somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এভাবে শেয়ার বাজার বাঁচবে না (২য় অংশ)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কালো টাকা, সাদা টাকা
সরকার শেয়ার বাজারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন। নতুন বিনিয়োগে এই সুযোগ দেবার আগে এরি মধ্যে যে বিনিয়োগ হয়ে আছে, সেটিকে সাদা করার সুযোগ দেয়া দরকার। মনে রাখতে হবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ কোন উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ নয়। আপনি যে কোম্পানীগুলির শেয়ার কিনেছেন সেগুলি যদি অনেক লাভ করে , তখন আপনি ডিভিডেন্ড পাবেন। সেকেন্ডারী মার্কেটে যারা শেয়ার কেনেন, তাদের বেলায় এই ডিভিডেন্ড অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুরুত্বহীণ হয়ে যায়। কারন ১০ টাকার শেয়ারের দাম যখন ৫০০ টাকা তখন শেয়ার প্রতি ১০০% লাভ দিলে আপনি পাবেন বছর শেষে ১০ টাকা। তার মানে ১০০ টাকায় পেলেন ২ টাকা। তাই তারা কেনা বেচা করেই লাভ করার চেষ্টা করেন। এই কেনাবেচায় কেবল টাকা হাতবদল হয়, কোন নতুন চাকুরী বা কোন নতুন সম্পদ উৎপাদিত হয় না। এই কেনা বেচা নির্ভর করে ক্রেতার স্পেকুলেশন এর উপর। ক্রেতা যদি মনে করেন একটি শেয়ার এর দাম আরো বাড়বে তিনি সেটি বেশী দামে কেনেন , আর বাড়বে না মনে করলে বিক্রি করে দেন। যেহেতু এই টাকা খাটিয়ে কোন উৎপাদন হচ্ছে না, কোন চাকুরীও সৃষ্টি হচ্ছে না, তাই সেকেন্ডারী বাজারে কেনাবেচার জন্য সকল ধরনের ঋণদান ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দেয়া উচিত। দেশে কর অবকাশ সুবিধা যেভাবে দেয়া হয়, সেভাবে শেয়ার বাজারে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া যেতে পারে, যেখানে কমপক্ষে তিন থেকে সর্বে্চা সাত বছর লাভের টাকার উপর নির্দিষ্ট হারে সরকারী বন্ডে বিনিয়োগ করলে সাতবছরের কর অবকাশ পাওয়া যাবে। এতে করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণগ্রহন কমবে এবং প্রতিবছরই কিছু টাকা অপ্রদর্শিত খাত থেকে প্রদর্শিত খাতে চলে আসবে। তাতে প্রতি বছরই করের পরিমানও বাড়বে।
অতিমূল্যায়িত শেয়ার
শেয়ার বাজারে প্রিমিয়াম দিয়ে শেয়ার কেনা বেচা একদম বন্ধ করে দিতে হবে। যেসব কোম্পানীর টাকা দরকার তারা নিজেরাই বাজারে আসবে। গ্রামীন ফোনের শেয়ারে ৬০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে ৬০০% অতিরিক্ত নিয়ে কোম্পানীটি বাজারে এসেছে। এই শেয়ারে দেয়া প্রিমিয়াম ফেরত আসতে ১০০% হারে ডিভিডেন্ড পেলেও ৬ বছর লাগবে। কোম্পানীটির গত বছর ই পি এস ছিল ৩ টাকা ৮১ পয়সা এবং এবছর ৫ টাকা ১ পয়সা। তার মানে ৭০ টাকায় আপনি ফেরত পেয়েছেন ২ বছরে ৮ টাকা ৮১ পয়সা। এটা গ্রস হিসাব। শতকরা হিসাবে ডিভিডেন্ড থেকে আয় মাত্র গড়ে ৬%. এই হারে লাভ কখনোই ভালো বিনিয়োগ না। এর চেয়ে আপনি ব্যাংকে টাকা রাখলে বেশী পেতেন। ফলে অধিকাংশ ক্রেতাই এই শেয়ারটি বেচে দিয়ে বের হয়ে যেতে চাইবেন। কারন এখন শেয়ারটির বাজার দর প্রায় ১৬০ টাকা যেটি গত একবছর আগে ২৯০ টাকা ছিল। তার মানে এই শেয়ারটি বেচে দেয়ার জন্য ভালো, ধরে রেখে ডিভিডেন্ড নেয়ার জন্য ভাল না। তাহলে মানুষ এটা শুধু বেচা কেনা করবে, এবং এটি ধরে রেখে লাভ নেবার চেষ্টা করবে না। কারন লাভের টাকা দিয়ে মূলধন ফেরত পেতে চাইলে এই শেয়ারটি হাতে নিয়ে বসে থাকতে হবে দশ বছর। আবার দেশে দুই ডিজিট এর মূল্যস্ফীতি হিসাবে নিলে , এই হিসাবটি দাড়াবে বার থেকে চৌদ্দ বছর। তাই যথেচ্ছ প্রিমিয়াম নেবার যে প্রবনতা এবং কোম্পানীকে বাজারে আসতে প্রলুব্ধ করার জন্য যে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নেবার কৌশল, এটিকে নীরিক্ষা করতে হবে। কোনভাবেই শতকরা ১০০% এর বেশী প্রিমিয়াম নিতে দেয়া যাবে না। বেশী টাকা দরকার হলে কোম্পানীগুলি বাজারে আসে। তাই বলে বাজার থেকে যথেচ্ছ টাকা সে নিতে পারে না। একটি শেয়ার বাজার থেকে বেশী টাকা তুলে নিলে অন্য শেয়ারগুলি কেনার জন্য মানুষের কাছে টাকা থাকে না। ফলে বাজার দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোম্পানীগুলি প্রিমিয়াম কম নিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেএবং ঋণ ও পূঁজিবাজারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। শেয়ার বাজারে এসে একদিকে যেমন কোম্পানীগুলি কম খরচে টাকা নিচ্ছে আবার কর সুবিধাও পাচ্ছে। ফলে রাষট্র বঞ্চিত হচ্ছে। তাই প্রিমিয়াম নিয়ে শেয়ার বেচলে তাকে কর সুবিধা দেয়া ঠিক না। বাজারে কোন একক কোম্পানীর শেয়ারের বিরাট প্রাধান্য থাকলে, বাজার তার উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। এখন গ্রামীণ ফোনের শেয়ারের পরিমান এত বেশী, যে এর দাম দশ টাকা কমলে বা বাড়লে বাজারের সূচক পরিবর্তিত হয়ে যায়। এটা ঠিক না। শেয়ার এর সংখ্যা ও মূল্য এমন অনুপাতে থাকতে হবে যাতে যে কোন একটি শেয়ারের দর, পুরো বাজারকে বিরাটভাবে প্রভাবিত না করে।
কাজীর গরু গোয়ালে থাকতে হবে
কথায় আছে, কাজীর গরু কেতাবে থাকে, গোয়ালে থাকে না। এই প্রবাদের মতোই সরকার আরেকটি অদ্ভুত কাজ করেছেন। তারা বাংলাদেশ ফান্ড নামেরএকটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেটি এখনো গঠন করতে পারেন নাই। সরকারের কথার উপরে মানুষের আস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য যে কোন প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন জরুরী। এখন শেয়ার বাজার নিয়ে সরকার কিছু বললে সেটি সবাই বিশ্বাস করছেন না। দরপতনের পরে যখন চারিদিকে হাহাকার শুরু হয়েছে তখন তাড়াহুড়া করে একটি তদন্ত কমিশন গঠিত হল, যার রিপোর্টটির ভিত্তিতে কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে আমরা দেখি না। বাজারে যাদের নামে নানা রকম গুজব আছে, তাদেরই কেউ কেউ ডি এস ই এর কর্মকর্তা নির্বাচিত হলেন। শুধু তাই নয়, রিপোর্টটি যেদিন পাওয়া গেল সেদিন অর্থমন্ত্রী বললেন, সেটি তারা দেখে সম্পাদনা করে প্রকাশ করবেন। এই বক্তব্যের কোন দরকার ছিল না। ফলে প্রথম দিনই মানুষ ভেবে নিল যে এই তদন্তের কোন ফলাফল হবে না।
চাই দীর্ঘমেয়াদী তহবিল ও স্বচ্ছতা
আমাদের শেয়ার বাজারে ঘোষিত ফান্ড ম্যানেজার নেই। ফান্ড ম্যানেজাররা মিউচুয়াল ফান্ড নামে একধরনের শেয়ার নিয়ে বাজারে থাকেন, যেখানে তারা বছর শেষে ডিভিডেন্ড ঘোষনা করেন। বাজারে দরপতন ঘটলে মিউচুয়াল ফান্ডেও দর পতন হতেই হবে, কারন এই ফান্ডগুলি মুলত টাকা নিয়ে বাজারে যেসব শেয়ার আছে সেগুলো কেনা বেচা করে। শেয়ার বাজারে দরপতন হলে বাজারে যে কোন উৎস থেকে আরো টাকা প্রবেশ করানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়, বরং এমন টাকা শেয়ার বাজারে নিয়ে আসা উচিত যে টাকা দীর্ঘ সময় আটকে থাকলে কোন সমস্যা নেই। প্রাইভেট ও সরকারী প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড জাতীয় টাকা দীর্ঘমেয়াদে বাজরে বিনিয়োগ করা যেতে পারে, কারন দেখা গেছে দশ বছর বা তার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদে আপনি যদি শেয়ার বাজারে টাকা রাখেন তবে ঐ একই সময়ে সরকারী বন্ড বা ব্যাংকে টাকা রাখার চাইতে অনেক বেশী লাভ হয়। এই ব্যাপারে জেরেমি জে সিগেল তার স্টকস ফর দ্যা লং রান বইতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমাদের দেশে বিনিয়োগকারীরা কোন গ্রীনফিল্ড কোম্পানীতে বিনিয়োগ করেন না। এটি করতে দেয়া হয় না, কারন এতে করে তাদের প্রতারিত হবার সম্ভাবনা থাকে। অথচ পৃথিবীর সকল বিরাট ধনী কোম্পানীগুলির যাত্রা শুরু হয় অল্প মূলধন নিয়ে এবং শেয়ার বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করে। দেশের অডিট ফার্মগুলির উপরে কারো আস্থা না থাকায়, আমাদের দেশে ছোট পূঁিজর মালিকেরা শেয়ার বাজার থেকে টাকা নিতে পারেন না। দেশের কোন ভাল পত্রিকা, লাভজনক টিভি চ্যানেল কিংবা পরিবহন খাতের কোন কোম্পানী শেয়ার বাজারে নেই। অথচ আমেরিকার শেয়ার বাজার শুরুই হয়েছিল রেলপথ কোম্পানী দিয়ে। গ্রামীন ফোন ছাড়া প্রযুক্তি খাতের কোম্পানী বলতে কিছু সফটওয়্যার ও কিছু অনলাইন সার্ভিস প্রোভাইডার। এরা সবাই সেবাপ্রদানকারী, উৎপাদক নয়। সরকারী মালিকানায় থাকা পাটকল, ঔষধ কোম্পানী, ইপিজেড, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বি আর টি সি, রেলওয়ে, বিমান, এসব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনকভাবে পরিচালনা করে, এদের শেয়ার বাজারে ছেড়ে দেয়া উচিত।
শাঁখের করাত
শাঁখের করাতের মতো শেয়ার বাজারে শেয়ার কেনা ও বেচা দুইদিকেই কমিশন দিতে হয়। এটিকে যেকোন একদিকে করে দেয়া উচিত। কেবল ক্রয় অথবা কেবল বিক্রয়ে কমিশন দিতে হবে। নির্দিষ্ট অংকের নিচে বিনিয়োগের জন্য এককালীন ফী নির্ধারন করা উচিত। যেমন আপনার পোর্টফোলিও যদি দশলাখ টাকার বেশী না হয়, তবে আপনি সারা বছরে দশহাজার টাকা দেবেন। শেয়ার মার্কেটে একেকটি ব্রোকারেজ হাউজের আকাশচুম্বী মূল্য হবার কারনে মূলধন তুলে নিতে ব্রোকাররা অতিরিক্ত লেন দেন করেন এবং প্রতিদিন কেনা বেচাকে উৎসাহিত করেন। প্রতিদিন কেনা বেচা একধরনের ফাটকা বাজারী। যে কোন শেয়ার প্রতিদিনই তার মূল্য বাড়বে এটা ভেবে যে কেনে, সে জুয়াড়ীর মানসিকতা নিয়েই বাজারে ঢুকেছে। তাকে এই জুয়া থেকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। ভুয়া ভোটার তালিকার মতো অনেক ভুয়া বিও অ্যাকাউন্ট আছে। বি ও গুলির মালিকদের মোবাইল ফোনের মতো রেজিসটার করিয়ে অথবা পূণঃনিরীক্ষা করে ভুয়া বিও গুলি বন্ধ করে দিতে হবে। যাতে করে যারা বাজার ম্যানিপুলেট করেন তারা ভুয়া বি ও রাখতে না পারেন।
অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন শেয়ার বাজারকে ডি মিউচুয়ালাইজ করবেন। সেটির কিছু হয়নি। দেশে দুটি শেয়ার বাজার আছে। চট্ট্রগাম ও ঢাকা। একই কোম্পানী দুই জায়গাতেই লিস্টেড। এই দুটি মার্কেটকে একজায়গায় এনে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ করে ফেলা উচিত। দুটি স্টক এক্স্রচেঞ্জের কোন দরকার নেই বরং এতে করে নানা রকম ব্যয় বাড়ে। এখন অনলাইনেই শেয়ার কেনা বেচা করা যায়, ফলে দুটি শেয়ার মার্কেট এর কোন ব্যবহারিক উপকার নেই। উল্টো দুটি মার্কেট এর সূচক দুরকম এবং এটা বিভ্রান্তি তৈরী করে। তাছাড়া সকল গণমাধ্যম ঢাকার বাজার নিয়েই ব্যস্ত থাকে। মানুষের চোখও ঢাকাতেই থাকে।
টাকা কোথায় গেল?
শেয়ার বাজারে মূলধন নাই। এর মানে তো এই নয় এই মূলধন দেশে থেকে বাইরে চলে গেছে। এটা অন্য কোথাও আছে। এটাকে ফেরত না এনে সরকারী তরল টাকা বাজারে ঢোকানোর কোন মানে নেই। শেয়ার বাজারের টাকাগুলো কোথায় গেল? এই টাকা কোথায় গেল বোঝার আগে বুঝতে হবে, টাকা আসলে কি? টাকা হল এমন একধরনের সম্পদ যেটাকে আমরা তরল অবস্থায় রাখতে পারি আবার সেটি দিয়ে কোন একটি সম্পদ কিনে সেটিকে কঠিন সম্পদে পরিনত করতে পারে। তরল টাকা কোথাও না কোথাও তরল অবস্থাতেই থাকে। আপনি টাকা দিয়ে সোনা কিনলে আপনার টাকা সোনা হল, যে আপনার কাছে সোনা বেচল তার সোনা , টাকা হয়ে গেল। তাই এই টাকা ট্রেস করা বা এই টাকার গতিবিধি নিরুপন করা দরকার ছিল। সেটি করার কোন চেষ্টা আমরা সরকারের তরফ থেকে দেখি নাই। ব্যাংকগুলো বলেছে তারা শেয়ার বাজার থেকে লাভ করেছে। এই লাভের পরিমান কত? ডিসেম্বর ২০১০ এর তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকগুলি ১২১৪১ কোটি টাকা শেয়ার বাজারে খাটিয়ে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা লাভ করে যার মধ্যে কেবল দুটি ব্যাংকই লাভ করেছে ৫০০ কোটি টাকা। এই টাকা ব্যাংকগুলির লাভ। ক্ষতি তাহলে কার? অবশ্যই সাধারন শেয়ার ক্রেতার। শেয়ার বাজার থেকে যদি কেউ টাকা বের করে নিয়ে না যান, তবে দাম বাড়–ক বা কমুক, মোট টাকার পরিমান সমান থাকে, । যিনি বেশী দামে বেচেন , তিনি লাভ করেন, যিনি বেশী দামে কিনে আর বেচতে পারেন না, তিনি লস করেন। ব্যাংক এর ১২০০ কোটি লাভ মানে, কারো না কারো ১২০০ কোটি লস। বাংলাদেশ ব্যাংক বহু আগেই এই টাকাকে লাভ হিসেবে না দেখাতে বলেছে ব্যাংকগুলিকে। কিন্তু এই টাকা আবার বিনিয়োগ করে কিন্তু শেয়ার বাজারের উন্নতি হবে, এমন কোন সম্ভাবনা নেই। কারন শেয়ার বাজার থেকে আবার ব্যাংকগুলিযখন টাকা ফেরত যখন নেবে তখন এই ১২০০ কোটির চেয়ে বেশী নেবে।
যেমন খুশী তেমন
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের উপরে কোন সিলিং নেই। যে কোন ব্যক্তি যে কোন পরিমান টাকা এই বাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। ফলে বড় পূজির মালিকেরা যদি বেশী সংখ্যায় বাজারে থাকেন তবে বাজার তাদের মর্জির উপরে নির্ভরশীল হয়ে যায়। যেমন ধরা যাক একজন বিনিয়োগকারী ৩০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেন। এবার তিনি মাত্র ৫% লাভে এই শেয়ার আবার বাজারে ছেড়ে দিলেন। তিনি বাজার থেকে তুলে নেবেন মাত্র ১৫০ কোটি টাকা। সেই ১৫০ কোটি টাকা হয়তো একলাখ টাকা নিয়ে বাজারে এসেছেন এমন কয়েক লক্ষ গ্রাহকের মূলধনের অংশ। অর্থাৎ তার মাত্র ৫% লাভের জন্য বিরাট সংখ্যক গ্রাহকের ক্ষতি হতে পারে। আবার তিনি যদি পুরো টাকাটা বাজার থেকে নিয়ে যান, তাহলে বাজার মূলধন কমবে ৩১৫০ কোটি টাকা। এরপর শেয়ারের দাম কমতে থাকলে, যাদের হাতে শেয়ার ছেড়ে তিনি বের হয়ে এলেন, তাদের মূলধনের অর্ধেকও শেষ হয়ে যেতে পারে, কারন সেই বড় শেয়ার ক্রেতা আর কেনা বেচা করছেন না ।
শেয়ার বাজারের বড় শক্তি হলো মানুষের মনে ভবিষ্যতে লাভের চিন্তা। মানুষ যদি মনে করে শেয়ারে বিনিয়োগ করলে লাভ হবে, সে শেয়ার কেনে এবং সহজে বেচে না। আবার যদি তার মনে হয়, শেয়ার এর দাম পড়ে যাবে, সে দ্রুত শেয়ার বিক্রি করে দেয়। সারা পৃথিবীতে স্বাভাবিক শেয়ার বাজারে যে টাকা আসে সেটি একজনের সঞ্চয় থেকে আসে, যেটি ফেলে রাখলে সে না খেয়ে থাকবে না। যখন বাজারে জুয়াড়ী ক্রেতা ঢুকে পড়ে যারা প্রতি সপ্তাহে একবার, দুবার বাজার থেকে লাভ তুলে নেয়, তখন সেই বাজার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।আমাদের বাজারের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল সর্বস্ব নিয়ে শেয়ার ক্রেতার বাজারে আসার প্রবণতা। এরকম হলে বাজারে সামান্য পতনেও অনেকের মূলধনের বিরাট অংশ চলে যায়। তাদের হাহাকারের কারনে যে প্যানিক হয়, তার কারনে সকলেই শেয়ার বেচতে থাকেন এবং দরের পতন হয়ে বাজার ভারসাম্য হারায়। প্রতিদিন যদি টেলিভিশনে মানুষের হাহাকার আর চিৎকার দেখানো হয়, তবে কখনোই নতুন টাকা নিয়ে কোন ক্রেতা এই বাজারে ঢুকবেন না। বাজার কোনদিন স্বাভাবিক হবে না।
বাজার সংস্কার করা দরকার
বাজারের জন্য বাংলাদেশ উপযোগী রেগুলেশন তৈরী করা জরুরী। মালয়েশিয়ার শেয়ার ক্রেতার মানসিকতা আর আমাদের মানসিকতা এক না। অতি দ্রুত শেয়ার বাজারে ক্রেতাদের ইনসাইট বা অনÍর্নিহিত মানসিকতা জানার জন্য একটি সার্ভে করা দরকার। এটা জানলে তার মনে আস্থা তৈরীর জন্য যে প্রচারণা, সেটি পরিকল্পনা করা সহজ হবে। শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের আগ্রহ ফেরাতে কেবল লাভ হচ্ছে , কিংবা বাজার বাড়বে, এমন কথা না বলে , বাজারে স্থিতিশীলতা আনা বেশী জরুরী। যে বাজার আজ ৫০০ পয়েন্ট বাড়ে, আবার কাল ৫০০ পয়েন্ট কমে, সেখানে কোন সুস্থ বিনিয়োগকারী নতুন টাকা দেবেন না। সমুদ্রে সবসময় ঢেউ থাকে। সেই ঢেউয়ে আমরা জাহাজ চালাই। কিন্ত যদি হঠাং ৫০০ ফিট ঢেউ আসে আবার ৫০০ ফিট নেমে যায় পানি, তাহলে সে পানিতে কি কেউ জাহাজ ভাসায়? শেয়ার বাজারে উত্থান পতন থাকবেই। সেটি দুদিনে ৫০০ পয়েন্ট হলে, তাকে আমরা স্বাভাবিক বলতে পারি না। বাজারে সূচক বেড়েছে বা কমেছে, এই খবর দিতে ব্যস্ত থাকে সকল সংবাদ পত্র। অথচ বেশী জরুরী হল কয়েক মাস বাজারকে যে সূচকে আছে, সেখানেই স্থিতিশীল রাখা। পাগলা ঢেউ কমেছে দেখলেই আবার টাকার জাহাজ ভাসবে।
মার্কেট নিয়ে যারা টেলিভিশনে কথা বলেন, তারা একই কথা বলেন। টেলিভিশন গুলির কোন ভাল অর্থনীতি বিষয়ক অনুষ্ঠান নেই। এগুলো যারা উপস্থাপনা করেন তারা বাজার সম্পর্কে খুব কম বোঝেন। শেয়ার বাজার নিয়ে প্রাথমিক জ্ঞান দেবার ব্যবস্থা করা উচিত সকল শেয়ার ক্রেতাকে। শেয়ার কিনলে যে লস হতে পারে এ ব্যাপারে তাদের ভালোভাবে সতর্ক করা উচিত। শেয়ার যে কোন বন্ড বা সঞ্চয়পত্র নয়, সেটি ভালো করে তাদের কানে প্রবেশ করানো দরকার।

যখন যেমন তখন তেমন
সকল শেয়ারের দাম দশটাকা করতে হবে। এটার মধ্য দিয়ে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কিছু লোক। বুকবিল্ডিং পদ্ধতির মধ্য দিয়েও কিছু শেয়ারকে বাজারে আসার আগেই অতিমূল্যায়িত করা হয়েছে। মোবিল যমুনা কিংবা এম আই সিমেন্ট নিয়ে প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ হয়েছে যে এই শেয়ার গুলো বাজারে আসার আগেই এগুলো নিয়ে জুয়া হয়েছে। কিছু কোম্পানী প্লেসমেন্ট শেয়ার দিচ্ছে, এমন কথা বলে ব্রোকারদের মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা নিয়েছে, যা সম্পুর্ন বেআইনী। এস ই সি ও ডি এস ই এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করেে রেখেছে। যারা এটি করেছেন, তারা কেউ কেউ প্লেসমেন্ট শেয়ারে প্রিমিয়াম নিয়েছেন। এমন কিছু শেয়ার এখনো বাজারে আসে নাই। যারা এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন তাদের টাকা আটকে যাওয়ায় ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, অন্যদিকে বিশাল অংকের টাকা নিয়ে কোন রকম সূদ বা ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না এই সব কোম্পানী। এটাও একটি আর্থিক দূর্নীতি বা অব্যবস্থাপনা। যখন তখন, যেমন খুশী আইন বানিয়ে আস্থাহীনতা তৈরী করার জন্য অবশ্যই এস ই সিকে জবাব দিতে হবে। আমাদের এস ই সি, প্রো অ্যাকটিভ নয় বরং রিঅ্যাকটিভ। তারা স্বতপ্রণোদিত কোন কাজ করে না, চোর পালালে তখন আইন বানায়।
শেয়ার বাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বৈঠক করতে হয়েছে। সেইসব বৈঠকের পর, বৈঠকের যেসব সিদ্ধান্ত আমরা দেখেছি, তার অধিকাংশই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। সবচাইতে বড় বিষয় হলো, একটি বাজারে এতবড় পতনের পর, বাজারের সংস্কার করা জরুরী হয়ে দাড়ায়। এখন আজ এক, কাল আরেক, এভাবে নানা রকম বিক্ষিপ্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হচ্ছে। যেমন ফোর্স সেল। যেমন মার্জিন লোন। এগুলো নিয়ে নানা রকম সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমে শেয়ার বাজারের লোকসানের ঝুঁকির সাথে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। ব্যাংকগুলি তাদের বিনিয়োগের ঝুঁকি যতটা পারে সেটি কম করতে চাইবে, এবং সেটাই ভালো ব্যাংকিং। ফোর্স সেল ও মার্জিন লোন নিয়ে নানা রকম বিনিয়োগবান্ধব নিয়ম এর নামে যা করা হচ্ছে তাতে ঋণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ব্যাংকগুলি এই খাতে ঋণ কমিয়ে দেবে। ফলে শেয়ার বাজারের উপর এইসব সিদ্ধান্ত কোন ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনতে উৎসাহিত করার কোন প্রয়োজন নাই। যিনি ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছেন, তিনি যখন লাভ করেন, তখন কি সেই লাভের বেশী অংশ ব্যাংককে ফেরত দেন? অথচ ব্যাংক কিন্তুতটাকে সাধারন আমানতকারীর টাকা দিয়েছে। এখন তিনি ফোর্স সেল এর নিয়ম এড়িয়ে বসে থাকবেন। সূদ আরো বাড়তে থাকবে। বাজার সেই শেয়ারের দাম না বাড়লে, এই ক্রেতা শেয়ার বেচবেন না। ফলে ব্যাংকগুলির টাকা আটকে যাবে। টাকা আটকে গেলে ব্যাংকগুলি অন্যজনকে টাকা ঋণ দিতে পারবে না। আবার যে ক্রেতা নিজের অর্থে শেয়ার কিনেছেন তিনি বাধ্য হয়ে শেয়ার বেচবেন। আর ফোর্স সেল বন্ধ করে দিলে, ধারের টাকায় শেয়ার কেনা লোকজন শেয়ার না বেচে সুসময়ের অপেক্ষা করবেন। এটা বাজারকে আরো বেশী ঋণনির্ভর করে ফেলবে। ব্যাংক এর ঋণ শেয়ারের মতো ফাটকাবাজারীতে নয়, বরং উৎপাদনশীল খাতে না নিতে পারলে কর্ম সংস্থান তৈরী হবে না। অর্থনীতি আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।
বাজার ম্যানিপুলেটর কারা?
সারা পৃথিবীতে যেখানেই শেয়ারবাজারে এভাবে দরপতন হয়েছে, দেখা গেছে এর পেছনে কিছ’ মানুষ জড়িত থাকে। তাদের অনিয়ন্ত্রিত আচরন, আইনকে নিজের মতো করে ব্যবহার করা, নানা রকম গোপন ম্যানিপুলেশন এর কারনে শেয়ার বাজারে মানুষ টাকা হারায়। এদের খুঁজে বের করে তাদের শাস্তি দেয় সেসব দেশের রেগুলেটরী কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে ১৯৯৬-১৯৯৭ এর দরপতন এর পরে কারো কোন শাস্তি হয়নি। ২০১০-১১ দরপতনের পর এমন কোন কিছু হবার সম্ভাবনা এখনো দেখেনি বিনিয়োগকারীরা। যে বাসে পকেটমার আছে, সেই বাসে কি আপনি সহজে চড়বেন? চড়লেও, পকেটে হাত দিয়ে বসে থাকবেন, টাকা বের করবেন না। যারা বাজার নষ্ট করেন, তারা বাজারে আছেন, এমনটি জানলে বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেন না, অথবা বিনিয়োগ নিয়ে অতিমাত্রায় ভীত হয়ে যান। খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্তে যাদের নাম ছিল, তারা সবাই বহাল তবিয়তে আছেন। বরং ইব্রাহিম খালেদের নামে নানা রকম অপপ্রচার চালিয়ে তাকে কোনঠাসা করে ফেলেছিল এই কোটারীস্বার্থের সহযোগী কিছু গণমাধ্যম। তারাও বহাল তবিয়তেই আছে। চোরএর শাস্তি না দিলে গৃহস্থ কি আর বাড়ীতে টাকা রাখে? শেয়ার বাজারেও তাই সাধারন মানুষ আর ঢুকবে না, যদি অবিলম্বে শেয়ার বাজারের বড় ধরনের দৃশ্যমান সংস্কার করা না হয়। যদি বার্নি ম্যাডফের শাস্তি হয়, তবে আমাদের দেশের ম্যাডফরা কেউ ধরা পড়ে না কেন?

চলবে
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×