৯ই ডিসেম্বর, ২০১৪- সাড়ে তিন লক্ষ লিটার তেল ছড়িয়ে পড়া
১৯ মার্চ, ২০১৬ - ১ হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে জাহাজ ডুবি, যেখানে নিম্ন মানের পিট কয়ালাও আছে
শুধু বাংলার সম্পদ বলে নয়, সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি অংশ। প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে
"সুন্দরবনে সাধারণত প্রতি লিটার পানিতে খাদ্যচক্রের প্রাথমিক উপাদান উদ্ভিদকণা থাকে ৩২৬টি। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে এই উদ্ভিদকণা ছিল ১০৩টি। আর দুর্ঘটনার পর পাওয়া গিয়েছিল ৩২টি। প্রাণিকণা থাকার কথা ৫৩টি, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বর্তমানে আছে ২২টি, দুর্ঘটনার পর পর যা ছিল ৭টি। পানিতে জৈব উপাদানের মাত্রা কেমন, তা নির্ধারণের জন্য সিওডি পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে, প্রতি লিটার পানিতে সিওডি ৬৮ মিলিগ্রাম। আর ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া গেছে ১৫৩ মিলিগ্রাম।
গবেষক দল তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকা জয়মণি, হারবাড়িয়া ও করমজলে এক বছর পরেও কোনো লোনা পানির পদ্মফুল দেখতে পায়নি। সুন্দরবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ফুলকে ওই এলাকায় আগে প্রায়ই দেখা যেত। বনের শ্বাসমূলে জড়িয়ে থাকা একধরনের লাল ও বাদামি শেওলা দেখা যায়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ওই দুই প্রজাতির শেওলা দেখা যাচ্ছে না। শেওলা দুটি সুন্দরবনের মাছের অন্যতম খাবার। দূষণ নেই এমন এলাকায় ২৭ থেকে ৩৩ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দেখা গেছে ১৫ থেকে ২৩টি।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কুমিরের বাচ্চা দেওয়ার স্থানগুলোতে গবেষণাকালে কোনো কুমির দেখতে পাওয়া যায়নি। দূষণ হয়নি এমন এলাকায় ৮ থেকে ১৪ প্রজাতির শামুক দেখা যায়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মাত্র ৪ প্রজাতির শামুক দেখা গেছে। এ ছাড়া সাপ, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন প্রাণী পর্যবেক্ষণ করে তা আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসতে দেখা গেছে।"
যদিও এমন কঠিন সমীক্ষার সবটাই মাথায় ঢুকবে না তবুও শামুকের ১৪ প্রজাতী থেকে ৪ প্রাজাতিতে নেমে আসা ও ২৭-৩৩ প্রজাতির মাছের মাঝে শুধু ১৫-২৩ প্রজাতিকে খুজে পাওয়া খুবই দুঃখজনক ও খারাপ সংবাদ। তার ঊপর মাত্র ১৫ মাসের ব্যবধানে একই শ্যালা নদীতে পিট কয়লা বহনকারী জাহাজ ডুবে যাবার ঘটনা সুন্দরবন এঁর আগামীকেই হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। ধারণা অনুযায়ী ১ হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন কয়লাসহ ডুবে যাওয়া জাহাজটি ৩০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে, যার অবস্থান দুইদিনেও মিলেনি। মিললেও পানির নিচ থেকে এতোগুলো কয়লা বের করে অন্য জাহাজে নিতে সপ্তাহ লেগে যাবে, আবার পানিতে ভিজে কয়লার ওজন বেড়ে যাবে এবং জাহাজ নিম্নগামী হতেই থাকবে। তাই অবস্থান নির্ণয়ের পর জাহাজটি কতো গভীরে থাকবে সেটাও ভাবনার বিষয়।
খুজে পাওয়া থেকে শুরু করে, কয়লা সরিয়ে নেওয়া পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১০ দিন সময়ে সব কাজ শেষ করলেও কয়লার বিষাক্ত পানি যে ১৫-২৩ প্রজাতির মাছকে ১০ প্রজাতির নিচে নামিয়ে আনবে না তা বলা মুশকিল। যেখানে ২০০৭ এর সুনামিতে বিধস্ত সুন্দরবন বছর না ফিরতেই তাঁর পুরানো রূপে ফিরে গিয়েছিল সেখানে ২০১৪ সালের তেলের ক্ষতি সুন্দরবনকে পঙ্গু বানিয়ে রেখেছে। সেই তেলের অভিশাপ আজও সুন্দরবনের কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সেখানে ১৫ মাসের মাঝেই এই বিষাক্ত কয়লা যে সুন্দরবনকে নিঃশেষ করে ফেলবে তা বুঝতে খুব বেশী জ্ঞানী হবার দরকার নেই। ২০১৪ তে তেল ডুবির পর শ্যামা নদী দিয়ে নউ-চলাচল বন্ধের দাবী করা হয়েছিল। কোন বিশেষ কারণে যা বাস্তবায়ন করা হয়নি, কিন্তু এবার কয়লা ডুবির পর নৌ-চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই সাময়িক বন্ধকে চিরস্থায়ী করতে হবে, যা এমনি এমনি হবে না।
কেন 'এমনি এমনি হবে না' এই বিতর্কে না গিয়ে দাবী জানান। আর দাবী কিভাবে আদায় করতে হয় বা হবে তা আমার চেয়ে আপনারাই ভালো জানেন। আসুন সুন্দরবনকে বাঁচাতে একসাথে কাজ করি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬