাই হচ্ছে গোলাম মুরশিদ।
ব্যাপারটা মাল্টি লেভেল পাপিচুস। ব্যতিক্রমী এই বিষয়টা এই প্রবন্ধের প্রাণশক্তি। সেটার কোনো ডিসক্লেইমার লেখাটিতে দেয়া নেই।
.
♌ ঘোষক জিয়ার জন্য আসিফ নজরুলের যুক্তি সমগ্র। আসিফ নজরুল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যেটা বলতে চেয়েছেন যে, আরও আটজন স্বাধীনতার ঘোষণা 'পাঠ' করলেও মেজর জিয়ার ঘোষণাটিই মূলত দেশবাসী ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের আশ্বস্ত করে যে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে, এবং এতে তাঁদের মনোবল দৃঢ় হয়, তাঁরা অনুপ্রাণিত হন ও উদ্দীপ্ত হন। এর কারণ হিসেবে দুটি যুক্তি দিয়েছেন। এই নয়জনের মধ্যে কেবল মেজর জিয়াই মিলিটারি অফিসার এবং এম এ হান্নানের বক্তৃতাটি যেহেতু শক্তিশালী ট্রান্সমিটারে প্রচারিত হয় নি।
এই যুক্তির গভীরতা প্রমাণে তিনি রেফারেন্স দিয়েছেন যেসব বই বা লেখার, সেগুলোর সবই প্রকাশিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পরে বা অনেক পরে। তিনি রেফারেন্স দেন নি ২৬শে মার্চের। যেদিন আমেরিকার কমপক্ষে দুই দুইটি টিভি নেটওয়ার্ক এর নিউজে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার ও মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল বাংলাদেশ সময় ২৭শে মার্চ ভোর চারটার দিকে। সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ আছে, টাইম স্ট্যাম্প সহ।
লিঙ্কঃ ১ ▒ সিবিএস নিউজ ২৬শে মার্চ Click This Link
২ ▒ এবিসি নিউজ ২৬শে মার্চ Click This Link
৩ ▒ এনবিসি নিউজ ২৯শে মার্চ Click This Link
উপরের তৃতীয় লিঙ্কটি ২৯শে মার্চের ফুটেজ। অর্থাৎ মেজর জিয়ার রেডিও বার্তার দুই দিন পরেও নিউজ ছিল শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণার। মেজর জিয়ার উদ্দীপনা আর অনুপ্রেরণা ফুটেজে খুঁজে পাওয়া যায় না।
ভোর চারটা মানে মেজর জিয়ার বেতার বক্তৃতার ১৪ ঘন্টা বা তারও আগে। নিক্সন-কিসিঞ্জারের আমেরিকা তখন ছিল সরাসরি শত্রুপক্ষ, পাকিস্তান মিলিটারিকে অস্ত্র, খাদ্য, ও অর্থ সাহায্য দেয়া মোড়ল। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার সংবাদ এসেছে, তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্বের অন্যান্য দেশের টিভি ও রেডিও বিশেষ করে শর্টওয়েভ রেডিওতেও এসেছিল।
সেই সময় প্রায় সকল গৃহস্থের বাসায় রুটিন করে শর্টওয়েভ ব্যান্ডে বিবিসি থেকে শুরু করে বিদেশী বিভিন্ন রেডিও স্টেশনের খবর শোনা প্রচলন ছিল। মেজর জিয়া বক্তৃতা করার অনেক ঘন্টা আগেই পৃথিবী জানে, গ্রামবাংলা জানে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা।
আমি মেজর জিয়াকে খাটো করার চেষ্টা করছি না। আগেও করিনি। আজও করছি না, ভবিষতেও করবো না। আমি লেখার সময় সুনির্দিষ্টভাবে মেজর জিয়া আর জেনারেল জিয়ার মধ্যে বিভাজন আনি। আমার যত সমালোচনা তা জেনারেল জিয়াকে নিয়ে, মেজর জিয়াকে নিয়ে না। কিন্তু মেজর জিয়াকে যখন হুদাই বাড়তি গ্লোরিফাই করার চেষ্টা করে বেগমের চামচারা তখন আলোচনা করতে হয়। আসলে মেজর জিয়াকে খাটো করে বেগমের চামচারাই। কি জানি, হয়তো বেগম ইচ্ছা করেই এই কাজটা করেন। অনেক রাগ তো উনার মেজর জিয়ার উপর।
আসিফ নজরুল স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে সত্যমিথ্যা মিশিয়ে এত কথা লিখলেন, ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর দেয়া 'স্বাধীনতার ডাক' এর কথা পর্যন্ত উল্লেখ করলেন, কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধুর ২৬শে মার্চের প্রথম ঘন্টায় দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণাটির কথা উল্লেখ করলেন না। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ হয় নি নিজেই রেডিও স্টেশনে গিয়ে ভাষণটি দেয়ার। বা আগে রেকর্ড করে রাখাটিও যথার্থ হতো না। তার মানে এই না যে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন নি।
পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীনত ঘোষণার যোক্তিক অবস্থানে এসে তারপর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ ও প্রচার করে তারপর মুক্তিযুদ্ধ করে তারপর সেই যুদ্ধে দখলদার মিলিটারিকে পরাজিত করে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্লাসিক পন্থায় রাষ্ট্রের যাত্রা শুরু করতে পেরেছে মাত্র দুটি দেশঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তথা যুদ্ধকালীন সংবিধান গ্রহণ ও প্রচার করা হয় ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল। এই ঘোষণাপত্রের উপর ভিত্তি করেই রচিত হয় মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধ। এই ঘোষণাপত্রে সুস্পষ্টভাবে ঢাকায় ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্বারা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কথা উল্লিখিত ছিল প্রথমেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক করার কুরুচি হয় নি কারো আর আজ এত বছর পর উদির ভাই আসিফ আর প্রথম বাঁশেরকেল্লার আলো সেই বিতর্ক করছে। মরি হায় হায় রে।
লিঙ্কঃ ১ ▒ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের টেক্সট : Click This Link
২ ▒ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার পর তাজউদ্দীন সাহেবের ভাষণ ঋণের টেক্সট : Click This Link
এবং ৩ ▒ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার কিছু ভিডিও ফুটেজ : Click This Link
.
♌ লেখার শেষে জেনারেল জিয়ার ইস্যুটাকে কিছুটা আলাদা করতে গিয়ে আসিফ নজরুল সাহেব লিখেছেন, 'স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে শুধু জিয়া নন, আরও অনেকের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা আলোচনা রয়েছে। কিন্তু সেটি তাঁদের একাত্তরের ভুমিকাকে ম্লান করতে পারে না।'
লিঙ্কঃ ▒ Click This Link
আলোচনা? উকিল আসিফ নজরুল একি বললেন, আলোচনা? বিতর্কও না! মানে, পক্ষ-বিপক্ষ আছে, কোন কিছুই নিষ্পন্ন না! কত বড় স্পর্ধা উকিল সাহেবের। উনি আইনের ছাত্র, আইনের শিক্ষক। নিশ্চয়ই উনি জানেন যে, দেশে সুপ্রিমকোর্টের রায় মানেই নিষ্পন্ন হওয়া বিষয়। জিয়াউর রহমান সম্পর্কে সুপ্রিমকোর্টের সুস্পষ্ট রায় আছে যে,
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক নন। জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা বেআইনি।
- জেনারেল জিয়াকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের খুনি বলা যাবে না। তিনি ছিলেন ষড়যন্ত্রকারী।
এগুলো নিষ্পন্ন বিষয়, জনাব আসিফ নজরুল।

♌ আইনের লোক হিসেবে আসিফ নজরুলের অন্তত আইনের বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিৎ ছিল। যাই হোক, আশা করি সুপ্রিমকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আসিফ নজরুলের এসব আইনবিরুদ্ধ ও আদালত অবমাননাকর বক্তব্যের ব্যাপারে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে আইন চাই।
.
♌ বাই দ্য ওয়ে, আসিফ নজরুল আরেকটা নতুন সর্বৈব মিথ্যা বাজারে এনেছেন, জিয়াই নাকি বিদ্রোহ করা প্রথম সিনিয়র অফিসার! আমি গবেষক নই, আমারই অন্তত দুজন সিনিয়র অফিসারের নাম মনে পড়ছে যারা জিয়ারও আগে বিদ্রোহ করেছিলেন, মেজর শফিউল্লাহ ও মেজর মাসুদ খান।



বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও লিখা - শামস রশিদ জয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫১
১৫টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×