somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এভাবে শেয়ার বাজার বাঁচবে না (১ম অংশ)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরুর কথা
শেয়ার বাজার নিয়ে সরকারী নানা রকম পদক্ষেপ এর ভবিষ্যত কি? এই প্রশ্নের কোন সরাসরি জবাব কেউ দেন না। এমনকি সরকারও না। প্রথম প্রশ্ন শেয়ার বাজার কি কোন সরকারী বাজার? উত্তর সহজ। না, এটি সরকারী বাজার না। তাহলে এটির ভালো মন্দ নিয়ে সরকারের এত উদ্বেগ কেন? কারন এটিকে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে এবং বিভিন্ন সময় অর্থ মন্ত্রীর বক্তব্যের কারনে এর সাথে সরকারের ইমেজ জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। যারা শেয়ার বোঝেন না তাদের জন্য শুরুতে কিছু সাধারন জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা যাক। কারন আমাদের দেশে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন, কিন্ত এর সাধারন নিয়মাবলী সম্পর্কে তাদের ধারনা খুবই অস্পষ্ট। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড মূলত: একদল শেয়ার লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের একটি বেসরকারী বাজার, যারা বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার কেনা বেচা করেন এবং সেই কেনা বেচা থেকে কমিশন পান। প্রাথমিক শেয়ার বা আই পি ও যখন বাজারে আসে তখন কোম্পানীগুলি বাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করে। তারা সেই টাকা দিয়ে তাদের কোম্পানীর প্রসারন ঘটায় অথবা ব্যাংক এর ধার শোধ করে দেয়। ব্যাংক এর সূদ খুব বেশী থাকলে কোম্পানীগুলি ধার না নিয়ে শেয়ার বাজারে আসতে চায়। আবার ব্যাংক আমানতের উপর সূদ বাড়িয়ে দিলে মানুষ শেয়ার না কিনে ব্যাংক এ আমানত রাখতে চায়। বর্তমান সংকটে কিন্তু এমনটি হয়নি যে শেয়ারগুলি তাদের প্রাথমিক মূল্যের নিচে নেমে গেছে। তবে ক্রমবর্দ্ধমান অতিকায় বুদ্বুদ, যেটি গত বছর তৈরী হয়েছিল, সেটি ফেটে যাওয়ায় বহু মানুষ তাদের মূলধন হারিয়েছেন। প্রশ্ন হলো এই মূলধন ক্ষয়ে সরকারের দায় কি?

সরকারের দায়?
সরকারের আসলে কোন দায় নেই। কারন আপনি যদি একটি ব্যবসা খোলেন সেটি ব্যর্থ হতেই পারে। যদি আপনার মুদির দোকানটি আপনি লস করে বিক্রি করে দেন, তাহলে যেমন সরকার দায়ী হতে পারে না, তেমনি আপনি টাকার বাজারে যে টাকা নিয়ে ব্যবসা করছিলেন সেটি যদি ক্ষতির স্বীকার হয়, তার জন্যও সরকার দায়ী হতে পারে না। তার মানে কি সরকারের কোন দায়ই নেই? সরকারের দায় যেখানে আছে, সেটি নিয়ে কথা হচ্ছে না। সরকারের কাজ শেয়ারের দাম বাড়ানো য়। সরকারের দায় হলো অর্থলগ্নির বাজারের নিয়ন্ত্রনকারী আইন ও কর্তৃপক্ষকে এমন যোগ্যতার সাথে পরিচালনা করা, যাতে সাধারন বিনিয়োগকারী কোন অসৎ ব্যক্তি বা দলের কারনে অকারনে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেই কাজটি সরকার করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই এখন সকল দায় এসে সরকারের ঘাড়ে চেপেছে। পৃথিবীর কোথাও এত ঘন ঘন শেয়ার বাজার সংক্রান্ত আইন কানুন বদলায় না। পৃথিবীর কোথাও এভাবে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংকে লাগামছাড়া বিনিয়োগ করতে দেয়া হয় না। পৃথিবীর কোথাও শেয়ার বাজার নিয়ে সরকার এত বেশী কথা বলে না। ২০১০ সালে এসইসি শেয়ার বাজার নিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক আইন নাড়াচাড়া করে। যেন তারা নিজেরা কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলেন।
অতি লোভে তাঁতী নষ্ট
কেন এত মানুষ হঠাৎ শেয়ারে বিনিয়োগ করতে শুরু করল? ২০০৬-২০০৭ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা, তারপর বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারনে দেশে শিল্প ও কল কারখানায় বিনিয়োগ কমে গিয়েছিল। পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় চাকুরী সৃষ্টি না করতে পারলে অর্থনীতিতে স্থবিরতা আসে। আমাদের দেশে জনসংখ্যার বিরাট অংশ কৃষিকাজ করার কারনে স্বনিয়োগকৃত বা সেল্ফ এমপ্লয়েড। তাই চাকুরীহীনতা আমরা অতটা বুঝতে পারি না। কিন্তু নগরাঞ্চলে শিক্ষিত শ্রেনীর বেকারত্ব বাড়ছে এবং আয়ের পরিমান কমছে। ফলে বহু মানুষ তাদের অলস টাকা নিয়ে শেয়ার বাজারে প্রবেশ করেছিলেন। ব্যাংকগুলিও তাদের কাছে থাকা উদ্বৃত্ত তারল্য নিয়ে শেয়ার বাজারে প্রবেশ করেছিল। এটুকু হলেও চলত। লাভের গুড়ের গন্ধ পেয়ে কিছু মানুষ ঋণ করে, জমি বেচে, যা টাকা আছে সব নিয়ে শেয়ার বাজারে প্রবেশ করেছিল, যেটি একদমই সঠিক প্রবণতা নয়। প্রায়ই বলা হয় শেয়ার বাজারে ৩৩ লক্ষ বিনিয়োগকারী আছে। সংখ্যাটি নিয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী দ্বিমত পোষন করে বলেছেন ১১ লক্ষ বি ও সচল আছে , বাকিরা স্থবির। সংখ্যাটি যাই হোক না কেন, এটা তো নিশ্চিত যে ৩৩ লক্ষ মানুষ এর কিছুটা হলেও উদ্বৃত্ত আয় বা সঞ্চয় আছে, যা শেয়ার বাজারের মতো একটি ঝৃঁকিপূর্ণ জায়গায় বিনিয়োগ হয়েছে। তাহলে দেশে ৩৩ লক্ষ লোক কেন আয় কর দিচ্ছে না। ধরে নিচ্ছি এর মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ হিসাব যৌথ। তাহলেও কিন্ত ২২ লক্ষ লোকের আয়কর দেবার কথা। সেটাও দেয়া হচ্ছে না কেন? তার মানে শেয়ার বাজারে যেসব হিসাব আছে তার মালিকেরা সকলে আয়কর দেন না। কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, বাজারে অপ্রদর্শিত কালো টাকা ছিল সবসময়ই এবং এখনো আছে। এই কালো টাকা নিয়ে কেউ কোন কথা বলে না। বরং প্রতিবার আরো কালো টাকা শেয়ারবাজারে নিতে চায়। এজন্য সরকারের কাছে সুবিধা চায়। বারবার সরকারকে চাপ দিয়ে তারা রাজী করায়।
বিক্ষোভ করে কি বাজার বাঁচে?
এবার রেডিও টিভিতে বিক্ষোভের ছবির দিকে তাকাই। কিছু মানুষ ব্যানার বানিয়েছেন, মিছিল করছেন, টায়ার পোড়াচ্ছেন, কোটি টাকা গেল গেল বলে মাথায় পানি ঢালছেন, কাউকে কাউকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে, এমন দৃশ্য দরপতন হলেই দেখানো হয়। যেদিন দর পড়বে, সেদিন কি এই বিনিয়োগকারীরা আগে থেকেই জানেন যে, দরপতন হবে? নইলে তারা ব্যানার বানিয়ে আনেন কোথা থেকে? পাঠকের কাছে আমার প্রশ্ন, পুরোনো টায়ার বেচা কেনা হয়। আপনি চাইলেও পথের পাশে সারা দেশের কোথাও মালিকানাবিহীন পুরোনো টায়ার পাবেন না। টায়ার নিজে নিজে গড়িয়ে মতিঝিল আসে না। তাহলে পোড়ানোর জন্য টায়ার নিয়েই কি এইসব বিনিয়োগকারী বাসা থেকে সকালে রওনা দেন? যাদের কোটি টাকা রসাতলে গেছে বলে আমরা হা হুতাশ করতে দেখি, তাদের কাছে কেউ কখনো প্রশ্ন করেছে এত কোটি টাকা তারা বাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন কেন? যার তিন চার কোটি টাকা শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য উদ্বৃত্ত আছে তারতো আরো অনেক সম্পদ থাকবার কথা। যার এত সম্পদ অর্জন করার অভিজ্ঞতা আছে , তার তো অসাবধানী বিনিয়োগ করার কথা না। তাহলে তারা কেন এত টাকা শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিলেন?
অল্প পূঁজির মালিককে লোভ দেখিয়ে বাজারে আনা যায়। এত কোটি টাকা যিনি কামিয়েছেন, তিনি তো টাকার ব্যবস্থাপনা কৌশল জানবার কথা। তিনি কেন লোভে পড়লেন? পৃথিবীর কোথাও জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় শেয়ার বাজারের উর্দ্ধগতির খবর ছাপা হয় না। মূল্য সংবেদনশীল বিজ্ঞাপন বা সংবাদ যখন তখন ছাপা হয় না। সাংবাদিকরা শেয়ার বাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে অহেতুক প্রশ্নও করেন না। যখন জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় সূচকের উর্দ্ধগতির খবর ছাপা হয়, তখন মানুষ লোভে পড়বেই। বাজার নিয়ে বিশ্লেষনমূলক কোন প্রতিবেদন বা বিনিয়োগকারীকে কোন পরামর্শ দিয়ে লেখার পরিমান থাকে খুবই কম, থাকে কেবল সূচকের বাড়ার সংবাদ এবং হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেনের খবর। সাধারন বিনিয়োগকারী তো লোভে পড়বেই।
গণমাধ্যম কি বাজারের উপকার করে?
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, অর্থমন্ত্রী একবার বলেছিলেন এই বাজার ভোলাটাইল কিন্তু এই বাজার ঝুঁকিপূর্ণ না। একজন শিশুও বোঝে, ভোলাটাইল যে কোন কিছুই ঝুঁকিপূর্ণ। তাহলে অর্থমন্ত্রী এ ধরনের স্ববিরোধী কথা বলার কারন কি ছিল? সেই অদ্ভুত কথা সকল টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছিল। অথচ সেটি নিয়ে কোন প্রতিবাদ বা সমালোচনা হয় নি। যখন বাজার বাড়ে তখন এধরনের কোন বিষয়কে নিয়ে সমালোচনামূলক খবর ছাপে না কোন পত্রিকা, এই ভয়ে, যে বাজার পড়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা যদি পত্রিকাকে দায়ী করে তবে পত্রিকার জনপ্রিয়তা কমে যাবে। আবার বাজার যখন পড়ে তখন পত্রিকাগুলি প্রতিদিন নেতিবাচক খবর ছাপতে থাকে। যেমন গত কোরবানীর ঈদের পর প্রথম যেদিন বাজার খুললো, সেদিন দেশের একটি জাতীয় দৈনিক সবগুলি খবর ছেপেছে নেতিবাচক ভাবে, এবং লিখেছে দরপতনের আশংকা ও উদ্বেগের মধ্যে আজ বাজার খুলছে। পত্রিকা কি করে জানে যে সেদিন দরপতন হবেই? যেখানে শেয়ারবাজার এর দর ওঠানামা বিনিয়োগকারীর আস্থার উপর নির্ভরশীল সেখানে সকালেই যদি তিনি দেখেন পত্রিকার এমন চরম উদ্বেগ, তাহলে তিনি কি সেদিন ক্রয় আদেশ দেবেন? ক্রয় আদেশ যদি বিক্রয় আদেশের চেয়ে কম হয়, তবে সাধারন নিয়মেই বলা যায় যে বাজারের গতি নিচের দিকে থাকবে। একবার আপনি লোভ দেখালেন, আবার আপনি এমন খবর ছাপলেন যে বাজার থেকে সবাই পালালো। দুটোর কোনটাই কি ঠিক? শেয়ার বাজার নিয়ে যারা রিপোর্ট লেখেন , তাদের কতজন এই বাজারটি বোঝেন? পত্রিকাগুলি কি তাদের কোন প্রশিক্ষন দেয়? স্বাস্থ্যপাতা, শেয়ার বাজার , প্রযুক্তির পাতা যারা চালান, তাদের কি এই সব বিষয়ে প্রকৃত প্রশিক্ষন বা অভিজ্ঞতা আছে?
বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে অভিযোগ কেন?
শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রন করে যে প্রতিষ্ঠান তার সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এর সাথে সম্পর্ক আছে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির। ব্যাংকগুলি যখন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করবে , তখন তাদের কিছু নিয়ম মানতে হয়। ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রেশিও বলে একটি বিষয় আছে যেখানে ব্যাংকগুলিকে নিরাপদ সীমার মধ্যে বিনিয়োগ করতে হয়। তাদেরকে নিরাপদ সীমায় আটকে রাখতে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সি আর আর বা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও নিয়ন্ত্রন করে। যদি সেটি ১০% হয়, তার মানে হলো ব্যাংকগুলিতে তাদের আমানতের শতকরা ১০% সবসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে গচ্ছিত রাখতে হবে। ব্যাংকগুলি যখন ঝুঁকিপূর্ণ খাতে যথেচ্ছ বিনিয়োগ করে, তখন সাধারন আমানতকারীর ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, বাজার ধ্বসে পড়লে ব্যাংকগুলির দেউলিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারন আমানতকারী ও ব্যাংকগুলিকে নিরাপদের রাখার চেষ্টা করবেই। ব্যাংক আমানতের টাকা মূলত ঋণ দিয়ে আয় করে। ঋণ দানকে নিরাপদ করতে তারা নিরাপত্তা জামানত বা মর্টগেজ রাখে। এটা তাদের ঋণকে নিরাপদ করে। শেয়ার বাজারে সরাসরি বিনিয়োগ এবং শেয়ার ক্রেতাকে মার্জিন ঋণ দিলে সেটির বিপরীতে কোন দৃশ্যমান সম্পদ জামানত হিসেবে থাকে না। এটি ব্যাংক ও আমানতকারীদের বিরাট ঝৃঁকিতে ফেলে দেয়। শেয়ার বাজারে যখন ব্যাংকগুলি অনিরাপদ মাত্রায় বিনিয়োগ করছিল তখন বাংলাদেশ ব্যাংক সি আর আর এর পরিমান বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নিরাপদ করার চেষ্টা করেছে। এটা বাজারে কোন সরাসরি হস্তক্ষেপ নয়। কারন ব্যাংকগুলি যেভাবে তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ নিয়ে শেয়ার বাজারে জুয়া খেলছিল, তাতে তাদের লাগাম টেনে ধরা জরুরী হয়ে গিয়েছিল। শেয়ারের দরপতনের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংককে জড়ানো তাই সঠিক হবে না। অথচ বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছেন। এই গভর্ণর সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিলে ব্যাংকগুলি লালবাতি জ্বালিয়ে বসে থাকতো বহু আগেই। তাকে বরং ধন্যবাদ দেয়া উচিত।
ব্যাংক শেয়ার বাজারে কি করে?
আরেকটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ব্যাংকগুলি সাধারনত লম্বা সময় ধরে বিরাট আকারের স্টক বা শেয়ার আটকে রাখে না। কারন তাদের বছর শেষে লাভ ক্ষতির হিসাব মেলাতে হয়। ফলে তারা জুন এবং ডিসেম্বরের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে লাভের টাকা ঘরে নিয়ে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। তারা এই শেয়ার সাধারন বিনিয়োগকারীর কাছেই ছেড়ে দেবে। তারা দর কমলে কিনবে, দর বাড়লে বেচবে। সরকার যে এখন জোর করে ব্যাংকগুলিকে শেয়ার কিনতে বলছেন, সেটিও কোন কাজের কথা নয়। ধরা যাক একটি ব্যাংকের কাছে ১০০ টাকা আছে। সেখান থেকে সে আমাকে ২০ টাকা দিল শেয়ার কিনতে এবং সে ৪০ টাকা দিয়ে নিজে শেয়ার কিনল। ৫০% দরপতন হলে সে তার ২০ টাকা এবং আমাকে দেয়া ১০ টাকা হারাবে। তার মানে ব্যাংক এর মূলধন কমে যাবে ৩০ টাকা। এটিকে ঠেকানোর জন্য ফোর্স সেল বলে একটি পদ্ধতি আছে যেখানে ঋণ এর টাকায় কেনা শেয়ার একটি নির্দিষ্ট দামে পতন ঘটলে আপনা থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। এই নিয়মটি দরপতনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, দর বাড়ার ক্ষেত্রে নয়। তাই দর বাড়লে বিক্রি করার অধিকার ক্রেতার হাতেই থাকে, নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কমে গেলে সেটি আর তার হাতে থাকে না। এটিও ব্যাংক এর পূঁজি বাঁচানোর একটি প্রক্রিয়া।
এবার মনে করেন, ব্যাংক ৪০ টাকার শেয়ার কিনল। আমি ২০ টাকার শেয়ার কিনলাম। এবার আমি আরো ২০ টাকার শেয়ার কিনতে চাই। ব্যাংক আমাকে ২০ টাকা ঋণ দিল। এবার আমি সেই ২০ টাকা দিয়ে ব্যাংক এর কেনা ৪০ টাকার শেয়ার থেকে ১০ টাকার শেয়ার ২০ টাকা দিয়ে কিনলাম। কারন দাম ১০০% বেড়েছে। তার মানে আমি ব্যাংককে ১০ টাকা লাভ দিলাম। ব্যাংক এর মূলধন বেড়ে ৫০ টাকা হল।এভাবে ব্যাংক তার সব শেয়ার ছেড়ে দিল। ব্যাংক তার তিনজন বিনিয়োগকারীকে এভাবে ৬০ টাকা ধার দিল এবং তার কেনা ৪০ টাকার শেয়ার ৮০ টাকায় তাদের কাছে বিক্রি করে দিল। ব্যাংক এর নিজের কাছে, বিনিয়োগকারীদের ধার দেয়া ৬০ টাকা এবং বিনিয়োগ কারীদের নিজের বিনিয়োগের ২০ টাকা চলে এল। অথচ তখনো বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের কাছে ৬০ টাকা দেনা। তার মানে ব্যাংক পেল ৮০ টাকা এবং আরো ৬০ টাকা ”আসল” সে ফেরত পাবে বিনিয়োগকারীদের কাছে। অর্থাৎ ব্যাংক এর মোট মূলধন বেড়ে হল ১৪০ টাকা। এবার দরপতন হতে শুরু করে যখনই শেয়ার এর দাম ৬০ টাকা এবং সূদ এর সমান হবে তখনই সেই শেয়ার বিক্রি হয়ে টাকা ব্যাংক এ চলে যাবে। তার মানে পুরো ক্ষতি বহন করবে সাধারন বিনিয়োগকারী। এখন যেভাবে জোর করে ব্যাংকগুলিকে শেয়ার কিনতে বলা হচ্ছে , সেটি কৃত্রিমভাবে শেয়ার এর দাম বাড়াবে এবং ব্যাংকগুলি এই শেয়ার আবার যখন বিক্রি করবে তখন বাজারে আবার দরপতন হবে। শুধু তাই নয়, দরপতনে ফোর্স সেল এর নিয়ম শিথিল করায়, ব্যাংকগুলির মূলধন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, তাই তারা একদিকে যত টাকার শেয়ার কিনবে, অন্যদিকে শেয়ারে তত টাকার ঋণ প্রদান কমিয়ে সেটিকে ব্যালান্স করার চেষ্টা করবে। ফলে বাজারে কিছুদিন পরে বাজারের তারল্য বাড়বে না বরং আবার ক্রেতাদের হাতে বেশী দামে শেয়ার গছিয়ে দিয়ে ব্যাংকগুলি বাজার থেকে বের হবার চেষ্টা করবে।
শুধু তাই নয়। আপনারি আমানত দিয়ে আপনার সাথে শেয়ার বাজারে ব্যবসা করছে ব্যাংকগুলি। তাই তারা আপনাকে আপনার টাকা ঋণ দিয়ে সূদ নিচ্ছে আবার আপনার কাছেই নিজের কেনা শেয়ার বেশী দামে গছিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসছে। এতে করে যে স্বার্থের দ্বন্দ বা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হচ্ছে সেটিকে রাশ টেনে ধরতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এবং রেগুলেটারী প্রতিষ্ঠানের অবশ্যই ভূমিকা থাকতে হবে। ফলে সাধারন ক্রেতার যেমন দরপতনে ফোর্স সেল থাকে, ব্যাংক এর জন্য দর উর্দ্ধগামী হলে ফোর্স সেল থাকা দরকার, যাতে ব্যাংকগুলি অতিরিক্ত লাভ করতে না পারে। শুধু তাই নয় একটি শেয়ার কিনলে যেমন তিন দিনের মধ্যে বেচা যায় না, তেমনি একটি শেয়ার বেচলে সেটি সাত দিনের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আর কিনতে পারবে না, এমন নিয়মও করা দরকার। তাহলে প্রতিদিন বাই সেল অর্ডার দিয়ে একই শেয়ারের দাম ইচ্ছামতো বাড়ানো কমানোর খেলায় বৃহৎ পূঁজি অংশ নিতে পারবে না। এতে করে স্বল্প পূঁজির মালিকদের হাতে বেশী দামে শেয়ার গছিয়ে বৃহৎ পূঁজির মালিকদের কেটে পড়ার সুযোগ কমবে। ব্যাংকগুলিও ইচ্ছামতো লাভ করতে পারবে না।

চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×