নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এনআরসি ইস্যু ও বাংলাদেশ ভারতের দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক

১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩২

আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) প্রক্রিয়া নিয়ে ভারতে যেমন রাজনৈতিক উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে তেমনি বাংলাদেশের জন্যও ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির(Bilateral Diplomacy)ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উদ্ভব হতে যাচ্ছে।কারণ উভয় দেশের পক্ষ থেকে কূটনীতির সম্পর্কের জায়গায় পারস্পরিকতার নীতি(Reciprocity)কেই সর্বদা স্বীকারকরা হয় । এনআরসি’র চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া ৪০ লাখ মানুষকে বাংলাদেশে বিতাড়ন বা পুশ ব্যাক-এর ঘটনা যখন আলোচিত ঠিক এমন বাস্তব পরিস্হিতি পর্যালোচনায় ক্ষেত্রে কতটুকু সংকট লাঘব করতে পারে তা নিয়ে অন্তত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোন কথাবার্তা তেমনটি শোনা যাচ্ছে না।তার উপর বিষয়টি এমন সময়েই সামনে এসেছে যখন উভয় দেশেই জাতীয় নির্বাচন অতি সন্নিকটে। মোদি’র বিজেপি ভারতে হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদকে উসকে দিয়ে ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখার প্রয়াস হিসাবে এটি একটি কৌশল হিসাবে নিয়েছেন বললেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টিতে নিরব থাকার মধ্য দিয়ে ভারতের সাথে অন্তত এ সময়ে সম্পর্ক খারাপ করার পক্ষপাতি নয় বর্তমান সরকার। অন্যদিকে, এমনিতেই ভারত-বিদ্বেষী হিসাবে বিএনপি’র গায়ে যে তকমা লাগিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ তা শুধরানোর খাতিরে অন্তত এ সময়ে কথা বলা থেকে কবরত থাকাটাই উত্তম মনে করছে হয়তো।

কিন্তু বিষয় হচ্ছে, গত ৩০ শে জুলাই তিন বছর কাজ করার পর জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ যে চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে ৩.২৯ কোটি আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৪০ লাখের বেশি লোকের আবেদন বাতিল করেছে। বৈধ নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য তাদেরকে প্রমাণ করতে হচ্ছে, তাদের পূর্বপুরুষেরা ১৯৭১ সালের আগে ভারতে প্রবেশ করেছে। বিষয়টা স্পষ্ট করলে যা হয়, এই ৪০ লাখের বেশি লোক তাহলে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করা মানুষেরই অংশ কিংবা বংশধর??যদি তাই হয় তাহলে এদেরকে কি পুশ ব্যাক করা হবে? আসাম কি আরেক আরাকান হতে চলছে? বাংলাদেশের মতামত কিংবা বিষয়টি নিয়ে কি কোন চিন্তার বিষয় নাই?

ইতিহাসের পাতা থেকে সংক্ষেপে ঘুরে আসলে বিষয়টা বোধ হয় আরো পরিস্কার হবে। কারণ আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) প্রক্রিয়া পুরোটা আপনার মাথায় না থাকলে বিষয়টা নিয়ে অস্পষ্টতা থেকে যেতে পারে যে কারোরই। কারণ, আরাকান/রাখাইনের মতো আসামের পরিস্থিতির উদ্ভবের নেপথ্যে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। তবে, সে ইতিহাসের দিকে বিস্তারিত আলোকটপাত না করে যতটুকু না করলেই নয় তা তার ভিত্তিতে মূল আলোচনায় চলে যাওয়েই ভালো মনে করছি।(প্রয়োজনে ইতিহাস নিয়ে আরকেটি পর্ব থাকবে)।

বর্তমানে সংকটের আলোচনায় ইতিহাসের যে অংশটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ালো তা হলো, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালালে প্রায় এক কোটি লোক আশ্রয় নেয় ভারতে। পরে ডিসেম্বরে বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ওই সময় যাওয়া অবশ্য বেশির ভাগ উদ্বাস্তু ভারতেই রয়ে যায় বলে ভারতের অভিযোগ। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭২ সালে একটি মৈত্রী চুক্তি সই হয়। ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যকার ওই চুক্তিতে এসব অভিবাসীর কথা উল্লেখ করা হয়নি এবং বিষয়টি নিষ্পত্তি হয় নি।

এ ক্ষেত্রে আসামের আদমশুমারির রিপোর্ট মতে আসামের আয়তর কমলেও জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। সংকট ও বাড়ছে দিন দিন, যাতে হিসাব নিকাশ ও তাদের নতুন করে মাথায় ডুকছে। যেমন, ১৯০১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায়, ‘অবিভক্ত আসামে’ বাস করছে ৩২ লাখ ৯০ হাজার লোক। ১৯৪১ সালে তা বেড়ে ৬৭ লাখ, ১৯৫১ সালে ৮০ লাখ ৩০ হাজার, ১৯৬১ সালে এক কোটি ৪০ হাজার, ১৯৭১ সালে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার, ১৯৮১ সালে ১ কোটি ৮০ লাখ ৪০ হাজার (এটি আনুমানিক হিসাব, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ওই বছর আদমশুমারি হতে পারেনি), ১৯৯১ সালে ২ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার, ২০০১ সালে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার এবং সর্বশেষ ২০১১ সালে ৩ কোটি ১২ লাখ ১০ হাজার হয়।

এইদিকে ১৯৪৭ সালের পর আসামের আয়তন অনেক কমে গেছে। বিভক্তির আগে আসামসহ আসামের ভৌগোলিক এলাকা ছিল ১৪০,১১৮ বর্গ কিলোমিটার (৫৪,১০০ বর্গমাইল)। আসাম থেকে আলাদা করা হয় নাগা হিলস জেলা। ১৯৬৩ সালে গঠন করা হয় নাগাল্যান্ড রাজ্য। ১৯৭২ সালে ইউনাইটেড খাসিয়া ও জৈনতিয়া হিলস এবং গারো পাহাড় নিয়ে গঠিত হয় মেঘালয়। তারপর লুসাই পাহাড়ি জেলাগুলো নিয়ে মিজোরাম গঠিত হয়। এটি দিল্লি থেকে কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল। বর্তমানে আসামের আয়তন ৭৮,৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার (৩০,২৮৫ বর্গমাইল)। অর্থাৎ আসামের আয়তন কমে গেছে ৪৪ ভাগ।

আয়তনের চেয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল মাথা ব্যাথার কারণ হলো মুসলিম সংখ্যা বৃদ্ধি। কারণ ১৯০১ সালে আসামে মুসলিম ছিল ৫০৩,৬৭০ জন, ১৯১১ সালে ৬৩৪,১০১ জন, বেড়েছে ২৫.৯ ভাগ। ১৯২১ সালে মুসলিমরা ছিল ৮৮০,৪২৬ (৩৮.২৫ ভাগ বৃদ্ধি); ১৯৩১ সালে ১,২৭৯,৩৮৮ জন (+৪৫.৩১ ভাগ), ১৯৪১ সালে ১,৬৯৬,৯৭৮ (+৩২.৬৪ ভাগ); ১৯৫১ সালে ১,৯৯৫,৯৩৬ (+১৭.৬১ ভাগ) জন। (মুসলিম বৃদ্ধির হার কমার কারণ ১৯৫০ সালের দাঙ্গার পর মুসলিমদের ব্যাপক হারে চলে যাওয়া। তবে তার পরও বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে)। ১৯৬১ সালে ২,৭৬৫,৫০৯ (+৩৮.৫৬ ভাগ), ১৯৭১ সালে ৩,৫৯৪,০০৬ (+২৯.৯৬ ভাগ), ১৯৯১ সালে ৬,৩৭৩,২০৪ (+৭৭.৩৩ ভাগ; রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ১৯৮১ সালে আদমশুমারি হয়নি) জন ছিল। ২০০১ সালে ৮,২৪০,৬১১ জন এবং ২০১১ সালে ১০,৬৭৯,৩৪৫ (+২৫.৫৯ ভাগ) জন। আর এর মধ্যে বর্তমানে আসামের ৩৩টি জেলার মধ্যে ৯টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ।

যার ফলে আইনসভার ১২৬টি আসনের মধ্যে মুসলিম ভোটারদের প্রাধান্য আছে ৪৯টিতে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত গত প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিমরা এসব আসনের ২৯টিতে জয়ী হয়েছে। ১৯৫২ সাল থেকে মুসলিম ভোটারদের মধ্যে একচ্ছত্রভাবে প্রভাব বিস্তার করা কংগ্রেস ১৫টি পেয়েছে। ২০০৫ সালে বদরুদ্দিন আজমলের প্রতিষ্ঠিত ও অভিবাসী মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এডিইউএফ) জিতেছিল ১৩টিতে, বিজেপি পেয়েছে মাত্র ১টি এবং এখানেই বিজেপির মাথা ব্যাথার কারণ। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে কংগ্রেস ও কমিউনিস্টরা তাদের ভোট ব্যাংক বাড়াতে অবৈধ অভিবাসীদের ভোটার করছে।

যার ফলে পর্যায়ক্রমে বিস্ফোরণ সৃষ্টি হয় রাজনৈতিকভাবে। আসামের দারাঙ জেলার মঙ্গলদই পার্লামেন্ট উপ-নির্বাচনের প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণ ঘটে। আসামিরা দাবি করে, ‘বিদেশীদের’ ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আসাম হাইকোর্ট এ ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দেয়। এরপর পুরো রাজ্যে ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করার দাবি ওঠে। ১৯৭৯ সালে ছাত্রদের নেতৃত্বে অহমিরা ভয়াবহ মাত্রায় বিক্ষোভ শুরু করে। ‘আসাম আন্দোলন’ নামে পরিচিত এমন বিক্ষোভ ভারতেই ছিল নজিরবিহীন। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী এই আন্দোলনে কয়েক হাজার নিহত হয়, প্রায় দুই হাজার লোক বাংলাদেশের ময়মনসিংহে অভিবাসন করে। ১৯৮৩ সালে ছোট্ট শহর নেলির আশপাশে ১৪টি গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তিওয়া (লালঙ) উপজাতীয়রা। বিক্ষোভের মূল কথা ছিল ‘শনাক্ত’ (বিদেশীদের), ‘বাদ দেওয়া’ (ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া) এবং ‘বহিষ্কার’। আন্দোলন প্রশমিত হয় ১৯৮৫ সালের ১৫ আগস্ট অল-আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএএসইউ) ও গণসংগ্রাম পরিষদের নেতারা ভারত সরকারের সাথে সমঝোতা সই করার পর। আসাম চুক্তি নামে পরিচিত এই চুক্তিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর আসামে আগতদের চিহ্নিত করে বাদ দেওয়া হবে এবং তাদের বিদেশী হিসেবে বহিষ্কারের যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

চুক্তিতে ১৯৫১ সালের এনআরসি হালনাগাদের কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। তবে তা ছিল বিদেশী শনাক্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ছাত্ররা এ জন্য আরো ২০ বছর তথা ২০০৫ সাল পর্যন্ত আন্দোলন করতে থাকে। তখন সরকার এ ব্যাপারে রাজি হয়। কিন্তু তারপরও গড়িমসি চলতে থাকলে ২০০৯ সালে আসাম পাবলিক ওয়ার্কস নামের একটি এনজিও বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে উত্থাপন করে। আদালত তার তদারকিতে কাজটি শুরু করার নির্দেশ দেয়। ২০১০ সালে রাজ্যের দুটি আইনপরিষদ আসনে পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। একটিতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়, অপরটিতে মুসলিমরা সহিংসভাবে প্রতিবাদ জানায়। পুলিশ উত্তেজিত জনতার প্রতি গুলিবর্ষণ করলে তাদের চারজন নিহত হয়।

২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলে প্রথম হালনাগাদ এনআরসি ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। এক বছর প্রস্তুতির পর ২০১৫ সালের মে মাসে এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হতে লোকজনকে আবেদন করতে বলা হয়, গণনাকারীরা বাড়ি বাড়ি যায়। হালনাগাদ হয় ‘লিগ্যাল ডকুমেন্টস’-এর ভিত্তিতে। ১৯৫১ সালের এনআরসিতে নাম থাকা, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত সব ভোটার তালিকায় নাম থাকাকে ধরা হয় বৈধ নথি। আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে বলা হয়, তাদের কিংবা তাদের পূর্বপুরুষদের নাম ওইসব নথিতে রয়েছে। কিংবা তারা অন্য আরো ১২ ধরনের নথি দিয়েও তাদের যুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে: জন্ম ও শিক্ষা সনদ, ভূমি দলিল, পাসপোর্ট, সার্টিফিকেট ইত্যাদি। তবে তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে, তারা বা তাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ ভারতের অধিবাসী ছিলেন। যারই ধারাবািহিকতায় তৃতীয় ধাপে ৩০ শে জুলাই তিন বছর কাজ করার পর জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ যে চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে ৩.২৯ কোটি আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৪০ লাখের বেশি লোকের আবেদন বাতিল করেছে। যার প্রায় সবাই নাকি মুসলিম এমনকি ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমদের পরিবারের সদস্যরাও তালিকায় তাদের নাম খুঁজে পায়নি!

এখন এনআরসিতে নাম না থাকা বিদেশীতে পরিণত হওয়াদের নিয়ে কী করা হবে? তাদের নাম ভোটার তালিকায় না থাকলে এর পরিণতি কি হবে? তাদেরকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করার চেষ্টা করা হবে কিংবা তা কি সম্ভব? আসামে ‘জাতিগত নির্মূলের’ আশঙ্কা কি বাতিল করা যায়?
বিজেপি কি তার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে এই ইস্যুকে পুঁজি করলে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক কি হবে ভারতের?? কারণ, কংগ্রেস যতদিন ক্ষমতায় ছিল, ততদিন আসামে বিদেশী শনাক্তকরণ কার্যক্রম ফাইল চাপা ছিল। ২০১৪ সালে বিজেপি নয়া দিল্লিতে ক্ষমতায় আসার পরই তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। আসামে ২০১৬ সালে তিন দলীয় জোটের আওতায় বিজেপি ক্ষমতায় আসে। ২০১৪ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজেপির ইস্তেহারে সব হিন্দু উদ্বাস্তুদের ভারতের নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। মোদি ঘোষণা করেছিলেন, ‘যারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে তারা ভারত মাতার সন্তান। তাদেরকে মা ভারতের অন্যান্য সন্তানের মতোই একই মর্যাদা দিয়ে সুরক্ষা করা হবে। কিন্তু অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।’ এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ২০১৬ সালে বিজেপি ভারতের নাগরিক আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। দি সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০১৬-এ পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, পারসি, বৌদ্ধ ও জৈনদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা থেকে রেহাই দেওয়া হলেও মুসলিমরা বাদ পড়ে। আর ১৯৫৫ সালের সিটিজেনশিপ অ্যাক্টে বৈধ পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে প্রবেশকারী কিংবা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভারতে বসবাসকারী সবাইকে অবৈধ অভিবাসী ঘোষণা করার কথা ছিল। এখানে ধর্ম কোনো বিবেচ্য বিষয় ছিল না। বিলটি ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করায় তীব্রভাবে সমালোচিত হয়। এখন দেখার বিষয় ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগেই নাগরিকত্ব ইস্যুতে বিজেপি কি বিল পাশ করে। নতুন বিলের ফলে লাখ লাখ মুসলিম ‘বিদেশীতে’ পরিণত করলে এর ফলাফল কি হবে? ভারতে কি হবে না হবে তার চেয়ে বড় বিষয় হলো বাংলাদেশে এর কোন প্রভাব পড়বে কি না? উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কি নষ্ট হবে? কারণ, ভারতের ‘অবৈধ অভিবাসী’র লাইন ও এ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অনিবার্য টার্গেট বাংলাদেশ বলে মনে করা হয়ে থাকে এবং ভারত সরকারের ধারণা এ ধরনের সব অভিবাসীর উৎস বাংলাদেশ। আসামের অনেকে মনে করে, যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়বে, তাদের অনেকেই গোপনে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে। এর ফলে এসব লোককে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেয়ার দাবির পথ সৃষ্টি করতে পারে। তাহলে কি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিপুল ক্ষেত্রে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে বর্তমান সরকার?।যদিও গত মার্চে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আসাম সফরের সময় বিষয়টি নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য নেতার সাথে আলোচনা করেছেন। জুলাই মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ও তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে মিড়িয়াকে জানানো হয়। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ও ইতিহাসবিদ সুগত বসু বলেছেন, আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া ৪০ লাখ মানুষকে বাংলাদেশে বিতাড়ন বা পুশ ব্যাক-এর ঘটনায় নিকটতম প্রতিবেশি দেশটির সাথে কেবল সম্পর্কই খারাপ হবে না বরং ভারতের অাসাম রাজ্য আরেকটা রাখাইন প্রদেশে পরিণত হবে। অন্য দিকে ‘‘ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের নাগরিক নিবন্ধন তৈরি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের পক্ষে অপমানজনক। বিজেপি বোঝাতে চাইছে সব বাংলাদেশিই যেন অনুপ্রবেশকারী। এটা ঠিক হচ্ছে না। বাংলাদেশ অবৈধ দেশ নয়। সন্ত্রাসবাদী দেশও নয়’’ বলে মন্তব্য করেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অতএব, আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ইস্যুতে ভারতের মাঠি গরম হলেও বাংলাদেশে বিষয়টা এখনো তেমন পর্যায়ে নেই। বিষয়টি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সমাধান আশু কাম্য।
* এম টি উল্যাহ, লেখক ও কথাসাহিত্যিক
facebook.com/mohammad.toriqueullah

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৩

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ওরাই নিষ্পত্তি করুক! আমরা কোন ঝামেলায় নেই!

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০২

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৫৫

রসায়ন বলেছেন: বাংলাদেশ এটা নিয়ে নীরব । অবাক লাগে ।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০২

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: ছবিটা আপনার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.