নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংবিধান, জাতিসংঘ সনদ ও আমাদের পররাষ্ট্রনীতি

২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:২৫

রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার আলোকে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতিকে বলা হয়ে থাকে পররাষ্ট্রনীতি। তবে বৈদেশিক সম্পর্ক তৈরি করতে গিয়ে এগুলো দেশভেদে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে, দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের দলীয় মনোভাবের উপর সংজ্ঞা প্রভাবিত হতে পারে, বিশেষ করে আন্তজার্তিক মোড়ল রাষ্ট্রগুলো তাদের স্বার্থ প্রয়োগে এর পররাষ্ট্রনীতিকে তাদের মতো করে সাজিয়ে ব্যাখা করতে অভ্যস্হ। যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে পৃথিবীতে তাদের ভাষায় ‘মুক্ত দুনিয়া রক্ষা, ‘সর্বাত্বকবাদ মোকাবিলা’ ‘কম্যুনিস্ট আগ্রাসন ঠেকান’, ‘বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা অর্জন’ ইত্যাদি নানা যুক্তিতে বিভিন্ন সময়ে অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে থাকে যার ধারাবাহিতক সংজ্ঞা নানান শব্দ ব্যবহার করে নানান কৌশলে এখনো তারা বজায় রেখেছে এবং অঞ্চল ভেদে যেখানে যে পলিষি প্রয়োগ করা দরকার তা করে যাচ্ছে নিখুঁতভাবে। তারা অর্থনৈতিক স্বার্থে প্রয়োজনে যুদ্ধের মতো পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে তাদের প্রতি বৈরি রাজনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করে দিতে দেরী করে না কিংবা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিক শক্তিকে অসুস্হ প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিয়ে বিভক্ত করে তাদের স্বার্থ হাসিল করে। যার ফলে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র পররাষ্ট্রনীতিকে তার স্বার্থ অর্জনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের ফলে দুর্বল রাষ্ট্রগুলো যুগে যুগে পররাষ্ট্রনীতির ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োগ ও ব্যাখ্যার দ্বারা আবদ্ধ হয়ে আসছে। ঠিক তেমনি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বাংলাদেশেরও নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি থাকলেও সংবিধানে ঘোষিত নীতির আলোকে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। এজন্য অনেকে অবশ্য বলে, ছোট রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি থাকতে পারে না!
‘কারো সাথে বিদ্বেষ নয়, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব’ এই নীতিকে সামনে রেখে আমরা স্বপ্ন দেখছিলাম বাংলাদেশ প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হবে বা সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা হবে। কিন্তু সময়ের স্রোতে এই উক্তির মাঝে আমরা কতটুকু থাকতে পেরেছি তা আমরা নিজেরাই অবগত। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো আমাদের নিজস্ব কোন পররাষ্ট্রনীতি তো দূরের কথা আমরা প্রতিযোগিতায় নিয়োজিত কত বেশী বিদেশী শক্তিতে আমাদের অভ্যন্তরীণ স্বার্থে কাজে লাগাতে পারি তা নিয়ে!

-এম টি উল্যাহ
বাংলাদেশের সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির নির্দেশনা রয়েছে। যেমন সংবিধানের ২৫ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছেঃ-
জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অপর রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা, এ সকল নীতিই হবে রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি এবং এ সকল নীতির ভিত্তিতে-
১. রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকা এবং সাধারণ ও পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য চেষ্টা করবে; প্রত্যেক জাতির স্বাধীন অভিপ্রায় অনুযায়ী পথ ও পন্থার মাধ্যমে অবাধে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনের অধিকার সমর্থন করবে; এবং সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ বা বর্ণ্যবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করবে।
২. রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সংরক্ষণ এবং জোরদার করতে সচেষ্ট হবে।
অন্যদিকে সংবিধানের ৬৩ অনুচ্ছেদে যুদ্ধ-ঘোষণা সংক্রান্ত নীতি উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে সংসদের সম্মতি ব্যতিত যুদ্ধ ঘোষণা করা যাবে না, কিংবা প্রজাতন্ত্র কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে না।
অনুচ্ছেদ ১৪৫(ক)তে বৈদেশিক চুক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে: ‘বিদেশের সাথে সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হবে, এবং রাষ্ট্রপতি তা সংসদে পেশ করার ব্যবস্থা করবেন। তবে শর্ত হচ্ছে যে, জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট অনুরূপ কোন চুক্তি কেবলমাত্র সংসদের গোপন বৈঠকে পেশ করা হবে।’
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এসব মূলনীতি কাগজে-কলমে অনুসরণ করে থাকে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ এসব সংগঠনের মূলনীতিসমূহও মেনে চলে এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান নীতিসমূহ এসব সংগঠনের নীতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
যেমন জাতিসংঘ সনদের (The Charter of the United Nations) ২(৪) ধারায় বলা হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সকল সদস্য-রাষ্ট্র আঞ্চলিক অখন্ডতার বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন থেকে এবং জাতিসংঘের উদ্দেশ্যের সংঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো উপায় গ্রহণ করা থেকে নিবৃত্ত থাকবে’। (All Members shall refrain in their international relations from the threat or use of force against the territorial integrity or political independence of any state, or in any other manner inconsistent with the Purposes of the United Nations)
অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা জাতিসংঘ সনদের ২(৭) ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘বর্তমান সনদ জাতিসংঘকে কোনো রাষ্ট্রের নিছক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার দিচ্ছে না বা সেরূপ বিষয়ের নিষ্পত্তির জন্য কোনো সদস্যকে জাতিসংঘের দারস্থ হতে হবে না; কিন্তু সপ্তম অধ্যায় অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে এই নীতি অন্তরায় হবে না’।(Nothing contained in the present Charter shall authorize the United Nations to intervene in matters which are essentially within the domestic jurisdiction of any state or shall require the Members to submit such matters to settlement under the present Charter; but this principle shall not prejudice the application of enforcement measures under Chapter VII of the United Nations Charter)। উল্লেখ্য সপ্তম অধ্যায়ে Action with respect to Threats to the Peace, Breaches of the Peace, and Acts of Aggressionসম্পর্কে বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এই মূলনীতির উপর তার পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেছে, যা অন্য রাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রকাশিত। কিন্তু অন্য রাষ্ট্র দ্বারা কি বাংলাদেশ জাতিসংঘ সনদের এই নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবহার পাচ্ছে?
জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার নীতির প্রয়োগ বাংলাদেশের জন্য তাত্ত্বিকভাবে যতো সহজ বাস্তবে তা কঠিন। কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতি বাংলাদেশ মানে কিন্তু প্রভাবশালী রাষ্ট্রের দ্বারা হস্তক্ষেপ হলে কি বিরোধিতা করে ??। এক রাষ্ট্র কর্তৃক অন্যের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার প্রচলিত আন্তর্জাতিক ন্যায়নীতির স্বার্থে হস্তক্ষেপকে বিরোধিতা করবে এটা পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম দিক হলেও আমরা তা তো দূরের কথা হাঁটছি ভিন্ন পথে। আমাদের ব্যবসায়ী সংখ্যাগরিষ্ট আইন প্রণেতারা পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রায় কোনো বিতর্ক কখনো করেছেন বলে অন্তত আমার চোখে পড়ে নি । এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি থাকলেও তাদের কাজ আসলে কি তা উদ্ধার করাও আপাতত আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সংবিধানের ১৪৫ক ধারা অনুযায়ী বিদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি সংসদে পেশ করার নিয়ম থাকলেও কয়টি সম্পর্কে জনগণ জানতে পেরেছে?। হ্যাঁ বৈদেশিক শক্তি তো চাপ প্রয়োগ করবেই তার স্বার্থে কিন্তু আমাদের শাসকরা কতটুকু দেশপ্রেমের যায়গায় অঁটুট থাকতে পারছেন তা-ই দেখার বিষয়।
[email protected]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্টে কোনো মন্তব্য নেই কেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.