আমি খেয়াল করেছি যে কিছু লোক থার্টিফাস্ট, পহেলা বৈশাখ, ভ্যালেন্টাইন এমনকি বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস পালন করার বিরোধী। তাদের ভাষ্য হলো এগুলো ইসলামী অনুষ্ঠান নয় এগুলো ইহুদী নাসারাদের কাজ এজন্য এগুলো পালন করা নাযাযেজ কাজ। তাদের কথা শুনে মনে হয় তাদের আল্লাহ বুঝি সারাক্ষণ মুখ গোমরা করে বসে থাকে। এই জীবনের মানে কী? আমার মনে হয় এর উত্তরে আপনারা বলবেন মহান আল্লাহর ইবাদত করা। আমিও আপনাদের সাথে একমত। এবার আসি ইবাদত মানে কী? আল্লাহ্ কে রাজি খুশি করার জন্য যে সকল কাজ করা হয় তাহাই ইবাদত। কিছু লোক মনে করেন মসজিদে নামাজ পড়া, রোজা রাখা আর হজ্ব করাই হলো ইবাদত। হায়রে মানুষ ! কুরআন খোলো দেখো সেখানে কয়টি আয়াত আছে নামাজ নিয়ে, কয়টি আয়াত আছে রোজা নিয়ে? কয়টি আয়াত আছে হজ্ব নিয়ে? সর্বোচ্চ ১০০ টি হবে। আর সমস্ত কুরআনে কি লিখা আছে? সেখানে এক পরিপূর্ন জীবন বিধান লিখা আছে। সেখানে বলা নেই যে, তোমরা শুধু নামাজ রোজা করবে আর সারাক্ষণ মুখ গোমরা করে বসে থাকবে। বিসমিল্লাহ বলে ভাল কাজ করলে নিশ্চই সেটা ইবাদতের মধ্যে গন্য হবে। মসজিদে মাইক দিয়ে আযান যেমন দেওয়া হয় আবার মাইক দিয়ে তো ডিসকো গানও বাজানো হয় তাই বলে কি মাইকের দোষ। একবার নবী করিম সাঃ কে এক সাহাবী বললেন- ইয়া রাসুল আল্লাহ্ মহরমের দিনে ইহুদীরা রোজা রাখে। হুজুর বললেন, কেন? সাহাবী বললেন, এই দিনে মুসা আঃ রোজা রাখতেন এই দিনে মুসা আঃ এর মৃত্যু হয় আরো অনেক কারণ। হযরত মুহাম্মদ সাঃ বললেন তাহলে তোমরাও রাখো। এই হলো ভাল আর মন্দের শিক্ষা। আরে ভাই ভাল কাজের কোন ধর্ম নাই। মন্দ কাজেরও তেমন কোন ধর্ম নাই। ভাল মন্দ দুটি বিষই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তিনি মানুষকে ভালটি বেছে নেওয়ার জন্য বলেছেন। সকল কিছুর মধ্যেই ভাল আর মন্দ বিদ্যমান আছে। আপনি ভালটি নিন তাহলেই হলো। একবার রাসুল সাঃ কে এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন- ইয়া রাসুল আল্লাহ্ মানুষ যদি গুনাহ না করত তাহলে কি হতো ? রাসুল সাঃ বললেন- মহান আল্লাহ নিশ্চই নতুন কোন জাতি সৃষ্টি করতেন। এবার বুঝুন ঠেলা। যে মানুষ গুনাহ কি বোঝে না সে তো কোন মানুষই না। মানুষ গুনাহ করবে অনুতাপ করবে। ক্ষমা চাইবে।এইতো মানুষ। হয়তো এখনও বলবেনঃ না না তাই বলে থার্টি ফাস্ট পহেলা বৈশাখ এগুলো পালন করা সম্ভব না। আপনার জন্য আমি বলবোঃ একজন মানুষের অনেক পরিচয় থাকে। প্রথমত সে একজন মানুষ। দিত্বীয়তঃ পুরুষ অথবা নারী, তৃত্বীয়তঃ ধর্মিয় পরিচয়, ধমের আবার অনেক মাজাহাব বা গৌত্র রয়েছে। চথুর্তঃ কোন দেশী, পঞ্চমঃ কোন ভাষী, ষষ্ঠঃ কোন বর্ণ, সপ্তমঃ শিক্ষিত না অশিক্ষিত, অষ্টমঃ লম্বা না বেটে, নবমঃ নিজের নাম, দশমঃ পিতার নাম, এগারোতমঃ ঠিকানা। এভাবে বলতে গেলে আমার মনে হয় আমি অনেক পরিচয় বলতে পারবো। এরুপ অনেক পরিচয়ের মধ্যে একটা হলো আমরা বাঙ্গালী আর পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীদের একটি অনুষ্ঠান। আপনি কি জানেন? সৌদী আরবে একটা সময় আসে যখন সেখানে এক প্রকার পোকা সৃষ্টি হয়। আর সেখানকার মানুষ সেই পোকা খাওয়াকে একটা উৎসব হিসাবে পালন করে। কোন্ হাদিসে লিখা আছে হযরত মুহাম্মদ সাঃ পোকা খেয়েছিলেন? আপনি কি পোকা খাবেন? খেতে পারেন কোন সমস্যা নাই চিংড়িও একটা পোকা। যা হোক প্রতিটি জাতীর একটা নিজস্ব সংস্কৃতি আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তারা তাদের সংস্কৃতি পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। না করাটা বরং অস্বাভাবিক। তবে সংস্কৃতির নামে অশ্লিলতা, বিশৃংখলা, অশান্তি কখনওই কাম্য নয়। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ দেশে ইংরেজী ক্যালেন্ডার চলে। আমাদের দেশেও চলে এমনকি ভারত পাকিস্তানেও ইংরেজী ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়। আরো আছে, আমাদের দেশে শুক্রবার ছুটি পালিত হলেও পাকিস্থানে কিন্তু রবিবারেই ছুটি পালিত হয়। কোই তারা তো বলে না আমরা এই ছুটি মানিনা এটা খ্রিষ্টানদের ছুটির দিন, আমরা পালন করবো কেন? আরে ভাই আল্লাহর দিন সব সমান। যেদিন ইচ্ছা পালন করুন। এখন কথা হলোঃ একটি বছর শেষ হচ্ছে পেছনের ফেলে আসা স্মৃতিগুলো ভেবে একটু যদি সুখ দুখের অনুভূতি মানুষ শেয়ার করতে না পারে তাহলে সে কিসের মানুষ। এখানে তো খারাপ কিছু দেখিনা। আজকাল এমন হয়েছে যে, রাসুল সাঃ এর জন্ম দিন ঈদে মিলাদুন্নবিও পালন করা যাবে না মর্মে বিভিন্ন কথা শুনি। অবস্থা কি দেখেছেন? আমরা ধর্মকে কী বানিয়ে ফেলছি??? সবাই ভালো থাকুন, ভালো কিছু দেখুন, ভালো কিছু শুনুন, ভালো কিছু ভাবুন। পোষ্টটি কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৩