somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসার এ জগৎ

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

> নাম রাখতে চাচ্ছ রাখ। কিন্তু, এসব ‘য-ফলা’, ‘ম-ফলা’ দিয়ে যুক্তাক্ষরের মতন উচ্চারণ কেন? খালি খালি মানুষের জীভকে কষ্ট দেয়া। ওসব ছাড়া সুন্দর অর্থবোধক কোন শব্দ নেই?
>> আজব তো? ‘আনিত্যধাম’ উচ্চারণ করা মানে, মানুষের জীভকে কষ্ট দেয়া?
> নয়তো কি?
>> এই শব্দের অর্থতো তুমি জান। এরপরেও কেন পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া করছ?
> কঠিন শব্দটা বাদ দিয়ে, ওর অর্থটাই তাহলে দরজায় ঝুলিয়ে দাও বড় করে,‘'স্বর্গের বাড়ি”।
আমাদের নতুন বাড়ির নাম কি হবে হবে, এই নিয়ে মা-বাবার তর্ক চলতেই থাকে। আমি খালি পায়ে আস্তে আস্তে আমাদের বারান্দায় চলে আসি। দখিনমুখী বারান্দাকে আরো অর্থবহ করে তুলতেই হয়ত, প্রবল বাতাস এখানে। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। এখানে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করলেই মনে হয়, আকাশের অনেক কাছে চলে এসেছি। আমি গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেই, চাঁদ ধরব বলে অথবা মেঘ।

আমার মায়ের বারান্দার খুব শখ। তার চেয়ে বেশি বোধহয়, গাছের। বারান্দার জায়গা ক’দিন পর পরই কমে যায় নতুন নতুন গাছের আগমনে। কিছু গাছ আছে যেগুলো হুক দিয়ে বারান্দার গ্রিলের সাথে ঝোলানো। মা পরম মমতায় প্রতিদিন গাছে পানি দেয়। সার দেয়। বড় বড় পাতা গুলো পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে দেয়।

> “যেভাবে ঝোলা-ঝুলি ওয়ালা গাছ লাগাচ্ছে, তোমার বোনতো এ বাড়ির বারান্দাকে ব্যাবিলন বানিয়ে ফেলবে। লোকে বলবে, ‘শুন্য উদ্যান’। এখন আবার কামিনী ফুলের গাছ লাগিয়েছে। কামিনীর গন্ধে অজগর চলে আসে কিনা সেই চিন্তায় আছি” - হাসি মুখে কপট রাগ দেখিয়ে বাবা খালামনির সাথে কথা বলেন ফোনে। আমি দূর থেকে শুনি।

এই কথা এতদিনে কতবার বলেছি, তারপরও চাচ্চু ফোন করে প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করে, তোদের বাড়ির নামটা যেন কি? বুঝি ভুল হচ্ছে, তাও বলি ‘আনিট্যডাম’। আর এটা শোনা মাত্রই চাচ্চু হো হো করে হাসতে থাকে।

মা’ আমার দিকে হতাশ চোখে তাকায়। ফোন রাখা মাত্রই ডেকে বলে, বলত দেখি, ‘তাল, তালি, তুমি’? আমি বলি, ‘তাল, তালি, তুমি’।
এবার বল, ‘ধান, ধ্যান, ধনী’। আমি বলি, ‘ধান, ধ্যান, ধনী’।
এসব বলা শেষ হওয়া মাত্রই বলে, বল দেখি ‘আনিত্যধাম’। আমি বলি, ‘আনিত্যধাম’। মা মুচকি হেসে চলে যায়। আর আমি বোকা বোকা ভাব নিয়ে খানিকটা ভারী মনে বারান্দায় যেয়ে বসি। বসে আকাশের দিকে তাকাই। ভাবতে থাকি, একদিনের আকাশের সাথে আরেকদিনের কেন কোন মিল নেই? প্রতিদিনের আকাশ নতুন নতুন রূপে আসে। কিভাবে আসে?

এমন আজগুবি ভাবনা যখন মাথায় আসে, ঠিক তক্ষুনি কোথা থেকে যেন ‘ও’ চলে আসে। দরজা বন্ধ! বারান্দা গ্রিল দিয়ে ঘেরা!! তারপরও ও কিভাবে আসে সে কথা প্রায়ই ভাবি? কিন্তু উত্তর পাইনা কোন। আমি কখনো জিজ্ঞেস করিনি। ‘ও’ ও কোনদিন বলেনি। বন্ধুদের সব কথা জিজ্ঞেস করতে হয়না। শুধু জানি ও আসলে আমার খুব ভাল লাগে।

এভাবেই চলে আমাদের। আমাদের সাদামাটা বাড়িটার দেয়াল জোড়া জানালার দিকে তাকালে মনে হয়, কে যেন তাকিয়ে আছে। শান্তির পেলব পরশ মাখিয়ে দিচ্ছে, সারা গা জুড়ে।

পার্কে যেদিন প্রথম ওর সাথে দেখা হয়েছিল, সেদিনটা অদ্ভুত সুন্দর ছিল। মা’র ভাষায়, ‘আমাদের দেশের শরতের বিকেল’। স্বচ্ছ নীল আকাশে থোকা থোকা মেঘের ভেলা। ঠিক যতটুকু হলে নরম ছোঁয়া বলা যায়, ততটুকু বাতাস। যাদুকরী ক্ষমতা ও’র। যে আমার তেমন কোন বন্ধু নেই, ক্লাশেও একা একা খেলি, প্রথম পরিচয়েই সেই আমি ও’র সাথে খেলেছি, গল্প করেছি, হেসেছি খিল খিল করে। আমার নতুন বন্ধু। গোপন বন্ধু। নাকি, একমাত্র বন্ধু?

হঠাৎই মার গলা। ‘এই কার সাথে কথা বলছিস”?
আমি চমকে উঠে শুধু বলেছিলাম, ‘জ্বি মা’।

চারদিক তখন সুনসান। গাছ থেকে পাতা পড়ছে। নাকি বাতাসে পাতাগুলো ভেসে ভেসে যাচ্ছে? দূরে দুটো বাচ্চা সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। তার পাশেই ঘাসের ওপর কাপড় পেতে একটা পরিবার গল্পে মশগুল। মা আলতো করে আমার হাত ধরে বলেছিলেন, ‘একা একা এত দূরে চলে আসতে হয়? চল তাড়াতাড়ি। বাড়ি যেতে হবে।’

আমি যেখানেই যাই, সেখানেই ও চলে আসতে পারে। একদম যখন তখন। আমার শোবার ঘরে, বারান্দায়, স্কুলের ক্লাসরুমে, খেলার মাঠে। এমনকি, সপ্তাহের ছুটির দিনে যখন যেখানে বেড়াতে যাই, সেখানেও। সব জায়গায়। তবে মজা হল, ও তখনই আসে, যখন আমি একা থাকি। ও আমার একাকীত্ব ভুলিয়ে দেয়। আমি ওর সাথে গল্প করি, খেলি। আমাদের বাসায় অনেক বই। মা পড়ে, বাবা পড়ে, আমিও পড়ি। রূপকথার গল্প, বিজ্ঞানের গল্প, এমনি এমনি গল্প। সেইসব বই থেকে আমি যাই বলিনা কেন, ও সব জানে! এমন কি আমি যেসব জানি না, সেসবও জানে।

আমাকে ও একদিন বলল, কৃষ্ণ গহ্বর জান?
... মা’তো আমাকে কৃষ্ণের কথা বলেছে। আমি জানি, কৃষ্ণের কথা।
ও আমাকে বলেছিল, এ কৃষ্ণ সেই কৃষ্ণ নয়। আমি তোমাকে রাধাকৃষ্ণের কথা বলছি না। আমি বলছি ‘ব্ল্যাক হোলের’ কথা। সেই শুরু। তখন থেকেই সেই কাল গুহা নিয়ে আমার প্রবল আগ্রহ। এ জগতের সবকিছু শুরু হবার কথা জানার আগ্রহ। আমি অমাবস্যার রাতে, আমাদের দখিনমুখী বারান্দায় যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, ব্ল্যাক হোল দেখব বলে। চোখ বন্ধ করলেই আবহাওয়া দপ্তরের দেখনো ‘সাইক্লোনের চোখ’ দেখি। সাইক্লোনের চোখের ভিতরে ব্ল্যাক হোল খুঁজে বেড়াই।

হঠাৎই একদিন বাসায় এসে বাবা বললেন, “শুনেছ নাকি, তোমার ভাই আসছে। আমাকে বলে, আমাদের বারান্দা থেকে নাকি মেঘ ধরবে। তৃতীয় সুর আর ষষ্ঠ সুরটা খাওয়া দাওয়া করে শরীরটাকে যা বানিয়েছে, শুধু শাকপাতা ছাড়া আর কিছু রান্না করবা না কিন্তু!” বাবা, মামা’কে মজা করে তৃতীয় সুর আর ষষ্ঠ সুর বলে। হয়ত ভাবে আমি বুঝিনা। আমি কিন্তু জানি, সা রে গা মা পা ধা নি সা’র তৃতীয় সুর মানে ‘গা’ আর ষষ্ঠ সুর মানে ‘ধা’। তবে এসব নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করতে চাই না। মামা আসবে শুনেই আমার মনটা ঝলমলে হয়ে যায়।

একদিন সন্ধ্যায় ও আমাকে বলল, বেড়াতে যাবে? তবে একটা শর্ত আছে, কাউকে কিছু বলা যাবে না কিন্তু। যাবে? আমি মাথা ঝুঁকিয়েছিলাম। উপরে আর নিচে।

নীরব একটা রাস্তা। পাশেই একটা প্রাসাদোপম বাড়ি। বিশাল সেই বাড়ির হল রুমে, আমি একা দাঁড়িয়ে। সাথে ও আছে। খানিক পর অদ্ভুত একটা চেয়ারে বসে একজন লোক এলেন। চেয়ারের সামনে একটা কম্পিউটারের মতন কি যেন লাগানো। চোখে চশমা, মাথাটা একদিকে এলানো। কথা বলেন অদ্ভুত স্বরে। নিজেই প্রথম বললেন, “আমি স্টিভ। কি নাম তোমার?” আমি নীরব হয়ে বসে আছি আর ভাবছি, কোথায় যেন দেখেছি, কোথায় যেন দেখেছি। তারপর যান্ত্রিক স্বরে বললেন, ‘বল দেখি, কি শুনবে’। ভয়ে ভয়ে শুধু বলতে পেরেছিলাম, “কোথা থেকে শুরু হল সব?” .

স্টিভ মিটিমিটি হাসছে। শোনো বাছা। ঘাড়টা একদিকে কাত করে কথা বলছে আর আমি শুনছি। পেঁয়াজের খোসা যেমন পরতের পর পরত খুলতে থাকে, আমার চোখের সামনে থেকে এমন করে একটির পর একটি পর্দা সরে যেতে লাগল।

--- প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগের কথা। ছোট্ট একটা বিন্দু থেকে এই বিশ্বের শুরু। তখন একটা বিপুল বিস্ফোরণ হয়। আর তার প্রায় সাথে সাথেই তা সম্প্রসারিত হতে শুরু করে। মানে, বড় হতে থাকে। তখন থেকেই এই মহাবিশ্বের শুরু। সেটার ঘনত্ব ছিল অসীম আর অসম্ভব গরম। সেই থেকে এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে হচ্ছে।
>>> তার মানে আমরা যে আকাশ দেখছি, সেটা প্রতিদিনই বড় হচ্ছে?
--- হা হা হা। তোমার জন্য ঐ জানালার ফাঁক দিয়ে যে আকাশ দেখা যাচ্ছে, সেটাই মহাবিশ্ব। তবে আমাদের এই পৃথিবী, মহাবিশ্বের আয়তনের তুলনায় খুবই ছোট্ট একটা বিন্দুর মত।
আমরা খালি চোখে যে আকাশ দেখি, আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীর প্রেক্ষিতে, সেটা এই জগতের একটা স্তর মাত্র। খালি চোখে দেখা আকাশের বাইরেও আরো অনেক কিছু আছে। সেসবের খানিকটা দূরবীন দিয়ে দেখা যায়। যেহেতু, পুরো মহাবিশ্বই প্রসারিত হচ্ছে, তাই তুমি বলতেই পার যে আকাশ বড় হচ্ছে। এক অর্থে এটা ঠিক। কিন্তু সেই বড় হওয়াটা খুব অল্প অল্প করে। যেটা খালি চোখে দেখা যায় না। বোঝাও যায় না।
>>> তাহলে ঐ বিস্ফোরণের আগে কি ছিল?
--- কিছুই ছিল না। তখন থেকেই মহাবিশ্ব আর সময়ের শুরু। সময়ের আবর্তে মহাবিশ্ব যত প্রসারিত হয়েছে, তার সাথে সাথে এর ঘনত্ব কমেছে, তাপমাত্রা কমেছে। বিভিন্ন কাল পর্ব পেরিয়ে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, যখন এই পৃথিবীতে প্রাণ ধারন করার মত অনুকূল পরিবেশ তৈরী হয়েছে। আমাদের এই সৌরজগতে যে আরো বেশ কয়েকটি গ্রহ আছে, সেখানে কিন্তু আমাদের মতন মানুষদের পক্ষে বসবাস করা সম্ভব না। আর তাই, এই অনন্য সুন্দর পৃথিবীর ভাল-মন্দ আমাদেরই দেখতে হবে। যেই পৃথিবী আমাদের ধারণ করছে, আগলে রেখেছে, সেই পৃথিবীকে আদর করতে হবে।

ডানদিকের কাঁচের জানালা দিয়ে তখন সূর্যের সোনালী আলো ঢুকছে। স্টিভকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন এক সোনা ধোওয়া মানুষ। উনার চশমার ফ্রেম থেকে আলো ঠিকরে বেরুচ্ছে। স্বচ্ছ কাঁচের পেছনে জ্বলজ্বলে চোখ জোড়ায় মিষ্টি চাহনী। ঐ অদ্ভুত চেয়ারে বসে থাকা সত্ত্বেও, বাম দিকে উনার ছায়াটা তখন অনেক লম্বা দেখাচ্ছে।

হঠাৎই বলল, “কি মা’র কথা ভাবছ?” আসলেই তাই ভাবছিলাম। মা’কে ছাড়া আমি বেশিক্ষণ একা থাকতে পারিনা। বন্ধুকে ফিসফিস করে বললাম, ‘বাসা’।

আমার রুমের কাঁচের জানালাটা ছাদ থেকে মেঝে অব্দি ছড়ানো। আমি পর্দা সরিয়ে দেই। শুয়েছি। ঘুম পেয়েছে খুব। টের পাচ্ছি, ঘরে মা এসেছে। কাঁথাটা আমার কাঁধ অব্দি টেনে দিয়ে, কেন যেন দাঁড়িয়ে থাকলেন খানিকখন। আমার দিকে তাকিয়ে। তারপর, নিরবে চলে গেলেন। জোছনা মা’র খুব পছন্দ। প্রতি মাসের যে রাতে রূপালী থালার আকার ধারন করে চাঁদ আকাশে ওঠে, সে রাতে নিয়ম করে মা-বাবা বাড়ির সব আলো বন্ধ করে হাতে চা নিয়ে বারান্দায় বসেন। অনেক রাত জেগে কথা বলেন। মা গুনগুন করে গান করেন।

চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। তবে হালকা নীলাভ আলো তেরছাভাবে ঘরে ঢুকছে। আমি ভাবছি, আজ রাতের চাঁদ কি ইংরেজি অক্ষর “সি” নাকি ‘ডি’-এর মতন দেখতে। বাবা বলেছেন, ইংরেজি ‘সি’ এর মত দেখতে হলে, ক’দিন পর অমাবস্যা। আর ‘ডি’ এর মত হলে পূর্ণিমা। যখন এইসব আগাপাশতলা ভাবছি, তখনই ও’ এসে হাজির। বলল, ‘চল যাই’। আমিও বললাম, ‘চল’।

গেল সপ্তাহে চুল কাটার কথা ছিল। বিভিন্ন কারণে আর সেটা হয়ে ওঠেনি। এখন বাতাসে চুল উড়ে আমার চোখে এসে লাগছে। উঁচু থেকে আমাদের বাড়ির পাশের রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে। সবকিছু আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যাচ্ছে। মেঘের মেলা পার হয়ে আমরা উপরে উঠছি। আরো উপরে। নিকষ কাল আকাশের মাঝে মাঝে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে পৃথিবী, আমাদের নীল পৃথিবী। ভেসে যাচ্ছি, আমি ভেসে যাচ্ছি। অযুত-নিযুত তারার দল মিটিমিটি জ্বলছে। ডান থেকে বামে ঘন স্রোতের আদল নিয়ে অসংখ্য তারা। ও বলল, এটা ছায়াপথ। নাম, ‘আকাশ গঙ্গা’। ও এই বুঝি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি! আমিতো জানিই, এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মাঝেই আছে আমাদের সৌরজগত। ঐ যে দেখ, উপবৃত্তের আকার নিয়ে লক্ষ-কোটি তারার আরেকটি গুচ্ছ দেখা যাচ্ছে। অনেকটা ডিমের মতন দেখতে। ও বলল, ওটা এ্যন্ড্রোমিডা। আহা, মিল্কিওয়ের পরে আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি ওটা। লাল রঙের মঙ্গল, কমলা আর সাদা রঙের বৃহস্পতি, হালকা সোনালী রঙের শনি ভেসে বেড়াচ্ছে কতগুলো বলয়ের মাঝে।

চাঁদ দেখেই মন খারাপ হয়ে গেল আমার। গাছ নেই। ফুল নেই। নরম ছোঁয়া মাখানো বাতাসও নেই। দূরের এত সুন্দর চাঁদ, কাছ থেকে দেখতে এ রকম এবরো-থেবড়ো? নীল পৃথিবীর কথা মনে পড়ল খুব। পৃথিবীর চেয়ে সুন্দর, সহনীয় আর কমনীয় আর কিছু কি এই মহাবিশ্বে আছে? থাকতে কি পারে?

বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পানির ঝাপটা আমার মুখে এসে পড়ছে। এ কিভাবে সম্ভব? আমিতো জানি চাঁদে বৃষ্টি হয়না। তবে কি মঙ্গলের এসিড বৃষ্টি? অথবা নেপচুনের হীরা? ভয় হচ্ছে আমার। বুকের ভিতর ধরফর করছে। কি হচ্ছে এসব?

এই কি রে? উঠিস না কেন?
গলাটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে? এখানে এ চাঁদের দেশে, এ আবার কে আসল?
ঝাপসা দেখছি... ছবিটা পরিস্কার হতেই, আরে এত মামা! বাম হাতে পানি ভর্তি বাটি। ডান হাত সেখানে ভিজিয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে আমার মুখের উপর।

মামা বাড়িতে আসা মানেই হট্টগোল। মা’র মুখে চওড়া হাসি। বাবা আর মামা কি নিয়ে যেন কথা বলছে আর তুমুল হাসাহাসি করছে। দমকে দমকে হাসি। বাবার গলা শুনতে পাচ্ছি, ‘আরে শোন মিয়া......’

আমি মৃদু পায়ে বারান্দায় এসে বসেছি। মা’র কামিনী গাছে ফুল এসেছে। কি সুন্দর তার গন্ধ! ভোরের কমলা আলো এসে পড়েছে কামিনী গাছটায়। বাতাস বইছে। আমি একদৃষ্টিতে গাছটির ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ছায়াটা আস্তে আস্তে ছোট হচ্ছে। কোত্থেকে যেন লাল রঙের বুটিদারওয়ালা একটা প্রজাপতি এসেছে। ছোট্ট পাতার উপর বসতে চাইছে। বসা মাত্রই পলকা পাতাটা নিচু হয়ে যাচ্ছে। আর প্রজাপতিটা তখন উড়ে গিয়ে আবার আরেকটা পাতায় বসার চেষ্টা করছে। কাল রঙের কতগুলো পিঁপড়া এক সারিতে কোথায় যেন যাচ্ছে। স্টিভ কি বলতে পারবে, পিঁপড়ার দল কেন সবসময় সারি বেধে চলে? স্টিভ বলেছিল, এই পৃথিবী অনিন্দ্য সুন্দর। এর কারণেই আমরা বেঁচে আছি। এর ভাল-মন্দ আমাদের দেখতে হবে। পৃথিবীকে আদর করতে হবে। আমি গুনগুন করছি আর বলছি, “ভালবাসব। আদর করব। আমি করব।"
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×