নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক কিছু লিখতে চেয়েছিল। কিন্তু লেখাগুলো খুঁজে পায়নি। অনেক কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু সেগুলো শোনারও সময় কারও ছিল না

মন থেকে বলি

Stay Hungry. Stay Foolish.

মন থেকে বলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যঃ আন্ডাগল্প: কেউ কথা রাখেনি...

১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬


-----------------------------------------
‘ঢাকার দুই বাজারে আজ ১৬ই অক্টোবর রাতে বিশ লাখ পিস আন্ডা বিক্রি করবেন উৎপাদকেরা।‘


দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ‘সব গেল’তে খবরটি প্রকাশের সাথে সাথে নিখিল বঙ্গদেশ আন্ডাখোর সমিতি ‘ডিমওয়ালা ডিমওয়ালি খা জায়েঙ্গে’-র ডিমান্দোলনের আপৎকালীণ ডিমান্বয়ক ডিমরাজ (পুং) এবং সিমডিম ওর্ফে ডেমিকুসুম সন্ধ্যাবেলাতেই তামাম আন্ডাখোরদের জমায়েত হওয়ার আহবান জানান মেট্রোরেলের চারশ বিশ নম্বর পিলারের নিচটায়।

সেই সাথে তাঁরা একদফা আওয়াজ তোলেন –

'সিএমএম আদালত এক্ষুনি সরিয়ে আনতে হবে কাওরানবাজারে।
নইলে কয়া দিলাম আন্ডা আর রান্না হবে না ঘরে ঘরে।‘


একজন ইয়ার্কিবাজ প্রতিবেদক ডিমরাজ ও ডেমিকুসুমের কাছে এই দাবীর ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা প্রতিবেককে ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যস্ত রাস্তার মধ্যেই ‘সবকিছু খুলে’ বলেন এইভাবে:


"দেশে এখন আন্ডার মারাত্মক ক্রাইসিস চলছে। কেন, সেটা একটি মহাজাগতিক রহস্যময় ব্যাপার যার উত্তর এই মুহূর্তে খুঁজে চলেছেন বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিদ মিচিও ‘কাদের’ কাকু এবং বাংলার গর্ব 'আনন্দময় আপেল' এর প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা 'স্টিভ' জব্বার।


উত্তর খুঁজতে যদ্দিন লাগে লাগুক কিন্তু সিএমএম আদালত যদি এক্ষুনি কাওরানবাজারে সরিয়ে আনা হয় তাহলে হাই প্রোফাইল নেতাদের প্রতি আইনজীবিরা যে আন্ডা ছুঁড়ে মারেন (এবং অনাদিকাল ধরে মারতেই থাকবেন বলে বঙ্গীয় ইতিহাস বলে), সেগুলোর ভাঙা অংশ আন্ডাখোর জনতা এক তৃতীয়াংশ দামে সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া কাওরানবাজারেই আন্ডার বিশাল চালান যেহেতু নামছে, তাই আন্ডা সংগ্রহ করার জন্য বেশি কষ্ট করতে হবে না। কারণ ছুঁড়ে মারার জন্য আন্ডা কেনা এবং সেটি সেই সুদূর আদালতপাড়ায় ইনট্যাক্ট অবস্থায় বয়ে নিয়ে যাওয়া অনেক চ্যালেঞ্জি ব্যাপার। একেই বলে ‘এক ঢিলে তিন পাখি মারা’।"


এই প্রতিবেদক যখন তিন নম্বর পাখিটি কী, সেটা জানতে চান তখন ডেমিরাজ ও ডেমিকুসুম আচমকা উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন:

‘আপ্নে কি আমাদেরত্তে বেশি বুজেন? বুজেন না তো? তাইলে কথা কম, আন্ডা বেশি।‘


সেই সময় উপস্থিত আইনজীবিদের ঘন ঘন মাথা নেড়ে একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা যায়।



-----------------------------------------
এদিকে আন্ডার দাম ও যোগান ঠিক রাখতে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। খবরে প্রকাশ:


'এখন থেকে আন্ডা উৎপাদক বড় কোম্পানি ও ছোট খামারিরা সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি পাইকারি আড়তে আন্ডা পাঠাবে। এর মধ্যে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। ফলে পাইকারি বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে আন্ডা বিক্রি করবেন।‘


এইবারে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে যে, সঠিক সিদ্ধান্তটি না নেয়ার কারণেই যত যা-ই করা হোক, কোন রেজাল্ট আসছে না। বরং যা হচ্ছে তা হলো আন্ডা; তবে মুরগির নয়, ঘোড়ার।


এই সঠিক রেজাল্টা না পাওয়ার ব্যাপারটা ধামাচাপা দেয়ার জন্যই আচমকা এইচএসসির রেজাল্ট পাবলিশ করে দেয়া হয়েছে বলে কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আলজাজিরা সন্দেহ প্রকাশ করেছে। কারণ এই রেজাল্ট পাবলিশ করা আর না করার মধ্যে কোন ফারাক নেই। এমনিতেই আবার সবাই রাজুচত্বরে জড়ো হলো বলে।


যাই হোক, কী সেই সঠিক সিদ্ধান্ত তা জানার জন্য আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিককে খুঁজতে গিয়ে জানতে পারি, তিনি সামান্য লুকোচুরির মধ্যে আছেন। কারণ বাসায় তার স্ত্রী সরকার নির্ধারিত দামে দুই ডজন আন্ডা না আনতে পারার জন্য তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন; ঠিক যেইভাবে খবরে বেরিয়েছে যে ‘তালা ঝুলছে চট্টগ্রামের আন্ডার আড়তে, সরকারি সংস্থা বলছে ‘লুকোচুরি’।


অবশেষে সঠিক সিদ্ধান্তটি কি, সেটি জানতে একজন খামারির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি লুঙির ওপর দিয়ে পাছা চুলকাতে চুলকাতে নির্বিকারভাবে খামারের সবচেয়ে অভিজ্ঞ মুরগিটির সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।


ইয়ার্কিবাজ এই প্রতিবেদককে মুরগিটি বুঝিয়ে বলে যে সিদ্ধান্তটি আসলে 'আন্ডা থেরাপির' মতোই সহজ ও সরল। উৎপাদক টু পাইকারে মধ্যে আন্ডা বেচাকনার করার জন্য যে মধ্যবর্তী দালালদের বাদ দিয়ে তাদের পেটে লাথি মারা হলো, এর বিচার কে করবে? বরং উচিৎ ছিল মূল উৎপাদককেই বাদ দেয়া, অর্থাৎ যারা আন্ডা পাড়ে তাদের। তাহলে আন্ডা জিনিসটাই দুনিয়া থেকে উঠে যেত এবং দমত দুমদাম দামের দামাল দুষ্টুমি।


এরকম অদ্ভুত যুক্তি শোনার পর প্রতিবেদক যখন জানতে চান যে গরীবের আমিষের যোগান তাহলে কোত্থেকে আসবে, তখন মুরগিটি আচমকা ক্ষেপে উঠে বলে:

‘আন্ডা কি আমি মেশিন দিয়ে পাড়ব? ফাজিল কোথাকার।‘


এসময় বাকি মুরগিদের হন্তদন্ত হয়ে খামারের মোরগদের ডেকে আনতে দেখা গেলে প্রতিবেদক দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। নিজের আন্ডাদ্বয়ের মায়া, থুক্কু জানের মায়া, বড় মায়া।



-----------------------------------------
অন্য একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত আরেকটি খবরের ব্যাপারে শাহবাগে প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হচ্ছেন দেশের খামারবাসী মুরগি এবং তাদের মোরগরা। দৈনিক ‘ভোরের কাক’ পত্রিকায় প্রকাশ: “সাত নয়, তিন হাত ঘুরে রাজধানীর বাজারে ১৪৩ টাকা ডজন দামে আন্ডা বিক্রির সিদ্ধান্ত”।


ইয়ার্কিবাজ প্রতিবেদক তাদের সমাবেশ কভার করতে গেলে মুরগি এবং মোরগরা জানায়, পুরো বক্তব্যটিই আসলে দুটি মারাত্মক ধরণের ভুল হিসাব ও ভুল তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।


প্রথমতঃ মানুষের হাত জোড় সংখ্যক হয়। তাই 'সাত বা তিন হাত' বলে কিছু হয় না। হওয়া উচিৎ চোদ্দ হাত বা ছয় হাত। কারণ আন্ডাখোর, খামারি, পাইকার, আড়তদার, মধ্যসত্ত্বভোগী দালাল, দোকানি, আন্ডাথেরাপি প্রয়োগকারী হাউন আংকেলগণ এবং আন্ডানিক্ষেপকারী আইনজীবি – এরা সবাই-ই দুই হাতেই আন্ডা হ্যান্ডেল করেন। সুতরাং হিসাবের গোড়াতেই গলদ। আর কে না জানে, ভুল হিসাবে সরল অংকের উত্তর মেলে না বরং অপকৃত ভগ্নাংশে আসবে।


দ্বিতীয়তঃ যারা কষ্ট করে আন্ডা পাড়ে, তাদের ডানার হিসাবটাই এখানে উল্লেখ করা হয়নি। এটি চরম বৈষম্য। তাই কথাটা হওয়া উচিৎ 'দুই ডানা, চোদ্দ হাত নয়, দুই ডানা ছয় হাত ঘুরে রাজধানীর বাজারে ১৪৩ টাকা ডজন দামে আন্ডা বিক্রির সিদ্ধান্ত'।


ডানার উল্লেখ না করায় তাদের আদালত অবমাননা হয়েছে বলে নিন্দা প্রকাশ করে মোরগরা জানায়, এর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তারা মুরগিসংশ্লিষ্ট সবধরণের ‘কাম’ বন্ধ রাখবে।


মোরগদের এই সিদ্ধান্ত শোনার পর অবশ্য তরুণী মুরগিদের অত্যন্ত বিষন্ন এবং ডিম্পাড়া ডিম্পল কাপাড়িয়া মুরগিদের অত্যন্ত আনন্দিতভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে।


প্রতিবেদক ‘এখানে আদালত অবমাননা আসছে কোত্থেকে’ এ প্রশ্ন রাখলে মোরগ ও মুরগিরা তাকে ঘিরে ধরে উত্তেজিতভাবে উলটো প্রশ্ন করে: 'ওই হালা, তুই আমাগোত্তেও বেশি বুজস? আন্ডা কে পাড়ে ও পাড়ায় - তুই, নাকি আমরা? ফোট শালা।’



ইত্যবসরে প্রতিবেদককে আলগোছে চিপায় টেনে এনে আরেকটি নিনজা টেকনিক জানিয়ে দেন অভিজ্ঞ ডিম্পল কাপাড়িয়া (অর্থাৎ ডিম্পাড়া) মুরগিরা।


তাঁদের মতে, সমস্যাটি অর্থনীতির ডিমান্ড-সাপ্লাই এর নয় বরং পাটিগণিতের; অর্থাৎ সমস্যাটা ডজনের হিসাবে। চারটা আন্ডায় এক ডজন হিসাব করলেই এমনিতেই যেমন ডজনপ্রতি দাম কমে আসবে, তেমনি সুন্দরী মুরগিদের ওপর আন্ডা পাড়ার চাপও বারোর স্থলে চারবারে নেমে আসবে।


‘মিনসেগুলো খেয়ে খেয়ে ওজন বাড়িয়ে খোদার খাসি হয়ে চেপে বসে আর হাঁটুর ব্যাথায় দুরাত্তির ঘুমাতে পারি না। এই বয়সে আর কত?‘ - খেদোক্তি জুড়ে দেন এই মিডলেইজ ক্রাইসিসে ভোগা মুরগিরা।


অন্যদিকে সদ্য তরুণী মুরগিরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ডজনের হিসাব বারো থেকে চব্বিশে পরিবর্তনের দাবী জানিয়ে আটচল্লিশ ঘন্টার আল্টিমেটাজ (আল্টিমেট মেজাজ) দেখিয়ে দিয়েছেন। দেশের আন্ডাখোরদের জন্য তাঁরা ‘দ্বিগুন ভার বহন’ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাছাড়া তাদেরও শখ আহ্লাদের এই তো শুরু।


দাবী মানা না হলে তারা যে কামকাজ (!) খামারের আড়ালে করতেন, সেটি সাজুচত্বরেই করবেন বলে ভয় দেখান। তাদের এক দফা এক দাবী: খুনিকে বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।


এ কথা শোনার পর অবশ্য মোরগদের অত্যন্ত ফুরফুরে মেজাজে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে এবং খামারিরাও প্রচন্ড সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও 'খুনি' কে এবং কে খুন হয়েছে - এর কোন সদুত্তর কোন মুরগি বা মোরগ দিতে পারেনি। বরং তারা ডিবি অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।



-----------------------------------------
এদিকে ১৬ই অক্টোবর আন্ডা আমদানি, বাজার নিয়ন্ত্রন, আন্ডা সাপ্লাই, কাওরানবাজার, জরিমানা, কচুরিপানা, হ্যানত্যান, ইত্যাদি খবরের পর যে বিশেষ সংবাদটির আশায় আন্ডাখোররা অধীর আগ্রহে সারা রাত ওয়ার্ল্ডকাপ ফাইনাল দেখার উত্তেজনায় জেগে ছিল, অতি প্রত্যাশিত সেই খবরটি ১৭ই অক্টোবর তিনটি জাতীয় দৈনিক ‘রোজকার তারা’, ‘আকাল’ এবং ‘নিউজের পেপার’ জানিয়েছে এইভাবেঃ


‘সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না আন্ডা।‘

‘যৌক্তিক’ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না আন্ডা।‘

‘কথা রাখেননি আন্ডা ব্যবসায়ীরা।’


যেটি ভবিতব্য, সেটি না হলে দেশবাসী অত্যন্ত টেনশনে থাকে। কাজেই এই খবরে সবাই-ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।


অবশ্য পার্শ্ববর্তী একটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি নোট ভার্বালে জানানো হয়, ‘কেউ কথা রাখেনি’ লাইনটি তাদের সুনীল গাঙ্গুলির পেটেন্ট করা। তাই আন্ডা ব্যবসায়ীদের সাথে এটি ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক নদী আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। অতি দ্রুত এই লাইন উইথড্র করে ‘প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন ডিম্বকারবারীগণ’ – এভাবে শিরোনাম করার দাবী জানানো হয়েছে।


শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে জোর গতিতে কাজ চলছে। তার আগ পর্যন্ত আন্ডা নিয়ে সবধরণের ফাজলামি বন্ধ রাখার পরিপত্র জারি করা হয়েছে।


(সমাপ্ত। আপাতত...)


(নিছক রম্য। সেভাবেই উপভোগ করুন। কেউ গূঢ়ার্থ খুঁজবেন না দয়া করে। ১৬ই অক্টোবরে লেখা।)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭

মিরোরডডল বলেছেন:




একটা রম্য পোষ্টে কোন কমেন্ট নেই।
সামুর ব্লগার রা হাসতে ভুলে গেছে !!!!
কিন্তু কেনো!

রম্য ভালো হয়েছে মন।



১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৩

মন থেকে বলি বলেছেন: বাঁচাইলেন ভাই। আমি তো ভাবছিলাম পোস্ট মনে হয় দেখা যাচ্ছে না। আবার ভাবলাম, মনে হয় সবাই মাইন্ড খাইসে (ডিম খাইতে না পেরে)। যাক। অনেক, অনেক ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.