সে দিন হঠাৎ করে হেফাজতি ইসলামের মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী এবং শাহরিয়ার কবিরকে নিয়ে অনুষ্ঠিত টক শো দেখলাম ( ৬ ই এপ্রিল ২০১৩ ) । এই টক শো তে মাওলানা সাহেব যে সমস্ত জিনিস উত্থাপন করেছেন তাদের ১৩ দফার পক্ষে তার সব গুলো এখানে আলোচনা কোরব না তবে আশা রাখি ধারাবাহিক ভাবে একেক টা ইসুর উপর একেক দিন আলোচনা কোরবো ।
একজন দর্ষক কাম শ্রোতার প্রশ্নের জবাবে মাওলানা সাহেব বোললেন ভাষ্কর্যতে প্রাণীর অবয়ব থাকলে সেটা হারাম এবং কোন মুর্তি রাস্তার পাশে প্রদর্শন করা শেরেকির পর্যায় পরে তাই তাদের দাবি মতে সরকারকে সমস্ত ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলতে হবে ।
তারমানে তিনি বোলছেন আল্লাহ মুর্তিকে পুজা করতে নিষেধ করেছেন সে কারনে উমুক্ত স্থানে মুর্তি থাকলে তা শেরেকি হয়ে যাবে । মুর্তিকে পুজা না করলে সেটা কি কারনে শেরেকি হয়ে যায় তা নিয়ে আমার খটকা লাগলো । আমার মনে প্রশ্ন উদয় হোল ----- আল্লাহ কোন কিছু কেই পুজা করতে নিষেধ করেছেন , যদি সেই জিনিস গুলোকে পুজা না করা হয় তাহোলে সে জিনিস অবলোকন কোরলে কেন শেরেকি হবে । আমি নিজে কত মুর্তি দেখলাম ভাষ্কর্য দেখলাম রাস্তার পাশে কই কখোন তো ওগুলোকে পুজা বা ওরশিপ করিনি বা কোন শরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেই নি তাহোলে রাস্তার পাশে ভাস্কর্য থাকলে কেন শেরেকি করা হবে বা ঈমান যাবে ।
তারপর একটু গভিরে গিয়ে তো আমি থ !!! আল্লাহ শুধু মুর্তি না যে কোন জড় বা জীবন্ত বস্তুকে পুজা করতে নিষেধ করেছেন তাহোলে মাওলানা সাহেবের কথা অনুযায়ী প্রকাশ্য মুর্তি থাকার মত প্রকাশ্য ঐ সমস্ত পুজার আইডল জনসন্মুখে থাকলে শেরেকি করা হবে ঈমান চলে যাবে !!! দুনিয়াতে কিছু ধর্মের মানুষ সুর্যকে পুজা করে ( সুর্য দেবতা) , চাদকে পুজা করে ( চন্দ্র দেবী), গাছকে পুজা করে, বনকে পুজা করে, গরুকে পুজা করে , কুমারি কণ্যাকে পুজা করে এবং এই ভাবে অগ্নি উপাসকরা আগুনের পুজা করে ।
তাহোলে মুর্তিকে পুজা না করা হোলেও রাস্তার আশে পাশে মুর্তি থাকলে যদি শেরেকি করা হয় তাহোলে সুর্যকে পুজা না করা হোলেও সুর্যালোকে আসা টা শেরেকি হয়ে যাবে , চাদ দেখা বা চাদের আলোতে যাওয়া ও শেরেকি কারন কিছু ধর্মে চাদ সুর্যের পুজা হয়। কোন গাছ লাগানো যাবে না কারন কেউ কেউ গাছ ও বনের পুজা করে ( বনদেবী) । হিন্দুরা গরুর পুজা করে সুতরাং গরু পোষার তো প্রশ্ন আসে না কারন শেরেকি হয়ে যাবে । হিন্দুরা কুমারি কণ্যার পুজা করে সুতরাং তাদের কি হবে ??? অগ্নি উপাসকরা আগুনের পুজা করে তাহোলে আগুন দিয়ে রান্না করলে মোমবাতি বা কুপি বা হারিকেন জালালে শেরেকি হয়ে যাবে কারন অগ্নি উপাসক রা আগুনের পুজা করে ।
এবার দেখি এই খটকার সমাধান কি আছে কোরানে । হ্যা কোরেনে এর উত্তর আছে সুরা সাবার ১২ এবং ১৩ নং আয়াতে । সেখানে দেখতে পাবেন আল্লাহর নির্দেশে বাদশাহ সোলায়মান (রা) যিনি নবী ও ছিলেন তার ইচ্ছায় জীনরা নগর জুরে ভাস্কর্য ফোয়ারা ইত্যাদি নির্মান করেছিল । এখন বোলুন এই অপব্যাখা কারিদের কি শাস্তি হওয়া উচিত ??
সুরা সাবা আয়াত ১২ ( ৩৪-১২ ) আর আমি সোলায়মানের অধীন করেছিলাম বায়ুকে, যা সকালে এক মাসের পথ এবং বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আমি তার জন্যে গলিত তামার এক ঝরণা প্রবাহিত করেছিলাম। কতক জিন তার সামনে কাজ করত তার পালনকর্তার আদেশে। তাদের যে কেউ আমার আদেশ অমান্য করবে, আমি জ্বলন্ত অগ্নির-শাস্তি আস্বাদন করাব।
সুরা সাবা আয়াত ১৩ ( ৩৪-১৩) তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।
ভিডিও লিংক ----- VIDEO LINK --------
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:২০