ছেলেটার বয়স কতো হবে...২৩ কি ২৪। নিজেকে গোছানোর খুব কঠিন সময় তখন। সেই সময়ে নিজেকে একটু একা লাগা, সবার মাঝে থেকেও নিঃসঙ্গতা বলতে যা বোঝায় হয়তো। অনুভূতিগুলো কেমন যেনো হাচরে পাচরে বেড়ায়। পাশে দেখতে মন চায় কাউকে। খুব ভরসা করার মতো কেউ একজন। নাহ অর্থনৈতিক ভরসা বা কোন পরামর্শ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ব্যাপারটা তেমন নয় হয়তো। যার কাছে গেলে একটু নিশ্চিন্তে দম নেয়া যাবে তেমন কেউ একজন...।
স্পর্শ সবসময়ই অন্তরকে ছুঁয়ে যায় যদি সেই স্পর্শে সত্যিকারের ভালোবাসা, মায়ার টান থাকে।
তেমনি এক স্পর্শের টান অনুভব করতো ছেলেটি।
মেয়েটি খুব রঙচঙে ছিলনা। আর দশটা মেয়ে থেকে বরং একটু সাদাসিধেই ছিল। কিন্তু কাছে টানার এক অদ্ভুত গুন যেনো সৃষ্টিকর্তা ওর মাঝে দিয়ে রেখেছিলেন। সেই টান উপেক্ষা করার শক্তি হারিয়েছিল ছেলেটি অবচেতনভাবেই। মেয়েটি একদিন ঠিকই ছেলেটির হাত ধরেছিল। আর কোন কারণে কি? নাহ ...সেই হাতের স্পর্শে মেয়েটি বুঝিয়েছিল...'আমি আছি আপনার সাথে।' হয়তো মুখে বলা হয়নি কখনো...কিন্তু অনেক ঝড়, ঝঞ্জা পার করেও দু'জনে অনেকগুলো বছর পর আবিষ্কার করে তারা বড় অদ্ভুতরকমের দূরত্ব রেখেই দু'জন দু'জনের খুব কাছের মানুষ হয়ে আছে।
কিছু সম্পর্ক আছে বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই কতো নিবিড়, কতো স্বচ্ছ, কতোটা বিশ্বস্ত সেই সম্পর্ক।
নিজের আবেগ লুকোতে ব্যস্ত সেই ছেলেটিকে নিয়েই এই গল্প। কোনদিন মেয়েটিকে মুখ ফুটে বলেনি 'ভালোবাসি'। কিন্তু পরিমাপ করলে হয়তো তাবৎ পৃথিবীর ভালোবাসা মলিন হয়ে যাবে সেই নীরব ভালোবাসার কাছে।
নীরবতাই কিছু ভালোবাসার সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্য বোঝার ক্ষমতা হয়তো সবার থাকেনা। কিন্তু এই রোবটিক ছেলেটির বুকের বাম অলিন্দে অথবা সাদাসিধে মেয়েটির হৃদয়ের কোণে যে ভালোবাসা তার প্রকাশ বড্ড বেশি রকমের অদ্ভুত। এই অদ্ভুতুরে মায়ায় ভরা ছেলেটি আর সাদাসিদে মন কেড়ে নেয়া মেয়েটির জন্যে...
এটি কোন প্রেম কাহিনি নয়, একটি অসমাপ্ত গল্প...জীবন থেকে নেয়া অসমাপ্ত একটি অধ্যায়। কারণ দুইভুবনে দুই বাসিন্দা গল্পের এই রোবটিক ছেলে যে কিনা ভেতরের রোমান্টিকতাকে কঠোরভাবে লুকিয়ে রাখতে সদা ব্যস্ত আর সাদাসিধে মেয়েটি যার ভেতরের রোমান্টিকতা ভয়ার্ত হরিণীর মতো পালিয়ে বেড়ায় । যেখানে জীবনটা দেখা না হওয়া সমান্তরালভাবে বয়ে চলা রেললাইনের মতো।
যেখানে দু'জনের কাছেই দু'জন 'নোবডি'। তাদের কখনো দেখা হয়েছিল, মুখোমুখি বসে কথা হয়েছিল। হয়েছিল আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দেয়া। কখনোবা শিল্পকলার মাঠে বসে গভীর আলোচনায় ডুবে যাওয়া।
ছেলেটিকে হারিয়েছিল মেয়েটি নাকি মেয়েটিই দুরে চলে গিয়েছিল...সেই হিসেব বড্ড গোলমেলে। কারণ ডিজিটাল ডিভাইসে 'গ্রিন সাইন' কখনো কখনো দুজনের অস্তিত্বই জানান দিয়ে যেতো। দু'জনেই অপেক্ষা করতো ওপাশ থেকে কেউ নড়েচড়ে উঠবে। কিছু বলবে।
দু'জনেই দু'জনের প্রোফাইল ঘুরে আসে নিয়মিত। ছেলেটিকি আর কাউকে? হলেইবা ! কিছু সম্পর্ক আছে ধরে রাখতে হয়না। সত্যিকারের ভালোবাসার কাছে এমনিতেই বাঁধা পড়ে থাকে। মেয়েটি তাই বিশ্বাস করতো। ছেলেটি নিজেকে যতই রোবটিক প্রমাণ করতে চাইতো , মুখে বলতো 'i am nobody' কিন্তু মনের কোনে ঠিকই মাঝে মাঝেই প্রশ্নেরা খুঁচিয়ে যেতো... মেয়েটি কি আর কাউকে...?
নাটক সিনেমায় কাহিনির শেষ থাকে। কিন্তু জীবনের গল্প সবসময় সমাপ্তি রেখা টানতে পারেনা। বড়ই বৈচিত্রময় এই জীবন। আকাশের চেয়েও বিশাল...অতলান্তিক মহাসমুদ্রের চেয়েও গভীর এর বোধ!
পিড়িতেরই ঘর বানাইয়া অন্তরের ভিতর
দুই দিগন্তে রইলাম দুইজন সারাজীবনভর...
'যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক তারাতো পারেনা জানিতে, তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ আমার হৃদয় খানিতে।'
: শেষের উক্তিটি নিমাই ভট্টাচার্যের
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩