নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Stay Hungry. Stay Foolish.
আইজেনরা চিনবে না। আসলে ইম্যাজিনশন ম্যাক্সিমাইজ করেও ওরা জিনিসটার আকার বা আবেদন মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারবে না। কিন্তু আমরা, যারা জেন-এক্স, তাদের কৈশোরে 'চাঁদের পাথর' ছিলো এই জিনিসটা - 'ডেকসেট'; আ ড্রিম ওনলি ভেরি লাকি চ্যাপস কুড অ্যাফোর্ড টু ড্রিম অফ।
১৯৯২। তখন ক্লাস এইটে বৃত্তি পরীক্ষা হতো সারা দেশে। কিভাবে যেন বৃত্তিটা পেয়েও গেলাম। বিরাট চমক - শুধু আমার জন্যই নয় বরং পুরো পরিবারের। চার মামার মধ্যে সবচেয়ে ভীতিকর হলেন ছোটমামা; আমরা ডাকি 'বুলু মামা'। ডাক নামের মামা। বিশাল লম্বা, খড়গের মত বাঁকানো নাক, গম্ভীর কন্ঠস্বর এবং এইজন্যই আমাদের তাবৎ ভাইবোনদের জন্য বিভীষিকা।
আমাদের বাসায় একটা ফিলিপ্স রেডিও ছিল। অনেক পরে ওয়াকম্যান দেখেছি অতি সৌভাগ্যবানদের কান অলংকৃত করতে। এটি ছিলো কিশোর আর তরুণদের এলিট শ্রেণিতে উত্তরণের প্রথম ল্যান্ডমার্ক। নানু বাড়িতে গেছি। আচমকা ডাক পড়লো বুলুমামার কামরায়। মুহূর্তেই হরিষ বিষাদে নয়, অজানা আতংকে ভেবলে গেলাম।
দৃশ্যটা ফ্রিজ হয়ে গেছে আমার মগজে,ওভাবেই থাকবে আমৃত্যু।
বিছানায় আধ কাতে বুলু মামা। আমি ঢুকতেই দূরতম দেয়ালের সামনে ওয়্যারড্রোবের ওপর রাখা দুই ফিট বাই আট ইঞ্চিটাক উঁচু একটা কালো বাক্সের মতো জিনিসের দিকে ইঙ্গিত করলেন -
- ওটা তোমার জন্য, বৃত্তি পরীক্ষার গিফট।
জিনিসটি ছিল সেই সময়ের একটি অত্যাধুনিক রিমোট কনট্রোলড সোনি ডেকসেট। আমার সমসাময়িক কারও সেরকম কিছু এর বহু, বহুদিন পর্যন্তও ছিল না। সেটটা একসাথে দুটো ক্যাসেট লোড করতে পারতো। ছিলো বিরাট এক রেঞ্জ ইকোয়্যালাইজার আর হৃদপিন্ড কাঁপিয়ে দেয়ার মতো দুটো সাউন্ডবক্স।
কিন্তু গল্পটা ডেকসেটের নয় বরং এক জোড়া ক্যাসেটের; সেই ম্যাগনেটিক ফিতা ক্যাসেট।
ওই '৯২ তেই স্যান্ডো গেঞ্জি পরা চার তরুণ এক জোড়া ক্যাসেট বের করেছিলেন। ব্যান্ডের নামটাই একজন টিন এইজারকে, যে কিনা প্রেমে পড়ি পড়ি করছে, সম্মোহিত করে ফেলার জন্য যথেষ্ঠ - লিটল রিভার ব্যান্ড।, সংক্ষেপে এল.আর.বি। বাচ্চু, স্বপন, টুটুল আর জয় আক্ষরিকঅর্থেই আমার, আমাদের মাথা উড়িয়ে নিয়ে গেল বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম দিয়ে।
আর আমরা স্বাক্ষী হলাম একটি 'ফেনোমেনার' জন্মের - 'আইয়ুব বাচ্চু'।
ঘর অন্ধকার করে যখন ঘুম ভাঙ্গা শহরেটা চালিয়ে দিতাম, জাস্ট চলচ্ছক্তিহীন অবস্থা হতো আমার। আর ঘুমন্ত শহর? উফ! সর সর করে দাঁড় করিয়ে দিত গায়ের পশম। একটু আগে আরেকবার শুনলাম। এতোগুলো বছর পরও নো চেইঞ্জ, ম্যান।
আমি সারাজীবনে নিজের রুমের দেয়ালে একটাই পোস্টার লাগিয়েছিলাম - এল.আর.বি. এর। প্রতিটা গান কন্ঠস্থ ছিল। আর হৃদয়ে ছিলেন উনি - দ্য বস অফ দ্য লেজেন্ডস।
অনেকেরই জানা আছে, তা-ও বারবার বলতে ভালো লাগে এবির কথা, এবিকে নিয়ে নানারকম ঘটনাগুলো। বিখ্যাত গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর স্মৃতিচারণা ছেপেছিল প্রথম আলো। সেখান থেকেই জানা।
বয়স যখন সতের কি আঠারো, আইয়ুব বাচ্ছু গিটরিস্ট হিসেবে যোগ দেন সোলসে। একদিন সোলস টিম ফরস্ট হিলে কোন পিকনিকের মতো করছে। বাচ্চু এবং জঙ্গী খাওয়ার আগে বসে আছেন একদিকে। পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের দিকে নামা পথ, কিছুটা সমতল ভূমি, অপূর্ব দৃশ্য। চারদিকে বাতাস বইছে, পাখির ডাক ভেসে আসছে। সময় যেন শান্ত হয়ে থমকে আছে। জঙ্গীকে ডাকলেন বাচ্চু, 'ভাই, দ্যাখেন। চারদিক কী সুন্দর! চলেন, একটা গান করে নেই আগে। আপনিনলিখতে থাকেন, আমি সুর করতে থাকি।' ওই মুহূর্তেই লেখা হয়ে গেল যে গানটি, সেটি সব এলআরবি ভক্তের ঠোঁটস্থ - একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে/ মায়াবী সন্ধ্যায়/ চাঁদ জাগা এক রাতে/ একটি কিশোর ছেলে/ একাকী স্বপ্ন দেখে/ হাসি আর গানে/ সুখের ছবি আঁকে।
গান তখনও পুরো লেখা হয়নি। জঙ্গী ভাবছেন। হঠাৎ চোখে পড়ল একদিকে ঘাস আর ঘাসের ওপর কিছু ফুল, বাতাসে দুলছে। সাথে সাথে লেখা হয়ে গেল অমর এক মেলোডি, যাতে সুর বসিয়ে গেলেন বাচ্চু - কী জানি কী একদিন ছিল/ ঘাসেরও দোলায় ফুল ছিল/ এলিয়ে চুল তুমি ছিলে/ কি জানি কি একদিন ছিল।
এ সোলসও একদিন ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। চলে আসার সময় একটা ভিক্ষে ছিল তাঁর, ঘুম ভাঙ্গা শহরে গানটা। সোলস দিয়েওছিল। এরপর...? ১৯৯১ এ জন্ম নিলো এলআরবি, যার ডেব্যু অ্যালবামের প্রথম গানটাই ছিল এই একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে।
এলআরবি'র প্রথম নাম কিন্তু ছিলো ইয়েলো রিভার ব্যান্ড। ভারতে ১৯৯১ সালে কনসার্ট করতে গিয়েবতাঁরা দেখেন, আয়োজক কর্তৃপক্ষ নাম লিখেছে লিটল রিভার ব্যান্ড। বাচ্চু পরে এটাই গ্রহন করেন। ন্যুইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেনে পারফর্ম করা একমাত্র বাংলাদেশি ব্যান্ড এই এলআরবি।
শেষ করবো তিনটা ঘটনা দিয়ে।
নিভার সাথে প্রেম হবো হবো করছে। কদাচিৎ ফোন আসে। চাতকের মতো অপেক্ষায় থাকি। একবার ঈদের পরের সন্ধ্যায় টেলিফোনে বাজলো সেই রিনিঝিনি কন্ঠস্বর। জীবনেও এতো কর্কষ লাগে নি। কারণ তখন পর্দায় স্বর্গীয় স্বরের যাদুজাল বিছিয়ে চলেছেন আইয়ুব বাচ্চু।
দ্বিতীয় ঘটনাটা জুম্মার জামাজে। খুতবা চলছে। বাসার পাশেই হজরত শাহ আলী (রহঃ) এর মাজার সংলগ্ন মসজিদে নামাজে গিয়েছি। আচমকা মনে হলো, আমার স্ট্রোক করবে। পা আর হাত অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপতে শুরু করেছে ততক্ষণে। কারণ আমার ঠিক পাশটিতেই সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে এসে বসেছেন কিংবদন্তী। সেদিন শুধু হাত মেলানোর সাহসটুকু সঞ্চয় করে উঠতে পেরেছিলাম।
শেষটা ২০১৮ সালে। ১৮ই অক্টোবরে অফিস থেকে ফিরে একটি চল্লিশোর্ধ ব্যক্তি পরিবারের সাথে ডিনার করছে। পেপারে খবরটি আগেই পড়া - তার তারুণ্যের আইডল আচমকা উড়াল দিয়েছেন আকাশে। সারাদিন খুবই স্বাভাবিকভাবে কাটিয়ে এখন সে বসে আছে সংসার সাজিয়ে। টুকটাক কথা হচ্ছে স্ত্রী-পুত্রদের সাথে। এক পর্যায়ে অতি বিস্ময়ে মানুষটির দুই ছেলে অবাক দৃষ্টিতে দেখলো, তাদের বাবার হাতে ভাত, আর দু চোখ দিয়ে ঝরঝর করে লোনা পানি পড়ে মিশে যাচ্ছে ভাতের থালায়। ওদের চোখে রাজ্যের প্রশ্ন - কে এই গায়ক, তা-ও আবার বাংলা গান গায়, যার জন্য বাবা কাঁদছে? ইট ওয়জ দ্য অ্যাবস্যল্যুট ফিলিং অফ এম্পটিনেস।
'মন শুধু মন ছুঁয়েছে' যদি বাংল ব্যান্ড সঙ্গীতের 'অ্যান্থেম' হয়, তবে বাচ্চুদার লেখা এবং সুর করা 'চলো বদলে যাই' হলো চিরকালীন 'থিম সং' - শুধু বাংলা ব্যান্ডের নয়, নব্বইয়ের তরুণদের সবকিছু বলে দেয়ার ম্যাজিক্যাল টোন।
"লিসন বাচ্চুদা, য়্যু হ্যাভ নো রাইট টু মেক আ ফোরটি ফাইভ টাফ গাই টু ক্রাই অ্যাট দ্য মিডল অফ নাইট।"
আইজেনরা চিনবে না। আসলে ইম্যাজিনশন ম্যাক্সিমাইজ করেও ওরা জিনিসটার আকার বা আবেদন মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারবে না। কিন্তু আমরা, যারা জেন-এক্স, তাদের কৈশোরে 'চাঁদের পাথর' ছিলো এই জিনিসটা - 'ডেকসেট'; আ ড্রিম ওনলি ভেরি লাকি চ্যাপস কুড অ্যাফোর্ড টু ড্রিম অফ।
১৯৯২। তখন ক্লাস এইটে বৃত্তি পরীক্ষা হতো সারা দেশে। কিভাবে যেন বৃত্তিটা পেয়েও গেলাম। বিরাট চমক - শুধু আমার জন্যই নয় বরং পুরো পরিবারের। চার মামার মধ্যে সবচেয়ে ভীতিকর হলেন ছোটমামা; আমরা ডাকি 'বুলু মামা'। ডাক নামের মামা। বিশাল লম্বা, খড়গের মত বাঁকানো নাক, গম্ভীর কন্ঠস্বর এবং এইজন্যই আমাদের তাবৎ ভাইবোনদের জন্য বিভীষিকা।
আমাদের বাসায় একটা ফিলিপ্স রেডিও ছিল। অনেক পরে ওয়াকম্যান দেখেছি অতি সৌভাগ্যবানদের কান অলংকৃত করতে। এটি ছিলো কিশোর আর তরুণদের এলিট শ্রেণিতে উত্তরণের প্রথম ল্যান্ডমার্ক। নানু বাড়িতে গেছি। আচমকা ডাক পড়লো বুলুমামার কামরায়। মুহূর্তেই হরিষ বিষাদে নয়, অজানা আতংকে ভেবলে গেলাম।
দৃশ্যটা ফ্রিজ হয়ে গেছে আমার মগজে,ওভাবেই থাকবে আমৃত্যু।
বিছানায় আধ কাতে বুলু মামা। আমি ঢুকতেই দূরতম দেয়ালের সামনে ওয়্যারড্রোবের ওপর রাখা দুই ফিট বাই আট ইঞ্চিটাক উঁচু একটা কালো বাক্সের মতো জিনিসের দিকে ইঙ্গিত করলেন -
- ওটা তোমার জন্য, বৃত্তি পরীক্ষার গিফট।
জিনিসটি ছিল সেই সময়ের একটি অত্যাধুনিক রিমোট কনট্রোলড সোনি ডেকসেট। আমার সমসাময়িক কারও সেরকম কিছু এর বহু, বহুদিন পর্যন্তও ছিল না। সেটটা একসাথে দুটো ক্যাসেট লোড করতে পারতো। ছিলো বিরাট এক রেঞ্জ ইকোয়্যালাইজার আর হৃদপিন্ড কাঁপিয়ে দেয়ার মতো দুটো সাউন্ডবক্স।
কিন্তু গল্পটা ডেকসেটের নয় বরং এক জোড়া ক্যাসেটের; সেই ম্যাগনেটিক ফিতা ক্যাসেট।
ওই '৯২ তেই স্যান্ডো গেঞ্জি পরা চার তরুণ এক জোড়া ক্যাসেট বের করেছিলেন। ব্যান্ডের নামটাই একজন টিন এইজারকে, যে কিনা প্রেমে পড়ি পড়ি করছে, সম্মোহিত করে ফেলার জন্য যথেষ্ঠ - লিটল রিভার ব্যান্ড।, সংক্ষেপে এল.আর.বি। বাচ্চু, স্বপন, টুটুল আর জয় আক্ষরিকঅর্থেই আমার, আমাদের মাথা উড়িয়ে নিয়ে গেল বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম দিয়ে।
আর আমরা স্বাক্ষী হলাম একটি 'ফেনোমেনার' জন্মের - 'আইয়ুব বাচ্চু'।
ঘর অন্ধকার করে যখন ঘুম ভাঙ্গা শহরেটা চালিয়ে দিতাম, জাস্ট চলচ্ছক্তিহীন অবস্থা হতো আমার। আর ঘুমন্ত শহর? উফ! সর সর করে দাঁড় করিয়ে দিত গায়ের পশম। একটু আগে আরেকবার শুনলাম। এতোগুলো বছর পরও নো চেইঞ্জ, ম্যান।
আমি সারাজীবনে নিজের রুমের দেয়ালে একটাই পোস্টার লাগিয়েছিলাম - এল.আর.বি. এর। প্রতিটা গান কন্ঠস্থ ছিল। আর হৃদয়ে ছিলেন উনি - দ্য বস অফ দ্য লেজেন্ডস।
অনেকেরই জানা আছে, তা-ও বারবার বলতে ভালো লাগে এবির কথা, এবিকে নিয়ে নানারকম ঘটনাগুলো। বিখ্যাত গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর স্মৃতিচারণা ছেপেছিল প্রথম আলো। সেখান থেকেই জানা।
বয়স যখন সতের কি আঠারো, আইয়ুব বাচ্ছু গিটরিস্ট হিসেবে যোগ দেন সোলসে। একদিন সোলস টিম ফরস্ট হিলে কোন পিকনিকের মতো করছে। বাচ্চু এবং জঙ্গী খাওয়ার আগে বসে আছেন একদিকে। পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের দিকে নামা পথ, কিছুটা সমতল ভূমি, অপূর্ব দৃশ্য। চারদিকে বাতাস বইছে, পাখির ডাক ভেসে আসছে। সময় যেন শান্ত হয়ে থমকে আছে। জঙ্গীকে ডাকলেন বাচ্চু, 'ভাই, দ্যাখেন। চারদিক কী সুন্দর! চলেন, একটা গান করে নেই আগে। আপনিনলিখতে থাকেন, আমি সুর করতে থাকি।' ওই মুহূর্তেই লেখা হয়ে গেল যে গানটি, সেটি সব এলআরবি ভক্তের ঠোঁটস্থ - একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে/ মায়াবী সন্ধ্যায়/ চাঁদ জাগা এক রাতে/ একটি কিশোর ছেলে/ একাকী স্বপ্ন দেখে/ হাসি আর গানে/ সুখের ছবি আঁকে।
গান তখনও পুরো লেখা হয়নি। জঙ্গী ভাবছেন। হঠাৎ চোখে পড়ল একদিকে ঘাস আর ঘাসের ওপর কিছু ফুল, বাতাসে দুলছে। সাথে সাথে লেখা হয়ে গেল অমর এক মেলোডি, যাতে সুর বসিয়ে গেলেন বাচ্চু - কী জানি কী একদিন ছিল/ ঘাসেরও দোলায় ফুল ছিল/ এলিয়ে চুল তুমি ছিলে/ কি জানি কি একদিন ছিল।
এ সোলসও একদিন ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। চলে আসার সময় একটা ভিক্ষে ছিল তাঁর, ঘুম ভাঙ্গা শহরে গানটা। সোলস দিয়েওছিল। এরপর...? ১৯৯১ এ জন্ম নিলো এলআরবি, যার ডেব্যু অ্যালবামের প্রথম গানটাই ছিল এই একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে।
এলআরবি'র প্রথম নাম কিন্তু ছিলো ইয়েলো রিভার ব্যান্ড। ভারতে ১৯৯১ সালে কনসার্ট করতে গিয়েবতাঁরা দেখেন, আয়োজক কর্তৃপক্ষ নাম লিখেছে লিটল রিভার ব্যান্ড। বাচ্চু পরে এটাই গ্রহন করেন। ন্যুইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেনে পারফর্ম করা একমাত্র বাংলাদেশি ব্যান্ড এই এলআরবি।
শেষ করবো তিনটা ঘটনা দিয়ে।
নিভার সাথে প্রেম হবো হবো করছে। কদাচিৎ ফোন আসে। চাতকের মতো অপেক্ষায় থাকি। একবার ঈদের পরের সন্ধ্যায় টেলিফোনে বাজলো সেই রিনিঝিনি কন্ঠস্বর। জীবনেও এতো কর্কষ লাগে নি। কারণ তখন পর্দায় স্বর্গীয় স্বরের যাদুজাল বিছিয়ে চলেছেন আইয়ুব বাচ্চু।
দ্বিতীয় ঘটনাটা জুম্মার জামাজে। খুতবা চলছে। বাসার পাশেই হজরত শাহ আলী (রহঃ) এর মাজার সংলগ্ন মসজিদে নামাজে গিয়েছি। আচমকা মনে হলো, আমার স্ট্রোক করবে। পা আর হাত অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপতে শুরু করেছে ততক্ষণে। কারণ আমার ঠিক পাশটিতেই সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে এসে বসেছেন কিংবদন্তী। সেদিন শুধু হাত মেলানোর সাহসটুকু সঞ্চয় করে উঠতে পেরেছিলাম।
শেষটা ২০১৮ সালে। ১৮ই অক্টোবরে অফিস থেকে ফিরে একটি চল্লিশোর্ধ ব্যক্তি পরিবারের সাথে ডিনার করছে। পেপারে খবরটি আগেই পড়া - তার তারুণ্যের আইডল আচমকা উড়াল দিয়েছেন আকাশে। সারাদিন খুবই স্বাভাবিকভাবে কাটিয়ে এখন সে বসে আছে সংসার সাজিয়ে। টুকটাক কথা হচ্ছে স্ত্রী-পুত্রদের সাথে। এক পর্যায়ে অতি বিস্ময়ে মানুষটির দুই ছেলে অবাক দৃষ্টিতে দেখলো, তাদের বাবার হাতে ভাত, আর দু চোখ দিয়ে ঝরঝর করে লোনা পানি পড়ে মিশে যাচ্ছে ভাতের থালায়। ওদের চোখে রাজ্যের প্রশ্ন - কে এই গায়ক, তা-ও আবার বাংলা গান গায়, যার জন্য বাবা কাঁদছে? ইট ওয়জ দ্য অ্যাবস্যল্যুট ফিলিং অফ এম্পটিনেস।
'মন শুধু মন ছুঁয়েছে' যদি বাংল ব্যান্ড সঙ্গীতের 'অ্যান্থেম' হয়, তবে বাচ্চুদার লেখা এবং সুর করা 'চলো বদলে যাই' হলো চিরকালীন 'থিম সং' - শুধু বাংলা ব্যান্ডের নয়, নব্বইয়ের তরুণদের সবকিছু বলে দেয়ার ম্যাজিক্যাল টোন।
"লিসন বাচ্চুদা, য়্যু হ্যাভ নো রাইট টু মেক আ ফোরটি ফাইভ টাফ গাই টু ক্রাই অ্যাট দ্য মিডল অফ নাইট।"
১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৬
মন থেকে বলি বলেছেন: এবি-কে নিয়ে কিছু লেখা অনেক কঠিন এবং কষ্টেরও।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই চমৎকার কমেন্টের জন্য।
২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:৪৭
মিরোরডডল বলেছেন:
এবিকে নিয়ে এর আগে কেউ এতো সুন্দর পোষ্ট লেখেনি।
লাস্টে মেনশন করা তিনটা ঘটনায় মন ছুঁয়ে গেলো।
I'm a die-hard fan too.
কণ্ঠটা শুনলে মনে হয়, কোথাও যায়নি, সাথেই আছে।
কতদিন দেখিনি দুচোখ
নির্ঘুম চোখ, বন্ধু তোমায়
তুমি কি, এমন সময়
তাকিয়ে আকাশ
ভাবছো আমায়
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৪৬
মন থেকে বলি বলেছেন: আপনি কিন্তু আবারও আমার মনটা খারাপ করে দিলেন - লাস্ট লাইনটা লিখে।
প্রায় রাতেই আমি ঘুমন্ত শহরে শুনি আর নিচে ভক্তদের করা কমেন্ট গুলো পড়ি (এবং অতি অবশ্যই চোখের পানি বেরিয়ে আসে)।
এবি আরও বিশ বছর বাঁচলে কী ক্ষতি হতো?
৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪৬
মন থেকে বলি বলেছেন: আপনি কিন্তু আবারও আমার মনটা খারাপ করে দিলেন - লাস্ট লাইনটা লিখে।
প্রায় রাতেই আমি ঘুমন্ত শহরে শুনি আর নিচে ভক্তদের করা কমেন্ট গুলো পড়ি (এবং অতি অবশ্যই চোখের পানি বেরিয়ে আসে)।
এবি আরও বিশ বছর বাঁচলে কী ক্ষতি হতো?
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৫৫
আজব লিংকন বলেছেন: ঘুম ভাঙ্গা শহরে লেখার পিছনের এই কাহিনীটা জানতাম না। দারুণ স্মৃতিচারণ করছেন। উনি গিটারের জাদুকর ছিলেন।
"তুমি ভালোবেসো, আমার ভালোবাসা!
যখন কখনো আমি থাকবো না।"
Legends Never Die
বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কিংবদন্তি এবি ❣