মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন।এই দেশে যাদের প্রশ্ন করতে নেই কেমন আছেন সেই দলটি হচ্ছে সরকারী দল।সরকারী দল মানেই সুখ।বিরোধী দলে থাকতে যে রাজনৈতিক নেতাদের চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে সরকারী দলে এলে সে নেতাদের মুখে তারুণ্যের ঝিলিক আসে ।যে রাজনীতিবিদের মুখ ভাঙাচোরা হয়ে থাকে বিরোধী দলে থাকতে সরকারী দলে এলে সে মুখে তরতাজা হয়ে যায়।তাই আপনাকে প্রশ্ন করার মত বোকামী করলাম না কেমন আছেন।আমি জানি আপনি বেশ ভাল আছেন।বেশ সুখেই আছেন।এই গরীব দেশের গরীব মানুষগুলোর শাসকরা সব সময় সুখেই থাকে।সুখে থাকেনা শুধু তাঁরা যারা ভাগ্য বদলের আশায় একবার বিএনপিকে একবার আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় পাঠায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি একজন নারী।যে দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ২লক্ষ নারীর ইজ্জত জড়িয়ে আছে;যে দেশের নারীরা ১৯৭১ সালে আপনার মরহুম বাবার ডাকে ঘর থেকে বেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছে;যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী যে দেশের বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী;যে দেশে ৯০ এর পর থেকে গনতান্ত্রিক শাসনামলে কোন পুরুষ রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলনা আমি সেই দেশের নারী।আমি সেই দেশের নারী যে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নারী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারী।যে দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যবস্থায় নারীদের এত ক্ষমতা সেই দেশের নারী হয়ে আমার গর্বিত হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু , দুঃখের সহিত লিখতে হচ্ছে যে দেশে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিরোধীদলীয় নেত্রী,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারী সে দেশের নারী হয়ে আমি বিন্দুমাত্র গর্ববোধ করতে পারছিনা।উল্টো এতটাই অসহায়ত্ব বোধ করছি যে এই দেশের নারী হয়ে জন্মানোকে আমি সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ মনে করছি।আমি পূর্নজন্মে বিশ্বাস না করলেও আমি যখন রাস্তা দিয়ে হেটেঁ যাই তখন আমাকে নিয়ে যখন কেউ বাজে মন্তব্য ছুড়েঁ দেয়;বাসে আসার সময় আমার কোন বান্ধবীর শরীরের স্পর্শকাতর কোন অংশে কোন পুরুষ যখন হাত দেয় আর সেই অপমানে আমাকে জড়িয়ে ধরে যখন কান্নায় ভেঙে পড়ে ;যখন আমার সহপাঠী কোন মেয়ের শরীরে হিংস পুরষের যৌতুকের চিহ্ন আমাকে দেখতে হয় তখন আমার মনে হয় আগেও একবার আমি জন্মেছিলাম।সেই জন্মে আমি ক্ষমার অযোগ্য পাপ করেছিলাম বলেই সৃষ্টিকর্তা আমাকে পূর্নজন্ম করে এই দেশে পাঠিয়েছে শাস্তি স্বরুপ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আপনি সুর মিলিয়ে প্রায় বলেন দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল,দেশের মানুষ ভাল আছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের পরিস্থিতি একদম ভাল নেই।আপনি এবং আপনার সরকারের মন্ত্রী এমপি এবং বড় বড় নেতারা ভাল থাকলেও আমরা ভাল নেই।আপনাদের পানি সংকট,গ্যাস সংকট,বিদুৎ সংকট নেই আমাদের আছে।আপনাদের ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে আটকা পড়ে থাকতে হয়না কিন্তু আমাদের থাকতে হয়।আপনাদের মেয়ে,নাতনীরা এই দেশে থাকেনা কিন্তু আমরা থাকি।তাই আপনারা আমাদের বাবা-মায়ের যন্ত্রনা বুঝবেননা।আমাদের শিক্ষিত করতে স্কুল,কলেজ,ভার্সিটিতে পাঠানোর চেয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়াটাই আমাদের বাবা-মায়েদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাডিঁয়েছে ।কারণ,রাজপথ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্টান কোথাও নারীরা আজ নিরাপদ নয়।যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্টানেও আমরা নিরাপদ না সেখানে মা-বাবার মাথা ব্যাথার একমাত্র ঔষুধ হচ্ছে আমাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া!কিন্তু,বিয়ের পরও কি আমাদের শান্তি আছে? যৌতুক নামক শব্দটির কারণে আমাদের পুড়ে মরতে হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানিনা।কারণ,এই দেশে যখন যে দল ক্ষমতায় যায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সেই দলের মত হয়ে যায়।ছাত্র রাজনীতির হল দখল,ডাইনিং দখল,সিট দখলের মত এই দেশের রাজনীতিবিদরাও ক্ষমতার দখল পাওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দখল করে।তাই প্রতি ৫বছর পরপর আমাদের নতুন ইতিহাস পড়তে হয়।কিন্তু ,আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এই দেশের স্বাধীনতার পেছনে প্রায় ২ লক্ষ নারীর নির্যাতনের কাহিনী আছে।যে দেশের স্বাধীনতার সাথে নির্যাতিত নারী মিশে আছে সে দেশেই আজ নারীরা সব চাইতে বেশী নির্যাতিত।কেন?গত ৪০বছরের নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই।কিন্তু ইন্টারনেটে সার্চ করে আমি ২০১০ এর নারী নির্যাতনের ধর্ষন, এসিড় সন্ত্রাস,আর যৌতুক সন্ত্রাসের চিত্র নিচে দেখবেন কি?
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০১০
ধর্ষণ: গতবছর (২০১০) ৬২৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও মামলা হয়েছে মাত্র ৩২৩টি। আবার ২৯ জন নারীকে ধর্ষষের পরে হত্যা করা হয়েছে। আর ধষর্ণের কারণে আত্নহত্যা করেছে পাঁচ নারী। গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৪৫ জন।
এসিড নিক্ষেপ: ২০১০ সালে মোট ৯৩টি এসিড নিক্ষেপের ঘটনা প্রতিয়মান হয়েছে। তবে মামলা হয়েছে ৩৯টি। পারিবারিক নির্যাতনের ফলে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটে বলেও জানায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র। ৯৩ টি ঘটনার ২১টিই পারিবারিক কলহের জের ধরে। আর ১৯ থেকে ২৪ বছরের ১৭ জন নারীদেরকে এসিডে ঝলসে দেওয়া হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ,আপনি জানেন কি সুপ্রিম কোট ২০১০ সালে বিচারাধী নারী নির্যাতনের যে মামলা প্রকাশ করেছে তাতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ৬৬হাজার ৮১৭টি ।২০১১ সালে জানুয়ারী মাসে এই সংখ্যা এসে দাড়াঁয় ৭৩হাজার ৮৫১টি।
দুই হাজার ১০সালে আপনি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আপনি যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ‘গ্ল্যামার’র বিচারে বর্ষসেরা নারী মনোনীত হয়েছেন কিন্তু উপরের চিত্র আপনার ক্ষমতায়নের সময়কার।এই চিত্র কি আপনার পুরষ্কারে কালিমা লেপে দেয়না?চারদলীয় জোট সরকারকে আমরা তরুন ভোটাররা কি প্রত্যাখান করেছিলাম উপরের চিত্র পাওয়ার জন্য?মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কেন ভিকারুননেসার কিশোরীদের পরিমলের শাস্তির জন্য পুলিশী হুমকি উপেক্ষা করে রাজপথে দাড়াঁতে হচ্ছে?ক্লাস সিক্স থেকে ১০ পড়ুয়া মেয়েগুলোর কি এখন আন্দোলন করার বয়স?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ,২০১১ সালের তথ্য পাওয়া যাবে ২০১২ সালে।ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আপনাকে গতকালকের চিত্র দিচ্ছি।গতকালের চিত্র:গোদাগাড়ীতে ধর্ষণের পর গৃহবধূ ও শাহজাদপুরে যৌতুক দাবিতে স্ত্রী হত্যা;আখাউড়ায় ছাত্রীকে শিক্ষকের যৌন হয়রানিব বরিশাল শ্যামনগর গৌরনদীতে ছাত্রী ও বিধবাসহ ৩ জন ধর্ষিত
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে আপনার কাছে জানতে চাওয়ার দুঃসাহস দেখালাম, আর কত কত নারী ধর্ষিত,নির্যাতিত হলে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আপনি উদ্বিগ্ন হবেন?
সহ ব্লগার বন্ধুরা,কোন আশ্বাস নয় ভিখারুননেসার ছাত্রীরা পরিমলও পরিমলের মদদদাতাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আগামী কাল মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত আবার Central Shahid Minar এর সামনে দাড়াঁচ্ছে।আপনারা কি পারবেননা সকল ভেদাভেদ ভুলে আপনাদের বোনদের পাশে দাড়াঁতে?