ইতিবাচক মনোভাব একটি মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি যা আমাদের মনের ভাবনায়, চিন্তায়, কথায় এবং ভাবমূর্তিতে বিদ্যমান থাকে। ইতিবাচক মানসিকতা আমাদের কার্যক্রমকে বৃদ্ধি, বি¯তৃতি এবং সফলতার দিকে চালিত করে। ইতিবাচক মনোভাব একটি মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে ভাল এবং উপযোগিতা সম্পন্ন ফলাফল প্রত্যাশা করে। একটি ইতিবাচক মানসিকতা সম্পন্ন মন আনন্দ উপভোগ, সুস্বাস্থ্য এবং সফলতা সম্পন্ন ফলাফল প্রত্যাশা করে প্রতিটি পরিস্থিতি ও পদক্ষেপে। এর মাধ্যমে মন যে কোন যৌক্তিক প্রত্যাশার প্রাপ্তিকে নিশ্চিত করে পেতে চায়।
প্রতিটি মানুষই ইতিবাচক মানসিকতাকে গ্রহনযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য মনে করে না। কিছু মানুষ বিষয়টিকে নিবুদ্ধিতাসম্পন্ন এবং অন্য কিছু মানুষ ইতিবাচক মনোভাব পোষনকারিদের ও গ্রহনকারিদের উপহাস করে। ইতিবাচক মানসিকতা সম্পন্নদের অনেকেই জানে না কিভাবে এটিকে কার্যকরি করে ফলাফল পেতে হয়। তারপরও অনেকেই এই বিষয়টির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইতিবাচক মানসিকতা সম্পর্কিত অনেক বই, বক্তব্য ও কোর্স এর মাধ্যমে এর প্রমাণ উপস্থাপন করে। এটা এমন একটি বিষয় যা জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
বেশ সাধারনভাবেই লোকজনকে বলতে শোনা যায়, “ইতিবাচক চিন্তা করুন”। যে ব্যক্তি হীনভাবে চিন্তা করে ও দুশ্চিন্তা করে তাকে লক্ষ্য করেই এ কথা বলা হয়ে থাকে। অনেকেই এই শব্দগুলিকে গুরুত্বের সাথে নেয় না, এর মাধ্যমে সত্যিকারভাবে কি বুঝানো হয়েছে যেন তারা তা জানেই না, এগুলোকে প্রয়োজনীয় ও কার্যকরি কোন ব্যাপার বলে তারা বিবেচনা করে না। “ইতিবাচক মানসিকতা” বলতে কি বুঝায় এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা কত লোক যে বন্ধ করে দিয়েছে তা কি আপনি জানেন ?
এই শক্তি কিভাবে কাজ করে নিন্মোক্ত ঘটনার মাধ্যমে তা বুঝানো হয়েছে ঃ
নেতিবাচক চিন্তার দুর্বলতা ঃ এলেন (অষষধহ) একটি নতুন চাকুরীর জন্য আবেদন করেছে; কিন্তু সে নিজেই উক্ত চাকুরীটির জন্য তার যোগ্যতাহীনতার মানসিক দুর্বলতার মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি তার মধ্যে এমন ধারনা কাজ করছে যে সে অকৃতকার্য হবে এবং সফলতার ব্যাপারে তার মানসিক দৃঢ়তা অনেক কম, সে নিশ্চিত যে চাকুরীটি সে পাচ্ছে না। অথ্যাৎ নিজের সম্পর্কে তার রয়েছে একটি নেতিবাচক মানসিকতা। অপর দিকে তার মধ্যে এই বিশ্বাসও প্রবল যে অন্য আবেদনকারীরা তার চেয়ে ভাল ও যোগ্যতাসম্পন্ন।
চাকুরীর এন্টারভিউ সম্পর্কে এলেনের অতীত নেতিবাচক মানসিকতার কারণে এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটেছে।
এভাবে তার মন ছিল নেতিবাচক চিন্তায় পূর্ণ এবং চাকুরীর ইন্টারভিউয়ের পূর্বের পুরো সপ্তাহ চাকুরীর বিষয় নিয়ে তার মধ্যে ভয়ার্ত দুশ্চিন্তা নিয়ে কাজ করেছে। সে নিশ্চিত ছিল যে চাকুরী না পেয়ে সে প্রত্যাখাত হবে।
এ অবস্থায় ইন্টারভিউয়ের দিন সে যথাসময়ে ঘুম থেকে না উঠে কিছুটা দেরিতে উঠেছে। তার মনের এই ভয়ার্ত অবস্থার মধ্যে সে যে জামাটি পরিধান করে যাবার পরিকল্পনা করেছিল তা কিছুটা ময়লা এবং অন্য একটি জামা হাতে নিয়ে দেখতে পেল কুচকানো থাকায় তাতে আয়রন করা প্রয়োজন।
এমনিতেই যথারীতি দেরি হয়ে যাওয়ায় একটি ইস্ত্রীবিহীন কুচকানো জামা পরে ইন্টারভিউয়ের উদ্দেশ্যে সে বেরিয়ে পড়লো ইন্টারভিউ চলাকালিন সময়ে সে বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিল। সে পূর্ব থেকে মনের মধ্যে সাজিয়ে রেখেছিল একটি নেতিবাচক মনোভাব, জামার ব্যাপারে দুশ্চিন্তা রয়েছে এবং দুর্বলতা অনুভব করতে লাগল কারণ দেরিতে ঘুম থেকে উঠার ফলে তার হাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল না নাস্তা করার। এই অবস্থা তার মনকে হতবুদ্ধি করে তোলে এবং পরিস্থিতি তার জন্য জটিল হওয়ায় ইন্টারভিউতে এর বিরূপ প্রতিফল দেখা দেয়।
তার সামগ্রিক আচরনে তৈরি হয় একটি নিরাশার ছাঁপ। পরিনামে তার ভয়কে সে বাস্তবে পরিনত করে এবং চাকুরীটি সে পায়নি।
ইতিবাচক চিন্তার শক্তি ঃ
জিম (ঔরস) একই চাকুরীর জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু সে অন্য পন্থায় ব্যাপারটিকে নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। সে নিশ্চিত ছিল যে সে চাকুরীটি পাবেই। ইন্টারভিউ অনুষ্ঠিত হওয়ার সপ্তাহে সে প্রায়ই মনের মধ্যে ভাল ও সুখকর ধারনার চিত্র অংকন করত যে চাকুরীটি সে পাচ্ছে। ইন্টারভিউ অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বের দিন বিকালেই সে ইন্টারভিউতে পরিধান করে যাওয়ার পোষাক তৈরি করে রেখেছে এবং আগে আগেই সে ঘুমোতে গিয়েছিল। ইন্টারভিউয়ের দিন সে সচরাচর ঘুম থেকে উঠার চাইতে একটু আগেই উঠেছে। প্রয়োজনীয় অন্যান্য প্রস্তুতি শেষ করে যথা সময়ে নাস্তাও করেছে।
যাবতীয় প্রস্ততি শেষে সে ইন্টারভিউ কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই উপস্থিত হয়েছে। একটি নিশ্চিত নির্ভরতা সম্পন্ন সহায়ক ভাল ধারনা তার মধ্যে পূর্ব থেকে তৈরি হওয়ার মাধ্যমে মনের দৃঢ়তার ফলে সে চাকুরীটি পেল। তার মধ্যে অবশ্যই যোগ্যতা ছিল চাকুরীর জন্য এবং যা ছিল এলেনের মধ্যেও।
এ দু’টি বিষয় থেকে আমরা কি শিখতে পারলাম। এখানে কি কোন যাদু কাজ করেছিল। না, এর সবই ছিল প্রকৃতিগত। যখন দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক মানসিকতা সম্পন্ন হয় আমরা উপভোগ করি আনন্দদায়ক অনুভূতি। গঠনমূলক চিত্র আমাদের মনের মধ্যে ভাবমূর্তি হয়ে বিরাজ করে। আমরা আমাদের মনের চোখে দেখতে পাই যে প্রকৃতই আমাদের কি ঘটতে যাচ্ছে।
এটা আমাদের দৃষ্টিতে উজ্জলতা আনয়ন করে। আমাদেরকে মানসিক শক্তি যোগান দান করে আনন্দদায়ক অনুভূতি জাগায়। আমাদের সমগ্র সত্তায় সফলতার, আনন্দের, সুখের অনুভূতির প্রকাশ ঘটে। মানসিক প্রশান্তির ফলে দেহে একটি উপকারিতার ছাঁপ পড়ে। আমাদের পথ চলায় দৃঢ়তার ভাব তৈরি হয় এবং কন্ঠ স্বচ্ছ ও শক্তিশালি হয়। আমাদের দেহের ভাষায়ও ভিতরের অনুভূতির প্রকাশ ঘটে।
ইতিবাচক এবং নেতিবাচক মনোভাব উভয়ের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে ঃ
আমাদের সকল কর্মকান্ডের প্রভাবের ফলে বিভিন্নভাবে আমরা পরস্পরের সাথে মিলিত হই। এটা ঘটে তাৎক্ষনিকভাবে এবং একটি অবচেতন অবস্থায়, চিন্তা ও অনুভূতির আদান-প্রদান এবং দৈহিক আচরনের প্রকাশের মধ্য দিয়ে। মানুষের বুদ্ধি আমাদের আলোক রশ্মি এবং যা প্রভাবিত করে আমাদের চিন্তাকে।
এটা কি আশ্চর্য হওয়ার মত নয় যে শুধুমাত্র ইতিবাচক মানসিকতা সম্পন্নদের দ্বারা আমরা পরিবেষ্টিত থাকব এবং নেতিবাচকদের বর্জন করব।
নেতিবাচক চিন্তা, কথা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বয়ে আনে নেতিবাচকতা এবং নিরান্দময় অবস্থা ও পদক্ষেপ ।
যখন মন নেতিবাচক হয়ে যায় তখন এর বিষক্রিয়া রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। যা আরো অসুখী অবস্থা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং নেতিবাচকতাকে প্রসারিত করে। নেতিবাচকতা হলো ব্যর্থতার, হতাশার এবং বিফলতার পথ।
বাস্তব নির্দেশনা
মনকে ইতিবাচকতার মুখাপেক্ষি করার জন্য আভ্যন্তরিন ক্রিয়া ও প্রশিক্ষন প্রয়োজন। দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। বিষয়টি নিয়ে ভালভাবে পড়–ন। ইহার উপকারিতা নিয়ে ভাবুন এবং এটাকে আপনার মধ্যে বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন। চেতনার শক্তি ব্যাপকভাবে শক্তিমান যা আমাদের জীবনকে গঠনে সাহায্য করে। এই পরিবর্তন সচরাচর অবচেতনভাবেই হয়ে থাকে জীবনের নানা পর্যায়ে। একজন সচেতন মানুষের পক্ষে নেতিবাচকতা অধিকারী হওয়া সম্ভব।
আপনার হারাবার কিছুই নেই শুধুমাত্র পাওয়ার আছে। নেতিবাচকতা সম্পর্কে না জানা লোকেরা আপনার সম্পর্কে বলতে অথবা ভাবতে পারে, তারা দেখতে পারবে যে আপনি পরিবর্তন হচ্ছেন আপনার ভাবনার পথ ধরে।
সব সময় মনের মধ্যে কেবলমাত্র উপযোগিতা ও লাভজনক অবস্থার দৃশ্য দেখতে থাকুন। আপনার মনের অভ্যন্তরিন আলাপচারিতায় ব্যবহার করুন ইতিবাচক শব্দ সমূহের এবং যখন অন্যদের সাথে আলাপ করবেন তখনও সামান্য পরিমানে হলেও বেশি করে হাসুন যেন ইহা ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে আপনাকে সাহায্য করে। অগ্রাহ্য করুন অলসতার সকল অনুভূতিকে, আকাঙ্খা করুন ত্যাগ করতে। আপনি অধ্যবসায়ী হলে এই পন্থাটিকে আপনার ভাবনায় পরিনত করতে পারবেন।
কোন সময়ে আপনার মনে নেতিবাচক ভাবনার অনুপ্রবেশ ঘটছে। এ সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই সজাগ হতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে এর স্থালে গঠনমূলক ও ইতিবাচক একটি ভাবনা পুনঃস্থাপন করতে।
নেতিবাচক চিন্তাটি চেষ্টা করবে পুনরায় আবার আপনার মনে স্থান করতে নিতে এবং তখন অন্য আরেকটি ইতিবাচক মানসিকতা আপনার মধ্যে এই নতুন প্রবেশকারি নেতিবাচকতার ওপর আবার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
ইহা যেন আপনার সামনে দ’ুটি ছবি। আপনি পছন্দ করছেন তাদের একটির দিকে তাকাতে এবং অন্যটিকে অগ্রাহ্য করতে। এভাবে অধ্যবসায় আপনাকে চুড়ান্তভাবে শিক্ষা দিবে ইতিবাচক মানসিকতাকে গ্রহন করতে এবং নেতিবাচকতাকে বর্জন করতে।
আপনি যখন নেতিবাচক মনোভাবের ক্ষেত্রে ইতিবাচকতাকে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবেন তখন যদি কোন কারনে আপনি অনুভব করেন যে আভ্যন্তরিন কোন প্রতিবন্ধতা আপনাকে বাঁধা দিচ্ছে। এ পর্যায়ে আপনাকে থেমে গেলে চলবে না। আপনার দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন ইতিবাচক মনোভাবের উপকারি বিষয়ের ওপর, কল্যাণকর দিকের ওপর এবং ইতিবাচক মানসিকতার কারণে আপনার মনের সুখকর ভাবনার ওপর।
আপনার বর্তমান অবস্থা কী রকম এটা কোন ব্যাপার নয়, নয় কোন ব্যাপক বিবেচনার বিষয়। ইতিবাচকভাবে চিন্তা করুন, প্রত্যাশা করুন শুধুমাত্র আপনার জন্য উপযোগী ফলাফল। অবশেষে পরিস্থিতি সেভাবেই আপনার পক্ষে পরিবর্তিত হবে। এ পরিবর্তন সাধনে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কিন্তু অবশেষে আপনার প্রত্যাশাই পূরণ হবেÑ এক্ষেত্রে আপনাকে ব্যক্তিত্বের সীমা লঙ্গন করা উচিত হবে নাÑ আপনার কাজে ও কথায়।
অন্য আর একটি পন্থা হলো আপনার প্রতিজ্ঞাসূচক মনোভাবের বারবার পুনরাবৃত্তি ইতিবাচক চিন্তার প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে ভাল একটি পন্থা। ইহা এমন একটি পদ্ধতি যা মনের মাঝে পূর্বে বিদ্যমান দৃশ্যের সাথে সংযোগ স্থাপনে ব্যবহৃত হয়।