বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শেষ বেলায় একটা কোর্সের এসাইনমেন্টের অপশন ছিল বই রিভিউ। যদিও ম্যাডাম নির্দিষ্ট একটা বইয়ের নাম উল্লেখ করে দিয়েছিলেন। তখন কিছুই জানতাম না বই রিভিউ সম্পর্কে। এখনও যে জানি তা কিন্তু নয়। ভাবলাম তখন বইটির রিভিউ হিসেবে যা লিখেছিলাম তাতে একটা বই কিভাবে রিভিউ করা যায় তা নিয়ে সহব্লগারদের সাথে শেয়ার করি। কারণ এখানে অনেক অভিজ্ঞজন থাকতে পারে এ বিষয়ে। আসলে ভালো করে জানার ইচ্ছে থেকেই এই লেখা। আশা করবো যারা এ বিষয়ে জানেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়ে আমার জানার আগ্রহকে সমৃদ্ধ করবেন।
১. ভুমিকাঃ
একটি বইয়ের রিভিউ দেখেই একটি বই সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া সম্ভব। যেমন একটি সিনেমার স্যাটায়ার বা রিভিউ দেখে সেই সিনেমা সম্পর্কে আমরা আগে ভাগেই অবগত হতে পারি। বই রিভিউয়ের ক্ষেত্রে বইয়ের শিরোনাম, লেখক, কোথা থেকে প্রকাশিত হলো, প্রকাশক, প্রকাশনার তারিখ, সংস্করণ, পৃষ্ঠা, বিশেষ বৈশিষ্ট্য, মূল্য, ISBN নম্বর এসব উল্লেখ করা প্রয়োজন।
২.বইয়ের আঙ্গিক বৈশিষ্ট্যের পর্যালোচনা
২.১. প্রচ্ছদঃ
একটি বই যখন হাতে নেয়া হয়, তখন সামগ্রিকভাবে এর প্রচ্ছদটিই প্রথমে চোখে পড়ে। একটি আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ বইটিকে পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে।
আর প্রচ্ছদ থেকেও কখনো কখনো বইয়ের ভেতরের আলোচনা সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা সম্ভব।
বইটি কোন বয়সীদের জন্যে তাও অনেক সময় প্রচ্ছদ দেখে বোঝা সম্ভব। এক্ষেত্রে বইটি শিশুদের উপযোগী হলে সেই বইযের প্রচ্ছদে আকর্ষণীয় চিত্র থাকলে শিশুরা তাতে আগ্রহ পাবে বেশি।
কাজেই রিভিউ করার সময় প্রচ্ছদ নিয়ে একটি আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে যেন সেই বই সম্পর্কে পাঠক শুরুতেই একটা ধারনা পেতে পারে।
২.২. বাঁধাইঃ
বাঁধাই সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় যে, বাঁধাই দেখেই বইটি সম্পর্কে একটা ধারণা এসে যেতে পারে। এখানে কয়েকটি কারণে বইয়ের বাঁধাইয়ে রকমফের হতে পারে। বইটি সব শ্রেণীর মানুষের হাতে পৌছানোর কথা ভেবে থাকলে বইটির বাঁধাই নিম্ন মানের হতেও পারে। যেমন এনসিটিভির স্কুলের জন্যে প্রণীত পাঠ্য বই গুলো। এগুলো সাধারণতই হয় ন্ম্নিমানের নিউজপ্রিন্ট দ্বারা। এখানে সবার হাতে পৌছানোর পাশাপাশি দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের অর্থ লিপ্সাও কাজ করে থাকে।
আবার পাঠ্য বইয়ের বাইরে বাজারে আসা বইগুলোতে বিভিন্ন প্রকাশণীর প্রকাশকদের রুচি, বাজেটের উপরও বইয়ের বাঁধাই নির্ভর করে। অনেক সময়ই বাঙলা বাজারের প্রকাশকদের দেখা যায় বারবার বলার পরও খুব উন্নত বাঁধাই দেন না। এখানে দেখা যায় বইয়ের পাশ থেকে কাগজ কেটে সেগুলোকে বাইরে আলাদা করে বিক্রীর প্রবণতা।
কাজেই বাঁধাইও বই রিভিউয়ের একটি অংশ।
২.৩. বইয়ের আকারঃ
বই রিভিউয়ে বইয়ের আকার নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। কারণ এতে বইটিটর প্রতি কতোটা যত্নশীল ছিল প্রকাশক তা বোঝা যায়। বইটি ছাপানোর ক্ষেত্রে খরচ সাশ্রয়ের জন্যে চর্তুদিকে প্রয়োজনীয় মার্জিন রাখা হয়েছে কি না অর্থাৎ বইটিকে কেটে এর স্বাভাবিক আকার নষ্ট করা হয়েছে কি না তা বিবেচ্য বিষয়।
২.৪. ছাপার অক্ষরের আকৃতিঃ
বয়স অনুযায়ী পাঠকদের উপযোগী কি না বইয়ের অক্ষর তাও রিভিউয়ের আসা উচিত। সাধারণত ইংরেজিতে টাইমস নিউ রোমানে বা বাংলায় সুতন্নীতে ১২ ফন্ট আসা উচিত। প্রয়োজন বোধে তা কম বেশি হতে পারে। আর রিভিউ করার সময় দেখা উচিত তা প্রয়োজনীয় সাইজের হলো কি না। কারণ ছোটদের বইয়ের ফন্ট ১৪/১৬ এমনকি এর চেয়ে বেশিও হতে পারে । আবার সাধারণ বইগুলিতে যদি ফন্ট সাইজ বেশি দেওয়া হয় তবে তা অনেক সময়ই দৃষ্টি কটু হতে পারে।
৩. বিভিন্ন অধ্যায়ের আলোচনা নিয়ে পর্যালোচনাঃ
এই অংশটি বিশেষ ভাবে সেই সব বইয়ের ক্ষেত্রে যেসব বইয়ে একাধিক অধ্যায়ে একে রকমের বিষয় উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পাঠ্য বইয়ের উদাহরণ টানা যেতে পারে। আবার সংকলন বইগুলোর উদাহরণ গুলোও বলা যেতে পারে। এমন বই গুলোতে প্রতিটা অধ্যায় কে ঠিক মতো উপস্থাপন করা হলো কি না বা যথার্থ ধারণা দেওয়া হলো কি না, রিভিউয়ের ক্ষেত্রে তা বিবেচ্য বিষয়।
৪. ভাষা ও বিষয় বস্তু ঃ
একটি বইয়ের এমন উদ্দেশ্য হওয়া উচিত যাতে পাঠক সেই বইটি পাঠের মাধ্যমে নির্ধারিত প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। বইটির বিষয়বস্তু পাঠকের শ্রেণী অনুযায়ী প্রাঞ্জল ভাষায় এবং সহজ বোধগম্য করে এবং বিষয়বস্তু বিশ্লেষণে লেখকের মনোভাব তুলে ধরতেও রিভিউয়ে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
৫. বানানঃ
একটি বই পড়তে গেলে তাতে বানানের ত্রুটি থাকলে তা পাঠের আনন্দ অনেকটাই নষ্ট করে দেয়। আর বইয়ে বানান রীতি অনুসরণ করার ক্ষেত্রে বিশেষ করে বাংলা বইয়ের ক্ষেত্রে পাঠ্য বইয়ে এনসিটিবি, বাংলা একোডেমি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির বানান রীতি অনুসরণ করাই উত্তম। এতে সাধারণ পাঠকের গ্রহণযোগ্যতা বেশি থাকে। কাজেই রিভিউয়ের ক্ষেত্রে বানানের দিকে বিশেষ নজর রাখা জরুরী।
৬. সংযোজিত ছবি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)ঃ
বইয়ে সংযোজিত ছবি পাঠকদের কাছে পরিস্কার ভাবে উপস্থাপন করাটা জরুরী । না হলে তা পাঠকের কাছে বইটির আকর্ষণ হারায়। অনেক সময়ই দেখা যায় বইয়ে সংযোজিত ছবি অস্পষ্ট যার মর্মোদ্ধার করাই সম্ভব হয়ে উঠে না ফলে তা পাঠকের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে পরে।
পরিশেষ কয়েকটি কথা বলবো,
■ একটি বই বাঁধাই ও ছাপানোর ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করা উচিত
■ বইয়ে সংযোজিত ছবিগুলো যেন স্পষ্ট হয় সেদিকে যথাযথ নজরদারী করা উচিত
■ বইটির নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি যেন সঠিক থাকে সেদিকে প্রকাশকের এবং সংশ্লিস্ট ব্যাক্তিদের দৃষ্টি যেন থাকে।
■ ছাপার অক্ষরগুলো সর্বক্ষেত্রে যেন স্পষ্ট থাকে।
এবং সর্বোপরি একটি একটি মান সম্মত রিভিউয়ের জন্যে একজন মনোযোগী পাঠক হতে হবে।
যারা আরো জানতে চান তাদের জন্যে ...
■ফেসবুকে ব্লগার একরামুল হক শামীম -এর করা একটি গ্রুপ আছে বুক রিভিউ
■How to Write a Book Review
■এবং ইউটিউবে দেখতে পারেন
গঠনমুলক পরামর্শ পেলে আপডেট করার ইচ্ছে রাখি।
≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈≈
একটি বোনাস: এটা কোন বইয়ের রিভিউ নয়। একটি বই থেকে আমার ভালো লাগা কিছু কোটেশন
বই: সোনালী দুঃখ
লেখক: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
♥ ভালবাসা হচ্ছে আগুনের মতো, যাতে পাপ স্পর্শ করে না ।
♥ জীবনে ভালবাসাই হচ্ছে একমাত্র দুঃখ, যেখানে মানুষ ইচ্ছা করে ঝাঁপিয়ে পড়ে
♥ ভালবাসা ঘৃণাকে জয় করতে পারে
♥ প্রাণের বিনিময়ে তো প্রাণ পাওয়া যায় না
♥ দিনের আলোয় যখন সারা দুনিয়া ঝকমক করে, তখনো মানুষের ছায়া পরে। জীবন কখনো সরল পথে চলতে জানে না। যতই আলো থাক তার মধ্যেও ছায়া থাকবে
♥ ভালবাসার এমনই টান যে কাপুরুষকেও দুঃসাহসী হতে লোভ দেখায়
♥ আমি তোমার হাতেই মরতে চাই। পরের জন্মে আবার আসবো তোমার কাছে, তোমাকে জয় করতে...
♥ আমি জন্ম-জন্মান্তরে ঘুরে আসবো তোমাকে জয় করতে। আমি তোমাকেই চাই...
♥ পদমর্যাদার প্রতি মানুষের এমন ভক্তি!
♥ ভালোবাসা এই রকমই, সে আর সব কিছুকে আড়াল করে দেয়।
♥ ওদের মৃত্যু ভয় নেই, ওদের শুধু আর দেখা না হবার ভয়!
♥ ইচ্ছা জিনিসটা এমন তা যে কি অবলম্বন করে কখন বেড়ে ওঠে কেউ জানেনা।
[কোটেশন গুলো আগে আরেক জায়গায় প্রকাশ করেছিলাম।]
সবাই ভালো থাকুন।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
►বই নিয়ে আরো পড়তে চাইলে বিশ্ব সাহিত্য ভুবনে ঘুরে আসতে পারেন।
►কিভাবে করবেন বই রিভিউ একই সাথে নিজস্ব ব্লগস্পটেও প্রকাশিত হলো।