(লেখাটিকে প্রাণ দিতে পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং চেনা মুখগুলোকে চরিত্র হিসেবে নেওয়া হয়েছে।কাউকে আঘাত প্রদান বা হেয় করা আমার উদ্দেশ্য নয়)
(১)
তিনদিন ধরে জাফর ইকবাল স্যারের কোন খোঁজ নেই।
শনিবার সকালবেলা থেকে উনি নিখোঁজ।
উনার নিখোঁজ সংবাদ মূহুর্তেই ছড়িয়ে পড়লো পুরো বিশ্বে।
বাংলাদেশের সকল মেইনষ্ট্রিম মিডিয়া কর্মীরা তাদের ক্যামেরা এবং লোকবল নিয়ে উপস্থিত হলো জাফর স্যারের বাড়িতে।
উনার স্ত্রী অধ্যাপিকা ইয়াসমিনের একবার হুশ হয়, মূহুর্তেই আবার বেঁহুশ হয়ে পড়ে যান।
উনার এই অবস্থা দেখে পাশ থেকে একজন দুষ্টু সাংবাদিক বলে উঠলো, - ম্যাডাম, এখানে তো ছাত্রলীগের কেউই নেই।আপনি এভাবে ঢলে ঢলে পড়ে যাচ্ছেন কেন?'
সাথে সাথে অন্য সাংবাদিকদের সকল ক্যামেরা দুষ্টু সাংবাদিকটার দিকে তাক হয়ে গেলো।লাইট-ক্যামেরা-এ্যাকশান।
সাংবাদিকটার পাশেই ছিলো আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।বেচারা অনেকক্ষন ধরে জাফর স্যারের শোকে চোখ দিয়ে দু'ফোটা অশ্রু টেনে আনার চেষ্টায় আছে, কিন্তু পারছিলোনা।
চোখ দিয়ে পানি তো আসেইনি, বরঞ্চ, দুষ্টু সাংবাদিকটার কথা শুনে মাল সাহেব পিক করে হেসে দিলেন। হাসার অবশ্য কারন আছে যথেষ্ট।সাংবাদিকটার প্রশ্ন শুনে আবুল মালের সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলো, যেদিন শাবিপ্রবি'র ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা জাফর স্যারের স্ত্রী, অধ্যাপিকা ইয়াসমিনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল, এবং এর প্রতিবাদে জাফর ইকবাল পুরো ৪০ মিনিট বৃষ্টিতে ভিজেছিলো।
উঠতি জেনারেশানকে সারাক্ষন মুক্তিযুদ্ধ,রাইফেল,ষ্টেনগান,মেশিনগানের গল্প শোনানো সেই জাফর ইকবালের এমন নিরামিষ প্রতিবাদ দেখে আবুল মাল যারপরানই অবাক হয়েছিলেন সেদিন।
পরে জানতে পেরেছিলেন, এটা নাকি ছিল জাফর স্যারের 'গান্ধীবাদী প্রতিবাদ'। অন্যকথায়, 'অহিংস আন্দোলন'।
সে যাহোক, মাল সাহেব কোনরকমে হাসি চেপে দুষ্টু সাংবাদিকটার দিকে ফিরে রাগি গলায় বড় বড় চোখ করে বললো- 'ইউ আর এ্যা টোট্যালি রাবিশ! ইউ ডোণ্ট নো হোয়্যাট ইজ সাংবাদিকতা।হাউ ইউ আস্ক সাচ এ্যা প্রশ্ন ইন দিজ সিচুয়েশান? রাবিশ!!'
আবুল মাল সাহেবের ইংলিশ বরাবরই বিশ্বমানের। উনার ইংরেজি শুনেই হোক অথবা অন্য যেকোন কারনেই হোক, সকল মিডিয়া কর্মীরা মূহুর্তের জন্য হো হো হো করে হেসে উঠলো।
এবার মাল সাহেব একটু স্বস্তি পেলেন।ভাবলেন, - 'যাক, আমি একা নই, সবাই একটু হলেও হেসেছে অন্তত।'
হাসাহাসি থামার পরে ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলেন একসময়ের তুখোঁড় মন্ত্রী, 'বিল্ডিং ফিজিক্স' এর জনক জনাব মহিউদ্দীন আলমগির।গনমাধ্যমের ভাষায় 'মখা আলমগীর'।
উনি এসে দুষ্টু সাংবাদিকটার আপাদমস্তক একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন।
সবাই ভাবলো, - 'মখা আলমগির হয়তো শিওর হতে চাচ্ছেন যে, ধাক্কা দিয়ে যারা রানা প্লাজা ভেঙে ফেলেছিলো, এই ছোকরা সেই দলে ছিলো কিনা।'
কারন, যথেষ্ট প্রমানের অভাবে উনার 'ঝাকুনি' তত্ব বিজ্ঞান জগতে ফ্লপ খায়। একবার যদি প্রমান মিলে যায়, তাহলে উনিই হবেন বাংলাদেশ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে প্রথম নোবেল বিজয়ী।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মখা সাহেব সাংবাদিকটাকে জিজ্ঞেস করলেন,- 'এই ছোকরা! তুমি কোন পত্রিকায় কাজ করো?'
দুষ্টু সাংবাদিকটার উত্তর- 'দৈনিক নয়া দিগন্ত।'
সাংবাদিকটার কথা শুনে মূহুর্তেই উপস্থিত সবার চেতনার মধ্যে দিয়ে একটি জিহাদি জোশ বয়ে গেলো।
সবাই হৈহৈ-রৈরৈ করে বলে উঠলো,- 'জাফর স্যারের বাড়িতে জামাতি পত্রিকার সাংবাদিক? বের কর শালারে! এক্ষুনি বের কর।'
সবাই মিলে ছেলেটাকে বের করে দিলো।কারন, মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় জীবন্ত পীরের বাড়িতে রাজাকারের দোসরদের পদচিহ্ন শুধু বাড়াবাড়িই নয়, মুক্তিযুদ্ধকেও অপমানের শামিল।
মখা সাহেবও কিছুটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেন।কারন, উনার 'ঝাকুনি তত্ব' ফ্লপ খেলেও এবারের 'রাজাকার বাঁছাই' তত্ব ফ্লপ খায়নি।পুরোই সুপারহিট হয়েছে।
'
এবার সেখানে উপস্থিত হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উনি গাড়ি থেকে নেমে একদম কারো দিকেই তাকান নি।সোজা চলে গেলেন শোকে মূহ্যমান অধ্যাপিকা ইয়াসমিনের কাছে।
পাশে শেখ হাসিনার পি.এন।পি.এনের হাতে একটি সবুজ রঙের রুমাল।শেখ হাসিনা পি.এনের হাত থেকে রুমালটা নিয়ে চোখের মধ্যে বুলিয়ে নিয়ে একটু হাউকাউ করে কান্না করার চেষ্টা করলেন।কিন্তু কি আজব ব্যাপার!! চোখ দিয়ে এক ফোঁটাও জল আসছেনা।পুরো মুখমন্ডল যেন সাহারা মরুভূমি।কোথাও একটুও জল নেই।
শেখ হাসিনা পি.এনের কানে কানে বললেন,- 'কি ব্যাপার? রুমাল কোনটা এনেছো? চোখ দিয়ে পানি আসছেনা কেনো?'
পি.এন বেচারা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বললো,- 'আপা, রুমালে গ্লিসারিন মাখাইতে ভুইল্লা গেছি।'
এই বলে পি.এন ভ্যাঁএএএএএএ করে কান্না শুরু করে দিলো।
শেখ হাসিনা উপস্থিত সকল মিডিয়ার দিকে ফিরে মিনমিনে ধরা গলায় বললেন,- 'ইকবাল ভাই অত্যন্ত ভাল লোক ছিলেন।একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানি,গল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং একজন জাষ্টিফায়েড চেতনাবিদ।তার অকাল পরিণতিতে আমরা শোকাহত।তবে, উনি উনার লেখায় একটু-আঁধটু আমার ধর্মকে খোঁচা মারতেন।এটা একজন মুসলিম হয়ে আমি মানতে পারিনা।মুক্তোচিন্তা মানেই কিন্তু আল্লাহ-রাসূল নিয়ে খোঁচাখুঁচি নয়।এগুলোর জন্য যদি উনি গুম হয়ে থাকেন, তার দায়ভার সরকার নিবেনা।'
'
(২)
জাফর ইকবাল স্যার গুম হওয়ার পর উনার মোবাইলখানা উনার নিজের ঘরের লাইব্রেরি রুমে পাওয়া গেছে।
১২০০ মডেলের মোবাইল ইউজ করতেন জাফর স্যার।ব্যক্তিজীবনে বড়ই সাদামাটা ছিলেন উনি।বিজ্ঞানিরা একটু সাদামাটাই হয়।উনার ধারনা, - 'ওল্ড ইজ গোল্ড।'
আর, সাদামাটা ফোন বলেই গুমকারীরা এই মোবাইল না নিয়ে রেখে গেছে।
মোবাইলটা নিয়ে গেছে ডিবি পুলিশ।এই মোবাইলের উপর নিশ্চয় গুমকারীদের হাতের ছাপ পাওয়া যাবে।আর, সেখান থেকেই বের করা হবে মূল হোঁতাদের।
এর একদিন পর ডিবি পুলিশ মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে জানালো- মোবাইলের উপর চারজন ব্যক্তির হাতের ছাপ পাওয়া গেছে।
একজন সাংবাদিক শফিক রেহমান, একজন কবি ও সাহিত্যিক ফরহাদ মজহার, ছাগুদের মুরিদ ডাক্তার পিনাকি ভট্টাচার্য এবং অন্যজন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান।
ধারনা করা হচ্ছে, দেশকে দ্বিতীয় দফায় বুদ্ধিজীবী শূন্য করতে এই নৃশংস কাজটি করেছে এরা।এদের নেতৃত্বে ছিল সাংবাদিক শফিক রেহমান।এই বুড়ো বামটা জেল থেকে মেডিটেইশান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরো অপহরণ টিমকে নেতৃত্ব দেয়।
সাংবাদিক শফিক রেহমানকে আরো সাত দিনের রিমান্ড, ফরহাদ মজহার এবং পিনাকি কে তিনদিন, এবং ডেভিড বার্গম্যানকে ছ'দিনের রিমান্ড দিয়েছে মাননীয় আদালত।
সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা গেছে, সবার পশ্চাতঃদেশে সিদ্ধ ডিম দেওয়ার জোর দাবি তুলেছে শাহবাগ গনজাগরন মঞ্চ।
'
(৩)
আজ সকালে ঘটে গেছে একটি অতি আশ্চর্য, অভিনব ঘটনা।
সকাল ১০ টা নাগাদ, হঠাৎ গণভবনের আকাশে দেখা দিলো বিশালাকার একটি অপরিচিত আকাশযান।
সবাই ধরে নিলো, বিএনপি পন্থী শফিক রেহমানদের গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নেওয়ায় বিএনপি-জামাতের দোসর এ্যামেরিকা এবং পাকিস্তান একজোট হয়ে হয়তো বাংলাদেশের উপর মিশাইল ছুঁড়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই সংবাদ জানানো হলে তিনি বলেন, - 'এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বাংলাদেশকে এ্যাটাক করার মতো শক্তি এ্যামেরিকা-পাকিস্তানের নেই।ওয়েট, আমি মোদি দা'কে ফোন লাগাচ্ছি।'
কিন্তু মোদিকে ফোন লাগানোর আগেই বিশাল আকাশযানটি পতপত শব্দ করে নিচে নেমে এলো।
সবাই অবাক হয়ে দেখলো, এটি জাফর ইকবাল স্যারের সেইইই বিখ্যাত 'ড্রোন', এবং ড্রোনের ভেতর সাক্ষাৎ জাফর ইকবাল বসা।
চোখে-মুখে অবাক বিস্ময় নিয়ে সামনে এগিয়ে এলো 'এটিএন বাংলার' সাংবাদিক মুন্নি সাহা।
মুন্নি সাহা প্রশ্ন করলো- 'স্যার, ড্রোনের ভেতরে আপনার অনুভূতি কি?'
জাফর ইকবাল বললো,- 'খোশমেজাজ'।
আবার প্রশ্ন,- 'স্যার, আপনি কোথায় ছিলেন এতদিন?
-- 'মঙ্গলগ্রহে এলিয়েন খুঁজতে গিয়েছিলাম।'
জাফর স্যারের কথা শুনে সবাই টাস্কি।
এবার জাফর স্যার তার সহধর্মিনী ইয়াসমিনের কাছে জিজ্ঞেস করলো- 'কি গো! আমার ১২০০ মডেলের মোবাইলটা লাইব্রেরিতে রেখে গিয়েছিলাম সিমটা বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশান করতে।করেছো?'
কোন ফাঁকে সেখানে সেই নির্লজ্জ, দুষ্টু সাংবাদিকটা ঢুকে পড়েছিল।ম্যাডাম ইয়াসমিন জবাব দেবার আগেই সে বলে উঠলো,- 'স্যার, ভয় নেই।আপনি বায়োমেট্রিক পাশ করতে পারবেন।তারানা আপা
বায়োমেট্রিকের মেয়াদ আরো একমাস বাড়িয়েছেন।'
জাফর স্যার মনে মনে ভীষণ ক্ষুন্ন হলেন।ভাবলেন, - 'ধুর শালার! চেয়েছিলাম আমি আঙুলের ছাপ না দিয়ে ইয়াসমিনেরটা দিয়েই কাজ সেরে নিবো, সেটা আর হলো কই?
নাট্যকর্মীদের মন্ত্রী বানালে যা হয়,যত্তসব।।
মনে মনে উনার প্রিয় শ্লোগানটা আওড়ালেন,-
'ত' তে তারানা হালিম, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার।'
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:৫৮