নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন ঘটে আওয়ামী জোট সরকারের। শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে। জানিনা শেখ হাসিনাকে কোন স্বার্থে বা কাদের স্বার্থে দেশ থেকে পালাতে সহযোগিতা করেছেন আমাদের সেনাবাহিনী? সেদিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট গনভবনে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার জীবন মোটেও নিরাপদ ছিল না। তাদের জীবন রক্ষার জন্য ই কি তাদের নিরাপদে দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করেছেন আমাদের সেনাবাহিনী? ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে প্রাণরক্ষায় রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মোট ৬২৬ জনকে নাকি আমাদের সেনাবাহিনী বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দিয়েছিলেন। যদি কোন ব্যক্তির জীবন ঝুকির মুখে পরে জীবন রক্ষার্থে তাকে আশ্রয় দেওয়াই মানবিক দায়িত্ব। নিঃসন্দেহে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সেই সব লোকদের আশ্রয় দিয়ে মানবাধিকার পরিচয় দিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আমাদের সেনাবাহিনী ৬২৬ জনের জীবনরক্ষার্থে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দিতে পারলে কেন শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে সেনানিবাসে আশ্রয় দিয়ে দেশে রাখতে পারলেন না? এবার প্রশ্ন সেনাবাহিনী যেই ৬২৬ জনকে জীবনরক্ষার্থে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দিয়েছেন তারা কারা, কেনই বা তারা সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের জীবন ঝুকিপূর্ন ভাবলেন, আবার কেনই বা আমাদের সেনাবাহিনী তাদেরকে বাহিরে ছেড়ে দিলেন?
সেনাবাহিনীর তো আইনগত ভাবে দয়িত্ব ছিল আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতনের পর আওয়ামিলীগের বিভিন্ন শ্রেনীর নেতাকর্মী, মন্ত্রী, এমপি, সরকারি কর্মচারী, সাবেক বিচারপতি, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন পেশার অনেকেই বৈধ বা অবৈধ পথে দেশ ছেড়েছেন। আবার অনেকে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে জনগনের সহযোগিতায় আটক হয়েছেন আবার কাউকে জীবন ও দিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন কেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব রুহুল আমিনকে পর্যন্ত পালাতে হলো? পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও তার দোসররা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে কি শুধু মাত্র তসবিহ তহলিল আর তাহাজ্জুদের নামাজেই ব্যস্ত থাকবেন নাকি বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে নানান কুটচাল আর ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হবেন? শেখ হাসিনা ও তার দোসরেরা বিদেশে অবস্হান করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে যত ধরনের ষড়যন্ত্র সম্ভব সবই করে যাবেন। তারা চাইবেন এই সকল ষড়যন্ত্রে সফল হতে। আর ষড়যন্ত্রকে স্বার্থক করার জন্য পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের হাতে আছে দেশের লুন্ঠনিত লাখ লাখ কোটি টাকা। আমাদের দেশে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হলে টাকা হলে বাঘের চোখ ও মিলে।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের ভিতর থাকা একটি বিশেষ গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিল্প কারখানায় হামলা লুটপাট অগ্নিসংযোগ শুরু করে। যার ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান। কোথাও কোথাও এই সহিংসতার মাত্রা অনেকটাই ব্যাপক। এই সহিংসতা থেকে বাদ পরেনি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত পোশাক শিল্পের কারখানা। ৫ আগস্টের পর থেকেই বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের নানা দাবী দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। কেউ সচিবালয়ে কেউবা আবার শাহবাগে আর আমাদের পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া সহ পোশাক শিল্প অধ্যুষিত এলাকা নিজেদের দাবী আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে দখল করে আছে। প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন এলাকায় নানা দাবীতে সড়ক অবরোধ সাথে কারখানা ভাংচুর সহ নানা সহিংসতায় জরিয়ে পরছেন পোশাক শিল্পে শ্রমিক ও তাদের সাথে যোগ দেওয়া বহিরাগতরা। আমাদের পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের দাবী শতভাগ যৌক্তিক। তবে তাদের দাবী আদায়ের যে সহিংস পন্থা তারা বেছে নিয়েছেন তা মোটেও সমর্থন যোগ্য নয়। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলন ও সহিংসতার প্রতিদিন ই গাজীপুর সাভার বা আশুলিয়া এলাকার অনেক কারখানা ই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সহিংসতা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ী এলাকায় শ্রমিক ও যৌথবাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাউসার হোসেন খান নামের এক জন পোশাক শ্রমিক নিহত ও বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। যা কোন ভাবেই কাম্য ছিল না।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন কেন এই মুহুর্তে আমাদের পোশাক শিল্পে এমন অস্থিরতা আর এর পেছনে ইন্ধন ই বা কাদের? গত দুই দশক ধরেই পোশাক কারখানাগুলোতে মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের অনেকটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। দাবি-দাওয়া উত্থাপনে শ্রমিকদের মধ্যে একটি ভয়ের সংস্কৃতি কাজ করতো। এখন সরকার পরিবর্তনের পর শ্রমিকরা নিজেদের ন্যায্য দাবী আদায়ের পথ হিসেবে এই আন্দোলনকে বেছে নিয়েছেন। কথা বলতে শুরু করেছেন নিজের দাবী নিয়ে । এছাড়া আমাদের পোশাক শিল্পের দিকে দেশি ও বিদেশি শকুনের চোখ দীর্ঘদিনের। যেই কোন মূল্যে তারা চায় বাংলাদেশ পোশাক শিল্পের ধ্বংস। কারন এই শিল্পের উপর নির্ভর করে আমাদের অর্থনৈতিক চাকা। সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক শিল্পের নৈরাজ্যের পেছনে বিশেষ ইন্ধন রয়েছে সাবেক সরকারের সুবিধাভোগী পোশাক কারখানার কিছু মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা, ঝুট ব্যবসায়ী এবং স্হানীয় বিএনপির নেতা কর্মীদের।
আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর বিএনপির পরিচয়ধারী ব্যক্তিরা পোশাক কারখানার বড় বড় জোনগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টায় এই অস্থিরতার জন্ম।নগত ৫ আগস্টের পর অনেক পোশাক শিল্পের মালিক পলাতক এবং আন্দোলনের সময় কারখান বন্ধ থাকায় অনেক কারখানার মালিক ই শ্রমিকদের বেতন ভাতা ঠিক ভাবে দিত ব্যর্থ হয়েছেন। আবার শেখ হাসিনা আশীর্বাদপুষ্ট অনেক মালিক বর্তমান সরকারকে বিপাকে ফালানোর জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবেই চাচ্ছে কোন না কোন ছুতো তুলে শ্রমিক অসন্তোষের মাধ্যমে এক দিকে দেশকে অস্থির করা অন্য দিকে অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত করা। তাই শেখ হাসিনা আশীর্বাদপুষ্ট অনেক মালিক ইচ্ছাকৃত ভাবেই শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করছেন না। অন্যদিকে তাদের অবৈধ আয়ের একটি অংশ খরচ করে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির ও দ্বিধা করছে না। সেই সাথে বিভিন্ন ভাবে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামীলীগের নেতারা বিদেশে বসে বিশেষ করে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশে অবস্থান দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানান কুটচাল চালছেন। তার প্রমান বিভিন্ন সময় ফাঁস হওয়া শেখ হাসিনার ফোন আলাপ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট একজন সবেক এমপি যিনি দেশের বৃহৎ পোশাক শিল্প গ্রুপ ও বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের মালিক তার নাম পোশাক শিল্পের বর্তমান অরাজক পরিস্থিতির উস্কানি দাতা হিসেবে শোনা যাচ্ছে। তাকে নাকি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন থেকে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে রাখার ও অনুরোধ করা হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের সেই অনুরোধ না রাখায় ব্যবসায়ীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে পোশাক শিল্পে এই অরাজক অবস্থা সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত হয়েছেন।
বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। হাজারো প্রানের বিনিময়ে বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসকের অবসান ঘটিয়ে মুক্তির শ্বাস গ্রহন করছেন। ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তিরা চাইবে যেই কোন মূল্যে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে। আর আমাদের পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা নানা ভাবে বৈষম্যের শিকার৷ আজো তারা তাদের শ্রমের মূল্য তো ঠিক ভাবে পায়ই না এমনকি নিত্যপণ্যের অসহনীয় দামে দুই বেলা মুখের অন্ন যোগানোই মুশকিল। তাই বর্তমান সরকারের উচিত হবে আমাদের পোশাক শিল্পকে রক্ষার্থে শ্রমিকদের সকল যৌক্তিক দাবী দ্রুত মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা সেই সাথে যাদের ইন্ধনে পোশাক শিল্পে আজকের এই অস্হির অবস্থা তাদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা।
২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৩১
রাসেল বলেছেন: ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতায় যারা (রাজাকার) বাধা দিয়েছে, তাদেরকে আমরা ঘৃণা করি । পোশাক শিল্পের অস্থিরতায় ইন্ধন দাতাদের আমরা কিভাবে নির্ণিত করতে পারি ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৪
প্রহররাজা বলেছেন: মালিকদের ব্যাংক একাঊন্ট বন্ধ, শ্রমিকদের বেতন নাই।ইউনুচের নোবেল আর জাতিসংঘের ভাষন শুনে ওদের পেট ভরবে না।