তাকে প্রশ্ন করা হল কোরআন শরীফে বলা আছে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না যে মায়ের পেটের ভিতরে কি আছে? কিন্তু আমরা আল্টাসনোগ্রাফির মাধ্যমে জানতে পারি যে মায়ের পেটে ছেলে আছে না মেয়ে আছে? তাহলে কি কোরআনে ভুল আছে?(নাউযুবিল্লাহ)
জবাবে নায়েক সাহেব যথারীতি তার মনগড়া উত্তর দিলেন। তিনি বললেন যে কোরআনে ঐ আয়াতে লিঙ্গ শব্দের উল্লেখ নাই। তাই তিনি ঐ আয়াতের অর্থ করলেন যে সেখানে বলা হয়েছে মায়ের পেটের ভিতরে যে সন্তান আছে তার স্বভাব, আকার-আকৃতি ইত্যাদি কেমন হবে তা কেউ জানেনা। কোরআনে ঐ আয়াতে ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা উল্লেখ নাই। সুতরাং আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে ছেলে বা মেয়ে সম্বন্ধে জানতে পারলে তা কোরআনের ভুল হবে না।
এখন পাঠকবৃন্দ আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন আপনারা কি বুঝতে পেরেছেন যে সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা আল্টাসনোগ্রাফির মাধ্যমে আগে থেকে জানা যায়। এবং এ সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া মানুষেরও আছে।
যদি তাই বুঝে থাকেন তাহলে আপনাকেও যদি কাফের বলি...
কারন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। সূরা লোকমানের ৩৪ নং আয়াত পাঠ করুন। এর তাফসীর ইবনে কাসীর অথবা মাআরেফুল কোরআন থেকে বুঝুন। না বুঝলেও সমস্যা নাই। ইনশাআল্লাহ নিচের লেখাটুকু যত্ন সহকারে পড়লে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
সুরা লোকমানে ৩৪ নং আয়াতে উল্লেখ আছে "ওয়া ইয়া'লামু মা ফিল আরহাম।" যার অর্থ মায়ের পেটের ভিতর কি আছে তা তিনি জানেন।
এখানে মায়ের পেটের ভিতর কি আছে এই কথার দ্বারা কি মায়ের পেটের ভিতর কি ছেলে আছে না মেয়ে আছে, তার স্বভাব, বর্ণ ইত্যাদি সব বুঝায় না? তাহলে প্রথম টুকু অর্থাৎ ছেলে না মেয়ে তা বাদ দেব কোন যুক্তি তে? জাকির নায়েক সাহেবে যুক্তি সেখানে লিঙ্গ শব্দের কোন আরবি শব্দ নাই। তার এই যুক্তি যদি গ্রহন করি তাহলে সেখানে স্বভাব, বর্ণ ইত্যাদির আরবি শব্দও ত নাই। তাহলে তিনি ঐ আয়াতের অর্থে পরের অংশটুকু অর্থাৎ স্বভাব, বর্ণ...ইত্যাদিটুকু কোথায় পেলেন? এই অর্থ কি তার মনগড়া অর্থ নয়।
এখন আসুন তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে এই আয়াতের তাফসীর জানি। সেখানে পরিস্কার ভাবেই ছেলে ও মেয়ের কথা উল্লেখ আছে। এবং ঐ আয়াতের শাব্দিক অর্থ থেকেও এই কথা পরিস্কার বোঝা যায় যে মায়ের পেটের ভিতরে যে সন্তান আছে তার সমস্ত বৈশিস্ট্যই আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানেনা।
তাহলে আল্টাসনোগ্রাফির মাধ্যমে আমরা যে বিশেষ ক্ষেত্রে আগে থেকেই জানতে পারি এ কথাও ত সত্য। তাহলে কি কোরআনে ভুল আছে? অসম্ভব। কারন একথা সবারই জানা থাকার কথা রিপোর্ট ছেলে হওয়ার কথা বললেও অনেক সময় মেয়ে জন্ম নেয়। সুতরাং প্রকৃত তথ্য আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। মেডিকেল রিপোর্ট ১০০ ভাগ নিশ্চিত কিছু না।
কোরআনেও এই ভাবে ই বলা হয়েছে। যেমন ঐ আয়াতের পরের অংশে আছে আগামী কাল কি হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। এখন একজন শিক্ষক বললেন কালকে তোমাদের ক্লাস টেস্ট হবে। এবং কালকে তিনি ক্লাস টেস্ট নিলেন। তাহলে কি আপনি বলবেন তিনি আগে থেকেই জানেন যে আগামী কাল কি হবে তা ঐ শিক্ষক জানেন? কখনই নয়। কারন এমন অনেক পরীক্ষার সময় অহরহ পরিবর্তন হয়। সুতরাং আগামীকালের সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কারও কাছে নেই। মাআরেফুল কোরআনে এব্যাপরে আরও বিস্তারিত আছে।
সুতরাং ছেলে হবে না মেয়ে হবে এ কথা কখনও কখনও আল্টাসনোগ্রাফির মাধ্যমে আগে থেকে বলতে পারলেও সেটা কোরআনের কোনভুল নয়। এবং এই কারন দেখিয়ে ছেলে বা মেয়ে সম্পর্কে জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে আছে এই বিশ্বাস তৈরী করার নাম কি কুফর নয়। কারন এতে সরাসরি কোরআনের অর্থ বিকৃত করা হয়। এবং আল্লাহ পাকের জাত সম্পর্কে ভুল আকীদা তৈরি হয় যা কুফর শিরকের সাথে সম্পর্কিত।
সুতরা আপনারাই বলুন জাকির নায়েকের হাতে কত জন মুসলমান হয়েছে আর কতজন কাফের বা মুশরেক হয়েছে?
তার আরও ভ্রান্ত আকীদা সম্পর্কে জানতে "জাকির নায়েকের ভ্রান্ত মতবাদ"-মুফতি মিযানুর রহমান কাসেমীর বই পড়ুন।