সাক্ষাৎকারটি দেখতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে
ডঃ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হবার পূর্ব থেকেই যিনি তার মেধা, বুদ্ধিবৃত্তিকতা, সাংগঠনিক দক্ষতা, এবং নেতৃত্বের গুণাবলীর মাধ্যমে এই ভূখণ্ডের উন্নয়নে রেখেছেন নানামুখী ভূমিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন, ছিলেন সরকারী চাকুরীজীবী, কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব হিসেবে, ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ৭ম গভর্নর, এবং দেশের উচ্চশিক্ষাখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যাল্য ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য। সম্প্রতি, ইউপিএল প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার সাম্প্রতিকতম বই – ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়’। সে সূত্রে আমি, বাংলা ট্রিবিউনের সাহিত্যপাতার তরফ থেকে তার মুখোমুখি হয়েছিলাম, যদিও আমার আগ্রহ ছিল স্যারের বর্ণাঢ্য জীবনের নানা বাঁকের ব্যাপারে, যেসব সিদ্ধান্ত ও ঘটনার যোগসূত্রে তিনি হয়ে উঠেছেন আজকের প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
আমি নিচের প্রশ্নগুলি তাকে করেছি। ১৭, ১৮, আর ২১ নং প্রশ্ন ছাড়া সবগুলি প্রশ্নের উত্তরই খুব বিস্তৃতভাবে তিনি দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি আজ সকালে প্রকাশিত।
১। আপনার জন্ম এবং বড় হওয়া ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার আসামের অন্তর্গত সিলেটে। সিলেটের মাটি – পানি – হাওয়া আপনার বৃদ্ধিতে, আপনার মানসগঠনে কি ভূমিকা রেখেছে?
২। সিলেট অঞ্চল থেকে বাংলাদেশের একাধিক অর্থমন্ত্রী, এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পেয়েছি আমরা। আপনি কি সচেতনভাবে এ নিয়ে চিন্তা করেছেন কখনো যে সিলেট অঞ্চল থেকে এতো এতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিবিদ উঠে আসার কি কারন?
৩। আপনার শৈশব ও কৈশোরের পাঠাভ্যেস সম্পর্কে জানতে চাই। কার লেখা, বা কি ধরনের বই আপনার অপেক্ষাকৃত সরল মন ও মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করেছিল?
৪। উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থনীতি বেছে নিলেন কেন? আমাদের তরুণ প্রজন্ম প্রায়ই উচ্চশিক্ষার বিষয় নির্ধারণে দ্বিধায় ভোগে। তাদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু পরামর্শ দিতেন, যে উচ্চশিক্ষার স্ট্রিম, বা বিষয় নির্ধারণে কি মাথায় রাখা উচিৎ।
৫। আপনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থার দিনগুলো সম্পর্কে জানতে চাই। তখনকার দিনে ক্যাম্পাসের পরিবেশ, ছাত্রদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিকতার চর্চা ইত্যাদি কেমন ছিল। আপনার শিক্ষকদের সম্পর্কে কিছু মূল্যায়ন বা স্মৃতিচারন যদি করতেন।
৬। ছাত্রজীবনে আপনি বামপন্থী রাজনীতিতে আগ্রহী ছিলেন, ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ীও হয়েছিলেন। আপনার ছাত্র রাজনীতির সময়কাল নিয়ে যদি কিছু বলতেন।
৭। সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আপনার জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে, বা আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটটা যদি বলতেন।
৮। বাম রাজনীতি, বা সমাজতন্ত্র কি বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় আর প্রাসঙ্গিক, নাকি এখন বাম রাজনীতির চর্চা মূলত – ‘হুইপিং দা ডেড হর্স’, অর্থাৎ মৃত ঘোড়াকে চাবুক মেরে চালানোর প্রচেষ্টা মাত্র?
৯ আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবস্থায় কার কার লেখা ভালো লাগতো, কার চিন্তা বা দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন?
১০। মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল নিয়ে আপনার স্মৃতিচারন করতেন যদি।
১১। স্বাধীন বাংলাদেশে আপনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজ করার সময়কালে তার সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত কোন স্মৃতি যদি আমাদের সাথে শেয়ার করতেন।
১২। আপনি আপনার দ্বিতীয় মাস্টার্স এবং পিএইচডি করতে গেলেন অ্যামেরিকার বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে, যা নর্থ অ্যামেরিকায় অবস্থিত। অ্যামেরিকার কিছুটা প্রগ্রেসিভ পার্ট হিসেবে নর্থ সাইডটাকেই ধরা হয়। সত্তরের দশক শেষদিকে, অ্যামেরিকায় তখনও কোল্ড ওয়ারের প্রেক্ষাপট, ভিয়েতনাম যুদ্ধ মাত্র শেষ হল, মারটিন লুথার কিং – এর কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে অহিংস আন্দোলন তার বয়স হয়তো একদশক হয়েছে, অ্যামেরিকার তরুণ প্রজন্ম তখন যুদ্ধ বিরোধী, তারা হিপি মুভমেন্ট চালু করেছে। সব মিলিয়ে এই যে একটা প্রেক্ষাপট – এই প্রেক্ষাপটে অ্যামেরিকার পরিবেশ আপনার মননে কি ভূমিকা রেখেছে।
১৩। আপনার পিএইচডি গবেষণার বিষয়বস্তু যদি সাধারন্যের বুঝবার মতো করে সংক্ষেপে আমাদের বলতেন।
১৪। ১৯৮৪ সালের গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ জারি হবার পেছনে আপনাকে একজন মূল চালিকাশক্তি হিসেবে আমরা জানি। গ্রামীণ ব্যাংকের আজ যে অবস্থা, এটাকে পথচ্যুতি বলি, বা অবনতিই বলি, সেটা আপনার মতে ঠিক কখন থেকে শুরু হল?
১৫। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নানামুখী সংস্কার আনায়নের জন্য আপনার প্রশংসা করা হয়। আপনার ঐ দায়িত্বকালের উল্লেখযোগ্য কোন স্মৃতি যদি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন।
১৬। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে পরিচিত হয়, এবং তারও স্বপ্নদ্রষ্টাদের একজন আপনি। ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন, এখনো দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে। শিক্ষা বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত নীতি বা আদর্শ যদি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতেন।
১৭। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বাস্তবতায় বসবাস করছি। এই যে প্রযুক্তির ব্যবহার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের রাজত্ব, ইন্টারনেটে পৃথিবী ছেয়ে যাওয়া – এই পুরো ব্যাপারটার সঙ্গে নিজেকে ধাতস্থ করে নিতে যতোটা আমাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে, ব্যাপারটাকে ক্রিটিক্যালি দেখতে ততোটা উৎসাহিত করা হচ্ছে না। অবশ্যই মানুষের ইতিহাস কখনো পেছনমুখী যায় না, সামনেই এগোয়, কিন্তু এই যে প্রযুক্তিতে আসক্ত মানুষের রুচি, আদর্শ, জীবনব্যবস্থা সবকিছুই এক অর্থে নিয়ন্ত্রন করছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মানুষ আর বই পড়ছে না, সিরিয়াস কোন আলোচনায় এঙ্গেইজ হবার মতো মানসিক ধৈর্য থাকছে না, দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে না – এই ব্যাপারটাকে আপনি কিভাবে দেখেন, আর এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনার পরামর্শ কি থাকবে?
১৮। পৃথিবী জুড়েই পেশীশক্তির রাজত্ব। অন্তত তিনটে মেজর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এখন যাচ্ছি (রাশিয়া ইউক্রেন, ইজরায়েল গাযা, এবং মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ)। পৃথিবীব্যাপি ডানপন্থী শক্তির উত্থান হচ্ছে। চীন – রাশিয়া – তুরস্কের মতো বড় বড় দেশের রাষ্ট্রনায়কদের ব্যাপ্তিকাল বিস্তারিত হচ্ছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে হিউম্যানেটিজ, বা মানবিক বিভাগের শিক্ষার, সুকুমার বৃত্তি, বুদ্ধিবৃত্তিকতার চর্চার ভবিষ্যৎ কি বলে আপনার মনে হয়?
১৯। এই পরিণত, প্রাজ্ঞতার পর্যায়ে এসে দেশে বা বিদেশে কার লেখাপত্র, কার চিন্তা বা দর্শন আপনাকে প্রভাবিত করে?
২০। আপনার নতুন বই ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়’ তে আপনি আমাদের যে পরামর্শগুলি দিয়েছেন, তা থেকে কিছু যদি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতেন।
২১। আপনার দীর্ঘ, সফল ও সুখি পারিবারিক জীবন নিয়ে যদি কিছু আলোকপাত করতেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৬