আধুনিক বাংলায় শিশুতোষ সাহিত্যের পথিকৃৎ বলা হয় তাঁকে। বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তন করেছিলেন ‘অর্থহীন ছড়ার’। আবোল তাবোল, হ য ব র ল, পাগলা দাশুর মতন জনপ্রিয় সৃষ্টি শুধুমাত্র বাংলায় নয়, বরং সারা বিশ্বেই ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্যের গুণ বিচারে অন্যতম প্রধান বলে বিবেচিত।
হাঁস ছিল, সজারু, (ব্যাকরণ মানিনা),
হয়ে গেল ‘হাসজারু’ কেমনে তা জানিনা।
বক কহে কচ্ছপে-"বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।"
এভাবেই শিশুসাহিত্যে সরস-সুন্দর আনন্দের সঞ্চার করতেন অনায়াসে। সেই সাথে তাঁর আঁকা অসাধারণ ছবিগুলো তাঁর কবিতার কল্পিত চরিত্রগুলোর দেহে প্রাণের সঞ্চার করেছিল। আর তাই, মৃত্যুর (১৯২৩) প্রায় এক শতক পরেও সুকুমার রায় এখনো বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম শিশুসাহিত্যিক।
তাঁর বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী পশুপাখিদের মুখের ভাষা দিয়ে মজার মজার গল্প ‘টোনাটুনি বই’ লিখেছিলেন। ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর অমর সৃষ্টি। বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার, প্রফেসর শঙ্কু ও ফেলুদার জনক, সত্যজিৎ রায়ের জনক ছিলেন তিনি।
রামগড়ুরের ছানা আর কুমড়ো পটাশের মতন উদ্ভট অথচ অসাধারণ কল্পনাবিলাসী ভাবনায় এ বাংলার লক্ষ কোটি শিশুর স্বপ্নের সীমানাকে শুধু রাঙিয়েই ক্ষান্ত হননি, স্বপ্নের সেই অমিত পরিধিকে অসীমের দিকে ধাবিত করেছেন তিনি। আজব মনে হওয়া তাঁর এই স্বকীয় সৃষ্টির অদ্ভুত জগত এক অনন্য শৈলীতে ভাস্বর। যা বাংলা ভাষাভাষী সকল বয়সের মানুষের জন্যই এক অনন্ত আনন্দের আখর।
আবোল তাবোল বইয়ের ভূমিকায় তিনি নিজেই বলেছেন, ‘যাহা আজগুবি, যাহা উদ্ভট, যাহা অসম্ভব, তাহাদের লইয়াই এই পুস্তকের কারবার’
রামগড়ুরের ছানা হাসতে তাদের মানা,
হাসির কথা শুনলে বলে,
“হাসব না-না, না-না!”
জন্মেছিলেন ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর তারিখে ময়মনসিংহ জেলার মসূয়া গ্রামে। বড় হয়েছেন কোলকাতায়। তাঁর ডাক নাম ছিল তাতা। শুরুর দিকে ছোটদের মাসিক পত্রিকা ‘সন্দেশে’ এবং শেষের দিকের কিছু লেখা ‘উহ্যনাম পন্ডিত’ ছদ্মনামেও লিখেছিলেন তিনি। সকল বয়সের পাঠকের প্রিয় লেখক সুকুমার রায় চিরবিদায় নিয়েছেন ১৯২৩ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর।
‘পাগলা দাশু’ প্রথম প্রকাশের সময় ভূমিকায় ১৯৪০ সালের ১লা জুন তারিখে কালিম্পঙ থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, “সুকুমারের লেখনী থেকে যে অবিমিশ্র হাস্যরসের উৎসধারা বাংলা সাহিত্যকে অভিষিক্ত করেছে তা অতুলনীয়। তাঁর সুনিপুণ ছন্দের বিচিত্র ও স্বচ্ছন্দ গতি, তার ভাব সমাবেশের অভাবনীয় অসংলগ্নতা পদে পদে চমৎকৃতি আনে। তাঁর স্বভাবে মধ্যে বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির গাম্ভীর্য ছিল, সেই জন্যই তিনি তাঁর বৈপরীত্য এমন খেলাচ্ছলে দেখাতে পেরেছিলেন। তাঁর এই বিশুদ্ধ হাসির দানের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর অকাল মৃত্যুর সকরুণতা পাঠকদের মনে চিরকালের জন্য জড়িত হয়ে রইল।”
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ৭:৫৫