শুরুটা করছি একটা ঘটনা দিয়ে......
কোথাও একটা ভিখারীর ছবি
দেখেছিলাম, সম্ভবত পশ্চিমা
কোন দেশের হবে। ছবির ক্যাপশন
ছিল খুবই আকর্ষনীয়!!!-"বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান
ভিক্ষুক"। ভিক্ষুকটি ভিক্ষার জন্য যে কৌশল বেছে
নিয়েছিল,এককথায় তা ছিল চমৎকার। সে মাটিতে
আলাদা আলাদা কাগজের ওপর
বিভিন্ন ধর্মের নাম লিখেছিল
এভাবে, Muslim, Christian, Pagan,
Buddhist, Agnostic, Atheist, Hindu
ইত্যাদি। এরপর প্রতিটি কাগজকে একটা করে পাত্রের সাথে সেঁটে দিয়েছিল।
অতঃপর নিজের হাতে একটা
কার্ডবোর্ড নিয়ে তাতে
লিখে রেখেছে-‘Which religion
cares the homeless most?’
এবার যে ই সেই পথ দিয়ে যায়,
লেখাটি পড়ে নিজের ধর্মকে
সবচেয়ে উদার প্রমাণ করতে নিজ
নিজ ধর্মের নাম লেখা পাত্রে
দান করে যায়। দারুণ কৌশল, তাই
না?
এটা দুনিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠিত সত্য কথার একটি,যে প্রতিটি
মানুষই নিজের ধর্মের ইমেজকে
উজ্জ্বল দেখতে চায়। একজন
হিন্দুকে হিন্দুধর্মের সমালোচনা
শোনালে সে ক্ষেপে উঠবে,সেটাই স্বাভাবিক।
অথচ সে কোনদিন হয়তো বেদ বা
গীতা হাতে নিয়েও দেখে নি।
ক্রিশ্চানদের নাকি বাইবেল
পড়া লাগে না, পাপ যত হোক
কেবল যিশুর নামে ক্ষমা চাইলেই
সব ধুয়ে মুছে পরিষ্কার,এক্কেবারে ধোয়া তুলসি পাতা। তবু তার
মতে খৃস্টধর্ম শ্রেষ্ঠ, এতে কোন ভুল
নেই, বাইবেলে কোন Contradiction
নেই, যিশুই সেরা, যিশুই সব
ইত্যাদি ইত্যাদি।
সমস্যাটা হল মুসলিমরাও যখন
নিজেদের ধর্মের ইমেজ রাখতে
একই পন্থা অবলম্বন করে। ‘নামাজ
পড়ি না তাতে কী, proud to be a
Muslim’ কথাগুলো নির্দেশ করে,
জাতি হিসেবে এরা একটি
ঘোরের মধ্যে আছে।
ক্রিশ্চানরা স্যালভেশানের দরুণ
বাই ডিফল্ট স্বর্গবাসের যে
নিশ্চয়তা বোধ করে, ইসলাম
সেটাকে স্বীকার করে না
বিধায়ই কেউ নিজেকে মুসলিম
দাবি করলেই সে মুসলিম হয়ে
যায় না, জান্নাত লাভ তো
অনেক দূরের ব্যাপার।
তবু নিজ ধর্মের ইমেজ নিয়ে
মুসলিমদের যেরকম তটস্থ থাকতে
দেখা যায়, অন্য ধর্মগুলোর
লোকেদের বেলায়ও অতটা
দেখা যায় না। অথচ আল্লাহ্
তায়ালা নিজে ঘোষণা
করেছেন মুসলিমরা শ্রেষ্ঠ জাতি
[সূরা আল ইমরানঃ ১১০], সেখানে মুসলিমরা কাদের কাছে নিজেদের ইমেজ রক্ষায় এত ব্যস্ত, চিন্তা করার মতই ব্যাপার।
২.
পশ্চিমারা আমাদের বোঝাতে
চায় ইসলাম এমনিতে খুব ভালো
একটা ধর্ম, কিন্তু মুসলিমদের
মাঝে কিছু Bad Guys আছে, যারা
ধর্মের নাম দিয়ে সন্ত্রাস করে
ইসলামের ইমেজ নষ্ট করে। অতএব
হে মুসলিম, অতিদ্রুত তাদের
বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা করে
নিজেদের ইমেজ রক্ষা কর।
তাই যখন নরওয়ের স্কুলে কেউ গুলি
চালিয়ে শতাধিক ছাত্রছাত্রী
মারে তখন পোপকে দেখা যায়
না ক্রিশ্চান ধর্মের ইমেজ নিয়ে
চিন্তিত হতে, কিন্তু পৃথিবীর
কোন এক জায়গায় দাঁড়িওয়ালা
কারো হাতে কেউ মরেছে-
সংবাদটা পেলেই, সত্য-মিথ্যা-
পূর্বাপর বিবেচনার আগেই কিছু কিছু মুসলিম
সেলিব্রিটি 'শাইখ'রা প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত হয়ে
পড়েন কত দ্রুত নিন্দা জ্ঞাপন করা
যায়।
শিবসেনা বা তামিল
টাইগারদের সন্ত্রাস নিয়ে
হিন্দু-বৌদ্ধরা চিন্তিত নয়, কিন্তু
ইসলামের নামে রাজনীতি করে
কত দল ইসলামের ইমেজ নষ্ট করছে,
সে নিয়ে চিন্তিত সে
ছেলেটিও, যাকে নামাজে
ডাকলে কাপড় অপরিষ্কার
থাকার দোহাই দিয়ে থাকে।
সাথে একটা বাধা বুলি-“ইসলাম
কি সন্ত্রাস সমর্থন করে?” অথচ
ব্যক্তিগত জীবনের আপনি-আমি
মিলেই ইসলাম, এটা যেন বোঝা
যায় না। আপনি সিগারেট খান,
তখন কেন প্রশ্ন আসে না-ইসলাম
কি সিগারেট খাওয়া সমর্থন
করে? আপনি যখন সুদী ব্যাংকে
চাকরি করেন-তখন কেন ইসলামের
সমর্থনের প্রশ্ন আসে না? আপনি
গণতান্ত্রিক দল সাপোর্ট করেন-
তখন কেন প্রশ্ন আসে না ইসলাম
কি গণতন্ত্র সমর্থন করে? ইসলামের
সমর্থনের ব্যাপারটা কি কেবল
এবং কেবলমাত্র জিহাদের
ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য?
বিষয়টা হল, কোন্ ব্যাপারে প্রশ্ন
করতে হবে, সেটাও আমরা
শিখছি কাফিরদের থেকে, সে
প্রশ্নের কী উত্তর দিতে হবে,
সেটাও শিখছি কাফিরদের
থেকেই। তারা নিজেদের ইমেজ
নিয়ে মোটেও চিন্তিত না,
তারা আপনার ইমেজ নিয়েও
চিন্তিত না, তারা কেবল
কন্ট্রোল করতে চায় আপনি কোন
কোন ব্যাপারে নিজের ইমেজ
নিয়ে চিন্তিত হবেন।
তাই আপনাকে কনডেম করতে হয়
যেটা ওরা করতে দেখতে চায়,
সেভাবে করতে হয় যেভাবে
ওরা করতে দেখতে চায়। কী
চমৎকার, তাই না?
মুসলমানের ইমেজ যায় নি যেদিন
স্পেন মুসলমানদের হাতছাড়া হল। ইমেজ নষ্ট হয়
নি যেদিন অভিশপ্ত জারজ ইহুদীরা মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলা,
"মসজিদুল আকসা" দখল করল। ইমেজ
যায় নি যখন সোমালিয়া,
মালিতে গণহত্যা হল। ইমেজ যায়
নি যখন মধ্য আফ্রিকায় মানুষ
পুড়িয়ে মাংস ছেড়া হল। ইমেজ
যায় নি যখন বসনিয়ায় মুসলিমদের
গলা কেটে রাস্তা ভেজানো
হল। যে পর্দানশীন বোনদের চুলটুকুও
গায়েরে মাহরামরা কোনদিন
দেখতে পায় না, তাদের ধরে
ধরে কুখ্যাত আবু গারিব কারাগারে যখন ধর্ষণ করা
হল, সেসময় মুসলমানের ইমেজ নষ্ট হয়
নি। আরাকানে যখন ভিক্ষুরা
মুসলিমের লাশের পাহাড়
বানালো, তখনও মুসলমানের
ইমেজে কোন দাগ পড়ে নি। নব্য
ফেরাউন বাশার যখন কেমিক্যাল
অস্ত্র দিয়ে একসাথে দুশো বাচ্চা মারল, তখনও ইমেজ নিয়ে
কারো টানাপোড়েন হয় নি।
মুসলমানের ইমেজ গেল যখন
তালেবানরা বৌদ্ধ মূর্তি
ভাঙ্গল সেই সময়। সে কী নিন্দের
ঝড়! সে কী Condemn! সে কী তীব্র
সমালোচনা-ধর্মের নামে মূর্তি
ভাঙ্গা! ছি ছি! ইসলামের
ইমেজকে মাটিতে ধ্বসিয়ে
দিল! আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন,
ফিতনা সৃষ্টি হত্যা অপেক্ষা
জঘন্যতর। [সূরা বাক্বারাঃ ২১৭]
_ এই ফিতনা হল শিরক, এই ফিতনা
হল কুফর। তাওহীদে
রুবুবিইয়্যাতকে পায়ের নিচে
দলিয়ে সংসদে বসে আইন তৈরি
করে সুদকে লাইসেন্স দেওয়ার
নাম শিরক, মদের বৈধতা দেওয়া,
পতিতালয়ের বৈধতা দেওয়ার
নাম শিরক। ধর্মনিরপেক্ষতা,
গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র- প্রত্যেকটি
শিরক আর কুফরে নিমজ্জিত। সংসদ
থেকে কুরআনকে ঝেটিয়ে
তাড়ানো হয়েছে, তাতে
মুসলমানের ইমেজ যায় নি। সুদের
সাথে জড়িয়ে আল্লাহ্র বিরুদ্ধে
যুদ্ধ ঘোষণা করে মুসলমানের
ইমেজ যায় না, সুদী ব্যাংকে
যারা JOB করে তারা সবাই তো
আর অমুসলিম ঘরের সন্তান না,
মুসলিম ঘরের সন্তানও আছে বৈকি!
রাস্তার মোড়ে মোড়ে মূর্তি
বানালে মুসলমানের ইমেজ যায়
না, কালচারের নামে
অগ্নিপূজায় মুসলমানের ইমেজ নষ্ট
না। প্রখ্যাত স্কলারদের আগমনে
নিষেধাজ্ঞা দিয়ে
পর্নস্টারদের আমন্ত্রণ জানানো
হলে মুসলমানের ইমেজ যায় না।
নাস্তিক-মুরতাদরা যখন আল্লাহ্র
রাসূলের বিরুদ্ধে অশ্লীল গদ্য
লেখে তখনও মুসলমানের ইমেজ নষ্ট
হয় না। কেবল কেউ যখন আল্লাহ্র
শত্রুদের জাহান্নামে পাঠায়
তখনই মুসলিমের ইমেজের ধুতিতে
টান পড়ে-ইসলামের নামে
ব্লগার হত্যা! সে তো ‘শহীদ’
থাবা বাবা!!
৩.
“ধর্মের নামে…” Phrase টা গত
কয়েকবছরে বেশ বাজার
পেয়েছে। নিন্দের জন্য ওর
চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র কমই আছে।
কেউ চুরি করেছে, এ বললে
লোকে খাবে না। শুধু বল ‘ধর্মের
নামে চুরি’- বাপরে বাপ!
মোটা-গুঁফোরা এবার নড়েচড়ে
বসবে। টকশোতে মাইক্রোফোন
ভিজে উঠবে অপরাধের
ফিরিস্তিতে; ধর্মের নামে
পাপ, এ যে পৃথিবী কাঁপিয়ে তুলল!
তেমনি ‘ধর্মের নামে মানুষ
হত্যা’- যেন ইহজগতের নিকৃষ্টতম
অপরাধ। তবে অধর্মের নামে,
গণতন্ত্রের নামে, সমাজতন্ত্রের
নামে, চেতনার নামে
মানুষহত্যা করলে ঠিক আছে।
কিছুদিন আগে বিহারীপল্লীতে
আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ
পোড়ানো হল, শাহবাগীরা
হৈহৈ করে উল্লাস করেছে,
বলেছে-‘একদম ঠিক আছে!
বিহারীদের আরো পোড়ানো
হোক, ওদের মেয়েদের রেপ করা
হোক!’ আরে, এ যে চেতনার
নামে মানুষ পোড়ানো, এখানে
সাত খুন নয় যেন, সাতশ খুনও মাফ। আঠাশ অক্টোবরের
লগি-বৈঠা নিয়ে মানুষ
পিটিয়ে মেরে নৃত্য করা ছিল
গণতন্ত্রের নামে খুন,
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে
লাশের স্তুপ হল গিয়ে
ধর্মনিরপেক্ষতার নামে খুন,
নদীতে লাশের ভেসে ওঠা হল
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের নামে খুন।
এগুলোকে বাঁকা চোখে দেখছ
কেন, এ যে মহা বিপ্লবী পবিত্র
খুনোখুনি। হাজার হোক, ধর্মের
নামে তো আর মারে নি!!
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ কর, ওরা
নাকি ধর্মের নামে সন্ত্রাস
করে। তা বেশ, এ যে অন্নপাপ।
একাত্তরের পর থেকে
তেতাল্লিশ বছরে প্রধান
রাজনৈতিক দলদুটোর ছাত্র
সংগঠনদ্বয় যে পরিমাণ হত্যা,
লুটপাট, টেন্ডারবাজি,
চাঁদাবাজি, ধর্ষণ করেছে
কোনো ইসলামী দল আরো দু'শ বছর চেষ্টা
করলেও তার কাছাকাছি
পৌছতে পারবে না, নিতান্ত
শাহবাগী অটিস্টিক ছাড়া এ
কথা সবাই বুঝবে। তবু কোনদিন
শাহবাগ থেকে দাবি উঠবে না
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ কর, ছাত্রদল
নিষিদ্ধ কর; দাবি উঠবে
ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ কর।যেন
দেশের সব অপকর্ম কোনো ইসলামি দল,হেফাজতিরাই করে
কি না। তারা পিলার ধরে
নাড়ালে বিল্ডিং ধ্বসে পড়ে,
পুলিশের মধ্যে মধ্যে জামাত
ঢুকে অপকর্ম করে। ছাত্রলীগের
মধ্যেও নাকি জামাত ঢুকে
খুনোখুনি করছে। অমন উচ্চ
প্রবেশ্যতার দলটির সদস্যরা মানুষ
না জ্বিন ধরে দেখতে ইচ্ছে
করে, সবখানে যে ওরা ঢুকে
পড়তে পারে!!
মুজাহিদিনরা ধর্মের নামে কত
লোক মেরেছে জানি না, তবে
ধর্মের নামে মানুষ হত্যার সবক
যিনি দিয়েছিলেন তাঁকে
আমরা শেষ নবী বলে মানি।
সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া
সাল্লাম। জিহাদ তো ধর্মের
নামে মানুষ হত্যাই। কথাটা কটু
লাগতে পারে, বাস্তবতা কিন্তু
এটাই। নাস্তিকেরাও এ কথাই
বলে, তবে তারা বোঝাতে যায়
ইসলাম এভাবে মানুষ খুনকে
বৈধতা দিয়েছে। আর আমরা বলি
জিহাদের উদ্দেশ্য আল্লাহ্র
জমিনে তাঁর দ্বীন কায়েম করা,
আর সেটা করতে গিয়ে
ইসলামের শত্রুদের নির্মূল করার
নামই ধর্মের নামে মানুষ হত্যা।
তা বলে কেউ মানুষ মেরে
ধর্মের নাম দিলেই তা বৈধ হয়ে
যায় না। জিহাদের ফিক্বহ আছে,
ফাতওয়া আছে, কোনটা কোন
অবস্থায় বৈধ আর কোনটা অবৈধ
তার সুস্পষ্টতা আছে। আইএসের
মতো গণহারে মুসলিমদের রক্ত
হালাল করাকেও ইসলাম সমর্থন
করে না। আমি কেবল এটুকু
বোঝাতে চাচ্ছি, ইসলামে যদি
মানুষ হত্যা কখনো বৈধতা পায়
সেটা ধর্মের স্বার্থেই হতে
হবে। দলের স্বার্থে, গণতন্ত্রের
নামে, শান্তির নামে মানুষ
হত্যার কোন বৈধতা এখানে
নেই।
তবু আমেরিকার মুহূর্মুহ ড্রোন
হামলায় বিধ্বস্ত জনপদ আর রক্তের
সাগর মুসলমানের ‘ইমেজ’ নষ্ট করে
না, কারণ ড্রোন আর বোমার
বারুদের গন্ধে গণতন্ত্র আর
মানবতা পাওয়া যায়। হাজার
হোক, ধর্মের নামে তো আর
ড্রোন ছাড়ে নি!
৪.
দুই রমাদান আগে যখন ইসরায়েলি
জায়োনিস্টগুলো ফিলিস্তিনে
হামলা করে গণহত্যার উৎসব করল
তখন বিশ্বজুড়ে একটা হৈচৈ
উঠেছিল। দুনিয়াদারির খবর
সম্পর্কে নিতান্ত উদাস
ছেলেটিও অন্তত হ্যাশট্যাগ
দিয়ে হলেও নিন্দা
জানিয়েছিল। তিন দশক ধরে
মুসলিম ভূমিগুলোতে চলে আসা
ম্যাসাকারকে ‘অভ্যন্তরীন খবর’
বলে চেপে আসা মিডিয়াগুলো
কেন হঠাৎ ইসরায়েলের হামলার
ব্যাপারটা এত ফলাও করে প্রচার
করল সেটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে
আমার যেটা মনে হয়েছিল তা এই
যে, হামাসের প্রতিরোধটা ঠিক
ইসলামের ব্যানারে ছিল না,
দেশের ব্যানারে ছিল। যুদ্ধটা
কালো পতাকার ছিল না,
তেরঙ্গা পতাকার ছিল;
জিহাদের নামটুকুও যদি
কোনভাবে আসত তবে
নিশ্চিতভাবেই, নিহত
ফিলিস্তিনের জঙ্গি বলে
প্রচার করা হত। গত ১৬ ডিসেম্বর
টিটিপির সাথে পাকিস্তান
আর্মির বন্ধুকযুদ্ধে ১৩৩ শিশু (যদিও
তাদের প্রায় কারো বয়সই
শিশুসুলভ না) নিহত হওয়ায় যারা
ইমেজ ধুয়ে পরিষ্কার করায়
লেগে গেছেন, তারা হয়তো
জানেন না এ ঘটনার কদিন আগে
আর কদিন পরের মধ্যে খোদ
পাকিস্তানেই ১৩৩ এর কয়েক গুণ
বেশি মানুষ মরেছে আর্মির
গুলিতে আর মার্কিন ড্রোনে।
সেগুলোর জন্য কেউ কনডেম
জানাবে না, হাজার হোক কেউ
ধর্মের নামে তো আর মারে নি।
জঙ্গি দমনের নামে লাল
মসজিদে হামলা চালিয়ে
আর্মি যখন শতাধিক মাদ্রাসা
শিক্ষার্থীকে মারল, তখন কারো
ইমেজ যায় নি, কেউ
হত্যাকারীদের ডেভিল,
লুন্যাটিক, ফ্যানাটিক বলে নি।
যাদের জ্ঞানের শুরু “নাইন-
ইলেভেনে জঙ্গি হামলা” আর
জ্ঞানের শেষ “টিটিপির
হামলায় শতাধিক শিশু নিহত”,
তারা কোনদিন জানবে না কত
রক্তের নদী পেরিয়ে এ দ্বীন
আমরা পেয়েছি, আরও কত রক্তের
সাগর পারি দিয়ে এ দ্বীন
এগিয়ে চলছে। তারা মনে করে
ইহুদীদের হামলা হল ‘রাজনৈতিক
বিষয়’, এটা ফিলিস্তিনের
স্বাধীনতা যুদ্ধ, এর সাথে ধর্মের
কোন সম্পর্ক নেই। অথচ ইহুদী
কুকুরগুলো একে ধর্মযুদ্ধ হিসেবেই
দেখে, তারা ‘Holy Land’ রক্ষার
নিমিত্ত হামলা করে,
জায়োনিজমের উৎপত্তিই তো
ধর্মের ভিত্তিতে। তবু কেউ
ইহুদিদের জিজ্ঞাসা করবে না
‘ধর্মের নামে ফিলিস্তিনি
মারা কি ঠিক?’, বরং
ফিলিস্তিনি শিশু ইহুদিদের
ট্যাঙ্কে ঢিল ছুড়লে অনেকের
ইমেজ নষ্ট হবে, ব্যস্ত হয়ে যাবেন
Condemn করতে।
পত্রিকায় দেখলাম লিখেছে
পাকিস্তানী সেনাদের
জঙ্গিবিরোধি অভিযানে ৬৭
জঙ্গি নিহত। সুবহানআল্লাহ্।
পাকিস্তানি আর্মি কী জিনিস
সেটা বাঙালি একাত্তরেই
বুঝেছিল, তখন তারা যাদের
মেরেছিল তাদের শহীদ
হিসেবে স্মরণ করা হয়, স্মৃতিসৌধ
বানিয়ে ফুল দেওয়া হয়। আর এই
আর্মি পাকিস্তানে প্রতিদিন
মানুষ মারছে, নিহতদের ‘শহীদ’
বলা তো অনেক দূরের কথা, মানুষ
হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া যায়
না। ‘জঙ্গি’ মরেছে, কত সুন্দর
ভাষা প্রথম আলোর। মুক্তিযুদ্ধের
লেখায় যে ত্রিশলক্ষ নিয়ে এত
গর্ব করেন, পারবেন সে
ত্রিশলক্ষকে জঙ্গি বলতে?
সাংবাদিক হতে হলে আজকাল
কত বড় জানোয়ার হতে হয় তাই
ভাবছি।
‘টিটিপি যা করেছে বেশ
করেছে’-আমি কোনকালেও
বলিনি। তাদের ঘটনায় মৌনতা
অবলম্বন করেছি, যেহেতু
অনেককিছু আমার কাছে স্পষ্ট নয়।
তবু অনেকে বলতে চায় আমি
নাকি টিটিপির ‘শিশুহত্যা’কে
বৈধতা দিতে চাচ্ছি। কারণ এই
যে, আমি তাদের মত টিটিপির
চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করি নি,
Condemn করিনি। যদি আপনাদের
এই অভিযোগ মেনেও নিই,
আপনারাও কি মানুষ হত্যাকে
বৈধতা দেন নি? আপনারা কি
প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে নিহত হতে
থাকা মুসলিমদের ব্যাপারে
বালিতে মাথা ঢুকিয়ে
উটপাখি সেজে থাকেন নি?
আপনারা কি জালিমদের
সংবাদ বিশ্বাস করে মজলুমদের
বিপক্ষে যান নি? ইসলামের
শত্রুদের দেওয়া বাইনোকুলার
দিয়ে দুনিয়া দেখার মানে যে
তাদের সবগুলো খুনকে বৈধতা
দেওয়া, জানেন সেটা? জেনে
থাকেন আর না ই থাকেন, এর
প্রত্যেকটির হিসাব কড়ায় গণ্ডায়
চুকাতে হবে, অবশ্যই হবে। আজ না
হোক, বিচারের মাঠে হবে,
হতেই হবে। কোন নিস্তার নেই।
আমি সাবধান করে দিচ্ছি।
বোন আফিয়া সিদ্দিকী যখন
কাফেরদের কারাগারে বীভৎস
নির্যাতনের শিকার হয়ে মুসলিম
যুবসম্প্রদায়কে ভাই বলে স্বীকার
করতে অস্বীকৃতি জানালেন,
সেদিন এই কাপুরুষ উম্মাহর ইমেজ
নষ্ট হয় নি। যখন সিরিয়ার
বাচ্চাটা আল্লাহ্র কাছে
অভিযোগের কথা বলে দুনিয়া
ছাড়ল, তখন হাসিমুখের প্রো'পিক
দেওয়া কোন Muslim Speaker কে
দেখিনি Oppressor দের বিরুদ্ধে
কিছু বলতে। তাঁরা আর তাঁদের
ভক্তকুল মুখিয়ে থাকেন
ইসলামপন্থীদের পান থেকে চুন
খসলে কীভাবে ঝড়ের বেগে
স্টেটাস দিয়ে ইমেজ রক্ষা
করতে হয়, ইংরেজির স্টকের
সবচেয়ে ধুর্ধর্ষ শব্দ ফুটিয়ে Condemn
করা যায়। এদের চকচকে ইমেজে
কোনভাবেই দাগ পড়তে দেওয়া
যায় না, মজলুমের পক্ষে বলে
পাছে আবার তাতে কালি
লাগে!
মজলুমদেরও দরকার নেই আপনাদের
মত কাপুরুষদের। তাদের জন্য
আল্লাহ্ই যথেষ্ট, আর জনাকয়েক
মায়ের দুধ খেয়ে বড় হওয়া পুরুষ,
যারা মাটি থেকে গুলি করে
বিমান নামাতে পারে, যারা
আবু গারাইবের দেয়াল ধ্বসিয়ে
দিতে পারে, যারা কোন
নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া করে
না।৫.
আমি এই লেখাটি লিখতে
বসেছি অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত
হৃদয়ে। দুঃখ এজন্য যে, আজ
বিশ্বজুড়ে দেড়শোকোটি
তেলাপোকার পাল মুসলিম
পরিচয়ে পরিচিত। এই
তেলাপোকারা নিজেদের
অস্তিত্ব নিয়ে গর্বিত-‘আমরা
তো টিকিয়া আছি অথচ
অতিকায় হস্তি লোপ পাইয়াছে’।
তারা নিজেদের দ্বীন শেখে
তাদের থেকে, যারা এই
দ্বীনকে প্রত্যাখ্যান করে।
তারা মাইকেল জ্যাকসন মুসলিম
হয়েছে শুনলে অতবড় মিউজিক
সেলিব্রিটি ‘মুসলিম’ ভেবে
গর্ববোধ করে। জিদানের মত বড়
ফুটবলার ‘মুসলিম’ শুনলে তাদের
ইমেজ চকচক করে। তারা আমাদের
ভাই-বোনদের কান্না শুনতে পায়
না, পঙ্গপালের মত ধেয়ে আসা
শত্রুবাহিনী দেখে নিশ্চিন্ত
থাকে, এরা তেলাপোকা
খাবে না, বলে-‘আমি তো আর
জঙ্গিবাদী নই।’
শেষ বিচারের দিন সব
মুনাফিকির হিসাব ঐ আল্লাহই চুকিয়ে দেবেন। নিশ্চিতভাবেই দিবেন,
অবধারিতভাবে দিবেন।
লেখাটি পূর্বে এখানে প্রকাশিত হয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৩