"কাছে টানার সময় কেন বললে না, একদিন দূরে সরিয়ে দিবে..."
রুনু আপা গলার স্বর স্বাভাবিক রাখতে পারছিলেন না কোনভাবেই।
কথা বলতে বলতে কাঁদছিলেন।
আমার পক্ষে তখন কোন কথা বলা শোভা পেত না, তাই পাশে থেকে শুধু রুনু আপার হাতটা ধরে রেখেছিলাম।
অপরপ্রান্তে হয়তো ফোন রাখার তাড়া ছিল...
ফোনটা রেখে রুনু আপা আমায় জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।
অবাক লাগছে, একজন মানুষ কেনো আরেকজন মানুষের উপর এতো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে?
কেনোই বা নির্ভরশীল মানুষটিকে ছাড়া পৃথিবী তার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ে?
আমি বড্ড স্বার্থপর মানুষ!
নিজেকে কখনো বিলিয়ে ভালোবাসতে রাজি নই আমি।
স্কুল থেকে ফিরছিলাম, গেটের কাছে এসে যা শুনলাম তাতে থ' মেরে গেলাম।
রুনু আপা আত্মহত্যা করেছেন!
আম্মার সাথে দূরু দূুরু বুকে গেলাম রুনু আপাদের বাসায়। রুনু আপার বাসা বলতে আমার কাজিনের বাসা। রুনু আপা আমার কাজিনের শ্যালিকা হয়। সেখানে থেকেই রুনু আপা পড়ালেখা করতেন।
লাশ পাশে রেখে অনেকেই বাজে কানাঘুষা করছে।
আমি এখন আর ছোটটি নেই। ক্লাস নাইনে পড়া মেয়েকে বিয়ের উপযুক্ত হিসেবে ধরে অনেক পরিবারেই।
রুনু আপার আত্মহত্যার জন্যে কাজিন রঞ্জু ভাইয়ার দিকে অনেকেই আঙ্গুলি হেলন করছে!
ব্যাপারটা খুব বাজে হচ্ছে!
আমি কাউকে কিছু বলতে পারছি না!
যারা রুনু আপাকে গোছল দিয়েছেন তাঁরা নিশ্চিত করেছেন রুনু আপার পিরিয়ড চলছিল।
পুরো বাসা গুছিয়ে রুনু আপা ভাগ্নে রন্টুকে দিয়ে শাফিন আহমেদের সিডি কিনে আনিয়েছিলেন...
রন্টু বললো সেদিন নাকি রুনু আপা সারা বিকেল শাফিনের "নিঃস্ব করেছো আমায় কি নিঠুর ছলনায়..." গানটা শুনছিলেন।
এতো বছর পরে এসে যখন শাফিন আহমেদের গানটা আজকে শুনতে চাইলাম...রুনু আপার সেই হাতটা যেনো আমায় আঁকড়ে ধরলো কান্না জড়ানো কাঁপা শরীরে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৩