জীবনের উপর বিরক্ত হয়ে পটকা ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন উনি আত্নহত্যা করবেন।দুনিয়াটা যখন জাহান্নাম হয়ে গেছে কি লাভ দুনিয়াতে থেকে। পাপী মানুষ জাহান্নামেতো এমনিতে যেতে হবে। যেই ভাবা সে কাজ।আত্নহত্যা করতে গেলেন ভৈরবের দিকে।ওই দিকে ঢাকা–চট্রগ্রামের ট্রেনগুলো জোরে চলে। স্ধিান্ত নিলেন সুবর্ন এক্সপ্রেসের নিচে জীবন দিবেন। সব ব্যাপারে পটকা ভাই ভীষন চুজি। কেউ কোনদিন বলতে পারবে না ব্রান্ডের জিনিস ছাড়া পটকা ভাই কিছু গায়ে দিছেন। আত্নহত্যার জন্য বেঁচে নিলেন সেরাটা। আর মেইল ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে এতদিন ধরে তিল তিল করে তৈরি মান ইজ্জত খোয়াবেন নাকি।অবশেষে তিনি আত্নহত্যা করলেন (ইন্নালিল্লাহি......)
মৃত্যূর পর
একেতো পটকা ভাই পাপী মানুষ তার উপর করেছেন আত্নহত্যার মত বিরাট পাপ।ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর পটকা ভাইকে ডাইরেক্ট নরকে ছুড়ে দেয়া হল। নরকে গিয়ে পটকা ভাই অবাক।তাকে সুন্দর একটা রুম দেয়া হয়েছে।একটা ল্যাপটপ,ওয়াইপাই কানেকশন।নিজের উপর রাগ উঠে গেল আরও আগে কেন মরে নাই।এসব ভাবতে ভাবতে নরকের কেয়ার টেকার এসে হাজির।গম্ভীর কন্ঠে পটকা ভাইর দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললেন “নাও এটা”
পটকা ভাই বললেন কি?
“কালকে সকাল থেকে তোমার শাস্তি শুরু।এটা শিডিউল।এটা শাস্তির প্রথম স্তর।“
পটকা ভাই কাঁপা হাতে নিয়ে চোখ বুলালেন। লিখা আছে সকাল ৫টায় উঠতে হবে। খুশীমনে ঘুমাতে গেলেন। সকালে কেমন যেন কাউয়্যার ডাক শুনে উঠে গেলেন। নরকে কাক আছে জেনে অবাক হলেন না। সারা বছর যেমনে মানুষের মাথার উপর অকাম কুকাম করছে তাতে তাদের নরকতো ওইখান থেকেই নিশ্চিত। কিন্তু কিছুক্ষন পর জানা গেল এটা কাউয়্যা না। এ কালের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ইভা রহমান। পটকা ভাই মুখ ফসকে বের হয়ে গেল “শালীর লাইগ্যা নরকে আইস্যাও শান্তি নাই”। দুনিয়াতে যতবার ইভা রহমানের গান শুনছে ততবার গালি দিছে “জাহান্নামে যা বলে” ।আজ সেখানেই সে হাজির। কেয়ারটেকারের মাধ্যমে জানতে পারলেন ইভা রহমানের আনরিলিজ কিছু গান প্রত্যেকদিন সকালে বাজানো হবে। শাস্তির স্তর অনুযায়ী শোনানো হবে।
টানা ৪টা গান গাওযার পর পটকা ভাই ভাবলেন যাই একটু শান্তিতে বইস্যা বইস্যা ঝিমাই। কিন্ত নরকরক্ষী বললেন কোথাও যাওয়া যাবে না।
-ক্যান পটকা ভাই জিজ্ঞেস করলেন
-এখনই শাকিব-অপুর “তুমি আমার পাটক্ষেত” সিনেমাটি চালানো হবে। বিনা বমিতে,বিনা গালিতে এবং বিনা সিটিতে এ সিনেমা উপভোগ করতে হবে।
পটকা ভাই এবার একটু ভয় পেলেন।৩ ঘন্টার এই শাস্তি কিভাবে পার করবেন।যা হোক আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করে দিলেন।শুরুতেই শাকিব-অপুকে সুইমিংপুলে নাচতে দেখে কেমন জানি বমির উদ্রেক হচ্ছিল।হঠাৎ একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেললো।মনে মনে ভাবলেন এক কাজ করি “শাকিবকে একজন সুন্দরী মেয়ে ভাবি আর অপুকে জলহস্তি”।পটকা ভাই জলহস্তির সাথে সুন্দরী মেয়র দুষ্টামি জটিল উপভোগ করছেন।যেন ডিসকভারি অথবা এনিমেল প্লানেট দেখেছেন,খুব শিক্ষনীয় বিষয়।নিজের বুদ্ধিতে নিজেই খুশী।কঠিন শাস্তি থেকে পার পেয়ে নাচতে মন চাচ্ছে।যাক বাচা গেল।
একটা স্ট্যাটাস দেয়া দরকার।নরকের দিনগুলো ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ার করা উচিত।নরকরক্ষীর অনুমতি নিয়ে ফেসবুকে লগইন করে পটকা ভাই অবাক। আরে ফ্রেন্ড লিষ্ট থেকে সব মেয়ে গেল কই? নরকে আইস্যাও রক্ষা নাই।একাউন্ট হ্যাক। নরকরক্ষীর কাছে কমপ্লেইন করলেন।নরকরক্ষী জানালেন নরক কতৃপক্ষ সব মেয়ের আইডি সরিয়ে নিয়েছে। পটকার ভাইর একটু রাগ হইলেও, মাথায় নতুন বুদ্ধি খেললো। আরে অসুবিধা কি এখনই সবগুলালে এড পাঠায়ে আবার কানেকট করতেছি। মর্জিনা বেগমেরে রিকোয়েস্ট পাঠাইতে গিযে দেখলেন তার রিকোয়েষ্ট ১৪দিনের জন্য ব্লক করা। ব্যাপক হতাশ হয়ে আর স্ট্যাটাস দিলেন না। আবাল পোলাগুলার লাইগ্যা স্ট্যাটাস দিয়া কি হইবো। তারা নরকের কিচ্ছু বুঝে নাকি। যাই হোক তাহলে মার্ডার ২টা ডাউনলোড মারি। ইমরান হাশেমি কি করল না করল দেখার দরকার আছে। নতুন কোন স্টাইল জাতিকে উপহার দিল নাকি তা দেখার বিষয়। এর আগে “মার্ডার” বেশ ছ শিক্ষনীয় সিনেমা ছিল । কিন্তু নরকরক্ষী জানাল “এটা জিপির ১ জিবি প্যাকেজ ওয়াইফাই না”
লাঞ্চ শেষ করে একটু ঘুমাতে যাবেন তখন নরকরক্ষী ডাক দিলেন। এখন সংসদ অধিবেশন শুরু হবে। তা দেখতে হবে। ঝিমানো বা গালি দেয়া যাবে না। নিয়ম ভাঙ্গলে আবার ইভা রহমান দিয়ে শুরু হবে। সংসদ অধিবেশন শুরু হল। প্রথমে গন্ডগোল লাগল বসার সিট নিয়ে। সে যাই হোক সংসদের কথা শুনতে শুনতে একটু ঝিমানি আসছিল। ইভা রহমানের চেহারা ভেসে উঠাতে আবার সংসদে মনেযোগ দিলেন। একসময় শেষ হল সংসদ। পটকা ভাই ভাবলেন যাই একটু নরকটা দেখে আসি। কিন্তু তার আগে তাকে জানানো হল সন্ধ্যায় হৃদয় খানের একক সংগীত সন্ধ্যা আছে। তাতে যেন উপস্থিত থাকে।
নরক ঘুরে হৃদয় খানের কনসার্টে ঢুকলেন। ঢুকার সময় নরকরক্ষী বলে দিলেন “হৃদয় গান শুরু করলে অবশ্যই তালি দিতে হবে এবং নাচতে হবে। হাফ লেডিস,ভুয়া এসব শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। হৃদয় শুরু করলেন।এটা নাকি নরকে হৃদয়ের প্রথম একক কনসার্ট। নরকে গান গাইতে পেরে উনি খুব খুশী। “চাইনা মেয়ে দিয়ে শুরু করলেন অনেকগুলো গান গাইলেন। শেষে দুটি আনরিলিজ ট্র্যাক শুনাইলেন। পটক ভাই “ওয়ান মোর” ওয়ান মোর বলে ব্যাপক তালি দিয়ে নরকরক্ষীকে খুশী করে ফেললেন। শেষ হইতে না হইতে ডিনারের জন্য ডাক পড়ল।
ডিনার শেষ করার পর পটকা ভাইকে জানানো হল দুদলের দুজন রাজনীতিবিধের (ভয়ে তাদের নাম উল্লেখ করলাম না) সাথে উনাকে টকশোতে অংশ নিতে হবে। খুশী মনে তিনি গেলেন। স্বাধীনতা,মুক্তিযুদ্ধ,পরিমল ইস্যু,রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা করার এক পর্যায়ে দুদলের দুজন মিলে পটকু ভাইকে গুতাগুতি শুরু করলেন। পটকা ভাই নিজেকে বাঁচানোর জন্য দিলেন লাথি। সে লাথি লাগল দেয়ালে। সাথে সাথে পটকু ভাই চোখ খুলে ফেললেন। আরে এটা স্বপ্ন ছিল!!!! দুঃস্বপ্ন এক ভয়াবহ হতে পারে। পুরা শরীর ঘেমে গেছে। টিভিটা অন করে দেখলেন এটিএন বাংলা ইভা রহমান রবীঠাকুরের ১৪গুষ্ঠি উদ্ধার করছেন (রবীন্দ্র সংগীত গাইছেন)। উফ শিট!! বলে টিভিটা অফ করে দিলেন।