গোলাপির পাশের সিট দিয়া যাইবার সময় খুক খুক কইরা দুইটা কাশি দিলাম, গোলাপির দিকে তাকাইয়া কইলাম “ কি ভালো আছো গোলাপি?। গোলাপি আমার রাগটা না বুইঝাই খুশী হইয়া কইলো “হ নয়ন ভাই ভালা আছি, আফনে কিরাম আছেন?
বাসে উঠতে গিয়া একটা গন্ধে বুকটা মোচড় দিয়া উঠছিলো। টিফিন বাকসোটা বেশ ওজন। বাকসোটা বাচাইয়া কোনমতে সামনে আগাইয়া দেখি গোলাপি আরেক পোলার লগে সিটে বইসা আছে।আমি উঠি টেকনিক্যাল মোড় থেইকা, গোলাপি উঠে আমিন বাজার থেইকা। মেজাজটাই খারাপ হইয়া গেল। মানিক্কারে কোন দিন ধইরা পিটান দেই। আর গোলাপিও! একই অফিসে কাম করি, যাইও একই বাসে। তোর কি দরকার আরেকজনের লগে বসার? এক ইস্টিশন আগেই উঠলেই কি পর পুরুষের লগে বইতে হইবো?
ভালা আছি বইলা পিছনের সিটে গিয়া বইসা পড়লাম। গোলাপি বেকুব মাইয়া। এমন এক মাইয়ার লগে প্রেম করি যে কিনা আমি রাগ করলাম না সুখ করলাম সেইটাই বুঝলো না। আফসোস। এত সুন্দর একটা মাইয়ার মাথায় আল্লাহ একবারেই বুদ্ধি দে নাই। বাংলা সিনেমায় শাকিব খানের সাথে কি সব নায়িকা থাকে আমার গোলাপি ওইগুলার থেইকা অনেক সুন্দরী। খালি সুন্দর নায়িকাদের মত ড্রেস পরাইলে সবাই ফেইল। একটা শ্যমলা মাইয়ার মুখে এত মায়া আমি আর কোথাও দেখি নাই। চোখ দুইটা দেখলে খাইয়া ফেলতে মন চায়।ধুর! মেজাজ বিলা হইয়া আছে এইগুলান কি ভাবতেছি। আশেপাশে তাকাইয়া দেখলাম। ধুর কোন মাইয়ার পাশের সিট খালি নাই। থাকলে আমিও গিয়া বইসা যাইতাম। তখন গোলাপি বুঝতো হাউ ম্যানি সিটে হাউ ম্যানি মানুষ।শালার ভাগ্যইডা খারাপ। নইলে পুরা গার্মেন্টস বাসে একটা একা মাইয়াও ক্যামনে না থাকে। গরীবের ভাগ্য আল্লাহ স্যান্ডেলে রাখে, বাসের সিটে না।রাগ খালি উপরের দিকে উঠতাছে। এরমধ্যে ড্রাইভার হালারপো স্পিড ব্রেকারের উপরে ভাসাইয়া দিছে। আরেকটু হইলেই ছাদে বাড়ি খাইয়া মাথা ফাটতো। দিলাম “কিরে হারামি, রাস্তা দেইখা চালাইতে পারস না। চোখ কি পকেটে লইয়া চালাস?
-শালার পো সিটে আইসা চালা দেখি।
ড্রাইভারের কথায় মেজাজটা আরও খারাপ হইয়া গেল। দিয়া সামনে গিয়া চলন্ত বাসের ড্রাইভারের গালে দুই তিনটা লাগাইয়া দিলাম। বাস দাড়াইয়া গেল। কয়েকজন আমারে ধইরা ঠান্ডা করলো। এইবার গোলাপির উপরে মেজাজ আরও বিলা হইলো। শালীরে চড়াইতে ইচ্ছা হইতাছে। মোবাইলের রিং বাজতাছে। এত্ত সকাল সকাল আবার কে ফোন করলো। গোলাপি!
-হ্যালো, কি হইছে
-সাহেবের এত্ত রাগ ক্যান? বইবা আমার পাশে?
-না মানিক্কারে কাছে টাইনা বসা।
-ওমা মানিক্কা ক্যান তুমি আসো, মানিক্কারে তুইলা দিছি
না বমুনা বইলা দিছি লাইন কাইটা। সামনে তাকাইলাম। গোলাপির পাশের সিট খালি। মানিক একসিট পিছে আইসা বসছে। পইড়া গেলাম ঝামেলায়। রাগতো দেখাইছি, এখনতো পাশে বসতে মন চাইতাছে। না বসুম না। একদিন রাগ দেখাইয়া যাই। মাইয়াটারে পটাইতে বহুত কষ্ট হইছে। পুরা দুই বছর যাওয়া আসার সময় এক দুগুনে দুই ঘন্টা খালি দেইখা গেছি। তারপর গোলাপি আমার হইছে। এমনে এমনে হয় না। না, যাই আমার গোলাপ ফুলের সাথেই বসি। মাইয়াটা একা একা বইসা আছে।
ওমা কি ভাব তার। অপরাধ করছোস তুই, আবার দেমাগও দেখাস। আমি পাশে বইসা আছি কোন খবরই নাই। জানলার দিকে তাকাইয়া আছে।
-ওই তর এত দেমাগ কিসের?
-দেমাগের কি দেখলা? আগে কও তুমি এমন করলা ক্যান?
-তুই মানিক্কারে পাশে বসাইলি ক্যান?
-মানিক্কারে আমি বসাই নাই। হে আমার লগে বইসা গেছে। আমার পাশে বসনের স্বাদ থাকলে আমার ইষ্টিশনে চইলা আসবা। তাইলে আর কেউ বসবো না পাশে।
হিসাব কইরা দেখলাম। কথা সত্য। কালকে থেইকা ১০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়া আমিন বাজার যামুগা।
মেশিনটার বারোটা বাজাইয়া রাখছে। সুপারভাইজার দেখলে ঝাড়বো আমারে। এই পোলাপাইনগুলারে হুদাই কামে রাখছে। মেশিন ঠিক করার ফাঁকে চোখ বাঁকাইয়া গোলাপীরে দেখনের চেষ্টা করতাছি। হের মাথার উপরে যেই ফ্যানটা থাকে সেইটা ঠাহর কইরা বুঝতাছি ওইখানেই আমার গোলাপ ফুল কাম করতাছে। যদিও দেখা যায় না, তবুও আন্দাজ কইরা নিই। আর কতদিন এমনে আন্দাজ করতে হইবো আল্লাহ মালুম। কত আর সহ্য হয়। বিয়াটা এইবার কইরাই ফালামু। আমার এত বেশী ঝামেলাও নাই। রাগের বশে বাপ মারে ছাড়ছি সেই কবে। বাপ মা পড়ালেখার করাইবার লাইগা জান পরান তামাতামা করছে। বেশী চাপাচাপি করছে ভাইগা ঢাকায় চইলা আইছি। আমারে দিয়া পড়ালেখা হইতো না। ভাগ্য ভালো ঢাকায় আইছি নইলে কি গোলাপ ফুলরে পাইতাম।
-উস্তাদ খাইবানা?
-হ খামুতো
“হে কি আর আমগো লগে খাইবো, হে তো যাইবোগা গাছতলায়…
গোলাপীরে নিয়া জহীর খোঁচা দিয়া দিলো। মনে মনে খুশীই লাগে। নিজেরে কেমন জানি নায়ক নায়ক লাগে।কাইলকা শুক্কুরবার। গোলাপীরে নিয়া শাকিব খানের “জান আমার জান” সিনেমাটা দেখনের খুব ইচ্ছা। কিন্তু ক্যামনে কই? এই মাইয়া টাকা পয়সার ব্যাপারে বহুত হিসাবে। আউলা খরচ করবার দেয় না। কিন্তু হুনছি সিনেমাটা নাকি হেব্বি রোমান্টিক, গোলাপীর লগে বইসা হাতে চিপস লইয়া এই সিনেমা না দেখলেতো জীবন বৃথা।ওমা বাস থাইকা নামনের সময় হে নিজেই আমারে কয় “কাইল সিনেমা দেখাইবা?
ওরে দেখুম মানে, আমিতো দেখার লাইগাই বইসা আছি। কত্ত মিল আমগো দুজনের। এমন খুশীর সময় ইচ্ছা করে গোলাপী বুকে জড়াইয়া ধরি। হালার এই জিনিসটাও করতে পারি না।
তিনটার শো দেখনের কথা আছিলো এশিয়ান সিনেমা হলে। তার আহনের কোন নাম গন্ধ নাই। আমি অবশ্য আগে বাইর হইয়া গেছি। বাইর না হইয়া উপায় আছি। সপ্তাহে এই একটা দিন সকাল থেইকা গোলাপিরে দেহি না। বাসায় কতক্ষন মন টিকে? গরমও যা পড়ছে। হাওয়া খাওনের লাইগা মার্কেটের ভিতরে ঢুকলাম। মশা মাছিও নাই তবুও দোকানদাররা লাল নীল হইলদা কাপড় নিয়া বইসা আছে। ওমা এই যে দেখি এক্কেরে লাল টকটকা শাড়ী। পুতুলের গায়ে লাগাইয়া লাভ কি। আমি নিশ্চিত আমার গোলাপ ফুলরে এই শাড়ী পড়াইলে পুতুলের থেইকা ৫ গুণ সোন্দর লাগতো। বিয়ার দিন তারে এইরাম লালটুকটুকা একখান শাড়ী পরামু। স্টেইজে লাল শাড়ী পইড়া বইসা থাকবে দেইখা মনে হইবো পুরা বাগানে একটাই গোলাপ ফুটছে !
তয় এত্ত দামি শাড়ী কি তারে পরাইতে পারুম?? পারমু না ক্যান অবশ্যই পারুম। বেনারসী পল্লী থেইকা তার লাইগা শাড়ী কিনুম। মেজাজ বিলা হইতাছে। দুইবার ফোন দিছি ফোন ধরে না। এদিকে আড়াইটা বাজে। বুঝলাম তুমি বাসে,মোবাইল হাতে রাখবা না? বাইরে গিয়া বিড়ি ধরাইয়া টান দিতেই গলাটা কেমন জানি কইরা উঠলো। হঠাৎ কইরা বমি ভাব হইলো ক্যান বুঝলাম না। মাথা ঠান্ডা কইরা আরেকটা বিরি ধরাইলাম। আইজ কত বছর হইলো গেরামে যাই না। তয় এই যুগে আর থাকন যায় না। সবাইর হাতে হাতে ফোন চইলা যাওয়াতে হইছে বিপদ। দুই দিন পর মায় পাড়ার দোকান থেইকা ফোন কইরা ক্যাচ ক্যাচ করে। গোলাপ ফুলরে বিয়া কইরা যামু ঠিক করছি। মায় নিশ্চয় খুশী হইবো। মায়ের লাইগাও একখান শাড়ী কিনুম। গোলাপির পছন্দের শাড়ী পাইয়া মার মুখ কেমুন হইবো চিন্তা করতাছি
সিনেমার মাত্র আর ৫ মিনিট আছে, তার এতক্ষনে আসবার টাইম হইছে। মেজাজ বিলা হইয়া আছে। চিপস কিন্না নিজেই নিজেই খাওয়া শুরু করছি। একটা তখনও হাতে ধরা আছে। কোন কথা কইলাম না। টিকিট কাইটা হলের মধ্যে ঢুইকা গেলাম। আশ্চর্য মাইয়া একবার ছরিও কইতাছে না। মনে হইতাছে তার এখন আসনের টাইম আছিলো। রাগে আমার কইলজাডা ফাইডা যাইতাছে। পর্দায় মন দিতে পারতাছি না। হঠাৎ কইরা অন্ধকারে গোলাপি খামচাইয়া আমার হাত ধইরা ফালাইলো। কিছুই বুঝলাম না। রাগের কইলজা বরফ হইয়া গেল। গোলাপির পক্ষে সব কিছুই সম্ভব। আমারে এমুন ভাবে বুঝে চোখে পানি চইলা আসতাছে। নরম হাত আমার হাতের ভিতরে দিয়া দিছে। ক্যামনে কই চল এমনে কইরাই সারা জীবন থাকি। ওমা “কিরে গোলাপি কান্দ ক্যান?
-জানিনা,
-গোলাপ ফুল কানলে কেমুন দেখায় কওতো। সিনেমাতো ভালা হইছে। কাইন্দো না চল বাইরে গিয়া জুস খাই।
“নয়ন তুমার লগে আমার কতা আছে” হঠাৎ কইরা গোলাপ ফুলের গলা এমুন সিরিয়াস হইছে দেইখা ভয়ই পাইলাম। কি কইবা কও।
“আমার একটা ছুডু ভাই আছে” এইটুকু বইলা আঁটকাইয়া গেছে। বুঝছি সিরিয়াস কিছু। কইলাম লও আগে জুস খাও। তারপর বইলো।
“হুনো আমার বাপ আরেক বিয়া করছে, আমার ছুডু ভাই ন্যংড়া। হেরে বাড়ীত রাইখা আমি কোন মতেই তোমার লগে বিয়া বইতে পারুম না। হেরে রাখবা তোমার লগে” চোখের পানির এক ফোটা জুসের গেলাসে পড়লো। গোলাপির কান্দন দেইখা বুঝতাছিলাম না কি করুম। মাথায় হাত রাখলাম। কি বুঝলো কি জানি কান্দন থাইমা গেল। কিচ্ছু কইলো না আর। শুক্কুরবার হওনে বাসে ভীড় কম। গোলাপিরে আইজ তার বাসা পর্যন্ত পৌছায়া দিমু। বাসের শেষ সিটে গোলাপি তার মাথা আমার কান্ধে রাইখা চোখ খুইলা বাইরে তাকায়া আছে। কথা কইতে মন চাইতাছে কিন্তু কি কমু বুঝতেছি না। এত সুখে মানুষ কথা কইতেও ভুইলা যায়।
উত্তর দক্ষিন বুঝতাছি না। যে ট্যাকা পাই নিজের সংসার চলে না। বিয়া করার পর যদি শালারে কান্ধে লইতে হয় তয় ক্যামনে কি করুম। একদিকে গোলাপি অন্যদিকে নিজের চিন্তা। সারারাইত ঘুমাইতেই পারলাম না। শুধু বুঝতে পারলাম গোলাপিরে হারাইলে সর্বনাশ হইয়া যাইবো।
মাথা গরম হইয়া আছে। কিছুই ঢুকতাছে না।গোলাপিরা ডাইকা কইলাম “লও আইজকাই বিয়া কইরা ফালাই”
-আইজকা?
গোলাপি অবাক হইবার ভান করছে ঠিকই কিন্তু, গোপন খুশী লুকাইতে পারে নাই। যেই ভাবা হেই কাম।
এই কামটা না করলে হয় না? আমার রেডি হইতে লাগে ৫ মিনিট আর সে সকালে গলা জড়ায়া ধইরা ঘুমটা দেয় ভাঙ্গাইয়া। আরে বাবা তুমি কাজ কাম শেষ কর। আমি উঠতাছি না। না তার আমারে এখনই তোলন লাগবো। প্রেত্যেক দিন একই কাম করছে। আজকে জাগাইতে আইছে ধরছি খপ কইরা।চালাক আছে কয় “ওই ছাড়ো আইজকা না আমরা তোমগো বাড়ী যামু, তাড়াতাড়ি রেডি হইয়া লও”
মাহী আপুর লেখা- গোলাপির কথা
প্রচ্ছদ : সাদিয়া সুলতানা