প্রতেকদিন এশার নামাজের শেষে অন্তত ১০ বার দুরুদ পাঠ করতে হবে,আর তাতে অনেক ফজিলত ।
তা ছাড়াও পাক পবিত্র অবস্থায় সব সময় যত বেশি দুরুদ পাঠ করা যাবে তত বেশি ফজিলত পাওয়া যাবে ।
আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ ।.
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ ।
দুরুদ শরীফের অনুবাদ
যে আললাহ! মুহাম্মদ (সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাললাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ রহমত অবতীর্ণ কর যেইরূপ রহমত হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাযন এবং মহামহিম।
হে আললাহ! মুহাম্মদ (সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাললাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর সেইরূপ বরকত দান কর যে রূপ বরকত ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁহার বংশরগণের উপর দান করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাযন এবং মহামহিম।
দরুদ শরীফ পাঠ নিয়ে আমরা অসংখ্য প্রশ্নের সম্মুখিন হই, নানা ধরনের চিন্তা আমাদের মনে ঘুরপাক খায়, যার সমাধান আমরা খুঁজতে খুঁজতে সবশ্রেষ্ট ফজিলতময় দরুদের জিকির থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে যাই । তাই আসুন আজ কিছুক্ষন সময় ব্যয় করে দরুদ শরীফ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নিই এবং এর অভুতপূর্ব ফজিলতসমুহ জেনে দরুদের ব্যপারে নিজেদের শুদ্ধ করে জান্নাতের দরজায় পৌঁছার সহজ পন্থা দরুদ শরীফ পাঠের বিষয়ে জেনে নিই।
মহান আল্লাহ্ সোবাহানআলা পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল করে হুকুম করলেন, ইন্নাল লাহা ওয়া মালাইকাতাহু ইউছাল্লুনা আলান নাবীই, ইয়া আইয়ুহাল লাজিনা আমানু ছাল্লু আলাইহি ওয়াসাল্লামু তাছলীমা।''
নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ্) স্বয়ং এবং আমার ফেরেস্তাগণ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরুদ পাঠ পূর্বক সালাম প্রেরণ করিয়া থাকি; হে মুমিনগণ তোমরাও তাঁহার উপর দরুদ পাঠ কর এবং সালাম প্রেরণ কর।' (পবিত্র কোরআন-২২ পারা, সূরা আহযাব- রুকু-৭, আয়াত-৫৬)।
কোরআনের এই আয়াতে যেহেতু আল্লাহ তায়ালা দরুদ পাঠের হকুম এরশাদ করেছেন তাই জীবনে একবার হলেও দরুদ পাঠ করা ফরয। আর যখনই নবী করিম (সঃ) এর নাম মোবারক আমরা উচ্চারন করি কিংবা অন্য কেহ উচ্চারন করে আমরা নবী করিম (সঃ) এর নাম মোবারক শুনতে পাই তখন দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব। যেমন আযানে (আশহাদুআন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্লাহ) শুনে ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলা ওয়াজিব। আর যদি কোন মজলিশে বার বার নবীর জিকির হচ্ছে সেখানে হকুম হল প্রথম বার নবীর নাম শুনে দরুদে পাক পড়া ওয়াজিব। আর সে মজলিশে যতবার নাম মোবারক শুনবেন ততবার দরুদ পাঠ পড়া মুস্তাহাব।
ওয়াজিব ও ফরয তরক করলে গুনাহ হয় আর মুস্তাহাব তরক করা গুনাহ নয় তবে ফযিলত থেকে বঞ্চিত হবে। সুতরাং কোন মাহফিলে অসংখ্য বার নবীর নাম উচ্চারন হলে সেখানে যদি আমরা একবারও দরুদ না পড়ি তাহলে ওয়াজিব তরক হওয়ার কারনে গুনাহগার হব। আর যদি প্রথমবার পাঠ করে নিয়ে বাকী সময় না পড়ি তাহলে গুনাহগার হব না তবে ছাওয়াব থেকে বঞ্চিত হব। তাই উত্তম হল ওয়াজিবও পুরন করা এবং মুস্তাহাবের উপর আমল করেও অসীম ছাওয়াব হাছিল করা।
কয়েকটা হাদিস দেয়া হল:
(*)হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন- ঐ ব্যক্তিই কৃপন যার সম্মুখে আমার নাম মোবারক উচ্চারণ করা হল অথচ সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করলনা (বুখারী- নাসায়ী)।
(*) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন- যখন তোমরা আজানের আওয়াজ শোন, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তা বলবে। অর্থাৎ আজানের জবাব দিবে। অতঃপর তোমরা আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ পাক তার উপর দশটি রহমত নাজিল করবেন। অতঃপর তোমরা আমার জন্য আল্লাহপাকের নিকট ওসীলার দোয়া করবে। ওসীলা বেহেশতের একটি উচ্চ মর্তবা শুধু একজন লোককেই উহা দান করা হবে এবং সেই মর্তবা লাভের আশাবাদী একমাত্র আমিই। যে ব্যক্তি আমার ওসীলার জন্য দোয়া করবে সে ব্যক্তি আমার শাফায়াত লাভে ধন্য হবে (মুসলিম, তিরমীজি, আবু দাউদ)।
(*)রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন- দুরূদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে তোমাদের মাহফিলকে সুসজ্জিত করবে কেননা আমার উপর তোমাদের দুরূদ শরীফ কিয়ামতের দিন আলো স্বরূপ হবে।
(*) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত দুরূদ শরীফ শুক্রবার আসরের নামাজের পর স্ব-স্থানে বসে ৮০ বার পাঠ করবে মহান আল্লাহপাক তার ৮০ বছরের সগীরা গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং তাকে ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব দান করবেন:- ‘‘আল্লাহুম্মা সাল্লিআ’লা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়াআ’লা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা।’’ (আদদুররুল মানজুদ)।
(*) হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তার জন্য ৭০জন ফেরেস্তা এক হাজার দিন পর্যন্ত সওয়াব লিখতে থাকবেন:- ‘‘জাযাল্লাহু আ’ন্না মুহাম্মাদান সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা মা-হুয়া আহলুহু।’’ (তবরাণী, আততারগীব)।
দুরুদ শরীফের ফজিলত সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনায় কয়েকটি প্রশ্ন এসে যায়। প্রশ্নগুলো হচ্ছে- (১) মদীনা শরীফ অতি দুরে অবস্থিত। এতদূর থেকে নবী (সাঃ) কিভাবে দুরূদ পাঠকারীর দুরূদ শুনবেন ও দুরূদ পাঠকারীকে পরিচয় করবেন? (২) যখন নবীজি দুরুদ পাঠকারীর দুরুদ শুনেন ও দুরুদ পাঠকারীকে চিনেন তখন আমরা দোয়া করার সময় এরূপ বলি কেন? ‘‘হে আল্লাহ! আমাদের দুরূদ শরীফের সওয়াব নবীজির খেদমতে পৌছিয়ে দাও।এর জবাব হল- দুরুদ পাঠ দু-ধরনের হয়ে থাকে।
(১)নিস্বপ্রাণ: যে দুরূদ শুধু মুখে পাঠ করা হয়ে থাকে। যাতে এশক ও মহব্বতের কোনো উপস্থিতি থাকে না। এ ধরনের দুরূদ ফেরেস্তাগণ নবীর দরবারে পৌছিয়ে দেন।
(২) রূহ বিশিষ্ট দুরূদ: যাতে দুরূদ পাঠকারী ধ্যানের মাধ্যমে নিজেকে মদীনা শরীফের রওজা পাকের সামনে নিয়ে উপস্থিত করে এবং এশক ও মহব্বতের সাথে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দুরূদ শরীফ পাঠ করে থাকে। এভাবে যারা দুরূদ শরীফ পাঠ করেন- এরাই হচ্ছেন আহলে মহব্বত আর এদের দুরূদ শরীফ রাসূল (সাঃ) নিজ কান মোবারক দিয়ে শুনেন এবং দুরুদ পাঠকারীকে চিনেন। নবী করিম (সাঃ) আল্লাহ প্রদত্ত নববী রুহানিয়াতের অসীম শক্তির মাধ্যমে সালাতও সালাম পাঠকারীকে চিনেন ও তাদের সালাত ও সালাম নিজ কানে শুনেন। এমনকি নবীজি নিজে দুরুদ ও সালাম পাঠকারীদের নিকট উপস্থিত হয়ে তাদেরকে পুরস্কৃতও করে থাকেন। এ ব্যাপারে অনেক জ্বলন্ত প্রমাণও রয়েছে। রুহানিয়াত হচ্ছে- আল্লাহ প্রদত্ত সেই অদৃশ্য শক্তির নাম যার ইশারায় চন্দ্রদ্বিখÐিত হয়ে যায়, জায়নামাজে নদী পার হওয়া যায়, বাঘ, বৃক্ষ এবং পাথর বিশুদ্ধ আরবীতে কথা বলতে বাধ্য হয়, কুকুর হিংস্র বাঘকে অনায়াসে খেয়ে ফেলতে সক্ষম হয়। বিজ্ঞানীরা টেলিফোনের সাহায্যে দূরবর্তী লোকের সাথে কথা বলেন পক্ষান্তরে আল্লাহর প্রিয়জনরা রূহানিয়াতের সাহায্যে হাজার হাজার মাইল দূরের কথা শুনেছেন ও শুনিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা প্রতিপক্ষ দেশের কোথায় কি হচ্ছে তা যন্ত্র বসিয়ে দেখতে পাচ্ছে। সকল বিজ্ঞানীর সেরা বিজ্ঞানী, আল্লাহপাকের সেরা সৃষ্টি, সেরা রূহানিয়াতের ধারক ও বাহক আমাদের প্রিয়নবী (সাঃ) রওজা পাক থেকে আহলে মহব্বতের পাঠকৃত দুরূদ ও সালাম নিজের পবিত্র কান মোবারক দিয়ে শুনেন এবং নিজের চক্ষু মোবারক দিয়ে দুরূদ ও সালাম পাঠ কারীকে দেখেন ও চিনেন এবং তাদের বাসনা ও পূরণ করেন। আর যারা আহলে মহব্বত নয় তাদের দুরূদ ও সালাম নবীজির খেদমতে পৌছানোর জন্য আল্লাহপাক ফেরেস্তাগণ নির্ধারিত করে রেখেছেন। তাঁরা নবীজির খেদমতে দুরূদ ও সালাম পৌছানোর দায়িত্ব তো অবশ্যই পালন করবেন। আমরা যে দোয়ার মধ্যে বলি- ‘‘হে আল্লাহ! আমাদের দুরূদ শরীফের সওয়াব নবীজির খেদমতে পৌছিয়ে দাও,। একথা বলি আমরা বিনয় এবং নম্রতা প্রকাশের জন্য। কারণ ফেরেস্তাগণ তো এমনিতেই দুরূদ ও সালাম উম্মতের পক্ষ থেকে পৌছাবেন। কেননা এটা তাঁদের দায়িত্ব। সুতরাং দোয়ার মধ্যে- ‘‘হে আল্লাহ! আমাদের সালাত ও সালামের সওয়াব নবীজির খেদমতে পৌছিয়ে দাও।, একথা আমরা বিনয় প্রকাশের জন্য বলে থাকি। বিনয় ও নম্রতা একটি মহৎ গুণ। বিনয় ও নম্রতা প্রদর্শন কারীকে আল্লাহপাক অত্যন্ত ভালবাসেন।
দুরূদ শরীফ হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের একমাত্র মাধ্যম। দুরূদ শরীফ ব্যতীত কোনো ইবাদত আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। দুরূদ শরীফের গুরুত্ব বর্ণনা করে কবি বলেন- ‘‘নবীর প্রেমে হয়ে ফেদা, দুরূদ পড় সবে সদা দুরূদ পড়েন নিজে খোদা ক্বোরআনেতে ঐ প্রমাণ।’’ স্বপ্নযোগে রাসূল (সাঃ) এর দিদার লাভের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে দুরূদ শরীফ। ‘‘রুকনে দ্বীন’’ নামক কিতাবে আছে- ‘‘যে ব্যক্তি রবিউল আউয়াল মাসে সোয়া লক্ষবার ‘‘আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ’’ এই দুরূদ শরীফ খানা পাঠ করবে, এই রবিউল আউয়াল মাসের ভিতরেই রাসূল (সাঃ) এর সাথে তার জিয়ারত নসীব হবে।