سم الله الرحمن الرحيم
সকল প্রশংসা আল্লাহর। অসংখ্য দরুদ নাযিল হোক তাঁর নবীর উপর বারবার।
ধরুন, সাহেদ নামক ব্যাক্তি আদালতে কেস করলো যে, তারেক তার ঘরে চুরি করেছে।এরপর কোর্টে বাদী বিবাদী হাজির হলে পর বিচারক তারেককে বললো যে, তোমার নামে চুরির অভিযোগ এসেছে। এ ব্যাপারে তোমার কি বক্তব্য? তখন তারেক বললোঃ আমি কিভাবে চুরি করতে পারি? সাহেদের ঘরে তো তালা লাগানো ছিলো। তখন সাহেদ বললো, তালা ভেঙ্গে চুরি করা হয়েছে। আচ্ছা বলেন তো, এখন বিচারক যদি এই ফায়সালা দিয়ে দেয় যে, অতএব তারেক চুরি করেছে বলে সাব্যস্ত হলো; তাহলে এটা কি ঠিক বিচার হবে?
আবার চলেন ফিরে যাই মামলার শুরুতে। ধরেন বিচারকের সামনে তারেক বললো যে, আমি যদি চুরি করতাম, তাহলে তো আমার হাতের ছাপ পাওয়া যেতো তালাতে , দরজাতে বা অন্য কিছুতে। কিন্তু আমার হাতের ছাপ যেহেতু পাওয়া যায়নি তাই আমি চুরি করিনি। তখন সাহেদ পাল্টা জবাব দিলো যে, হাতে গ্লাভস পড়ে থাকার কারণে হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি। আচ্ছা বলেন তো এখন বিচারক যদি এই ফায়সালা দিয়ে দেয় যে, অতএব তারেক চুরি করেছে বলে সাব্যস্ত হলো; তাহলে এটা কি ঠিক বিচার হবে?
যদি বলেন, বিচার ঠিক হয়নি; তাহলে কেন ঠিক হয়নি, সমস্যাটা আসলে কোথায়? আর যদি বলেন ঠিক হয়েছে, তাহলে কেমনে কি ?
প্লীজ কেউ যেন অপ্রোজনীয় মনে না করেন। এই দুই মামলার ফায়সালার উপরে ভিত্তি করে অন্য আরো মামলার ফায়সালা নির্ভর করছে। সবাইকে উদারতার সাথে অংশগ্রহণের বিনীত অনুরোধ করছি।
......................................................................................................
নীচে ৯নং কমেন্টে দেখুন এই মামলার রায় দেয়া হয়েছে।
তাহলে আমরা নীচের ৫,৬,৮ ও ৯ নং কমেন্টকারীদের বক্তব্য থেকে যা বুঝলাম তা হলোঃ
অদেখা কোন একটা কিছু যেমন ধরেন "এক্স" । সাহেদ দাবী করলো যে, এক্স জিনিসটা আছে বা ঘটেছে। আর তারেক দাবী করলো যে এক্স জিনিসটা নাই বা ঘটেনি। এখন যেহেতু এক্স জিনিসটা কেউ চাক্ষুষ দেখেনি , আর সাহেদ যেহেতু দাবী করেছে যে, এটা ঘটেছে তাই তাকেই এটা ঘটেছে বলে প্রমাণ দেখাতে হবে। তারেকের কাছে আগে তার দাবীর প্রমাণ চাওয়া ঠিক নয় । এবং তারেক যে দাবী করেছে যে "এক্স ঘটে নাই" এর পক্ষে কোন প্রমাণ যদি সে দিতে না পারে ,বা কোন প্রমাণ দেয়ার পর সাহেদ যদি সেটা খণ্ডন করে ফেলে, এতে কিন্তু সাহেদের দাবী প্রমাণিত হবেনা। সাহেদের দাবী প্রমাণিত হতে হলে তাকেই তার দাবীর পক্ষে আলাদা প্রমাণ দেখাতে হবে। তানাহলে তো, এরকম কত কিছুই আমরা ঘটেনি বলে প্রমান করতে পারবো না। আমেরিকাতে কাল রাতে কোন বোমা বিস্ফোরণ হয়নি, মস্কোতে গতকাল কোন ভূমিকম্প হয়নি, দিল্লীতে গতকাল কোন শিলাবৃষ্টি হয়নি ইত্যাদি হয়নি বলে আমি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়া মানে কিন্তু এই নয় যে এগুলো ঘটেছে। যে ঘটেছে বলে দাবী করবে তাকেই নির্ভরযোগ্য সূত্র উল্লেখ করতে হবে ।
উপরের কথাগুলো যদি বুঝে থাকেন তাহলে আশা করি নীচের ব্যাপারগুলোও বুঝবেন। আর এখানে আমি কিছু প্রমাণ বা অপ্রমাণ করতে এই পোষ্ট দেইনি, শুধু তর্ক বিতর্কের ক্ষেত্রে একটা ছোট্ট ভুল ধরিয়ে দেয়াই উদ্দেশ্য।
১-বিবর্তনবাদীরা যখন দাবী করে যে, মানুষ এসেছে একটা বানর জাতীয় প্রানী থেকে বিবর্তিত হয়ে; তখন তাদের সাথে বিতর্ক করতে গিয়ে আমরা অনেকে একটা ভুল করি। সেটা হলো আমরা অনেকে তাদের কাছে তাদের দাবীর প্রমাণ না চেয়ে, আমরাই আগে বেড়ে দেখাতে চাই যে, এরকম ঘটা অসম্ভব বা এরকম ঘটেনি।যেমন কেউ বলে যে, আরে ভাই বানর জাতীয় কিছু থেকে মানুষ আসলে মানুষের তো লেজ থাকার কথা, কিন্তু মানুষের যেহেতু লেজ নেই, অতএব বুঝা গেলো মানুষ কোন বানরীয় কিছু থেকে আসেনি। তখন বিবর্তনবাদীরা পাল্টা একটা জবাব দিয়ে দেয় যে, অমুক কারণে লেজ খসে পড়েছে। তো বিবর্তনবাদীর এই ব্যাখ্যা দেয়ার দ্বারা কিন্তু এটা কখনো প্রমাণিত হলো না যে, মানুষ বানরীয় কিছু থেকে এসেছে। তাহলে কি প্রমাণ হলো? হ্যাঁ, তার কথা থেকে এটা বুঝা গেলো যে, আস্তিক যে যুক্তি দিয়ে বিবর্তনবাদ ঘটা অসম্ভব বা ঘটেনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলো সেই যুক্তিটা ঠিক নয়।কিন্তু তার মানে এই নয় যে, মানুষ বানরীয় কিছু থেকে এসেছে। যে এটা দাবী করবে, তাকেই আগে এর জন্য আলাদা প্রমাণ দেখাতে হবে। (ভালো করে খেয়াল করুন, তারা আলাদা প্রমাণ দিয়েছে কি দেয়নি; সেগুলো ঠিক না বেঠিক এসব বর্ণনা করা কিন্তু আমার এই পোষ্টের উদ্দেশ্য নয় )
২- মহাবিজ্ঞানী টলেমীর দাবী ছিলো যে, আমাদের এই সৌর জগতের কেন্দ্র হচ্ছে পৃথিবী। এবং পৃথিবীকে কেন্দ্র করেই সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহগুলো ঘুরছে । তিনি তার আল মাজেস্ট নামক বইয়ে এই সম্পর্কে বিস্তারিত যুক্তি প্রমাণ তুলে ধরেন। এই মতবাদের উপর প্রথম বড় ধরনের আঘাত আসে কোপার্নিকাসের পক্ষ থেকে On the Revolutions of the Heavenly Spheres নামক বইয়ে। সে মঙ্গল গ্রহের রেটড়োগ্রেড মোশন বা পশ্চাদ্গতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে থিওরী দিলো যে, সূর্যই সৌর জগতের কেন্দ্র এবং পৃথিবী স্থির নয় বরং ঘুরছে ঘন্টায় ১০০০ মাইল বেগে। আমরা খালি চোখে যেটা দেখি, কোপার্নিকাস যেহেতু সেটার উল্টা দাবী করেছে, তাই তারই দায়িত্ব তার দাবীর পক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ দেখানো। যাইহোক, তখনকার টলেমীপন্থীরা আগে বেড়ে কোপার্নিকাসের বিরুদ্ধে একটি যুক্তি এই দিতো যে, পৃথিবী যদি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে এত জোড়ে ঘুড়তই, তাহলে একটা বল সোজা উপর দিকে ছুরে মারলে, সেটা আর আমাদের হাতে এসে পড়তো না, বরং অনেকখানি পশ্চিম দিকে পড়তো। কিন্তু তাতো হয়না; অতএব বুঝা গেলো যে, পৃথিবী ঘুরছে না, পৃথিবী স্থির। তো কোপার্নিকাস এই প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তীতে গ্যালিলিও তার Dialogue Concerning the Two Chief World Systems নামক বইয়ে এই যুক্তি খণ্ডন করেন, তার বিখ্যাত প্রিন্সিপাল অফ রিলেটিভিটি প্রদানের মাধ্যমে।তিনি মোটামুটি এমন দেখিয়েছিলেন যে, স্থিরবায়ুতে সমবেগে পানিতে চলমান একটি জাহাজের ডেকে থেকে কেউ যদি কোন বল উপর দিকে নিক্ষেপ করে তাহলে বলটি তার হাতে এসেই পড়বে, পিছনে পরবে না। বলটা হাতে এসে পরা মানে এই নয় যে, জাহাজটি চলছে না। তেমনি কথা পৃথিবীর ক্ষেত্রেও খাটে। তো যাইহোক, আমি যেটা বলতে চাচ্ছি যে, এই যে গ্যালিলিও টলেমীপন্থীদের ঐ যুক্তি খণ্ডন করে দিলেন, এর দ্বারা কিন্তু এটা প্রমাণ হয়না যে, পৃথিবী ঘুরছে। ঐ যেমন নাকি সাহেদ তারেকের যুক্তি খণ্ডন করলেই প্রমাণ হয়না যে, তারেক চোর। বরং এর জন্য আলাদা প্রমাণ দেখাতে হয়। তেমনি পৃথিবী যে ঘুরছে এর জন্যও আলাদা প্রমাণ দেখাতে হবে, টলেমীপন্থীদের যুক্তি শুধু খণ্ডন করলেই হবেনা।(( উল্লেখ্য যে, টলেমীর বিপক্ষে গ্যালিলিও যেসব যুক্তি দেখিয়েছিলো সেগুলো এক পর্যায়ের যুক্তি হলেও, মোটেই কোন অকাট্য যুক্তি ছিলোনা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা গ্যালিলিওর মতবাদকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে যেহেতু এটা ধর্মের বিরুদ্ধে যায়, সেজন্য। শুধু তাই নয় একটা সম্ভাব্য থিওরীকে অকাট্য সত্য বলে পৃথিবীর মানুষকে গিলিয়ে আসছে শত শত বছর ধরে এবং দাবী করে আসছে যে, ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞান বিরোধী কথা আছে। এরচেয়ে বড় দাগাবাজি আর জোচ্চুরি কি হতে পারে।)) (অবশ্য পৃথিবী স্থির না ঘূর্ণায়মান এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও অকাট্য অর্থ প্রদানকারী কোন আয়াত কোরআনে নেই; তবে স্থিরতার পক্ষে ইঙ্গিতমূলক আয়াত আছে। এখানে দেখুন সূরা ফাতিরের ৪১ নং আয়াত। ) আমু ব্লগের বিখ্যাত ব্লগার রাসেল চাচুর একটি লেখার কিছু অংশ এখানে তুলে ধরলাম
যদিও কোপার্নিকাসের সৌরকেন্দ্রীক মহাবিশ্বের সাথে টলেমী এরিস্টটলের পৃথিবীকেন্দ্রীক মহাবিশ্বের তেমন তফাত নেই, বলা যায় একটা অপরটার সামান্য সংশোধন। একটা অন্যটার চেয়ে মহৎ, বৈপ্লবিক কিংবা সত্য এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সৌরকেন্দ্রীক মতবাদে গ্রহগুলোর গতিপথ আরও সহজে ব্যাখ্যা করা যায়- এই সুবিধাটুকুর বাইরে ধারণাগত দিক থেকে কিংবা অন্য যেকোনো শ্বাশতসত্যের দিক থেকে বিবেচনা করলে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও- কেপলারের সৌরকেন্দ্রীক মহাবিশ্বের সাথে ধর্মবেত্তা ও মন্দির-মসজিদ-গীর্জার পুরোহিতদের অতীতের পৃথিবিকেন্দ্রীক মহাবিশ্ব ধারণার তেমন পার্থক্য নেই।
কি? কথা বুঝতে ও মানতে পারলেন না? তাইতো? দেখেন তাহলে আপনারা যাকে মানসিকভাবে পূজা করেন সেই আইনস্টাইন কি বলেছেন
"The struggle, so violent in the early days of science,
between the views of Ptolemy and Copernicus would then
be quite meaningless. Either coordinate system could be
used with equal justification. The two sentences, 'the sun
is at rest and the earth moves,' or 'the sun moves and the
earth is at rest,' would simply mean two different
conventions concerning two different coordinate systems."
(Einstein and Infeld, The Evolution of Physics, p.
212 (248 in 1938 ed)) আসলে এই কথাগুলো আপনি তখনই ভালো করে বুঝতে পারবেন যখন আপনি সাইন্টিফিক মেথড সম্পর্কে মুখস্থ জ্ঞানের পরিবর্তে বুঝের জ্ঞান রাখবেন। এই পোষ্টটি পড়ে সাইন্টিফিক মেথড সম্পর্কে বুঝের জ্ঞান হাসিল করুন।
৩-এই চুরির মামলা থেকে আমরা এটাও বুঝতে পারি যে, প্রমাণ আস্তিককেই দিতে হবে, নাস্তিককে নয়। কিন্তু কোন আস্তিক প্রমাণ দিতে পারলোনা মানে এই নয় যে, নাস্তিকের দাবী প্রমাণ হয়ে গেছে। নাস্তিককে তার দাবী সাব্যস্ত করতে হলে আলাদা প্রমাণ দিতে হবে।
৪- আমেরিকা দাবী করেছে যে, তারা চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছে। তারা যেসব ছবি আর ভিডিও আমাদেরকে দেখিয়েছে এগুলো কিন্তু আমাদের চোখের আড়ালে হয়েছে। তাই এগুলো আসল না নকল সেই প্রশ্ন উঠেছে। নাসার দাবী এগুলো আসল। তাই এর প্রমাণ তাদেরকেই দিতে হবে। এদিকে যারা এগুলোকে নকল বলতে চায়, তারা নাসার প্রমাণ দিতে অক্ষম হওয়ার কারণে অনেক সময় নিজেরাই আগে বেড়ে প্রমাণ করতে চায় যে, এই ছবিগুলো আসলে নকল। তখন তারা যুক্তি দেয় যে, পতাকা কেন নড়ছিলো? কেন ছায়া পড়েছিলো ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর নাসা আবার চাপার জোড়ে তাদের যুক্তি খণ্ডন করে দেয়।(যদিও দেখতে হবে আসলেই খণ্ডন হয়েছে কিনা।) তো আমি এটাই বলতে চাচ্ছি যে, নাসার এই যুক্তি খন্ডনের দ্বারা কিন্তু ছবিগুলো আসল বলে প্রমাণ হবে না। উপরের চুরির মামলার সাথে মিলান, তাহলেই বুঝবেন। ছবি/ ভিডিওগুলো আসল প্রমাণ করতে হলে তাদের আলাদা যুক্তি দেখাতে হবে। (ভালো করে খেয়াল করুন, তারা আলাদা প্রমাণ দিয়েছে কি দেয়নি; সেগুলো ঠিক না বেঠিক এসব বর্ণনা করা কিন্তু আমার এই পোষ্টের উদ্দেশ্য নয় )
আল্লাহ্র অস্তিত্বঃ আস্তিক ও নাস্তিকের যুক্তিতর্কঃ আমার উপলব্ধি -৩
মহাবিশ্বের শুরু এবং স্রষ্টার অস্তিত্বের অকাট্য প্রমাণ।
'হিগস' কণা কি আসলেই পাওয়া গেছে, নাকি ভাঁওতাবাজি ?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:০৫