ল্যাপলাস ট্রান্সফরম। ম্যথমেটিকস্ এর কোর্স। কম্পিউটার ইন্জিনিয়ার হতে হলে নাকি এটা করতে হবে। এ পর্যন্ত ডিপার্টমেন্ট ও নন্- ডিপার্টমেন্টাল কোর্স মিলিয়ে শেষ করেছি প্রায় ৬০টা কোর্স। হাতে গোনা কয়টা বাকী। আল্লাহর রহমতে কোথাও হোঁচট খাইনি। কিন্তু এই ল্যাপলাস ট্রান্সফরম এ এসে যে কি হলো। প্রথম দিন ক্লাস করেই মনে হলো ১০০ মাইল বেগে দৌড় দিয়ে ২ হাত সামনে দেয়ালের সাথে ধুম্ করে একটা বাড়ি খেলাম। আমার বিশ্বাস, CSE তে কোন বিষয়ই অবোধ্য না। কিন্তু এই ল্যাপলাস ট্রান্সফরম করতে এসে মনে হচ্ছে এটা রীতিমত দুবোর্ধ্য। সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস। নিয়মিত ক্লাসে যাই। কিন্তু বুঝি না কিছুই। ম্যাডাম যখন ক্লাসে হোয়াইট বোর্ডে অংক করেন আমার তখন মনে হয় তিনি sin, cos, tan এসব বাদ দিয়ে হায়ারোগ্লিফিক্স লিখেছেন। আমি বোকার মত ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। লেকচার তুলতে হবে তাই ক্লাশে বসে খাতায় অংক আঁকি। ল্যাপলাস আর ইনভার্স ল্যাপলাস এর প্রোপার্টিজগুলো দেখলেই মাথার ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা হয়ে যায়। কোন এক বিজাতীয় তাড়নায় বোর্ড থেকে ম্যাডামের করে দেয়া ম্যাথগুলো খাতায় আঁকতে থাকি। আমার মনে হতে থাকে আমি ড্রইং ক্লাশে বসে আছি। ম্যাডাম যা আঁকছে আমিও তা আঁকছি।
ক্লাশের অন্যান্য ছেলে-মেয়েরা দেখি প্রচন্ড শার্প। ম্যাডামের প্রশ্নের পটপট্ উত্তর দিচ্ছে। আমি শুকনো মুখে নিয়াজের দিকে তাকাই। সে তার স্বভাব সুলভ মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাকে আশ্বস্ব করার চেষ্ঠা করে। আমি আরও ভয় পেয়ে যাই। সবাই বুঝছে আমি কেন বুঝছি না? ঘটনাটা কি? গত চার বছরে তো এমন হয়নি! পাশে থেকে টিনা কনুই দিয়ে আলতো খোঁচা দেয়। বলে “অংক করিস না কেন” ? আমি করুন চোখে তাকাই। আমার চেহারা দেখে কি জানি কি বুঝে সে ফিক করে হেসে ফেলে। আমি হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে থাকি। পেছন থেকে ইভানা মাথায় চাটি মারে। চোখে উৎসুক দৃষ্টি! ম্যাডামের দৃষ্টি এড়িয়ে জিজ্ঞেস করে - “কি হয়েছে তোর?” আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকাই। আমার দৃষ্টি দেখে বুঝি তার খারাপ লাগে। হৃদয়ের সমস্ত মমতা গলায় ঢেলে বলে - “কি রে, অংক বুঝছিস না? সমস্যা নেই তুলে নে। পরে বুঝিয়ে দিব। ”
ক্লাশ শেষে বিধ্বস্ত আমি ক্লাশরুম থেকে বের হয়ে আসি। এ্যনি আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করে - “ভাইয়া কি হয়েছে আপনার? অসুস্থ? ” তার চোখে মুখে শংকা। আমি হেসে তাকে আশ্বস্ত করতে চাই। এতে তার শংকা আরও বাড়ে। অবশেষে হাঁটতে হাঁতে তাকে সব খুলে বলি। সে নিরবে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে - “ আপনি ব্লগে নতুন কোন পোস্ট দিয়েছেন?” আমি বলি - “না লিখছি বেশ কয়েকটা”। সে মাথা নাড়ে। তারপর বিদায় নিয়ে চলে যায়। এই অদ্ভূত মেয়েটা বাসায় যেতে যেতে আমাকে ছোট্ট একটা SMS পাঠায়। “ Vaia, as ur sister, friend, well-wisher; I request, request u.... plz stop blog writing up2 d successful nding ur graduation. I hope u'll mind it.”
আমি SMS টা পড়তে পড়তে মুচকি হাসলাম। মেয়েটা আমার সমস্যা ধরতে পেরেছে। আসলে আমি ব্লগ, প্রজেক্ট, টিউশ্যনি, ডেভোলেপমেন্ট নিয়ে এত ব্যস্ত যে পড়ালেখার দিকে সময়ই দিচ্ছি না। আমি জানি এটা ঠিক না। শেষ ট্রাইমিস্টারে এসে যখন আমার থিসিস করার সময় তখন এসব আতলামি মার্কা বিটলামি করা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু এসব কিছুই নেশার মত হয়ে যায়। আমিও সরে আসতে চাচ্ছিলাম কিন্তু moral supportপাচ্ছিলাম না। এ্যনি সেই সাপোর্টটাই দিল। কৃতজ্ঞতায় আমার মনটা ভরে উঠল। So, with due due respect to Annie আজকে থেকে বেশ কিছুদিনের জন্য ব্লগিং বন্ধ। দেখা যাক আমার দুরাবস্থার কতদূর উন্নতি হয়। প্লিজ, আপনার সবাই আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। আমি বিপদে আছি, বড় বিপদে আছি।