somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেট এক্সপায়ার্‌ড

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে একটা জীবনের গল্প বলবো ।
একজন "ডেট এক্সপায়ার্ড" মানুষের গল্প ।

"ডেট এক্সপায়ার্ড" মানে জানেন তো?
মানে হইল "ভাঙ্গা কুলা" । যার কোন মূল্য নাই ।
মেয়াদ শেষ , তো ওষুধের প্রয়োজনও শেষ ।
লোকটাও একসময় এমন পরিস্থিতিতে পরেছিলেন ।

পরেছিলেন বললাম কারন পরিস্থিতি আর তেমন নাই ।
কিছুদিন আগে শহরে যাচ্ছিলাম ।
অটোচালক একটু বৃদ্ধ ।
বয়স ৬৫-৭০ র মধ্যে হতে পারে ।
কিন্তু শরীর এখনও শক্তসমর্থ ।
কথায় কথায় জানতে চাইলাম এখনও কেন অটো চালান?
কিছু বললেন না ।
আমিও আর জোর করলাম না ।

একটু পর গন্তব্যে পৌছালাম ।
দোকানদার (যার দোকানে আড্ডা দেই) কে বললাম চা দিতে ।
সেই অটোওয়ালাও চা নিয়ে এলেন ।
তারপর নিজ থেকেই তার গল্প শুরু করলেন ।
জীবনের গল্প ।

কিছুটা তার মত করেই তুলে ধরছি । অনেকদিন আগের কথা তাই যেটুকু মনে আছে তা ই বলছি_
"আমি একটা দোকান করতাম । তিন ছেলেমেয়ে নিয়া সংসার । দিনকাল ভালোই চলতেছিল ।
বড় ছেলে অহন অটো চালায় । বছর চারেক আগে বিয়া করাইছি ।
বিয়া করনের কয়েক মাস পর থিকাই পোলা বদলে গেল ।
আগের মত আর নাই ।
বউটারে ভাল মনে করছিলাম , কিন্তু বউটা একটা শয়তান ।
আমার ছেলেটারে কি বুঝাইছে ।
একদিন শুনলাম ভিটামাটি সব নিজের নামে কইরা নিছে ।
কি আর করার আছে ।
ওয়ারিশ তো কিছু পাইতই , তাই আর কিছু কই নাই ।

আসলে অহন বুড়া হইছি ত , তাই আর দাম নাই ।
বাকিটা থিকা অন্য ছেলেমেয়ে দুইটারে দিমু ।
আমার নিজের কিছু কিনা জমি ছিল ।
ধার দেনা কইরা সেইখানে কোনরকম কইরা দুইটা ঘর তুললাম ।
ছেলেমেয়ে নিয়া সেইখানে উঠলাম ।
মাইয়াডা টেনে পড়ত , ছেলেডা এইটে ।
চিন্তা করলাম , লেখাপড়া যত করবার চায় করামু ।
এক বছরের মধ্যেই সব ঋণ শোধ করলাম ।
একটা রিক্সা কিনলাম ।
মাইয়াডা মেট্রিকে ভাল করছে ।
ভাল একটা কলেজে ভর্তি করলাম ।

শুক্রবারে ছেলর ইস্কুল বন্ধ থাকলে দোকানে বসে । আমি রিক্সা চালাই ।
আল্লাহর রহমতে আরও তিনটা রিক্সা কিনলাম দুই বছরে ।
ভাড়া দিয়া রাখলাম ।
দোকান বেইচা একটা অটো কিনলাম নিজের জন্য ।
ভালই উপার্জন হয় ।
মাইয়াডা ইন্টারেও ভাল করল ।
ভাল একটা ঘর দেইখা বিয়া দিলাম ।
ছেলে আর্মির চাকরি করে ।
পোলাডাও মেট্রিকে এ প্লাস পাইছে ।
কলেজে ভর্তি হইছে ।

মাস তিনেক আগে সব রিক্সা বেইচা দিছি ।
আরেকটা অটো কিনছি ।
ভাড়া দেওয়া ।
আল্লাহর রহমতে মাসে এখন বিশ-বাইশ হাজার টাকা আয় হয় ।
বাড়িঘর ঠিকঠাক করছি ।
আরেকটা অটো কিনমু সামনের মাসে ।
ভাড়া দিয়া রাখমু ।
আল্লাহ রাখছে ভালই ।
পোলার কাছে আর যাই না ।
মাঝে মাঝে নিয়া যাইতে চায় এখন ।
কেন যামু কুলাঙ্গার ছেলের কাছে?
আল্লাহর কাছেই ভাল আছি ।"

জানতে চাইলাম , "আপনি তাহলে আর অটো চালান কেন?"
বলেছিলেন , "বইসা থাকতে আর ভালো লাগে না তাই চালাই ।"
"মেয়ের শশুরবাড়ি থেকে কিছু বলে না?"
"আল্লাহ ভালোমানুষের ঘরে মেয়েরে পাঠাইছেন । কিছু মনে কইরেন না , একটা কথা বলি । আল্লাহ সবাইরে সবই দিতে পারেন । আপনার ইচ্ছা থাকলেই হয় । আর বিশ্বাস করবেন আমি পারুম । আল্লাহ নিশ্চয়ই দিবেন ।"

লোকটি উঠে পরল । আমি জোর করেও চায়ের দাম দিতে পারলাম না । অবাক হলাম তার আত্নসম্মানবোধ দেখে ।

লোকটা চলে গেল ।
আমি স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলাম একজন সাধারণ মানুষের অসাধারণ ইচ্ছাশক্তি , আকাশছোঁয়া আত্নবিশ্বাস আর আল্লাহর প্রতি অগাধ ভক্তির নমুনা দেখে ।
তার চেয়েও কম বয়সী কত লোক দেখি ভিক্ষা করে । আর এই বয়সে এতবড় ধাক্কাও তার আত্নসম্মানবোধ টলাতে পারেনি ।
আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস নিয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন , "ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয় ।"

অদম্য ইচ্ছাশক্তি বলতে আসলে কি বোঝায় তা এই প্রথম বুঝলাম ।
এই ইচ্ছাশক্তি আজকালকার ছেলেমেয়েদের মাঝে নেই বললেই চলে ।
ইচ্ছাশক্তির মূল হচ্ছে আত্নবিশ্বাস ।
যখন আমি বিশ্বাস করব আমি পারব তখনই আমার ইচ্ছাশক্তি আসবে ।
কিন্তু আমাদের মধ্যে সেই আত্নবিশ্বাসটাই নেই ।
অল্পতেই আমাদের মনে হয় আমাদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না ।
এই ধারণাটা পরিবর্তন করা দরকার ।
আমাদের সামনে আছে অপার সম্ভাবনা ।
শুধু একটু ইচ্ছাশক্তির , একটু আত্নবিশ্বাস দরকার । আল্লাহ অবশ্যই দিবেন ।

লোকটা "ডেট এক্সপায়ার্ড না ।
ছেলের কাছে হয়তো তখন তার প্রয়োজন ফুরিয়েছিল । তাই তার কাছে আর কোন মূল্য ছিল না ।
কিন্তু মানুষ কখনও "ডেট এক্সপায়ার্ড" হয় না ।
আল্লাহ মানুষকে "ডেট এক্সপায়ার্ড" করেন না ।
এই মানুষটা আমাকে যে শিক্ষাটা দিয়েছিলেন , এত বছর স্কুল কলেজে পড়েও সেই শিক্ষা কখনও পাইনি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:১০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×