ব্লগিং একটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম হিসেবে ইতিমধ্যে পাশ্চাত্যে প্রমাণিত হয়েছে, যেখানে লেখক বা সাংবাদিক মাত্রই রয়েছে একটি ব্যক্তিগত ব্লগসাইট। আমরাও পারি ব্লগিং দিয়ে দেশ ও আর সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, যদি ইতিবাচক ব্লগিং-এ বিশ্বাস করে ভারচুয়াল সামাজিকতাকে সম্মান জানাই। যেহেতু লেখক না হয়েও ব্লগার হওয়া যায়, তাই এখানে, মানে সাইবার জগতে, লেখকের চেয়েও ব্লগার হবার প্রয়োজন সর্বাধিক। এজন্য চাই ব্লগারসুলভ আচরণ এবং ব্লগারের ব্যক্তিত্ব। উত্তম ব্লগিং নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর অনুসন্ধানের মিশ্রণে একটি তালিকা তৈরি করলাম, যাতে পাঠকেরা আরও কিছু যোগ করতে পারেন। আলোচনা-সমালোচনাও করতে পারেন। লেখাটির জন্য তীব্র সমালোচনা কাম্য!
ব্লগিং এবং সহব্লগার থেকে অর্জিত আমার ৩৯টি ব্লগিং অভিজ্ঞতা।
:::এক থেকে তেরো
১) উত্তম ভাবনায় উত্তম লেখা – নেতিবাচক ভাবনায় ধ্বংসাত্মক ব্লগিং
২) ভাষাগত শুদ্ধতা ব্লগারের স্ট্যান্ডার্ডকে উন্নত করে: তাই, যথাসম্ভব ভাষাগত ভুল এড়িয়ে চলা
৩) প্রচুর অন্যের ব্লগ পড়া এবং আন্তরিকভাবেই পড়া, অবশ্যই পছন্দমতো – নিজের পছন্দের বিপক্ষে যাবার প্রয়োজন নেই
৪) মন্তব্য দেবার সময় লেখকের উত্তম/ইতিবাচক দিকটিতে ফোকাস করা (একান্তই প্রয়োজন হলে, অন্য উপায়ে নেতিবাচক বলা)
৫) কারও উত্তম/ইতিবাচক বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে, ইতিবাচক দিকের উন্নয়ন হয় আর নেতিবাচকতা খাটো হতে থাকে
৬) লেখার তাৎপর্য এবং ‘লেখাকে’ লক্ষ্য করে মন্তব্য দেওয়া (ব্যক্তিকে নয়)
৭) লেখা দিয়েই ব্লগারকে মূল্যায়ন করা, তার নাম ছবি সামাজিক পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়া
৮) লেখা সংক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়েও বেশি প্রয়োজন লেখায় সারবস্তু থাকা, তবে অহেতুক দীর্ঘ করার প্রয়োজন নেই
৯) সহজ এবং সোজা ভাষায় লিখিত ব্লগ পঠিত হয় সর্বাগ্রে
১০) সাময়িক পোস্ট না হলে প্রচুর প্রুফরিডিং বা সংশোধন করা, পোস্ট করার আগে
১১) উদারতা ক্ষমাশীলতা এবং রসিকতা – উত্তম ব্লগারের গুণ (ভালো মানুষেরও!)
১২) এমন বিষয়ে লেখা যা নিজেকেও সাহায্য করেছে, উপকৃত করেছে, বিদগ্ধ করেছে
১৩) সারবস্তুহীন লেখা মনে আসলে পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা
:::চৌদ্দ থেকে ছাব্বিশ
১৪) পাঠককে প্রাজ্ঞ বিচক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণশীল মনে করা, এবং সেটাই যথার্থ!
১৫) যা কিছুই লেখা হোক, তাতে নিজের মতামত ও বিশ্লেষণ থাকা উচিত
১৬) লেখায় নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করতে দেওয়া (প্রথাগত লেখকের জন্য ১৫ এবং ১৬ প্রযোজ্য না-ও হতে পারে)
১৭) নিজ বিষয়ে প্রচুর অনুসন্ধান ও অধ্যয়ন করা এবং শ্রম বিনিয়োগ করা
১৮) লেখার বক্তব্য যথাসম্ভব সরাসরি পেশ করতে হয়, অনাবশ্যক ভূমিকায় বিরক্তি উৎপাদন করে
১৯) নিজের প্রিয়/অর্জিত বিষয়টি দিয়েই লিখতে শুরু করা
২০) তথ্য বা তত্ত্বের পরিবেশনায় রেফারেন্স করার সময় যে কোন একটি মাধ্যমকে আস্থা না করা
২১) “১ ছবি ১০০০ শব্দের কথা বলে” – লেখায় প্রাসঙ্গিক ছবি যুক্ত করা
২২) পাঠকের সময়ের মূল্য দেওয়া: লেখার ‘আকৃতি ও প্রকৃতি’ নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করা
২৩) প্রশ্ন এবং মন্তব্যের উত্তর দিতে হয়, এটি ন্যূনতম সৌজন্যতা
২৪) অন্য ব্লগারের উপস্থিতিকে সম্মান করা, অনাবশ্যক বিতর্ক এড়িয়ে চলা
২৫) ব্লগিংএ জুনিয়রদেরকে অনুপ্রাণিত করা, গঠনমূলক মতামত দেওয়া এবং তাদেরকে গেঁথে তোলা
২৬) লেখায় অন্যের অবদান বা অনুপ্রেরণা থাকলে তা যথাযথভাবে স্বীকার করা
:::সাতাশ থেকে ঊনচল্লিশ
২৭) নিজের ভালো লেখা এবং অন্যের লেখায় দায়িত্বশীল মন্তব্য দিয়ে ব্লগিং ক্রেডিবিলিটি বা পাঠকের আস্থা ধরে রাখা
২৮) দেশপ্রেম মূল্যবোধ ক্ষমা ভালোবাসা স্নেহ ইত্যাদি মানবিক উৎকর্ষতার বিষয়গুলো, আচরণে না থাকলেও, অন্তত লেখায় তুলে ধরা
২৯) জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দিবসগুলো এবং বিশেষ ব্যক্তিদের বিশেষ দিনের প্রতি মনোযোগ রাখা
৩০) একটি নির্দিষ্ট শেডিউল রক্ষা করে পোস্ট দিলে উত্তম, যেমন প্রতি বৃহস্পতি ও শনিবার ইত্যাদি
৩১) নিজের চাহিদামত প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোতে (যেমন, এসইও বা অপটিমাইজেশন স্কিল) দক্ষতা অর্জন করতে পারলে সোনায় সোহাগা
৩২) আত্মমূল্যায়ন এবং নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারার জন্য নিজের প্রকাশিত ব্লগে এবং অন্যের মন্তব্যে মাঝে মাঝে দৃষ্টিপাত করা
৩৩) সৌন্দর্য্য সকলেরই কাম্য – লেখায় পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য্যবোধের পরিচয় দিতে হয়
৩৪) সামাজিক অসঙ্গতি অবিচার দুর্নীতি অন্যায় অত্যাচার দ্বারা ক্ষুব্ধ ব্যথিত হলে, তথ্য তত্ত্ব ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ ও দৃষ্টান্তসহ লেখা উচিত
৩৫) লেখায় দেশমাতৃকা ও স্বদেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা অব্যাহত রাখা
৩৬) রাজনীতি না বুঝলে এবং নিজের বক্তব্য যৌক্তিকভাবে তুলে ধরতে না পারলে, রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকা
৩৭) ধৈর্য্য যেমন সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়, ব্লগিং-এ এর প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক
৩৮) সমাজের উন্নয়নের জন্য, পরিবেশ প্রকৃতি উত্তম কোমলতা সৌন্দর্য্য দেশ নারী শিশু অক্ষম অবহেলিত পিছিয়ে-পড়া নিপীড়িত – ইত্যাদি সংস্কারমূলক ইস্যুতে যথাসম্ভব এবং আপ্রাণ পক্ষপাতিত্ব থাকা
৩৯) ব্লগারকে ব্লগিং নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়, অন্য কিছু নিয়ে নয় – অর্থাৎ অন্যের দুর্বলতার অনুসন্ধান বা ক্যাচালে অংশ না নিয়ে, নিজের লেখায় মনোনিবেশ করা।
লিখতে বসেছি, তাই যা মনে আসলো সবগুলোই লিখলাম। তালিকা দেখে যেন কেউ আতঙ্কিত না হন। সকল গুণই একসাথে একজন ব্যক্তির মধ্যে থাকা অসম্ভব না হলেও কঠিন।
ব্লগিং নিয়ে যতই অনুসন্ধান করেছি, ততই বিস্মিত হয়েছি এর সম্ভাবনা ও বহুল প্রযোজ্যতা দেখে। ৭০ আর ৮০’র দশককে যদি কমপিউটার যুগ বলা যায়, তবে এখন আমরা আছি ইন্টারনেট যুগে। ইন্টারনেরেটর যুগ মানেই হলো নিজেকে প্রকাশের সময়। যেভাবে প্রকাশ, সেভাবেই জানবে ভারচুয়াল সমাজ। এযুগে নিজের মতামতকে অতি সহজেই জনসমক্ষে উপস্থাপন করা যায়। নিজের চিন্তা দিয়ে অন্যকে প্রভাবিত করা যায় – অন্যের চিন্তার ভাগ পাওয়া যায়। এর সুফল নিতে হলে সুজন হতে হয়।
[কাউকে জ্ঞান দেবার জন্য নয়, নিজের চিন্তাকে যাচাই করার জন্যই লিখে রাখলাম ব্লগে। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আধুনিক ব্লগারদের শক্তি সামর্থ্যে আর সম্ভাবনা পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি। বিশ্বাস করি, ছাপার অক্ষরের চেয়ে ব্লগারের লেখার শক্তি অন্যরকমভাবে বেশি, কারণ এখন বইয়ের পাতার চেয়ে কম্পিউটারের স্ক্রিনে মানুষ বেশি দৃষ্টি রাখে। তাই, এবিষয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।]
***********************************************
পঞ্চাশতম পোস্টে প্রিয় সহব্লগারদেরকে প্রীতি শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এতো ভালোবাসা আর এতো প্রেরণা পেয়েছি যে কর্মজীবনের ব্যস্ততার মাঝেও কিছু লিখার প্রচেষ্টায় আনন্দ পাচ্ছি। যেন বিনিময়ে আরও অধিক পড়া ও মিথষ্ক্রিয়ার সুযোগ পাই। নাম প্রকাশ করে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চাই না, কিন্তু ‘লেখায় লেখায়’ কয়েকজন গুণী লেখক ও প্রেরণাদায়ক বন্ধু পেয়েছি, আমি যাদের ভক্তও। বন্ধু পাওয়াকে আমার জীবনের সেরা অর্জন বলে মানি। শুভেচ্ছা বন্ধুগণ!
কয়েকটি বিষয়ভিত্তিক লেখা একসাথে তুলে ধরলাম সহব্লগারদের দরবারে:
ক) ব্লগ ও নেটিকেট নিয়ে
১ অন্যের পোস্টে সৃজনশীল মন্তব্য
২ আধুনিক ব্লগারদের ১০টি প্রিয় ভুল
৩ ভারচুয়াল পারসোনালিটি
৪ আমরা কি নেটকোহলিক হয়ে যাচ্ছি?
খ) লেখালেখি
১ ভালো লেখার ৩টি গোপন সূত্র
২ কী লিখবো, কেন লিখবো!
৩ কবিতা তোমায় দিলাম পুরাই ছুটি
৪ নোবেল বিজয়ী মো ইয়ানের লেখার প্রকৃতি
গ) প্রেম ও জীবনদর্শন
১ ভালো কাজ করুন...মানুষ বলবে গোপন উদ্দেশ্য আছে
২ খ্যাতিমানদের জীবনের শেষ কথা ও জীবন দর্শন
৩ পৃথিবীর ক্ষমতাবানদের জীবনের শেষ কথা
৪ মৃত্যু ও জীবনের অজানা বন্ধন
৫ বয়সকালের ভালবাসা - ডাক্তারের ডায়েরি থেকে
৬ ‘তোমার রূপ সম্পর্কে অনেক গুজব শুনিয়াছি’ - হোমার
৭ ‘প্রেম’ বুঝে ভালোবাসুন!
ঘ) কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত উন্নয়ন
১ ক্যারিয়ার গাইড হিসেবে লিংকড ইন
২ কর্মজীবন: চাকরি করবেন নাকি দেবেন?
৩ কর্মসংস্থান ব্যবসায় - একটি অনাবিষ্কৃত শোষণ ব্যবস্থা
৪ ঘোড়া ও ছাগলের গল্প
ঙ) প্রিয় দেশ - প্রিয় সমাজ
১ বাংলা কথায় ইংরেজি শব্দের ব্যবহার
২ দ্য ইকোনোমিস্ট ও হলুদ সাংবাদিকতা
৩ ধর্ষকের শাস্তি হতেই হবে, নারী বিবস্ত্র থাকলেও অপরাধ ধর্ষকেরই
৪ শিশুদের জন্য ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতাগুলো কতটুকু ভবিষৎদর্শী?
৫ জয় বাংলা আমুলিকের সম্পত্তি নয়!
৬ লস্ট এন্ড ফাউন্ড ক্ষুদ্রঋণ প্রবক্তা
৭ রাজপুত্রদের আবির্ভাব ও প্রত্যাবর্তন আমাদের জন্য কী নিয়ে আসছে?
৮ ইংলিশ বাংলিশ - আপনার ‘লেদার’ কি ফর্শা?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১৭