গতকাল ২১শে ফেব্রুয়ারি ছিল আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারে যা 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' নামে চিহ্নিত করা আছে। সারা বিশ্বের অনেকে এই দিবসটি পালন করে তবু বাংলাদেশের জন্য এটি একটি মহান দিবস। যা বিশেষভাবে পালন করা হয়, গতকালও পালন হয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় এই দিবস নিয়ে আমাদের অনেকেরি কিছু ভূল ধারণা আছে।
ছবিটি ২১ ও ২২ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ এ নিহত ভাষা সৈনিকদের
শুধু এবারই নয় প্রতিবার মহান এই দিনে বেশ কিছু ভিডিও পাওয়া যায়, যেখানে অনেকেই ২১ শে ফেব্রুয়ারির সঠিক ইতিহাস বলতে পারেনি। এখন 'না জানা' ও 'ভুল জানা' এর মাঝে পার্থক্য অনেক, 'না জানাকে' আমি তেমন কিছু মনে করিনা। কারণ কারও যে বিষয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, সে জানবে কেন এটাই বড় বিষয়। কিন্তু একটি মহান বিষয়ে ভুল ধারণা আসলেই খুব বড় অন্যায়। আজ যারা বিষয়টি নিয়ে ভুল ধারণা রাখে তারা আগামীতে তাদের সন্তান ও শিশুদের ভুল শিক্ষাই দিবে।
এখন কথা হচ্ছে এই না জানা বা ভুল জানার জন্য দায়ী কে?
প্রশ্ন যতো সহজে করা যায়, উত্তর যে ঠিক তেমনই হবে তা না। আমাদের ভাষার দাবী ও মুক্তিযুগ্ধ দুটোই আলাদা পেক্ষাপট। তবে হ্যা, দুই দাবীই আমাদের প্রানের দাবী ছিল আর ৭১ এর যুগ্ধে ৫২ এর আন্দোলন প্রভাবক হয়ে কাজ করেছে। কথা তা নয়, কথা ইতিহাস না জানার, আর এর জন্য দায়ী আমাদের শিক্ষক সমাজ, লেখক সমাজ।
কারণ ৭১এর মুক্তিযুগ্ধ নিয়ে আমাদের শতাধিক বই আছে, নেটে হাজারও কলাম আছে, চলচিত্র আছে। আমাদের পাঠ্য বইয়ে ৭জন বীরশ্রেষ্ঠ এর জীবনী আছে। শুধু তাই নয় এই যুগ্ধ নিয়ে হাজারও বিতর্ক এখনো চলছে। তাই বর্তমানে যে কোমল শিশুটি বেড়ে উঠছে সে না চাইলেও কিছু না কিছু জানছে। ছোট শিশুরা ১৬ই ডিসেম্বর নিজেদের উপস্থাপনার জন্য ইতিহাস জানছে, নাটিকায় অভিনয় করছে। কিন্তু ৫২এর ইতিহাস শুধু আমাদের রচনার বিষয়, তাও সেটা 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' নামে।
আমি বলছি না 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' কোন শত্রুর চাল, বা বাংলার ইতিহাস ঢাকার জন্য। কিন্তু এই আন্তর্জাতিক এর আড়ালে আমরা নিজেদের বাংলা কেই কিভাবে যেন হারিয়ে ফেলেছি। যেখানে বিশ্ব আমাদের ভাষাকে মর্যাদা দিচ্ছে সেখানে আমরাই সেই ভাষার ইতিহাস ভুলতে চলেছি। তাই এখনই কিছু পদক্ষেপ না নিলে ২১ শে ফেব্রুয়ারি হয়তো থাককে কিন্তু ৫২এর ইতিহাস হারিয়ে যাবে।
পদক্ষেপগুলো হতে পারে
# বীরশ্রেষ্ঠ এর জীবনী এর পাশাপাশি ভাষা শহীদের জীবনী যুক্ত করা।
# ৫২ এর শহীদদের নামে নতুন করে ডাক টিকেট ছাড়া।
# বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী হলগুলো তাদের নামে নামকরন করা।
# ২১ শে ফেব্রুয়ারি কে ঘিরে বিভিন্ন নাটক লেখা, যা এই দিনে শিশুদের দিয়ে উপস্থাপন করা যাবে।
# ২১ এর পেক্ষাপট নিয়ে চলচিত্র বানানো।
# কলেজের বইগুলোতে ৫২ এর পুরো পেক্ষাপটকে অন্তর্গত করা।
আমার এই ধারণা গুলো আপনাদের অনেকেরই ঢং মনে হতে পারে। কিন্তু জানেন কি, যখন শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া কোন রমণী মুক্তি যোগ্ধাদের ফুল দিতে যায় বলে উল্লেখ করে তখন দুঃখ হয়, যখন স্কুলজামা পড়ে কেউ ২১ এর ইতিহাস জানে না বলে উল্লেখ করে তখন কষ্ট হয়।
১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন 'বাংলা ভাষা ও বাঙালি' কে গিনেস বুকে স্থান করিয়ে দিলেও বাংলা ভাষাকে কতোজনের বুকে স্থান করিয়ে দিয়েছে তা ভাবনার বিষয়। এই বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে নিজের মহিমায় ও আত্বত্যাগের কারণে জায়গা নিয়ে আছে। আমাদের শুধু তা অন্তরে ধারন করতে হবে তা না হলে এতো রক্ত সবই বৃথা যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৬