নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে যারা মাথা খাটান তাদের জন্য চীন-ভারতের সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তা রীতিমত অবাক করে দেওয়ার মতো।আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুই শক্তি চীন এবং ভারত সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে, তাবাংলাদেশের ইতিহাসে সত্যিই বিরল বলে গবেষকরা মনে করেন। ভারত এবং চীন, দুটি দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের রয়েছে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক এবং সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক। যা আমাদের পররাষ্ট্র নীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জিং ও সম্ভাবনার হয়ে দাঁড়িয়েছে নিজেদের হিসাব-নিকাশের জায়গা থেকে। একদিকে দিল্লীর সাথে ঢাকার কথিত রক্তের সম্পর্ক অন্যদিকে টাকাওয়ালা বন্ধু চীনের মন রক্ষা করে চলা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাদের এ মন কষাকষির বাজারের মধ্য দিয়ে দুই দেশ নীরবে তাদের থলে ভারী করতেছে নাকি বাংলাদেশও কিছু সুবিধা আদায় করতে পারতেছে সে অংক কষার সময় এসেছে।তাদের প্রতিযোগিতা কেমন নাটকীয় পর্যায়ে পোঁছেছে বাংলাদেশ ইস্যুতে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যান এবং কিছু সমঝোতা চুক্তি করে আসেন। যার মধ্যে বেশ কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ ও ঋণ সহায়তা পোগ্রামের সাথে ছিলো দুটি সাবমেরিন ক্রয় বাবদ এক হাজার ৫৬৯ কোটি টাকার চুক্তি। যা নরেন্দ্র মোদি সরকার স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে নি। এর পরই ২০১৫ সালের জুনে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করে বাংলাদেশের সাথে ২৪ টি চুক্তি স্বাক্ষর করেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো ২০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দেওয়ার চুক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুই দিনের সফরে আসেন যাতে ২৬ টি সমঝোতা চুক্তি হয় যার মাঝে ১২ টি ছিল ঋণ চুক্তি। এখানেই শেষ নয়, এরপর বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারত সফর করেন এবং দুই দেশের মাঝে ৩৬ টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যার মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিও ছিলো । সবচেয়ে হাস্যকর হলো পূর্বের দুই ধাপে ভারতের সহিত সম্পাদিত ৩০০ কোটি ডলারের চুক্তির মধ্যে ভারত মাত্র ৩৫ কোটি টাকা (ডলার নয়) ছাড় দিলেও পুনরায় অক্টোবরে আরো ৪৫০ কেটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয় । ঠিক এমনি দ্বিপাক্ষিক অসংখ্য চুক্তি ও পাল্টাপাল্টি সুবিধা নেওয়ার সমঝোতা ইতিমধ্যে ২০১৮ ও সম্পাদিত হয়। যার সর্বশেষ উদাহরণ হত মে মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ( ডিএসই) তার ২৫% শেয়ার বিক্রি করে চীনের সাংহাই এবং শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ এর নিকট অথচ যার প্রতিযোগি ছিল ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে একটি কনসোর্টিয়াম ।এই ঘটনার পরপরই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গত সপ্তাহে ভারতে যান এবং সেখানেও কিছু সমঝোতা হয় যাতে ভারত আস্হা ফিরে পায়। যেমন ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ওশানোগ্রাফির (এনআইও)’র ডিরেক্টর সুনীল কুমার সিং জানান, ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ওশানোগ্রাফির (এনআইও) সমুদ্র গবেষণা বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (বিওআরআই) সাথে একত্রে কাজ করার সুযোগ পাবে। দেশের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের (ইইজেড) যে সব জায়গায় এখনও কোন কাজ হয়নি সে সব ক্ষেত্রে কাজ করবেন তারা। এটাও নতুন করে বাংলাদেশ অংশে সাগরের খনিজ সম্পদ আহরণ নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা ভারতের জন্য একটা বড় পাওনা হয়ে গেল।তাহলে মূল বিষয়টা কি দাঁড়ালো, বাংলাদেশ থেকে তারা দুই হাতে চুক্তি স্বাক্ষরিত করে নেওয়ার এক প্রতিযোগিতায় যেন নেমে পড়ে গেল।
চীন-ভারতের এমন প্রতিযোগিতার বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান এ এনিয়ে দুটি লেখা প্রকাশ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ইস্ট এশিয়া ফোরামে'র প্রকাশিত Forrest Cookson and Tom Felix Joehnk এর লেখা নিবন্ধটির শিরোণাম, "China and India’s geopolitical tug of war for Bangladesh" অর্থাৎ বাংলাদেশ নিয়ে চীন এবং ভারতের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব । আর নিউইয়র্ক ভিত্তিক 'ওয়ার্ল্ড পলিসি রিভিউ' ঠিক এ বিষয়েই 'উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারসের' একজন গবেষকের অভিমত ছেপেছে। তাদের লেখাটির শিরোণাম, "Why India and China Are Competing for Better Ties With Bangladesh" অর্থাৎ বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়তে কেন ভারত আর চীনের মধ্যে এত প্রতিদ্বন্দ্বিতা? । বাস্তবা এটাই। এসব প্রশ্ন এখন সবার। দুটি লেখাতেই বাংলাদেশের সঙ্গে চীন এবং ভারতের সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, বাংলাদেশর রাজনীতি ও নির্বাচন এবং দেশটির ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য এই দুই বৃহৎ শক্তির দ্বন্দ্বের বিষয়ে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ রয়েছে।
উক্ত প্রথম গবেষণার মতে, চীন বাংলাদেশে রফতানি করে প্রায় ১৬ হতে ১৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, অথচ বাংলাদেশে থেকে আমদানি করে মাত্র ৭৫ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশকে তারা বছরে একশো কোটি ডলারের সাহায্য দেয়। তবে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২৪ বিলিয়ন বা দুই হাজার চারশো কোটি ডলারের সাহায্য দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশে রফতানি করে বছরে প্রায় আট বিলিয়ন ডলারের পণ্য। কিন্তু আমদানি করে মাত্র ২৬ কোটি ডলারের। কিন্তু দুদেশের মধ্যে অনেক 'ইনফরমাল ট্রেড' বা অবৈধ বাণিজ্য হয়, যা মূলত ভারতের অনুকুলে। এর পরিমাণ কমপক্ষে দুই হতে তিন বিলিয়ন ডলারের সমান হবে বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশে যে ভারতীয়রা কাজ করেন তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও হবে দুই হতে চার বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশকে ভারত যে বৈদেশিক সহায়তা দেয় বছরে তার পরিমাণ পনের কোটি ডলারের মতো। দুটি দেশই বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ব্যাপক সাহায্যের প্রস্তাব দিচ্ছে। বাংলাদেশে বড় আকারে রেল প্রকল্পে আগ্রহী দুটি দেশই। গভীর সমূদ্র বন্দর স্থাপনেও ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে উভয় দেশের। চীন বহু বছর ধরেই বাংলাদেশের সামরিক খাতে বড় সরবরাহকারী। ভারত এক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল, এখন তারা দ্রুত চীনকে ধরতে চাইছে। কিন্তু ভারতের সামরিক সরঞ্জামের বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো ভারত বাংলাদেশের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে চায় অথচ স্বয়ং ভারত নিজেই অস্ত্র আমদানি করে?? তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো!
এইদিকে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সামরিক বিষয়ে চীনের নাক গলানোর নীতি ভারতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে বলা চলে। গত এপ্রিল মাসে চীনা দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিমত প্রকাশ করা হয় ‘‘নির্বাচনী বছরে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রত্যাশা করছে চীন। দেশটির মতে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল পরিবেশ প্রয়োজন। বিশ্বে সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে বাংলাদেশের সাথে মুক্তি বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে চীনা দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর লি কোয়াং জুন’’। এখানেই মূলত চলছে খেলাটা। চীন গত দুই বছর ধরে মুক্তি বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের জন্য বাংলাদেশের উপর বিভিন্ন কৌশলে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। কিন্তু ভারত বিষয়টি একেবারেই প্রত্যাশা করে না বিধায় বাংলাদেশ বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিধায়। কারণ, বাংলাদেশের সাথে কোন দেশের দ্বিপাক্ষিক এফটিএ নেই। বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক এফটিএ গঠনের লক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত এফটিএ পলিসি গাইডলাইনস্-২০১০ গত ২৩ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখ যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। উক্ত পলিসি গাইডলাইনস্ এর ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের সাথে এফটিএ গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তুরস্ক, থাইর্যােন্ড ও মালেশিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক এফটিএ গঠনের লক্ষে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হলেও চীনের আগ্রহের ব্যাপারটা বাংলাদেশ কেন এড়িয়ে চলছে তা সবারই জানা। এইদিকে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সাংবাদিকদের চীনের সাখথ এফটিএ নিয়ে অতো তাড়া হুড়ার কিছু নেই। যদিও নির্বাচনী বছর হিসাবে এই হিসাব নিকেশ বড় বেকায়দায় রেখেছে সরকারকে । এটা সবারই জানা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী মর্যাদার প্রতীক ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবিওআর) একই সূত্রে গাঁথা।পুরো এশিয়াকে সড়কপথে সংযুক্ত করতে চীনের মহাপরিকল্পনা ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ানে রোড’ কথাটি শুনতে যতই মধুর লাগুক না কেন এর পিছনে এশিয়াজুড়ে চীনের একটি স্থায়ী বাজার তৈরি হবে এটা আর বুঝতে বাকি নেই কারও। যার অন্যতম হাতিয়ার যে এফটিএ। ইতিমধ্যে চীন বেশ কয়েকটি দেশকে রাজি করিয়ে ফেলেছে। যেমন এই দুই আন্তর্জাতিক সংযোগ প্রকল্প নিয়ে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের পর অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছে চীন-মালদ্বীপ সম্পর্ক। যা মালদ্বীপের ভারতকে ডেমকেয়ার নীতির মূল শক্তি। আর পাকিস্তানে চলছে এই মহাপরিকল্পনার একটি অংশ সিপিইসি। চায়না পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডর নামে পরিচিত এই পরিকল্পনাটি হচ্ছে পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উচ্চভিলাষী একটি প্রকল্প। অত্যন্ত গোপনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় আরব সাগরের তীরবর্তি বেলুচিস্তানের গওদর গভীর সমুদ্র বন্দর থেকে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের কাশগর শহরকে সংযুক্ত করা হচ্ছে।
সামরিক শক্তির চেয়ে অর্থনৈতিক আধিপত্যে বিশ্বাসী চীন দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের আধিপত্য বাড়াতে দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন করে চলেছে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি)। দেশটি তার ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এই মেগা প্রকল্পে হাত দিয়েছে।
মূলকথা হলো দ্বিপাক্ষিকতা বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক পরিচালনা করা বোঝায়। এটা হতেই পারে যে কারো সাথে। দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত অর্থনৈতিক চুক্তি, যেমন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রী ট্রেড এগ্রিমেন্টস বা এফটিএ) কিংবা বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (ফরেইন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বা এফডিআই) প্রভৃতি হল দ্বিপাক্ষিকতার সাধারণ উদাহরণ। যেহেতু অধিকাংশ অর্থনৈতিক চুক্তি রাষ্ট্রদ্বয়ের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের দিকে খেয়াল রেখেই তৈরি করা হয়, সেহেতু প্রতি ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কিছু পার্থক্য বিদ্যমান থাকে। এ কারণে দ্বিপাক্ষিকতার মাধ্যমে চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্র অধিক উপযোগী সুবিধা লাভ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক কৌশলের চেয়ে লেনদেনের খাতে অধিক ব্যয় হয়ে থাকে, তবুও সার্বিকভাবে দ্বিপাক্ষিকতা লাভজনক। দ্বিপাক্ষিক কৌশলে উভয় পক্ষই মধ্যস্থতার মাধ্যমে নতুন চুক্তি করে থাকে। যখন উভয়ের জন্যই লেনদেনে ব্যয় কম হয় এবং অর্থনীতির ভাষায় উৎপাদক উদ্বৃত্তি থাকে, তখনই চুক্তি সম্পাদিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে বৃহত্তর লাভের উদ্দেশ্যে আপাতভাবে অলাভজনক চুক্তিও সম্পাদিত হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে ভারত নাকি চীনের সম্পাদিত চুক্তিগুলো লাভজনক, সব চুক্তি কি কাজের নাকি কৌশলের, বৃহত্তর লাভের উদ্দেশ্যে অলাভজনক চুক্তির হিড়িক কি আমাদেরকে নতুন এক অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে দুই পরাশক্তির ঠেলাঠেলিতে?। বাংলাদেশকে নিয়ে চীন এবং ভারতের এরকম প্রতিযোগিতার কোন প্রয়োজনই কি আছে? । দুটি দেশই আসলে একই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে কি পারে একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে!। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের ঘনিষ্ঠতা বহু বছর ধরেই বাড়ছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বাধা হয়নি। ভারত কিংবা চায়নার এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার মানষিকতা তৈরীর পথটি আমাদেরই দেখিয়ে দিতে হবে। কারণ, ক্ষুদ্র দেশ মালদ্বীপ ইতিমধ্যে ঠিক এমন িনজীর রাখতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে এই ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশ কোন নিস্ক্রিয় 'ভিক্টিম' না হয়ে বরং নিজের কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে স্বার্থ হাসিল করতে পারে তা নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে চীন এবং ভারত আসলে কেবল 'সুদিনের বন্ধু। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে যে কোন পদক্ষেপ চীন আটকে দিচ্ছে। এটাকে বাংলাদেশ বন্ধুত্বসুলভ কোন কাজ বলে মনে করে না। অন্যদিকে ভারতের অবস্থাও ভালো নয়। তারাও এই ইস্যুতে মিয়ানমারকে মদত দিয়ে যাচ্ছে।
চীন-ভারতের ঠেলাঠেলির সাথে নতুন অস্হিতরা তৈরী করে পায়দা লুটে যাচ্ছে মায়ানমার।বিশ্বের পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কৌশলগত গুরুত্ব তৈরির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের ভারসাম্যমূলক কূটনীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বড় বৈষম্য বলি আর প্রতিযোগিতার ভাগিদার বলি তা হলো মায়ানমার। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে মায়ানমার বিশ্ব পররাষ্ট্রনীতি বলি আর আঞ্চলিক পররাষ্ট্রনীতির মোড়লদের সুনজর বলি তার সবটুকু ফসল মায়ানমার তার নিজের ঘরেই তুলে নিচ্ছে। একদিকে আমরা চীনের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতা এবং ভারত তোষণনীতিতে ব্যস্ত থাকছি; অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন বাণিজ্যিকভাবে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে ফেলেছে। নেপাল, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, আফগানিস্তানে অর্থনীতি, শিল্পনীতি, যোগাযোগে চীনের বিপুল বিনিয়োগ।এর কারণ হলো ভারত মহাসাগরে নিয়মিত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন। হর্ন অব আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে দেশের বাইরে প্রথম সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলেছে চীন। একইসাথে নেপাল, শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেও জড়িয়ে পড়েছে তারা। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প, এটার সাথে জড়িত ৬০ বিলিয়ন ডলারের চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর এবং গোয়াদরে কথিত সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলার পরিকল্পনার গুজব – এগুলোকে ভারতকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার কৌশল হিসেবে দেখছে নয়াদিল্লী। এমন একটি পরিস্হিতিতে নিসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য সাবধানে পা বাড়াতে হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তবে তা কোন ভাবেই একেবারে নিজের স্বার্থকে উজাড় না করে। এফটিএ ইস্যুতে চীন-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এক কঠিন হিসাব নিকাশের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। চীন-ভারত তাদের থলি ভারী করার প্রতিযোগিতার নির্বাচনী বছরটির সাথে বাংলাদেশের প্রতিযোগী হিসাবে মায়ানমারকে উপসহাপন এক বিশাল কৌশলেরই অংশ মাত্র নয় কি! সার্বিক পররাষ্ট্রনীতিকে পররাষ্ট্রনীতি দ্বারা মোকাবেলার জন্য আমাদের দক্ষ টিম ওয়ার্ক ও কৌশুলী নীতি প্রণয়নের সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যর্থতা চীন-ভারতের ঠেলাঠেলিতে আমাদেরকে সফল নয় বরং পিষ্ট করতেও পারে!
২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৪
এম টি উল্লাহ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ।
২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৯
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: পড়ে মুগ্ধ হলাম। অত্যন্ত সুন্দর বিশ্লেষণ ধর্মী পোস্টির জন্য লেখককে অন্তরের কুর্নিস। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পর এশিয়া আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশগুলির সামনে আমেরিকার নেতৃত্বে ধনতান্ত্রিক বিশ্ব ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে যোগদানকরার যে অবশ্যম্ভাবী পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে সেদিনের ভারত, যুগোশ্লাভিয়া, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা উভয়গোষ্ঠীতে যোগদান না করেও যে ভাবে কূটনৈতিক ভাবে নির্জোট আন্দোলনে ক্রমশ আরও সদ্য স্বাধীন দেশগুলিকে যোগ করিয়ে তৃতীয় বিশ্বের ধারনা তৈরী করে আমেরিকা ও সোভিয়েতের সাহায্য পাওয়া সুনিশ্চিত করেছিল, আজ বাংলাদেশ বিবদমান ভারত ও চীনের কাছ থেকে এভাবে কূটনৈতিক সাফল্য লাভে সমর্থ হলে বিষয়টি নেহাত মন্দ হয়না বলে আমার মনে হয়।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৬
এম টি উল্লাহ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং সুচিন্তিত মতামত প্রদানের জন্য
৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৭
পদ্মপুকুর বলেছেন: চীনের বিপরীতে বঙ্গপোসাগরীয় এলাকায় কর্তৃত্ব বজায় রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সাথে যে গাঁটছড়া বেধেছিলো, মনে হচ্ছে যে তা ব্যর্থ হতে চলেছে। উপরন্তু, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হটকারী কার্যকলাপে যুক্তরাষ্ট্রও বিভিন্নভাবে্ চাপে পড়ছে। ইতোমধ্যেই অনেক দেশ ডলারে তেল কেনা এবং বিক্রিকে অস্বীকার করতে শুরু করেছে।
এ রকম একটা পরিস্থিতিতে বৃহৎ ও আগ্রাসী প্রতিবেশি ভারত এবং বিশ্ব নেতা হতে চলা চীনের দন্দ্বে বাংলাদেশের অত্যন্ত কৌশলী ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের ডিপ্লোম্যাসি নিতান্তই দুর্বল। আমার একটা লেখায় বলেছিলাম এ বিষয়ে।
৭১ এ শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধী বাংলাদেশী শরণার্থীদের জন্য বিশ্বসম্প্রদায়ের পাঠানো সাহায্য প্রত্যাখান করেছিলেন। এমনকি নেপলসে গম বোঝায় একটা জাহাজ শেষ পর্যন্ত নোঙর তুলতে না পেরে গমগুলো সাগরে ফেলে দিতে বাধ্য হয়। এটা দিয়ে একদিকে যেমন মিসেস গান্ধী একদিকে যেমন বিশ্বের কাছে নিজেদের অনমনীয় ও আত্মমর্যাদাবোধ তুলে ধরতে পেরেছিলেন, অন্যদিকে, একই কারণে নিজদেশে বাংলাদেশি শরণার্থীর ভার লাঘবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হস্তক্ষেপের যৌক্তিকতা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। (পড়ুন- ইন্টারভিউ উইথ দ্য হিস্টোরি, ওরিয়ানা ফালাচি)।
আর এদিকে, আমরা তো রোহিঙ্গাদের নিয়ে এক ধরনের ব্যবসা ফেঁদে বসেছি। একদিকে তাঁদেরকে এখানে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ দিয়ে দেশীয় রাজনীতিতে মাদার অব হিউম্যানিটি সাঁজছি। অন্যদিকে বিশ্বসম্প্রদায়ের পাঠানো কোটিকোটি ডলার সাহায্য বেমালুম মেরে দিয়ে নির্বাচনী তহবিল পূর্ণ করছি, বিশ্বসম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করতে বলতে পারছি না। আবার চীনকে বলছি, মায়ানমারে তোমাদের কি ইন্টারেস্ট আছে সেটা তোমাদের ব্যাপার, কিন্তু আমরা রোহিঙ্গাদের রেখে দিচ্ছি কিন্তু আমাদের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করো না। একের ভেতর এর তিন গুণ!!
এই হলো আমাদের সুবিধাবাদি রাজনীতি আর নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। এই নীতি নিয়ে আর যাই হোক আঞ্চলিক নেতৃত্ব আশা করা যায় না।
আপনার লেখাটা ভালো হয়েছে। খুবই সময়োপযোগী। ভালো থাকবেন।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৮
এম টি উল্লাহ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ । আপনার সুচিন্তিত মতামত আমাকে সমৃদ্ধ করলো।
৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৫৭
কুকরা বলেছেন: চীনের প্রভাব আগামী নির্বাচনের পর আরো বাড়তে পারে।
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১০
এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৫৯
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
চীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র চাইছে?
গণতন্ত্র! ... চীনে গণতন্ত্র আছে?
৬| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৩১
এম টি উল্লাহ বলেছেন: হয়তো। অসংখ্য ধন্যবাদ
৭| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৩২
এম টি উল্লাহ বলেছেন: হয়তো। অসংখ্য ধন্যবাদ
৮| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: এই রকম পোষ্ট আমি এড়িয়ে চলি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
চীন ও ভারত যদি কনফ্লিক্টে যায়, বাংলাদেশ শান্তি প্রস্তাব করে, নেতায় পরিণত হবে।