প্রিয় সান্টাক্লজ,
আমি পুরো বছরই লক্ষী হয়ে ছিলাম এবং মোটেও দুষ্টুমি করিনি। তাই এ বছর ক্রিসমাসে আমি একটি বড় টেডিবিয়ার চাই।
ইতি
অ্যানি
উপরের চিঠিটা খুবই সাধারণ, তাই না? পড়ে বোঝাই যাচ্ছে কোনো বাচ্চার লেখা চিঠি। কিন্তু আপনি জানেন কি, সারা বিশ্বের অসংখ্য শিশু সান্টাক্লজকে এমন চিঠি লিখে থাকে? এর কারণ আর কিছুই না, সান্টাকে জানানো যে সে ভালো ছেলে বা মেয়ে এবং উপহার পাওয়ার যোগ্য।
অনেক দেশেই বড়দিনকে ঘিরে উপহার আদান-প্রদানের প্রথা প্রচলিত রয়েছে। আর এই উপহার আদান-প্রদানের সাথে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু পৌরাণিক চরিত্র। এর মধ্যে সান্টাক্লজ অন্যতম এবং সবচাইতে জনপ্রিয়। সান্টাক্লজ দেশভেদে সেইন্ট নিকোলাস, ফাদার ক্রিসমাস, ক্রিস ক্রিঙ্গল, বা সাধারণভাবে সান্টা নামে পরিচিত।
সান্টাক্লজ খুবই হাসিখুশি এবং আমুদে একজন মানুষ। প্রচলিত আছে যে, প্রতিবছর ক্রিসমাস ইভ বা ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা বা মধ্যরাতে ভালো ছেলেমেয়েদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাদের জন্য উপহার রেখে আসেন। এই কাজটি করেন তিনি খুব গোপনে, যাতে তাঁকে কেউ দেখতে না পারে! যারা উপহার পেতে চায় তারা ঘরের ফায়ারপ্লেসের কাছে মোজা ঝুলিয়ে রাখে। কারণ সান্টাক্লজ ফায়ারপ্লেসের চিমনি দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেন এবং মোজার ভেতর উপহার রেখে যান। সান্টাক্লজকে চেনার উপায় হলো তাঁর পরনে থাকে সাদা কলার ও কাফযুক্ত লাল কোট, সাদা কাফযুক্ত লাল ট্রাউজার্স, কালো চামড়ার চওড়া বেল্ট ও জুতো। সাথে তাঁর বিখ্যাত শ্বেতশুভ্র দাড়ি এবং "হোঃ হোঃ হোঃ" হাসি।
সান্টাক্লজ একটি কিংবদন্তী চরিত্র। তাঁকে ঘিরে রয়েছে নানা লোককথা, উপকথা। এসব কিংবদন্তী অনুসারে সান্টাক্লজের বসবাস সুদূর উত্তরে চিরতুষারআবৃত এক দেশে। এটাও ধারণা করা হয় যে সান্টাক্লজ উত্তর মেরুতে বসবাস করেন। সান্টাক্লজের সাথে তাঁর স্ত্রী মিসেস ক্লজ, অসংখ্য জাদুক্ষমতাসম্পন্ন এলফ এবং আট-নয়টি উড়ন্ত বলগা হরিণও বসবাস করে। বলা হয়ে থাকে, সান্টা সারাবিশ্বের শিশুদের সারা বছরের আচরণ দেখে বিশেষ তালিকা প্রস্তুত করে থাকেন।
শিশুদের দুভাগে ভাগ করা হয় - দুষ্টু ও লক্ষী। তারপর তিনি ইভ ক্রিসমাসের দিনে লক্ষী শিশুদের খেলনা, চকলেট ও অন্যান্য উপহার দিয়ে যান। আর কখনো কখনো দুষ্টুদের দিয়ে যান কয়লা উপহার। তিনি এই কাজগুলি সম্পন্ন করেন এলফ আর বলগা হরিণদের সাহায্যে। সান্টাক্লজের রয়েছে খেলনা আর উপহার তৈরির কারখানা। সারা বছর এলফরা এই কারখানায় উপহার তৈরি করে। এই উপহারগুলোই সান্টা তালিকা ধরে ধরে শিশুদের দিয়ে যান। এ কাজেও তাঁকে সাহায্য করে এলফরা। সান্টাক্লজের উপহারে ভরা শ্লেজগাড়ি টেনে নিয়ে আসে আট-নয়টি উড়ন্ত বলগা হরিণ। এই শ্লেজগাড়িতে চড়েই তিনি এক রাতে সারা পৃথিবীর শিশুদের উপহার পৌঁছে দেন।
সান্টাক্লজ নামটি আসলে ডাচ সিন্টারক্লাস নামের অপভ্রংশ, যার সাধারণ অর্থ হলো সেইন্ট নিকোলাস। সেইন্ট নিকোলাস ছিলেন খ্রিষ্টিয় চতুর্থ শতাব্দীর একজন বিশপ। অন্যান্য সন্তসুলভ অবদানের পাশাপাশি তিনি শিশুদের পরিচর্যা, দয়া ও উপহার প্রদানের জন্য খ্যাতনামা ছিলেন। অনেক দেশে তাঁর সম্মানে ৬ ডিসেম্বর উপহার আদান- প্রদানের মাধ্যমে উত্সব পালিত হয়। পরে ধীরে ধীরে এ উত্সবটি চলে আসে বড়দিনের আগের দিন অর্থাত্ ২৪ ডিসেম্বর। আর তারপরেই জন্ম নেয় সান্টাক্লজের এই আখ্যান। কিন্তু আসলেই কি সান্টাক্লজ উপহার রেখে যান? না, বাবা-মা বাড়ির বায বড়রাই ছোটদের জন্য গোপনে একফাঁকে উপহার রেখে দেন। আর সান্টাক্লজের গল্পটি তাঁরা এ কারণেই বলেন যেন শিশুরা ভালো কাজ করতে, ভালো হয়ে চলতে উত্সাহ পায়।
সান্টাক্লজের উপহারের পাশাপাশি আরেকটি জিনিস ছাড়া বড়দিন পূর্ণ হয় না বললেই চলে, আর তা হলো ক্রিসমাস ট্রি। খ্রিষ্টানপ্রধান দেশগুলোতে ক্রিসমাস ট্রি জাতীয় সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির একটা অংশ। এই ক্রিসমাস ট্রিকে ঘিরেও রয়েছে নানান গল্প।
অনেক অনেক দিন আগে রোমে একদিন এক দরিদ্র শীতার্ত শিশু হাজির হয় গরিব এক কাঠুরের ঘরে। দরিদ্র এই কাঠুরে দম্পতি ছিলেন যিশু ভক্ত। তাঁরা শিশুটিকে ঘরে নিয়ে নিজেদের খাবার খাওয়ালেন। শিশুটিকে নরম বিছানায় শুতে দিয়ে নিজেরা শুলেন শক্ত কাঠের ওপরে। সকালে সেই শিশু দেবদূতের রূপ ধরে বললেন, তিনিই স্বয়ং যিশু। কাঠুরে দম্পতির আচরণে খুশি হয়ে একটি গাছের টুকরা দিয়ে শিশুরূপী যিশু বললেন সেটা মাটিতে পুঁতে দিতে। দম্পতি তাই করলেন। এর পরের ক্রিসমাসে দেখা গেল ওই ডালটি সোনালি আপেলে ভর্তি হয়ে গেছে।
ক্রিসমাসের দিন এ ঘটনা হলো বলে তারা এই গাছের নাম দেন ক্রিসমাস ট্রি। আরেক কাহিনীতে একই রকম একটি গরিব শিশুর কথা বলা হয়েছে। শিশুটি কিছু পাইনগাছে বিক্রি করতে এক গির্জায় যায়। শিশুটি গির্জার মালিকে কিছু পয়সা দেয়ার অনুরোধ করে যাতে সে ক্রিসমাসে কিছু কিনতে পারে। গাছগুলো মালির পছন্দ না হলেও সে দয়া করে গাছগুলো রেখে দেয়। পরে সে গাছগুলো পুঁতে দেয় গির্জার পাশে। পরদিন ক্রিসমাসের ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সে দেখে এক আজব ব্যাপার! ওই গাছগুলোর মধ্যে একটি এক রাতেই বিশাল বড় হয়ে গির্জার চূড়া ছাড়িয়ে গেছে, অজস্র তারার আলো ঠিকরে পড়ছে তার চূড়া আর ডালগুলো থেকে। ক্রিসমাসের দিন এ ঘটনা ঘটে বলে সে গাছটির নাম রাখে ক্রিসমাস ট্রি। পরে ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে বড়দিনের দিন ঘর সাজানোর প্রথা চালু হয়।
------------প্রিয়-------------------