মুক্তমনা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন এওয়ার্ড পেয়েছেন। সূত্র – প্রথম আলো, ১২ আগষ্ট ২০১৪, পৃষ্ঠা ১, কলাম ১।
অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারী কিন্তু ক্ষুদ্র একটা ইসলাম বিদ্বেশী লেখালেখি চক্রের সক্রিয় সদস্য আসিফ মহিউদ্দিন। নোংরা - কূটচালে পারদর্শি, জ্ঞান পাপী এবং মেধাবী এই গোষ্ঠীর একমাত্র কাজ অযৌক্তিক ইসলাম বিরোধিতা।
২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলন চলার কোন এক টলটলায়মান দিনে আরো তিনজনের সাথে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, ধর্ম বিদ্বেশী কথা লেখার অপরাধে। অভিযোগ আছে, থাবা বাবার অকাল মৃত্যুর পর সুরক্ষা দিতে পুলিশের কাষ্টডিতে তাদের সেইফ হোমে রাখা হয়েছিল।
আসিফ মহিউদ্দিন, থাবা বাবা (রাজিব হায়দার), অভিজিত রায়, সুব্রত শুভদের লেখায় একটা ব্যাপার অত্যন্ত কমন। সেক্যুলারিজমের আবরনে যুক্তি ও বিজ্ঞানের অপব্যাবহার করে কূট তর্ক উপস্থাপন ও ইসলাম বিরোধিতা। সেসব লেখার গুনাগুন এমনই যে, মৃত্যুর পর থাবা বাবার সব লেখা সরিয়ে ফেলা হয়েছিল জনরোষ থেকে ব্লগারদের মুক্তি দিতে।
Limitation of Freedom of Expression:
International Covenant on Civil and Political Rights (Universal Declaration of Human Right) এর ১৯ নম্বর আর্টিক্যালে পরিষ্কার করে বলা আছে, "the right to freedom of expression… therefore be SUBJECT TO CERTAIN RESTRICTIONS " when necessary "[f]or respect of the rights or reputation of others" or "[f]or the protection of national security or of public order (order public), or of public health or morals"
মানবাধিকারের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ১৯৭৩ সালে মিলার বনাম ক্যালিফোর্নিয়া মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, “obscene materials do not enjoy First Amendment protection”। সামাজিক দায়বদ্ধতা বা SOCIAL VALUE কে সেই মামলায় redefine করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের আইনঃ
বাংলাদেশ পেনাল কোডের ২৯৫এ ধারা অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃতভাবে অপরের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের শাস্তি জেল সাজা।
ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৯৯ ধারা, শত্রুতা তৈরী করতে এমন কিছু ছাপা হলে, সংবাদপত্র আটক করার ক্ষমতা দিয়েছে সরকারকে।
২০০৭ সালে প্রথম আলোর আলপিনে কার্টুন ছাপার অপরাধে কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমানকে জেলে যেতে হয়েছিল। সুমন্ত আসলামের চাকরী গিয়েছিল।
একই বছর সাপ্তাহিক ২০০০ এর ঈদ সংখ্যা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল একই ধরনের কারনে।
ইন্টারনেটের সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমে গত কিছুদিন ধরে একটা ছবি দেখা যাচ্ছে। যেখানে হাস্যজ্জ্বল আসিফ আর তসলিমার সামনে দু’টো কোরান শরীফের উপর চায়ের কাপ রাখা হয়েছে। এবং এ কাজটা করা হয়েছে, সুচিন্তিতভাবে। এমনভাবে যেন, কোরান লেখাটা দেখা যায়।
“সন্ত্রাস আর ভায়োলেন্স – দেশ, জাতি, কাল, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে পরিত্যায্য”
মানবাধিকার, বাক কিংবা লেখকের স্বাধীনতা কোন লাগামহীন ঘোড়া নয়। সমস্যা হয় তখন, যখন ইউরোপ এবং পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এন্টি সেমেটিজমের নামে জায়নবাদকে সুরক্ষা দিয়েছে। বুশ জুনিয়র ২০০৪ সালে গ্লোবাল এন্টি সেমেটিজম আইন স্বাক্ষর করেছেন। যেই আইনের বলে, ‘এক অর্থে’ যুক্তরাষ্ট্র জগতজুড়ে জায়নবাদকে প্রতিষ্ঠা দিতে সংকল্পবদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও জায়নবাদ সুরক্ষার প্রমান রয়েছে। কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় (১৯২০~১৯৪০) ইহুদী ছাত্রদের জন্য বিশেষ কোটা ছিল।
এন্টি সেমেটিজম আইন থাকার কারনে পশ্চিমাবিশ্বের অনেক দেশেই ইহুদীবাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা/করা দন্ডনীয় অপরাধ। এই আইনের পরিধি এতই বিস্তৃত যে, একদম একাডেমিক কারনে ইহুদীবাদ নিয়ে লেখালেখিকেও কোন ছাড় দেয়া হয়না। মদ্যপ অবস্থায় মেল গিবসন একবার বলেছিলেন, "F****** Jews. The Jews are responsible for all the wars in the world." তারপরের কাহিনী ইতিহাস। বিশ্বজুড়ে পশ্চিমা মিডিয়া ফুঁসে উঠেছিল।
কোন জাতি, ধর্ম বা সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দেয়া অপরাধ নয়। গোল বাধে তখন যখন ইসলাম বিদ্বেশী
কিছু বললে/লিখলে মিডিয়া কোন সমস্যা দেখে না। শুধু ইহুদী বিরোধী কিছু বললেই সমস্যা।
মহানবীকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপার পর ডেনিশ সরকার প্রধান বলেছিলেন, তার দেশ বাক স্বাধীনতা আর মানবাধিকার রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
সালমান রুসদীর স্যাটানিক ভার্সাস হয়ে যায় লেখক স্বাধীনতার দলিল।
২০০৮ সালে ডাচ পার্লামেন্টারিয়ান গ্রীট উইল্ডার্স ‘ফিতনা’ নামে ১৭ মিনিটের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এই চলচ্চিত্রের মূল দর্শনই ছিল, ইসলাম বিরোধীতার নামে সন্ত্রাসবাদ, নারীর স্বাধীনতা, সমকামীতা নিয়ে ইসলাম আর পশ্চিমা বিশ্বের দ্বন্দ্বের ভুল ব্যাখ্যা।
Section 12 of the Canadian Human Rights Act states that “it is a prohibited discriminatory practice to “publish or display” “any notice, sign, symbol, emblem or other representation” that “expresses or implies discrimination or an intention to discriminate” or “incites or is calculated to incite others to discriminate” against an identifiable group”.
Article 20(2) of ICCPR (International Covenant on Civil and Political Rights) states, “any advocacy of national, racial or religious hatred that constitutes incitement to discrimination, hostility or violence shall be prohibited by law”
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইন ঠিক এভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কে সুরক্ষা দিয়েছে।
তারপরও ডাচ এবং বৃটিশ সরকার “ফিতনা” নামের চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও দুটি দেশের কোর্টই পরবর্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
জায়নবাদ নিয়ে শুধুমাত্র লেখা বা বলা নয়, গবেষনাও এন্টি সেমেটিক আইন নামের ছাতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে ইসলাম বিরোধী কিছু লিখলে বা বললেই The Universal Declaration of Human Rights নামের বর্মটি সামনে চলে আসে। তখন বিভিন্ন জাতীয় আইন অথবা Article 19 or 20(2) of ICCPR উহ্য হয়ে যায়।
এন্টি সেমেটিক আইনের কারন হিসেবে প্রথম ক্রুসেড, স্পেন থেকে ইহুদীদের বিতারন, কসাক হত্যাযজ্ঞ এবং অবশ্যই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলা হয়।
১৯৪৮ থেকে আজ অব্দি ফিলিস্তিনের করুন ইতিহাস, বসনিয়ায় সার্ব হামলা, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়াসহ অন্যান্য বহু দেশে মুসলিম হত্যাযজ্ঞ, প্রেস-ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে ইসলাম নিয়ে নিরন্তর মিথ্যাচার আজ এমন এক পর্যায়ে পৌছেছে যে, এন্টি সেমেটিক আইনের আদলে এন্টি ইসলামিক আইন ইউরোপিয়ান/আমেরিকান আদালতে পাশ করার জন্য অবিলম্বে দাবী করা উচিত।
সারাবিশ্ব শান্তি আর সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য এর চেয়ে ভাল আর কোন বিকল্প এমুহুর্তে নেই মনে হয়।
++++++++++++++++
--- সাইফুল্লাহ
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:২৮