সনি আপু ব্যস্ত তুমি জানোনা?
না!
আপু আমার হাতে কখন মেহেদি দিয়ে দিবা?
আবার! মামনি চোখ রাঙায়
সনি আপু বলোনা কখন দিয়ে দিবা মেহেদি?
আজ সন্ধ্যায় দিয়ে দিবো যাও, তুমি দেখছোনা বাসা পাল্টানো নিয়ে কত ঝামেলায় আছি?বাসায় সব জিনিস রেখে আসি, তারপর যত কষ্টই হোক মেহেদি নিয়ে বসবো।
জবাব দেই সদ্য এস.এস.সি পাশ করা দিশা কে।মেহেদির টিউব নিয়ে তিনদিন আমার পিছনে ঘুরছে, আর কয়দিন মানা করবো? ওকে দেখলেই আমার ছোটবোনটার কথা মনে পড়ে, আমার বোনটাও এ বছরই এস.এস.সি পাশ করেছে।
সেইদিন অনেক ব্যস্ততা স্বত্তেও সন্ধ্যাবেলা দিশা কে নিয়ে মেহেদি রাঙাতে বসি ওর দুই হাতে।
আগেই জানতাম ওর বাবা নেই। কিন্তু কোনদিন ওর বাবা না থাকার কি অনূভূতি বা ওর বাবা কে কিভাবে হারিয়েছে জানতে চাওয়ার সাহস হয়নি।
কিন্তু যখন ই দিশা বা ফাগুন কে দেখতাম বুকের মধ্যে ধক করে উঠত, আর মনে হতো আহারে এই নিস্পাপ মুখগুলো !
আপু ঈদের আগের দিন বাসায় চলে এসো কিন্তু একসাথে বসে মেহেদি দিবো, বলে ওঠে দিশা
আরে পাগলি আমি কি ঈদের আগের দিন ঢাকায় থাকবো নাকি? হাসতে হাসতে বলি আমি
কেনো কেনো থাকবানা?
আরে পাগলি ঢাকায় কি আমার বাপ মা আছে?
আমার বাপ মা যেখানে আছে সেখানে যাবোনা?
আমার না আব্বু নেই!
হঠাৎ বলে ওঠে দিশা। শুনে আমার বুক ধক করে ওঠে..আজ কেনো মেয়েটা এই প্রসঙ্গ তুললো...
বাবার কথা মনে পড়ে?
হুমমমম
''আব্বু ঐদিন না রামপুরা গিয়েছিল আমার খালার বাসায়, ফিরে আসবে যখন তখন দাদীকে ফোন করে বলেছিল ''আম্মা আলুর চপ বানাবেন তো ইফতারীতে, আপনার হাতের আলুর চপ অনেক মজা''
সেদিন ছিল ১০ রোজার দিন।
কিন্তু আব্বু আর চপ খেতে ঘুরে আসেনি, শুধু তাইনা মৃত্যুর আগে আব্বু আর কিছুই খায় নি।
মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে আসার পথে একটা ট্রাক আসে, ট্রাকটা মোটরসাইকেলের উপর দিয়ে চলে যায়..সর্বোচ্চ ২মিনিট হয়ত আব্বু বেঁচে ছিলো বা তারও কম।
রাস্তা থেকে এক লোক দৌড়ে এসে আব্বুকে ধরে রমজানের দিন হওয়ায় লোকটি আব্বুকে জিগ্গেস করে ভাই রোজা আছেন?
ইশারায় আব্বু বোঝায় যে হ্যাঁ। লোকটি বলে ভাই পানি খান একটু। আব্বু খায়নি, চায়নি তার রোজা ভাঙ্গুক। এরপর লোকটি বুঝতে পারে আব্বু শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন উনি বলেন ভাই আমার সাথে ইন্নালিল্লাহ বলেন, কিন্তু তার আগেই আব্বু মরে যায়।''
গল্পটা শুনে হঠাৎ হাতটা কেমন জানি স্হবির লাগে।
কতটুকু ছিলে তখন?
ক্লাস থ্রি তে পড়তাম, আর ফাগুন মাত্র ২ বছরের। ফাগুনের আব্বুর কথা একটুও মনে নেই।
দাদী হঠাৎ হঠাৎ চোখের পানি মুছে আর বলে আমার সবচেয়ে রাজকুমারের মত সুন্দর ছেলেটাকে আল্লাহ নিয়ে নিয়েছে।
রোজার মাসে আলুর চপ দেখলেই চোখ ঝাপসা হয়ে যায় দাদীর। চোখ ঝাপসা এখন দেখছি দিশারও।
আমারও চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।হঠাৎ মনে হয় দিশা যেদিন মহাউৎসব করে, জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় দিনটিতে মেহেদি পরবে পাশে থাকবেনা ওর বাবা, হ্য়ত আবারও এইসব ভেবে ও চোখ ঝাপসা করে ফেলবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:৫২