সময়ের রক্তে দ্রুতই বিষক্রিয়া ছড়িয়ে যাচ্ছিল। মস্তিস্কে বাসা বাঁধছিল ক্যারিয়ার নামক ক্যান্সার। হৃৎপিন্ডের মানচিত্রে বেঁচে থাকার বাজে আগ্রহ । যন্ত্রনার ব্যবচ্ছেদের ভাগসংখ্যা অসীমের চেয়ে খানিকটা বেশী। জীবনটা বাঁচার জন্য না হয়ে মৃত্যুর ভয়ে বেঁচে থাকা হয়ে যাচ্ছিল। না না আত্নহত্যা সে তো ভীতুদের কাজ কারবার। তবুও কেন যেন মনে হচ্ছিল মৃত্যূ ভয়ে কেবল মরতে পারছিলাম না। বন্ধুদের সাথে পাখনা মেলার সাহসটুকুও নেই, তবুও সবাই মিলে কেমন করে যেন সমুদ্র সন্ধান পেলাম, আমি পেলাম একটি রাত, একটি বেঁচে থাকার গান অথবা এক টুকরো বেঁচে থাকা। বন্ধুরা সবাই হৈ হল্লোড়ে ব্যাস্ত আমি আপন মনে জীবন বাঁধছি, কখনো জীবনটা এভাবে বাঁধিনি। বইয়ের পৃষ্ঠা ছিড়ে গেলে ছোটবেলায় মা লম্বা সুঁই দিয়ে, মোটা সুতা দিয়ে বাঁধাই করে দিত। এরপরও কিছুদিন পরও আমার বই ঠিকই ছিড়ে যেত। আজ সুযোগ পেয়ে জীবনের কিছু টুকরো জীবনকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করছি। হুঙ্কারের মত সমুদ্র গর্জন আর আমার পা ছুয়ে যাওয়া নর্তকী ঢেউ দিয়ে গাঁথুনী দিচ্ছি। আপন মনে কতকিছু একসাথে বাঁধাই করলাম। আমি জানি আমিও আমার বইয়ের মত কয়েকটা দিন পরই আবার ছিড়ে যাব। তবুও এই কিংবদন্তী রাতে ক্ষতি কি জীবনটাকে একটু সেলাই করতে। সুঁই সুতাতো আছেই।
যৌবনবতী ঢেউ নেচেই চলেছে। তাল দিচ্ছিল পরিস্কার জোছনার আলো। চাদেঁর আলো ঢেউকে নাকি অনেক মহিমান্বিত করেছে। আমি সেটা বুঝি না। বরাবরের মতই আমি বে-রোমান্টিক। বে-রোমান্টিক শব্দটা আমার না। কেউ কেউ বলে। অকাতরে টানতে থাকা সিগারেটের ধোঁয়া ছুড়ে দিচ্ছি আলোকজ্জল আকাশে। বিরাট ধোঁয়ার কারখানায় সিগারেটের ধোঁয়ার কোন জায়গা নেই। কেবল সিগারেটের টানটাই বুঝেছি,দেখেছি । আজ দেখলাম আমাকে দূষিত করা ধোঁয়াগুলোও আকাশে উড়তে পারে, অসীমের মাঝে হারাতে পারে। ঠিক নিশ্চিতভাবে নিজেকে সিগারেটের ধোঁয়া ভাবছি না। তবে জীবনটাকে ঠিক জীবন ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে না।তবে আমিও ক্রমাগত অসীমের মাঝে হারিয়ে যাওয়া হতচ্ছাড়াদের একজন। কাতারে কাতারে মানুষের দলে আমি গেলেই কেবল কাতার পাই না। একাকীত্বের একটা ধোঁয়াটে বোধ কাতরাতে থাকে। তাই নিজের অসীম অন্ধকারকে এক ধরনের ভাগ্য ভাবছি।আসলে কি ভাববো আর কি ভাববো না কি যে সেটা এক সংশয়। ভাবনার চুরুটে সংশয়ের ফ্যাকাশে আগুন প্রতিনিয়তই জ্বলছে। সে সংশয়কে ছুড়ে ফেলে দিলাম দারুচিনির দ্বীপের নীল পানিতে এই মাঝ রাত্তিরে।চুরুট নিভিয়ে দিলাম। আমি জানি আমার সামনে আমার শাষিত সমুদ্র আছে, যৌবনবতী নর্তকী ঢেউ আছে, আমার পাইক পেয়াদা চাঁদ, জোছনা আছে।পিছনে কিচ্ছু নেই। আমার শুধু সামনে আছে পিছনে নেই। অতীত ফেলে এসেছি সমুদ্র সঙ্গমের আগিই।আমি জানি এ সঙ্গম শেষ হবে কিন্তু যতক্ষন হবে আমাকে কাঁপিয়ে দিয়ে যাবে।যতবার হবে ততবার এক একজন আমিকে আমি জন্ম দিব। এই রাতেই আরো হাজারবার জন্ম নিব।
খুব ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার বন্ধুদের আমি সেন্টমার্টিন যেতে চাইনি রীতিমত জোর করে তারা আমাকে নিয়ে গেছে। তাদের জন্য অন্তত একটি কিংবদন্তি রাত পেলাম।
সেন্টমার্টিন ঘুরে এসে লেখাটি লিখেছিলাম।।
লেখাটি আমার সব বন্ধুদের উৎসর্গ করলাম। যারা ছাড়া আসলেই অনেক কিছু চিন্তা করতে পারি না।
ছবি :ইন্টারনেট।