বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আতেঁল বন্ধুরা যখন কৌটিল্যের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলতো তখন ওদের মুখ থেকে শুনে শুনেই কৌটিল্যের প্রতি আসক্তি। প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠা করে কোলকাতা থেকে প্রকাশিত দুই খন্ডের প্রতিটির দাম ২২৫ টাকা করে। মানে বাংলাদেশী টাকায় কী পরিমাণ আসে তা ভেবেই মুখ কালো করে বইয়ের দোকান থেকে শুধু দেখেই যেতাম।আমার শুভাকাঙ্ক্ষী কাছের বন্ধুরা আমার এহেন দূর্বলতার কথা জানতো এবং তারা শেষ পর্যন্ত আমার বিশেষ (সেটি জন্মদিন , নাকি কোন পরীক্ষার ফলাফলে খুশি হয়ে অভিনন্দন জানাতে এই মুহুর্তে মনে নেই)কোন দিনে উপহার দেয়। এমন বই পেয়ে তো আমি মহা খুশি। কিন্তু বেশি খুশি হওয়ার কারণে বই খালি আগলে রাখি, পড়া আর হয় না! একবার শুরু করলাম পড়া , কিন্তু পড়বো কি! এতো কঠিন যে মাথা আউলিয়ে যায়। বইটা হাতে নিয়ে ঘুরি, আর হাতের নাগালে পিসির সামনে রাখি...পড়বো পড়বো বলে কতো যে জপেছি...এবার ঠিক করলাম একটু একটু করে পড়ে পড়ে ব্লগে দিই। সেখানেও আরেক মুশকিল! এসব লেখা ব্লগাররা পড়ে না। কারণ তারা নিজেরাই অনেক কিছু জানে, কাজেই আমার এই লেখা তাদের জানার চাহিদা নতুন করে মেটাবে না।
শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম পড়তে আমাকে হবেই...কীভাবে ?! কীভাবে?! কীভাবে?!
নিজের ব্লগ সাইটে প্রকাশ করে। এখানে হিট, কমেন্ট, ভালো লাগা ক্লিকানোর কোন ভেজাল নেই। একেবারে নিজের জন্যে লেখা। অনেকটা প্রসব বেদনায় ছটফট করতে থাকা মুরগীর মতো। ডিম পারার আগ পর্যন্ত তার অস্থিরতা কমে না।
হাহাহাহাহাহা...এই বই শেষ না করা পর্যন্ত আমারও অস্থিরতা কমবে না। যতো কঠিনই হোক। প্রয়োজনে বেঁচে থাকলে যতো বছর লাগে আমি পড়তেই থাকবো।
তাই নিজের সাইটেই প্রকাশ করা দিনলিপির মতো...যদিও অনিয়মিত ভাবে চলবে...
কৌটিল্য মহাশয়ের একটি ছবি দেবার বাসনায় গুগলে সার্চ দিয়ে দেখি সামহোয়্যারইন ব্লগে আমারই এক জবাবে কৌটিল্য সাহেবের কথা লেখা! কি আর করা ইংরেজিতে বানান আন্দাজ করে ঢিল ছুঁড়লাম ! সাবাস! গুগল মামু তো বেশ কাজের!
"চাণক্য" যিনি মূলত "কৌটিল্য" পরিচয়ে ইতিহাস খ্যাত এবং বিষ্ণু গুপ্ত-ও যার আরেক নাম। প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রকৌশল নিয়ে তার লেখাই "কৌটিলিয়ম অর্থশাস্ত্রম" নামে পরিচিত।
চাণক্য শ্লোক
♦ অতি পরিচয়ে দোষ আর ঢাকা থাকে না।
♦ অধমেরা ধন চায়, মধ্যমেরা ধন ও মান চায়। উত্তমেরা শুধু মান চায়। মানই মহতের ধন।
♦ অনেকে চারটি বেদ এবং ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করলেও আত্মাকে জানে না, হাতা যেমন রন্ধন-রস জানে না।
♦ অন্তঃসার শূন্যদের উপদেশ দিয়ে কিছু ফল হয় না, মলয়-পর্বতের সংসর্গে বাঁশ চন্দনে পরিণত হয় না।
♦ অবহেলায় কর্মনাশ হয়, যথেচ্ছ ভোজনে কুলনাশ হয়, যাচ্ঞায় সম্মান-নাশ হয়, দারিদ্র্যে বুদ্ধিনাশ হয়।
♦ অভ্যাসহীন বিদ্যা, অজীর্ণে ভোজন, দরিদ্রের সভায় বা মজলিশে কালক্ষেপ এবং বৃদ্ধের তরুণী ভার্যা বিষতুল্য।
♦ অহংকারের মত শত্রু নেই।
♦ আকাশে উড়ন্ত পাখির গতিও জানা যায়, কিন্তু প্রচ্ছন্নপ্রকৃতি-কর্মীর গতিবিধি জানা সম্ভব নয়।
♦ আদর দেওয়ার অনেক দোষ, শাসন করার অনেক গুণ, তাই পুত্র ও শিষ্যকে শাসন করাই দরকার, আদর দেওয়া নয়।
♦ আপদের নিশ্চিত পথ হল ইন্দ্রিয়গুলির অসংযম, তাদের জয় করা হল সম্পদের পথ, যার যেটি ঈপ্সিত সে সেই পথেই যায়।
♦ আড়ালে কাজের বিঘ্ন ঘটায়, কিন্তু সামনে ভাল কথা বলে, যার উপরে মধু কিন্তু অন্তরে বিষ, তাকে পরিত্যাগ করা উচিত।
♦ ইন্দ্রিয়ের যে অধীন তার চতুরঙ্গ সেনা থাকলেও সে বিনষ্ট হয়।
♦ উপায়জ্ঞ মানুষের কাছে দুঃসাধ্য কাজও সহজসাধ্য।
♦ উৎসবে, বিপদে, দুর্ভিক্ষে, শত্রুর সঙ্গে সংগ্রামকালে, রাজদ্বারে এবং শ্মশানে যে সঙ্গে থাকে, সে-ই প্রকৃত বন্ধু।
♦ ঋণ, অগ্নি ও ব্যাধির শেষ রাখতে নেই, কারণ তারা আবার বেড়ে যেতে পারে।
♦ একটি দোষ বহু গুণকেও গ্রাস করে।
♦ একটি কুবৃক্ষের কোটরের আগুন থেকে যেমন সমস্ত বন ভস্মীভূত হয়, তেমনি একটি কুপুত্রের দ্বারাও বংশ দগ্ধ হয়।
♦ একটিমাত্র পুষ্পিত সুগন্ধ বৃক্ষে যেমন সমস্ত বন সুবাসিত হয়, তেমনি একটি সুপুত্রের দ্বারা সমস্ত কুল ধন্য হয়।
♦ একশত মূর্খ পুত্রের চেয়ে একটি গুণী পুত্র বরং ভাল। একটি চন্দ্রই অন্ধকার দূর করে, সকল তারা মিলেও তা পারে না।
♦ কর্কশ কথা অগ্নিদাহের চেয়েও ভয়ঙ্কর।
♦ খেয়ে যার হজম হয়, ব্যাধি তার দূরে রয়।
♦ গুণবানকে আশ্রয় দিলে নির্গুণও গুণী হয়।
♦ গুণহীন মানুষ যদি উচ্চ বংশেও জন্মায় তাতে কিছু আসে যায় না।
♦ নীচকুলে জন্মেও যদি কেউ শাস্ত্রজ্ঞ হয়, তবে দেবতারাও তাঁকে সম্মান করেন।
♦ গুরু শিষ্যকে যদি একটি অক্ষরও শিক্ষা দেন, তবে পৃথিবীতে এমন কোনও জিনিস নেই, যা দিয়ে সেই শিষ্য গুরুর ঋণ শোধ করতে পারে।
♦ গৃহে যার মা নেই, স্ত্রী যার দুর্মুখ তার বনে যাওয়াই ভাল, কারণ তার কাছে বন আর গৃহে কোনও তফাৎ নেই।
♦ চন্দন তরুকে ছেদন করলেও সে সুগন্ধ ত্যাগ করে না, যন্ত্রে ইক্ষু নিপিষ্ট হলেও মধুরতা ত্যাগ করে না, যে সদ্বংশজাত অবস্থা বিপর্যয়েও সে চরিত্রগুণ ত্যাগ করে না।
♦ তিনটি বিষয়ে সন্তোষ বিধেয়: নিজের পত্নীতে, ভোজনে এবং ধনে। কিন্তু অধ্যয়ন, জপ, আর দান এই তিন বিষয়ে যেন কোনও সন্তোষ না থাকে।
♦ দারিদ্র্য, রোগ, দুঃখ, বন্ধন এবং বিপদ- সব কিছুই মানুষের নিজেরই অপরাধরূপ বৃক্ষের ফল।
♦ দুর্জনের সংসর্গ ত্যাগ করে সজ্জনের সঙ্গ করবে। অহোরাত্র পুণ্য করবে, সর্বদা নশ্বরতার কথা মনে রাখবে।
♦ দুর্বলের বল রাজা, শিশুর বল কান্না, মূর্খের বল নীরবতা, চোরের মিথ্যাই বল।
♦ দুষ্টা স্ত্রী, প্রবঞ্চক বন্ধু, দুর্মুখ ভৃত্য এবং সসর্প-গৃহে বাস মৃত্যুর দ্বার, এ-বিষয়ে সংশয় নেই।
♦ ধর্মের চেয়ে ব্যবহারই বড়।
♦ নানাভাবে শিক্ষা পেলেও দুর্জন সাধু হয় না, নিমগাছ যেমন আমূল জলসিক্ত করে কিংবা দুধে ভিজিয়ে রাখলেও কখনও মধুর হয় না।
♦ পরস্ত্রীকে যে মায়ের মত দেখে, অন্যের জিনিসকে যে মূল্যহীন মনে করে এবং সকল জীবকে যে নিজের মত মনে করে, সে-ই যথার্থ জ্ঞানী।
♦ পাপীরা বিক্ষোভের ভয় করে না।
♦ পাঁচ বছর বয়স অবধি পুত্রদের লালন করবে, দশ বছর অবধি তাদের চালনা করবে, ষোল বছরে পড়লে তাদের সঙ্গে বন্ধুর মত আচরণ করবে।
♦ পুত্র যদি হয় গুণবান, পিতামাতার কাছে তা স্বর্গ সমান।
♦ পুত্রকে যারা পড়ান না, সেই পিতামাতা তার শত্রু।
♦ হাঁসদের মধ্যে বক যেমন শোভা পায় না, সভার মধ্যে সেই মূর্খও তেমনি শোভা পায় না।
♦ বইয়ে থাকা বিদ্যা, পরের হাতে থাকা ধন একইরকম। প্রয়োজনকালে তা বিদ্যাই নয়, ধনই নয়।
♦ বিদ্বান সকল গুণের আধার, অজ্ঞ সকল দোষের আকর। তাই হাজার মূর্খের চেয়ে একজন বিদ্বান অনেক কাম্য।
♦ বিদ্যাবত্তা ও রাজপদ এ-দুটি কখনও সমান হয় না। রাজা কেবল নিজদেশেই সমাদৃত, বিদ্বান সর্বত্র সমাদৃত।
♦ বিদ্যা ব্যতীত জীবন ব্যর্থ, কুকুরের লেজ যেমন ব্যর্থ, তা দিয়ে সে গুহ্য-অঙ্গও গোপন করতে পারে না, মশাও তাড়াতে পারে না।
♦ বিদ্যাভূষিত হলেও দুর্জনকে ত্যাগ করবে, মণিভূষিত হলেও সাপ কি ভয়ঙ্কর নয়?
♦ বিদ্যার চেয়ে বন্ধু নাই, ব্যাধির চেয়ে শত্রু নাই। সন্তানের চেয়ে স্নেহপাত্র নাই, দৈবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বল নাই।
♦ বিনয়ই সকলের ভূষণ।
♦ বিষ থেকেও অমৃত আহরণ করা চলে, মলাদি থেকেও স্বর্ণ আহরণ করা যায়, নীচজাতি থেকেও বিদ্যা আহরণ করা যায়, নীচকুল থেকেও স্ত্রীরত্ন গ্রহণ করা যায়।
♦ ভোগবাসনায় বুদ্ধি আচ্ছন্ন হয়।
♦ মিত ভোজনেই স্বাস্থ্যলাভ হয়।
♦ যশবানের বিনাশ নেই।
♦ যারা রূপযৌবনসম্পন্ন এবং উচ্চকুলজাত হয়েও বিদ্যাহীন, তাঁরা
♦ সুবাসহীন পলাশ ফুলের মত বেমানান।
♦ যে অলস, অলব্ধ-লাভ তার হয় না।
♦ যে গাভী দুধ দেয় না, গর্ভ ধারণও করে না, সে গাভী দিয়ে কী হবে! যে বিদ্বান ও ভক্তিমান নয়, সে পুত্র দিয়ে কী হবে!
♦ রাতের ভূষণ চাঁদ, নারীর ভূষণ পতি, পৃথিবীর ভূষণ রাজা, কিন্তু বিদ্যা সবার ভূষণ।
♦ শাস্ত্র অনন্ত, বিদ্যাও প্রচুর। সময় অল্প অথচ বিঘ্ন অনেক। তাই যা সারভূত তারই চর্চা করা উচিত। হাঁস যেমন জল-মিশ্রিত দুধ থেকে শুধু দুধটুকুই তুলে নেয়, তেমনি।
♦ সত্যনিষ্ঠ লোকের অপ্রাপ্য কিছুই নাই।
♦ সত্যবাক্য দুর্লভ, হিতকারী-পুত্র দুর্লভ, সমমনস্কা-পত্নী দুর্লভ, প্রিয়স্বজনও তেমনি দুর্লভ।
♦ সাপ নিষ্ঠুর খলও নিষ্ঠুর, কিন্তু সাপের চেয়ে খল বেশি নিষ্ঠুর। সাপকে মন্ত্র বা ওষধি দিয়ে বশ করা যায়, কিন্তু খলকে কে বশ করতে পারে?
♦ সুবেশভূষিত মূর্খকে দূর থেকেই দেখতে ভাল, যতক্ষণ সে কথা না বলে ততক্ষণই তার শোভা, কথা বললেই মূর্খতা প্রকাশ পায়।
♦ হাতি থেকে একহাজার হাত দূরে, ঘোড়া থেকে একশ হাত দূরে, শৃঙ্গধারী প্রাণী থেকে দশহাত দূরে থাকবে। অনুরূপ দুর্জনের কাছ থেকেও যথাসম্ভব দূরে থাকবে।
কৌটিল্য (চাণক্য) সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলে এই লিংক দেখতে পারেন ।
চাণক্য শ্লোকগুলো উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া হয়েছে ।
-------
আজকে বই নিয়ে পোস্ট পড়তে খুব ইচ্ছে করছিলো । সার্চ দিয়ে দেখি শুধু ইবুক এর লিংক ।
তাই ভাবলাম আমিই কিছু একটা দেই । এটা কোন পূর্ণাঙ্গ পোস্ট নয়, কখনো যথেষ্ট পড়া হলে আবার এই মহোদয় সম্পর্কে লিখতে পারি ।
►একটা বিষয় খেয়াল করলাম, ব্লগে ইদানিং বই নিয়ে কেউ তেমন একটা লিখে না !
►বই নিয়ে আমার অন্য পোস্টগুলো দেখতে "বই/পুস্তক" নামক বিভাগটি দেখতে পারেন ।
►কীভাবে করবেন "বই রিভিউ" এই পোস্টটা "বই/পুস্তক" বিভাগে এ্যাড করতে গেলেই লগড আউট দেখাচ্ছে
►ওয়াচে থাকা সহব্লগাররা বই নিয়ে কথা বলতে সামহোয়্যারের গ্রুপ ব্লগিং-এ স্বাগতম ।
►নিজস্ব ব্লগ সাইটে বই নিয়ে লেখা দেখতে এই লিঙ্কে স্বাগতম ।