নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
২০১৭ সালে দেশে ৪৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৩৯৭ জন নিহত ও ১৬,১৯৩ জন আহত হয়েছিল যা নিহতের হার ২০১৬ সালের তুলনায় ২২.২ শতাংশ, দুর্ঘটনার হার ১৫.৫ শতাংশ ও আহতের হার ১.৮ শতাংশ বেড়েছে । অর্থাৎ ২০১৬ সালে ৪৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০৫৫ জন নিহত ও ১৫৯১৪ জন আহত হয়েছিল। আর তার সাথে তাল মিলিয়ে এ মৃত্যুর প্রতিযোগিতায় ২০১৮ সালের প্রথম চার মাসে ১৮৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২০০০ এর উপরে।আর ২০১৭ সালে যে ১৬,১৯৩ জন আহত হয়েছিল তার মধ্যে হাত, পা বা অন্য কোনও অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন ১,৭২২ জন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৪২. ৫ শতাংশ পথচারীকে চাপা, ২৫.৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১১.৯ শতাংশ খাদে পড়ে এবং ২.৮ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে সংগঠিত হয়। দুর্ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে জিডিপির প্রায় দেড় থেকে দুই শতাংশ। (তথ্য বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে)। হিসাব সহজ, প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু মারাই যাচ্ছেন ২০ জনের উপরে। দেশের মানুষের জীবন এমনই সস্তা কেন?নাকি দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে নিয়মিত ঘটে চলা দুর্ঘটনাগুলো কি এ দেশের জনগণের কপালের লিখন? এক জরিপে এসেছে, সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। আর সড়ক দুর্ঘটনার দৃশ্যমান (tangible) ও অদৃশ্যমান (intangible) উভয় ধরনের ব্যাপক ক্ষতি রয়েছে যার ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রণীত সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট’ এ সড়ক দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের সমস্যা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। তাদের রিপোর্ট মতে দুর্ঘটনা রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ট্রাফিক আইন-কানুনের কার্যকরী প্রয়োগ। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার র্যাঙ্ক অনুযায়ী, আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শূন্য থেকে নয় স্কেলে ৩ বা ৪ নম্বর অবস্থানে আছে।
হ্যাঁ দেশে যানবাহনের বাড়ছে, সড়ক-মহাসড়ক আধুনিকায়ন হয়েছে, রোড শো-সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক প্রচারণা ঢোল পিঠিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, বাংলাদেশে রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠন করেছে, ২২টি জাতীয় মহাসড়কে থ্রি হুইলার অটোরিকশা, নছিমন-করিমন চলাচল নিষিদ্ধ হয়েছে, তাহলে গলদ টা কোথায়?। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, দেশে যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ। তার মধ্যে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা ১৮ লাখ। তাহলে বাকি ১৫ লাখ যানবাহনের চালকের আসনে রয়েছেন কারা? তার মধ্যে আবার পেশাদার চালকদের মধ্যে অন্তত দুই লাখ চালক নাকি লাইসেন্স পেয়েছেন শ্রমিক সংগঠনের দাবি মেনে যথাযথ পরীক্ষা ছাড়াই!। ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার কারণ পর্যবেক্ষণ করে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) বলছে, দেশে ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো এবং ৩৭ শতাংশ চালকের বেপরোয়া মনোভাব। তার মানে ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালক।
অন্যদিকে আইনের পর্যাপ্ততা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আইন বলতে তো মহাসড়ক (নিরাপত্তা, সংরক্ষণ ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০১ (হাইওয়ে অ্যাক্ট ১৯২৫ এর ৪ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রণীত) এবং মোটর ভেহিকেল অধ্যাদেশ ১৯৮৩, যেখানে নানাবিধ নিয়ম লঙ্ঘনের দণ্ড এককথায় বলা যায় ‘নামমাত্র’। বিষয়টি অনুধাবন করে বাংলাদেশ সরকার সেই ১৯৯৬ সাল থেকে ‘রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রাফিক অ্যাক্ট’ শিরোনামে একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। খসড়া হয়েছে। কিন্তু আইনটি আজও আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ‘সড়ক পরিবহন আইন’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয় যা এক বছর ধরে ভেটিংয়ে আটকে পড়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মালিক ও শ্রমিকদের চাপে সড়ক আইনটি চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। এমনকি দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ ফোরাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য’ হয়- এমন আইন প্রণয়নের দাবি জানান। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতেই এ আইনের খসড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ওয়েবসাইটে মতামতের জন্য দেয়া হয়। এরপর কয়েক দফায় মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন অপরাধের সাজা কমানো হয়। তারপর তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর পুনরায় সংশোধনসহ আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়। সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয় কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে সড়ক বিভাগে পাঠালে তা আবার সংশোধন করে পুনরায় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।বাকিটা ইতিহাস।
শুধু তাই নয় খড়সা প্রস্তাবনা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল। কারণ,সড়ক দুর্ঘটনার মামলা জামিনযোগ্য রাখার প্রস্তাব, আইনের কোথাও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয় আলোচনা না করে বরং পুলিশের উপস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে মালিকের সঙ্গে সমঝোতার সুযোগ এর পাশাপাশি বেপরোয়া বা নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হলে চালকের সর্বোচ্চ সাজা মাত্র ৩ বছর জেল অথবা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড- এমন বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে কেউ মারা গেলে বা আহত হলে চালক বা দায়ী ব্যক্তির কী ধরনের শাস্তি হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। এক্ষেত্রে কৌশলে পেনাল কোডের আওতায় বিচারের কথা বলা হলেও ধারার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে প্যানেল কোডের ৩০৪ (খ) ধারায় মামলা হচ্ছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ সাজা ৩ বছর। এটি জামিনযোগ্য ধারা। এই হলো আইনের নমুনা।
অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল। কাউন্সিলে জাতীয় বাজেট থেকে অর্থায়ন করা হয় না। তাছাড়া প্রতি ছয়মাস পর পর কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, প্রয়োজনীয় গতিশীলতার অভাব ও সমন্বয়হীনতার কারণে কখনও কখনও তা অনুষ্ঠিত হতে বছর পার হয়ে যায়।
আইনে প্রতিকার ও নজির কেমন?
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা আহত হওয়ার ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি চাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ চেয়েও আদালতে মামলা করার সুযোগ রয়েছে টর্ট আইন(দেওয়ানী ক্ষতি/ civil wrong) অনুযায়ী)। টর্ট আইনের ভাষায় যেটাকে পরার্থ দায়( vicarious liability) বলা হয়। এ পরার্থ দায় এর ভুক্তভোগীর পরিবার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য। তবে আইনের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও অতিরিক্ত কোর্ট-ফির কারণে ক্ষতিপূরণ মামলার সংখ্যা কম। তবে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের মামলা হচ্ছে এবং নিজেদের পক্ষে রায়ও পাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহতের পরিবার ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারবে বলে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১১ সালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে মাইক্রোবাস আরোহী চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে দায়ের করা মামলায় হাইকোর্ট তার রায়ের পর্যবেক্ষণে একথা জানান। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘প্রায়ই অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি চালানোর ফলে দেশে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। যেহেতু আমাদের দেশে ‘মোটর ভেহিক্যালস অধ্যাদেশ, ১৯৮৩’ নামে একটি আইন রয়েছে। কিন্তু ওই আইন না জানার কারণে তারা (ক্ষতিগ্রস্তরা) কখনও আদালতে আসেনি। তবে এই রায়ের পর থেকে ভবিষ্যতে তাদের আদালতে আসার সুযোগ সৃষ্টি হলো। এখন থেকে কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতির মুখোমুখি হলে আহত ব্যক্তি তার নিজের পক্ষে অথবা নিহত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার পরিবার এই আইনের অধীনে আদালতে আসতে পারবেন।’ ২০১৬ সালে হাইকোর্টে তারেক মাসুদের মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। বাদীপক্ষ এ মামলায় মোট ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৩০ হাজার ৯৮ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে। বিচার শেষে রায়ে বলা হয়, যারা এ দুর্ঘটনা আর মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য দায়ী, তাদের ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে বাসের চালক দেবেন ৩০ লাখ টাকা, বীমা কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স দেবে ৮০ হাজার টাকা, আর বাকি ৪ কোটি ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫২ টাকা দেবেন তিন বাস মালিক। বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ঘটনা বিরল। আর ক্ষতিপূরণ দেয়ার এমন উদাহরণ খুব বেশি নেই। তারই ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানো ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারানো তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব হাসানের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন আদালত। যদিও সেই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। গত মাসে রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে নিহত ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট এবং রাজধানীর যাত্রবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর গ্রীনলাইন পরিবহনের বাস চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতেও চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ মামলা যেভাবে করবেন ঃ
সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত যে কেউ বা তার পরিবারের সদস্যরা এ মামলা করতে পারেন। মামলা করতে হলে প্রথমে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ সঙ্গে নিয়ে জেলা জজ (পদাধিকার বলে সড়ক দুর্ঘটনার দাবি ট্রাইব্যুনাল) আদালতে হাজির হতে হবে।তারপর আদালত থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি সংক্রান্ত একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে। ফরমের সঙ্গে দুর্ঘটনার প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণাদি যুক্ত করতে হবে।পরবর্তীতে যাবতীয় তথ্য-প্রমাণের সঙ্গে মাত্র ২০টাকা কোর্ট ফি দিয়ে দাবি ফরমটি জেলা জজ (সড়ক দুর্ঘটনার দাবি ট্রাইব্যুনাল) বা সমপর্যায়ের জেলা জজ আদালতে জমা দিতে হবে। এরপর বিচারক তা গ্রহণ করবেন এবং তিনি সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের ওপর সমন জারি করবেন। এরপর দুই পক্ষ আদালতে হাজির হয়ে তাদের আপত্তি উত্থাপণ করবেন। এ পর্যায়ে আদালত মামলার ধরন নির্ণয় করে দেওয়ানী কার্যাবিধি অনুসারে মামলার বিচার্য বিষয়গুলো গঠন করা হবে এবং মামলার বিচার কাজ শুরু করবেন অথবা প্রয়োজনীয় আদেশ দেবেন।
মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার পরিবার, আর শারিরীক ক্ষয়ক্ষতি, আহত অথবা কোনও সম্পদের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দাবি করে যে কেউই এই মামলা দায়ের করতে পারবেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের মামলা করা আইনগত সবচেয়ে ভালো দিক। যদি কোন ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন এক্ষেত্রে দুটি মামলা হতে পারে, একটি নিহতের বিচারের অন্যটি ক্ষতিপূরণের ।সাধারণত ক্ষতিপুরনের মামলা করার ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির সামাজিক স্ট্যাটাস এর উপর নির্ভর করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয় টর্ট আইনে দায়ের করা মামলার ক্ষেত্রে কোন ঘটনায় কার দায়িত্ব কতটুকু তা নির্ণয়ের সুযোগ আছে। চালক কোনও ত্রুটি করলে তার দায় মালিককে নিতে হবে। কারণ মালিক তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। এজন্য মালিকই ক্ষতিপূরণ দিতে মালিক পক্ষও বাধ্য, এবং ভুক্তভোগীরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার নজির সৃষ্টি হচ্ছে।
সর্বোপরি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ক্রটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, মহাসড়ক ও রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন ওঠে পড়ার বিষয়ে সর্তকতা, চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যাত্রীবান্ধব সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা, জাতীয় মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠন করে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আমাদের সকলের সচেতনতা আবশ্যক। অন্যথায়, এ মিছির দীর্ঘ হতেই থাকেবে দুভার্গ্যজনকভাবে।
-এম টি উল্যাহ, আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
[email protected]
২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:০৬
অধৃষ্য বলেছেন: বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ব্যাপক হারে বেড়েই চলেছে । প্রায় সব ক্ষেত্রেই কোনো বিচার হয় না । হলেও যে শাস্তি তাতে চালকদের মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হয় না ।
@হাসান ভাই, আমেরিকা, কানাডায় প্রচুর মানুষ নাক পর্যন্ত মদ গিলে রাস্তার নিচে গিয়ে মরে । বাংলাদেশে অ্যালকোহল গিলে রাস্তায় নামার কোনো খবর আমার জানা নেই । ট্রাক ড্রাইভারদের গাঁজা খাওয়ার দুর্নাম আছে, তারা নিয়মিতই রাস্তার পাশের গাছে, বিদ্যুতের খুঁটিতে, বাসে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যাচ্ছে/মারা যাচ্ছে । অ্যালকোহল না থাকলে উত্তর আমেরিকায় দুর্ঘটনা খুবই অল্প হতো । তবু প্রতি বছর তাদের দুর্ঘটনার হার কমছে । আমাদের তো অ্যালকোহল নেই, তবু প্রতি বছর এই হার বাড়ছে কেন?
৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ আমাদের সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করুন।
৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৫৩
পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: ওরে বাবা!.
এতো ভয়াবহ অবস্থা!!!
@ অধৃষ্য
সহমত।
৫| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২৮
সড়কযোদ্ধ২ বলেছেন: শিক্ষার্থী আদনান তাসিনকে হত্যা করা হয় , জেব্রা ক্রসিঙ্গের উপর , শিক্ষার্থী আব্রার কে হত্যা করা হয় , জেব্রা ক্রসিঙ্গের উপর , রমিজুদ্দিন শিক্ষার্থী দীয়া করিমকে হত্যা করা হয় ফুটপাতের উপর, সিলেটের অয়াসিম, সাভারের শিল্পিকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলে হত্যা করে, গত ২/৩ দিন আগে উত্তরায় ভাড়া নিয়ে তর্কের কারনে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চাকায় পিষে হত্যা করে, বাসে শতাধিক যাত্রী ছিল সকলেই নীরব - হয় তারা ফার্মের মুরগি আর না হয় নপুংসক হিজরা !!
সবচেয়ে বেশী মানুষ সড়কে হত্যা কাণ্ডের শিকার গাড়ি তে গাড়িতে মুখোমুখি সংঘর্ষ - আর না হয় গাড়ি উল্টে পড়ে - গাড়ি ফুটপাতে ও আইল্যান্ডে উঠে - অনেকেই ঘরে শুয়ে ঘুমাচ্ছে আর ঘাতক ঘরে ঢুকে তাদেরকে চাপা দিয়ে হত্যা করে
অনেক দালাল আঁতেলদের কারনে সড়কে হত্যাকাণ্ডের ঘাতকদের সাজা হয়না - দালালরা সড়কে হত্যাকাণ্ড দেখলেই ব্যাঙ্গ করে তামাশা করে বলে পাবলিক সচেতন হলে সড়ক হত্যাকাণ্ড কমবে !! এমন এক দালালা একদিন সড়ক হত্যাকাণ্ডের খবরে তামাশা ব্যাঙ্গ করেছিল - তার কয়েকদিন পর পোস্ট দিল - গাড়িতে পরিবার নিয়ে বাড়ি যাবার সময়ে গাড়ি মুখোমুখি সংঘর্ষে পরিবারের সদস্যরে নির্মমভাবে নিহত হয় !! কোন সচেতনতাই কাজে দিল না - কোন দালালিই কাজে দিলনা -
সড়কে চালক ৮০ লাখ আর লাইসেন্স ১৬ লাখ, বাকি গাড়ি কে চালায় ? আর বেশির ভাগ ঘাতক মদ গাঁজা খেয়ে গাড়ি চালায় - অনেক ঘাতক সড়কে উঠে প্রতিযোগিতা করে - অনেক ঘাতক বেপরোয়া গাড়ি চালায়
বছরে সড়কে হত্যাকাণ্ডের শিকার ২৫০০০ এর অধিক, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর ! তার মানে এই যাবত সড়ক হত্যাকাণ্ডের শিকার ১২, ৫০,০০০ ( সাড়ে বার লাখের বেশি মানুষ) আর আন্দোলন হয় ২টি, ১ বিপিএউ এর আব্রার - তাই আব্রার ব্রিজ হয়েছে, ২ নটরডেম নাইম এর নামে ব্রিজ হবে, ব্রিজের নামকরন আর ঘাতক ধরা হয় শুধু মাত্র আন্দোলন এর ভয়ে আর না হয়, কেউ সড়কের হত্যা নিয়ে ভাবে না - ভাবার সময় কৈ- সড়কে এত হত্যাকাণ্ড কিন্তু একজন ঘাতকের সাজার নজিরও নেই - কারন কোন প্রতিবাদ হয়না
২৪ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:২২
এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৩৮
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
প্রতি বছর ৬-৭ হাজার মৃত্যু কমই।
বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার ভিত্তিতে আরো দ্বিগুণের বেশি মারা যাওয়ার কথা। শুধু যানজটের কারনে হতে পারছে না।
আমেরিকা ৩০ কোটি জনসংখ্যায় রোড এক্সিডেন্টে মৃত্যু কমবেশি ৪৫ হাজার।
অতচ দাগ দেয়া রাস্তা, সবাই কঠিনভাবে রোডসাইন মেনে চলে। ওভারটেকিং নেই, ডানে বামে লেন খালি থাকলে তবেই নিয়মমাফিক টার্ন সিগন্যাল দিয়ে লেন চেইঞ্জ করে এরপর ওভারটেক। চুল পরিমান ভুল করলে ছবিপ্রমান সব বাসায় জরিমানার টিকিট। ৬ বার টিকেটের শাস্তি লাইসেন্স সাসপেন্ড।
এরপরও বছরে রাস্তায় ৪৫ হাজার মৃত্যু।