নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
ছয়টা পনেরো।
সকাল।
নকিতা কে বিগত নয় দিনও একই সময়ে যেতে হয়েছে। ভালবাসার টানে। শীতের উপহার ঠান্ডা পানিতেই গোসল করতে হল। চুল শুকানোরও সময় নেই। ৭.০০ টার মাঝে পোঁছাতে না পারলে বড়ই অসুবিধা হয়ে যাবে। ঐটাতো আর চাকরি না যে একটু আধটু ফাঁকি দেওয়া চলে। রেডি হতেই চলে গেল ১৫ মিনিট। ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই চকবাজার থেকে হালিশহর নার্চার হসপিটালে পোঁছাতে হবে। অবশেষে পৌঁছাল। কিন্তু বেডে সাকী নেই। ৭.৩০ এ অপারেশন হওয়ার কথা। অথচ ৭.০০ টায়ই নিয়ে গেল অপারেশন থিয়েটারে। বিদেশী ডাক্তার গুলো এতে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠল কিভাবে!
সব কিছু রেড়ি।তারা অপেক্ষায় ছিল শুধু নিকিতার জন্য (দো-ভাষী হিসেবে)। কারণ
ভিন দেশী ডাক্তারদের টিম তো আর বাংলা বুঝেন না, রোগীও অক্ষম তাদের ভাষার কথা বলতে। ওর আম্মু ও রয়েছেন সাথে। নিকিতা প্রবেশ করতেই সবার মুখে হাসি ফিরে এল। ওকে একটা ফরম দিয়ে বলা হল, ওর আম্মুর কাছ থেকে তথ্য গুলো নিয়ে পূরণ করতে। তেমন কিছু না, রোগীর বয়স, সমস্যা কবে থেকে, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা ও অপারেশনের সম্মতি সূচক স্বাক্ষর। পূরণ শেষ হওয়াতেই ওর আম্মুর দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলেন। কৃতজ্ঞতা জানালেন স্রষ্টার প্রতি। অন্যদিকে অপারেশন করা হবে তাই কাল রাত থেকে মুখে কিছু দিতে বারণ ছিল। ৮ টার মাঝেই অপারেশন শেষ। নিকিতার আবার ডাক পড়ল অপারেশন থিয়েটারে। কারণ জ্ঞান আসার পর রোগী কি বলে কান্না করতেছে তা বুঝার জন্য। একটা শব্দেই সমাধান। নিকিতা শুধু মুখ দিয়ে ডাক্তারদের বলল "ওয়াটার"। কিন্তু তাকে আরো ২ ঘন্টা মুখে কিছু দেওয়া যাবে না। আজ নয় দিন যাবত নিকি শুধু এগুলোই করে যাচ্ছে।
কখনো পানি লাগবে কখনো রোগীর বাথরুম আসছে, কখনো বমি বমি ভাব, কখনো রোগের কারণ কিংবা পিতা-মাতার নাম এর মত তথ্য গুলো শুধু ইংরেজীতে ওদেরকে বলে দেওয়া। আর ওদের দেওয়া প্রেস্কিপসন রোগীকে বুঝিয়ে দেওয়া।
নিকিতা এই নয় (৯) দিনে হয়ে গেলেন শান্তির দূত। নিজের সম্মানের কথা চিন্তা করে নিজেরই লজ্জা হচ্ছে ওর। এই ছোট্ট কাজটি ও যে এত মানবিক ও প্রয়োজনীয় হতে পারে তা ছিল ওর কল্পনার বাহিরে। ১০ টায় পরিবারের সবার অনুমতি মিলল সাকীর সাথে দেখা করার। ডুকতেই আনন্দের জল চলে আসল সবার চোখে। সাকী আজ দুই ঠোঁট মেলে হাঁসতে পারতেছে তিন বৎসর পর। তার আম্মু তার মুখভরা প্রথম হাসি দেখে কান্না ধরে রাখতে পারল না। নিকিতাকে বুকে জড়িয়ে চোখের জলে বরণ করে নিলেন আনন্দকে। আজ পুরো হালিশহর নার্চার হসপিটাল চোখ বেজা আনন্দে বরে উঠল। আর তার মাঝে নিকিতা যেন একটি শান্তির পায়রার নাম। শতাধিক শিশুর মুখ ভরা হাসি ও পরিবার পরিজনের আনন্দ যেন আজ নিকিতাদের জন্যই। নিজেকে আজ অনেক সার্থক মনে হচ্ছে। ভালবাসতে পেরে, ভালবাসা পেয়ে। আজকের এই ১৪ ফেব্র“য়ারীর লাগনে বিশ্বের প্রতিটি শিশুকে জানাই ভালবাসা। ভুবনে নিশ্চিত হোক হাসি প্রতিটি শিশুর...
পুনশ্চ ঃ গল্পটি চট্টগ্রামে রোটারী ক্লাবের উদ্দ্যোগে অস্বচ্ছ পরিবারের “ঠোঁট ও তালুকাঠা” শিশুদের জন্য (২-৫ বৎসরের বয়সের) যে ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হয় তার অবলম্বনে। প্রতি বৎসর “রোটারী ইন্টারন্যাশনাল” এর বিদেশী ডাক্তাদের একটি টিম এসে নার্চার হসপিটালে এ ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে থাকে। আর এখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রোটারেক্টরা (রোটারীর অঙ্গ সংগঠন) দো-ভাষীর কাজ করে থাকেন। নিকিতা এখানে একজন দো-ভাষীরই উদাহরণ)।
গল্পকার:
মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
ছাত্র, (সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী)
এল-এল.এম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।য়
©somewhere in net ltd.