নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Stay Hungry. Stay Foolish.
আড্ডা দিচ্ছিলাম কয়েক বন্ধু। আজকাল আড্ডা বলতে টানা গল্পগুজব আর বোঝায় না। মিনিটদশের পরেই দেখা যায় সবাই যার যার মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে মগ্ন হয়ে গিয়েছে। এখানেও তা-ই হচ্ছিল। আচমকা এক বন্ধুর চেহারার দিকে নজর গেল। অতি গম্ভীর। ব্যাপারটা কেবল আমার চোখেই পড়েছে, তা নয়। বাকিরাও খেয়াল করেছে। পরে যেটা জানা গেল তা হলো, সে ব্লক খেয়েছে; আমাদেরই আরেক বন্ধুর কাছে।
আমাদের এই ব্লক খাওয়া বন্ধুটি কিন্তু পরবর্তীতে এই ব্যাপারটা অনেক দূর টেনে নিয়ে গিয়েছিল এবং সেটার ফলে যা যা হয়েছিল, তা আর কহতব্য নয়। কিন্তু সে আরেক কাহিনী। আমি বরং ভাবছিলাম এই ‘ব্লক’ ব্যাপারটা নিয়ে।
সামাজিক প্ল্যাটফর্মে এইরকম ব্লক খাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই কমবেশি আছে। ব্যাপারটা অনেকটা আমাদের ছোটবেলার আড়ি নেয়ার মতো। যার সাথে আড়ি নেয়া হতো তার সাথে সব ধরণের যোগাযোগ এবং এ সম্পর্কীত যা যা হতে পারে, সবই বন্ধ থাকত যদ্দিন না পর্যন্ত আবার কড়ে আঙ্গুলে আঙ্গুল ঠেকিয়ে ভাব না করে ফেলা হয়।
তবে অফলাইনের আড়ি আর ভাব যতটা সিম্পল ছিল, অনলাইনের এই মারাত্মক অস্থির জীবনযাত্রায় ব্লক-আনব্লকের খেলাটা কিন্ত ততটা সিম্পল নয়।
নাকি উল্টোটা?
-------------------------------------------
ব্লক করা/খাওয়া - ব্যাপারটা আসলে কী?
আরে দাঁড়ান। আমি তো ধরেই নিয়েছি আপনি ‘ব্লক’ ব্যাপারটা বোঝেন।
এটা কিন্তু বাটিকের ব্লক না অথবা নদীর পাড়ে যে ওয়াটার বোর্ড বন্যা ঠেকাবার উছিলায় সিমেন্টের ব্লক ফেলে, সেটাও না। এ হলো থামিয়ে দেয়া, আটকে দেয়া – সেই ব্লক। কী থেকে আটকায়? অনলাইনে নিজের উপস্থিতি এবং কর্মকান্ড দেখার সুযোগ থেকে আটকায়।
আপনি যদি যদি নেট ইউজার হন (যদি আবার কি? অবশ্যই ইউজার। নইলে পড়ছেন কী করে এটা?), তাহলে আপনি আমার সাথে কোন না কোন ভাবে যুক্ত আছেন অনলাইনে। তথাকথিক ‘ফ্রেন্ড’ হলে তো অবশ্যই আমার হাড়মজ্জা দেখতে পান ফেসবুকের ওয়ালে (আর পাবেনই বা না কেন? আমি তো সবই পোস্ট করি) । যে মুহূর্ত থেকে আপনি আর আমাকে দেখতে পারবেন না, তার একটাই মানে। আপনি ব্লক খেয়েছেন আমার কাছ থেকে। যদ্দিন না আবার ব্লক খুলছি, আপনি আমাকে নিজ থেকে বাদও দিতে পারবেন না। প্রাথমিক পর্যায়ে এই চিন্তাটাই সবচেয়ে পীড়াদায়ক।
অনলাইন জীবনের একটা অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হচ্ছে মানসিক বিষাক্ততা, তা আপনি যে মাধ্যম যে উদ্দেশ্যই ব্যবহার করুন না কেন। টক্সিসিটি একটা নির্দিষ্ট লেভেল অতিক্রম করে গেলে বা একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে চললে সেখান থেকে যে কেউই বেরোতে চাইবে। এই বের হওয়ার একটা সহজতম টুল হচ্ছে ‘ব্লক করা’।
আধুনিক যুগে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সামাজিক নেটওয়ার্কগুলি আমাদের জীবনে অনেক গভীরে প্রবেশ করেছে। তবে এই যোগাযোগের মাধ্যমে কখনো কখনো আমরা ক্ষতিকর তথ্য, ব্যক্তি বা ধারণার সংস্পর্শে আসতে পারি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, ব্লক করার বিকল্পটি আমাদের জন্য একটি সুরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে।
মনোবিজ্ঞানী লারা ফেরিরোর মতে, "ব্লক করা হল স্ব-সম্মানের প্রথম নিয়ম যাতে অন্যরা আপনাকে ক্ষতি না করে। ব্লক করা হল স্ব-যত্নের একটি রূপ।" অর্থাৎ, ব্লক করে আমরা নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিচ্ছি এবং অন্যের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করছি।
শুরুতেই একটা কথা বলে রাখি। অনলাইনে কাউকে ব্লক এবং আনব্লক করা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আমার কথাটা খেয়াল করেন। কাজটা স্বাভাবিক। কিন্তু তার মানে এই না যে এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াও সবসময়ে অতি স্বাভাবিক হবে। সেই ব্যাপারটায় পরে আসছি। আমার কথাটা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাস্তব জীবনে কাউকে একদম ছেঁটে ফেলার প্রক্রিয়াটা যতটা জটিল এবং বিবেচনাসাপেক্ষ, অনলাইনে তাত ছিঁটেফোঁটাও নয়। দুটোর এটিকেট একমদই আলাদা।
তাই আজকের আলোচনা কেবল অনলাইনে ব্লক করার ওপর। এটা মাথায় রেখে বাকিটা পড়বেন।
ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা। আপনার প্রাক্তনকে ব্লক করা-না করার ব্যাপার কিন্তু এখানে আসবে না। এটা যদিও ব্লক কালচারের একটা বিশাল পার্ট এবং গুরুত্বপূর্ণও, সেই কারণে আলোচনার ক্ষেত্রও অনেক বিশাল। আপাতত সেটা উহ্য রাখছি।
বোঝার সুবিধার্থে লেখাটায় দুটো সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে। যে ব্লক করে তাকে বলব ‘ব্লককারী’। আর যাকে ব্লক করা হয়েছে তাকে আমরা ডাকব ‘ব্লকখোর’। এই দুটো কেবলই বোঝার সুবিধার জন্য, অন্য কোন জাজমেন্টাল পয়েন্ট থেকে না।
-------------------------------------------
ব্লক খেলে বুঝবেন কীভাবে?
এজন্য যে আইনস্টাইন বা জাদুকর পিসি সরকার হতে হবে, তা নয়। আপনি যদি নির্দিষ্ট এক বা একাধিক প্ল্যাটফর্মে আমাকে খুঁজে না পান অথচ আগে পেতেন, তার একটাই মানে। আপনি ব্লকড।
তবে…। হ্যাঁ, এইখানে একটা তবে আছে।
কোন নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে ব্লক করা হলেই যে বাকি সবকিছুতে ব্লক করে দেয়া হবে, ব্যাপারটা তা না-ও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আমি কাউকে ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামে ব্লক করতে পারি কিন্তু তাকে হোয়াটস অ্যাপে আর ইমেইলে স্বাভাবিক যোগাযোগের অবস্থায় রেখে দিতে পারি।
আমি এক দম্পতিকে চিনি যারা একই বাসায় থেকে বহু বছর কেউ কারও সাথে কথা বলেন না। কিন্তু সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে স্বাভাবিক আচরণ করেন। একই কাজ করেন নিজের সন্তানের সাথে যখন বাবা এবং মা হিসেবে কিছু করতে হয়। অর্থাৎ তাঁরা দাম্পত্য সম্পর্কে পরস্পরকে ব্লক করলেও সামাজিক সম্পর্কে করেননি।
-------------------------------------------
কেউ কেন ব্লক করে? কী তার সাইকোলজিই?
বললাম না আগে আমার সেই পরিচিত দম্পতির কথা? একই বেডরুমে থেকেও তারা পরস্পরকে নানান সময়ে নানান অনলাইন মাধ্যমে ব্লক করে। আবার কিছুদিন পর আনব্লকও করে। কাজেই বুঝতেই পারছেন, ব্লক করার কারণ জানার আগে এটা যে কত সাধারণ একটা ব্যাপার, সেটা মাথায় নিলেই কারণগুলো অনুধাবন করা সহজ হবে।
অনেক লোক মনে করেন যে সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্লক করা একটি বালসুলভ কাজ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি পরিপক্ক সিদ্ধান্ত হতে পারে। যখন আমরা কারও সাথে যোগাযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, তখন আসলে আমরা নিজেদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর সীমা নির্ধারণ করছি।
ব্লক কেন করে?
উত্তরটা এক লাইনেরঃ আপনি আপনার জন্য নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করার জন্য চাপাচাপি করছিলেন। আমি নিজেকে প্রটেক্ট করলাম। ব্যাস।
সীমানা না বলে ইংরেজি প্রতিশব্দটা বলি – বাউন্ডারি। একটা দম্পতির কথা ভাবুন। তারা পরস্পরের শরীরের প্রতিটি অংশ চেনে; অর্থাৎ সবচেয়ে গোপনীয় ব্যাপারগুলোতে তাদের মধ্যে অজানা কিছু নেই। কিন্তু সেই দম্পতিই কেউ কখনও কারও মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখতে যাবে না। এটাই বাউন্ডারি।
আরেকজনের কোন ব্যাপারটায় কতটুকু ঢুকতে পারবেন আর পারবেন না, সেটাই হচ্ছে তার বাউন্ডারি। এখন আপনি যদি বারবার সেটাকে অতিক্রম করতে চান তাহলে তো সে বাধা দেবেই। অনলাইনে সভ্যমতে এই বাধা দেয়ার একটা মাত্রই উপায় আছে। ব্লক করা।
এরপররও বোঝার সুবিধার জন্য আমরা মোটা দাগে চারটা কারণ চিহ্নিত করতে পারি।
ক। হ্যারাসমেন্ট বা অ্যাবিউজ করছে কোনভাবে কেউ অনলাইনে, সেটা আটকানোর জন্য। ব্লক করলে একইসাথে এই ধরণের হুমকিমূলক মেসেজ বা অনাকাংখিত কন্টেন্ট যেমন আটকে যায় তেমনি এর ফলাফল হিসেবে মানসিক শান্তির বোধটা বজায় থাকে।
খ। বিষাক্তধরণের মানুষকে নিজের অনলাইন জীবন থেকে সরিয়ে রাখা। এরা ক্রমাগত নেগেটিভিটি ছড়াতে থাকে যা মানসিক শান্তি নষ্ট করে।
গ। প্রাইভেসি, যেটা আগেই বলেছি। নিজের তথ্য নিরাপদ করা এবং একইসাথে অন্যকে জানানো যে, এইটুকুই তোমার সীমানে। এটা পেরিও না ভুলেও।
ঘ। অনাকাংখিত যোগাযোগ এড়াতেও ব্লক করে মানুষ। আমি চাইছি না একজনের সাথে কোনরকমের যোগাযোগ রাখতে যে কোন কারণেই হোক। কিন্তু অপরপক্ষ এটা বুঝতে চাইছে না বরং বারবার যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে। ব্লক করাই তখন একমাত্র সমাধান।
অনলাইনে কাউকে ব্লক করা হচ্ছে কোন একটা সিচুয়েশনের ওপর নিজের কন্ট্রোল আর পাওয়ার স্থাপন করা অথবা ফিরে পাওয়া। অন্যের টক্সিক এবং বিপজ্জনক আচরণ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য সুস্পষ্ট বাউন্ডারি তৈরি করা হয় এই ব্লক করার মাধ্যমে। কাউকে ব্লক করার একটাই অর্থ – তোমার উপস্থিতি আর আচরণ আমার পছন্দ হচ্ছে না কারণ এটি কোন না কোনভাবে আমার অনলাইন জীবনে (এবং কখনও কখনও অফলাইন জীবনেও) ক্ষতিকর একটা পরিস্থিতি তৈরি করছে। কাজেই ‘ব্লক করা’ এই কাজটা আসলে আমাদের মধ্যে রিলিফ আর এমপাওয়ারমেন্টের একটা অনুভূতি তৈরি করে সমস্তরকমের নেগেটিভিটির বিরুদ্ধে। আমিই আমার সম্পর্কীত সবকিছুর কন্ট্রোলে আছি – এই হলো ব্লক করার মোদ্দা কথা।
তবে এর বাইরেও ব্লকের ইন্টারেস্টিং কিছু সাইকোলজিক্যাল ব্যাখ্যা আছে।
যেমন অ্যাটেনশন সিক করা। কেউ হয়তো আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না। আমি তাকে ব্লক করে বোঝালাম যে আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, আপনি কাউকে লুকাতে চাইছেন আপনার পার্টনারের কাছ থেকে। কাজেই তাকে ব্লক করে দিলেন যেন তার সাথে আপনার অ্যাকটিভিটি আপনার পার্টনার দেখতে না পায়। এখানে অবশ্য একটা সমস্যাও আছে। আপনার পার্টনার যদি বুদ্ধিমান হয়ে থাকেন তাহলে প্রহম প্রশ্নই করবে যে একে কেন তোমার সার্চে পাওয়া যাচ্ছে না। কোন বিশেষ কারণ নিশ্চয়ই আছে যে তাকে হাইড করা হয়েছে।
আবার ব্লকড হওয়া ব্যক্তিও একে নিজের কাজে লাগাতে পারেন। কেউ যদি কোন সেলিব্রিটি দ্বারা ব্লকড হয় তাহলে সেটাই তার প্রচারের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাপারটা এমন যে, দেখ আমি কত ইম্প্যাক্টফুল ওই সেলেব্রিটির জীবনে যে সে আমাকে আটকাতে না পেরে ব্লক করেছে।
-------------------------------------------
ব্লক করার সুবিধা আছে কিন্তু।
যারা মনে করেন ব্লক করা আর সম্পর্কের মধ্যে পারমানবিক বোমা ফেলে সেটার ফলাফল দেখার অপেক্ষা করা একইধরণের, তাদের সাথে দ্বিমত আছে আমার। শুধু আমার না, পৃথিবীজুড়ে অনেক বাঘা বাঘা লোকেরই আছে। কেন, সেটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারবেন। তার আগে ব্লক করার সুবিধা আর অসুবিধাগুলো দেখে নেয়া যাক।
মোটাদাগে চারটা সুবিধা।
প্রথমতঃ ব্লক করলে আপনার মেন্টাল রিসেট হয়। আমাদের মস্তিষ্কে সারাক্ষনই নানানধরণের কন্টেন্ট আর তথ্য না চাইতেও ঢুকে পড়ছে হুড়হুড় করে। সেটা আটকানোর মোক্ষম উপায় এই ব্লক করা। জাস্ট একটা ক্লিক। কেল্লা ফতে! এরপর সময় নিয়ে নিজেকে রিসেট করে ঝরঝরে মনে আবার প্রবেশ করুন (সেই একই ভিশ্যাস সার্কেলে আর কি)।
দ্বিতীয়তঃ ব্লক করতে পারা আবেগীয় নিয়ন্ত্রণ দক্ষতার প্রকাশ করে। আপনি ব্লক করতে পারছেন মানে হলো নিজের মনের চাওয়াপাওয়ার ওপর আপনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এজন্যই ব্লকিং ইজ আ পাওয়ার মুভ। মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিই সুচিন্তিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্লক করতে পারেন।
তৃতীয়তঃ আত্মন্নোয়নে মনোযোগ বাড়ায় যখন আপনি ব্লক করেন কাউকে বা কোনকিছুকে। ব্লক করলে নিজের প্রায়োরিটি কাজটা করার জন্য সময় ও সুযোগ বেরিয়ে আসে। ধরেন, আপনি বিকেলে জিম-এ যাবেন বলে ঠিক করা। ঠিক সেই সময়ের আশেপাশেই এক সুন্দরী বান্ধবী অফিসফেরতা কল দেয় আপনাকে। আপনিও এড়াতে পারেন না। গল্পে গল্পে জিমে যাওয়া মায়ের ভোগে। সেক্ষেত্রে যদি অনুরোধ করেও ফল না পান অথবা বান্ধবীর গলা শোনার লোভ সামলাতে না-ই পারেন, তাইলে ব্লক মেরে দেয়াটাই ভালো। যেহেতু জিমে যাওয়া আপনার প্রায়োরিটি, মেয়েদের সাথে গল্প করা নয়। ফোকাস, ফোকাস।
চতুর্থতঃ তাৎক্ষনিক এঁড়ে তর্ক এড়াতে ব্লকের থেকে কার্যকরি ওষুধ আর নেই। আলোচন গরম হতে হতে অএঙ্ক আগেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বুঝতে পারছেন। এবারে গালাগালি শুরু হবে হবে করছে। ব্লক করুন। এর ফাঁকে যে সময়টা পাবেন তাতে দুপক্ষই ঠান্ডা হবে, নতুন করে ভাবনাচিন্তার সুযোগ পাবে। তাতে আখেরে লাভ বৈ ক্ষতি নেই কোন।
-------------------------------------------
গ্যাঞ্জামও আছে। সেগুলো কী?
এতক্ষন গেল ব্লক করার উপকারী দিকগুলো। কিন্তু খালি আমই খাবেন, আঁটি থাকলে রাগ করবেন – তা কি হয়? তাহলে এর ‘ভাল্লাগে না’ খারাপ দিকগুলোও একটু জানি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখানেও মোটাদাগে চারটা কনসিকোয়েন্স পাবেন।
এক, অনর্থক ভুল বোঝাবুঝির শংকা। যেহেতু ব্লক করে একটা দেয়াল তুলে দেয়া হয় যোগাযোগের মধ্যে, কাজেই এমনসব ইমোশন তৈরি হতে পারে যেটা হয়তো পুরো ব্যাপারটা জানা থাকলে হতো না। এছাড়া ইমোশনের তীব্রতা বাড়তে পারে, নানানধরণের যুক্তিকল্পনা মাথায় জন্ম নিতে পারে যেগুলোর আসলে কোন অস্তিত্বই নেই। কিন্তু ব্লক থাকার কারণে সেগুলো ভেরিফাই করারও সুযোগ থাকে না।
দু নম্বরে আসে পলায়নপর মনোবৃত্তির উত্থান। যুক্তি এবং নিজের সক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই বলে সিচুয়েশন ফেস করতে পারছেন না। তাই পালাচ্ছেন, অর্থাৎ ব্লক করছেন। এভাবেও ভাবতে পারে কেউ।
তৃতীয়তঃ অনলাইনে ব্লক করা ব্যাপারটা কিন্তু ডিজিটাল ছাপ রেখে দেয় আজীবন, এমনকি আনব্লক করার পরও। তার মানে, অনেক বছর পরেও বোঝা যাবে, ওই সময়টায় আপনার মানসিক সক্ষমতা কম ছিল। কারণ মানুষ সাধারণভাবে বোঝে যারা হাই ভ্যালু পার্সন, তারা ধীরস্থিরভাবে আত্মবিশ্বাসের সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করে, কোন ডিজিটাল ব্যারিকেড তুলে দিয়ে না।
সবশেষে চার নম্বর যে ব্যাপারটা হয় তা হলো দীর্ঘমেয়াদী বিশ্বাসযোগ্যতা। যতই লেজিট কারণ থাকুক না কেন, আপনি কাউকে ব্লক করলে সেটার একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বেই সম্পর্কে। সম্পর্ক তৈরিই হয় বিশ্বাস আর স্বচ্ছতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ব্লক করার ব্যাপারটাকে এক ধরণের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে যদি দেখা হয়, তাহলে আপনি দোষ দিতে পারেন না।
-------------------------------------------
ব্লকখোর কেমন আচরণ দেখাতে পারে?
সেটা একদম পিনপয়েন্টে বলা মুশকিল। অনেকগুলো ফ্যাক্টরভেদে আচরণও আলাদারকমের হয়। তবে সাধারণভাবে এই কয়েকটা কাজ একজন ব্লকড পারসন করার টেম্পটেশন অনুভব করতে পারেন এবং অনেক ক্ষেত্রে করেও ফেলেন।
১। ব্লক করা ব্যক্তিটিকে অনলাইনেই এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা। অনলাইন না হলে অফলাইনে জিজ্ঞেস করা।
২। নিজেও অন্য মাধ্যমগুলোতে ওই ব্যক্তিকে ব্লক করা।
৩। সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট দেয়া। সাধারণত এই সব পোস্টে উল্লেখ্য ব্যক্তিটির পরিচয় গোপন রেখে অনেকটা ঠারেঠোরে জানানো হয় যে ব্লক করা ব্যক্তিটি আসলে কতটা অবিবেচক অথবা নিকৃষ্ট।
৪। জনে জনে বলে বেড়ানো যে অমুক আমাকে ব্লক করেছে।
৫। যিনি ব্লক করেছেন, তাকে নিয়ে সরাসরি বিষোদগার করা – অনলাইন বা অফলাইনে।
এই শেষোক্ত ব্যাপারটা এক্সট্রিম অ্যাকশন। এরকমই যে করবে সবাই, ব্যাপারটা তা-ও না। মানুষভেদে একেকরকম। কেউ হয়তো পাত্তাও দিল না সে ব্লকড হয়েছে, নাকি হয়নি।
-------------------------------------------
ব্লকখোরের রিয়্যাকশন এবং সাইকোলজি
যদি বলি যে আমাকে কেউ ব্লক করলে সেটা টের পাওয়ার পর আমার খুব অপমান বোধ হয় না তাহলে এর থেকে মিথ্যা কথা কমই হয়।
অনুমান করছি কাছাকাছি অনুভূতি হয় আপনারও। সেই সাথে রাগও হতে পারে যদি ব্লক কেন হলেন সেটার কোন কারণ না জানা থাকে।
আচমকা কারণ না জানা অবস্থায় ব্লকড হলে অনেকে মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত হতে পারেন, এমনকি ভেঙ্গেও পড়তে পারেন। অনেক সময় এক ধরণের ভীতিও কাজ করে। তাছাড়া ব্লক হয়েছেন – এই ব্যাপারটা জেনে ফেললে কেউ কেউ ব্লকড ব্যক্তিটিকে নানানভাবে ট্রোল করতে পারেন বা মানসিকভাবে নিপীড়ণও করতে পারেন।
ব্লক হওয়ার পর প্রথমেই তিনটা অনুভূতি পরপর খেলে যায় মাথায়; প্রত্যাখ্যাত হওয়া, সেখান থেকে আচমকা রাগ, আর তার সাথে ভয়ানক বিভ্রান্তি – কেন আমার সাথে এটা হলো? আমার ভূল কী ছিল যে আমাকে একদমই সে জীবন থেকে সবভাবে ছেঁটে ফেলল? এগুলো হতো তাৎক্ষণিক অনুভূতি। এরপরের ধাপে লজ্জা এবং বিব্রতবোধ ছেয়ে ফেলে মনকে। কারণ ব্লকড ব্যক্তিটির মন তখন পরিষ্কার বুঝতে পারে, কেউ একজন খুব ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়ে তার জীবন থেকে আমাকে ছেঁটে ফেলেছে।
এতক্ষন যা বললাম সেটা খুব স্বাভাবিক ফিডব্যাক। এরকম না হলে বুঝতে হবে আপনি অনেক উঁচু দরের মানুষ। সেটা কীরকম বোঝানোর আগে বলতে হবে ব্লকড হওয়ার পর গড়পড়তা মানুষের রিয়্যাকশন কী ধরণের হয়।
-------------------------------------------
আচ্ছা, আগে থেকে জানাতে হবে? নাকি পরে বুঝিয়ে বলব?
এই দুটো প্রশ্ন এখানে অতি প্রাসঙ্গিকভাবেই এসে যায়। ব্লক করার আগে কী জানানো উচিৎ যে ব্লক করতে যাচ্ছি? আর ব্লকড ব্যক্তিটিকে কি জানানো দরকার যে তাকে কেন ব্লক করা হয়েছে?
এটা একান্তভাবেই নির্ভর করে যিনি ব্লক করেছেন, তার ইচ্ছার ওপর।
ব্লকড ব্যক্তিটি তার জীবনে কতটুকু ইম্প্যাক্ট ফেলে সেটা বিবেচনা করে উনি জানাতেও পারেন আবার যদি অযাতিচ যন্ত্রণা এড়ানোর জন্য ব্লক করে থাকেন, তাহলে তো জানানোর প্রশ্নই ওঠে না। এবং অবশ্যই তিনি বাধ্য নন এর ব্যাখ্যা দিতে বা জাস্টিফাই করতে নিজের কর্মকান্ডের।
তবে ব্যাপারটা যদি প্রাথমিক ওয়ার্নিং টাইপের কিছু হয় তাহলে ব্লকড ব্যক্তিটিকে ব্যাপারটা জানানো যেতে পারে। এটা হলো তাকে শুধরে গিয়ে আরেকবার সুযোগ নিতে দেয়া। সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিটিকে জানাতে হবে কেন ব্লক করা হলো, কী শর্তে ব্লক খোলা হবে এবং সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে আবার কী অ্যাকশন নেয়া হবে। মোদ্দা কথা হলো নিজের কাছে পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়ে থাকা এবং অপরপক্ষকেও যথাযথ সেকেন্ড চান্স দেয়া।
তবে এটিকেট এক্সপার্টরা কিন্তু আগে থেকে না জানানোর ব্যাপারটা এটিকেটের ব্যত্যয় হিসেবে দেখছেন না। তাদের কথা হলো দরকরা হলে একদম ব্লক করে দিন। কিচ্ছু জানাতে হবে না। কারণ তাকে ব্যাখ্যা দেয়ার কোন দায়বদ্ধতা আপনার নেই, ছিলও না। সো জাস্ট ডু ইট।
-------------------------------------------
ফেঁসে গেলে ব্লকখোরকে কী অজুহাত দেবেন, ভেবেছেন?
কিছু নাছোড়বান্দা ব্যক্তি আছেন যিনি অনলাইন, অফলাইন যেখানেই ব্লককারীকে খুঁজে পান, সরাসরি জিজ্ঞেস করে থাকেন উনি তাকে ব্লক করেছেন কিনা (ন্যাকা। যেন জানে না) এবং করে থাকলে, কেন করেছেন।
এই ধরণের নাছোড়বান্দা প্রাণপ্রিয় ব্লকখোরদের জন্য ব্লকাররা সাধারণত দু ধরনের অজুহাত বা ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। সিরিয়াস এবং অতি সিরিয়াস।
সিরিয়াস অজুহাত
১। তোমার পোস্টগুলো (এবং সত্যি বলতে তুমিও) খুবই বিরক্তিকর
২। আমাদের মতামত একদমই আলাদা। চাই না অন্য মতের কিছু দেখতে।
৩। তোমার কাজকারবার আমার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।
অতি সিরিয়াস ব্যাখ্যা
ক। তাই নাকি? বলো কী!! তাইলে কনফার্ম আমার আইডি হ্যাক হইসে।
খ। তাই নাকি? বলো কী!! স্ক্রোল করতেছিলাম। আঙ্গুল স্লিপ করে মনে হয় ব্লক হয়ে গেছ।
গ। তাই নাকি? বলো কী!! এইবার বুঝলাম। আমার বাচ্চাটা মোবাইল নিয়ে খেলতেছিল। মনে হয় উলটাপালটা ব্লক করে ফেলছে।
পাঠক, মনে রাখবেন। অতি সিরিয়াস ‘ব্যাখ্যা’ দেয়ার ক্ষেত্রে শুরুতেই ‘তাই নাকি? বলো কী!!’ এই লাইনদুটো বলতে হবে। নইলে আপনি বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবেন।
-------------------------------------------
একজন ম্যাচ্যুরড ব্লকখোরের প্রত্যাশিত ভাবনা ও আচরণ
একটা সিম্পল ব্যাপার মাথায় রাখলেই সব উত্তর আপসে বোঝা যাবে। ব্যাপারটা হচ্ছে, ব্লক ব্যাপারটা বিয়ের দাওয়াত পাওয়ার মতো করে দেখলেই হয়। আপনি দাওয়াত পাননি কারণ আপনি লিস্টে ছিলেন না। কেন ছিলেন না? এক লক্ষ একটা কারণ থাকতে পারে। কিন্ত সবচেয়ে সহজ কারণটা হচ্ছে, হোস্টকে অনেক কিছু বিবেচনায় রেখে লিস্ট বানাতে হয়। কাজেই এই ধরণের সবকিছুকে পার্সোন্যালি নেয়ার কিছু নেই।
কেউ যদি আপনাকে ব্লক করে তাহলে অবশ্যই যেটা করবেন না তা হলো ওই আগের বলা পাঁচটা আচরণ।
আপনার মাথা হয়তো বারবার টেম্পটেড হবে ওগুলোর এক বা একাধিক করার জন্য। কিন্তু এখানেই আপনার আসল হেকমতিটা দেখাতে হবে। জাস্ট চুপচাপ থাকুন। নিজের একান্ততম ব্যক্তিটিকেও জানাবেন না যে আপনি কারও দ্বারা ব্লকড হয়েছেন। বরং নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করুন।
১। আমার কোন আচরণের জন্য ব্লক করেছে? এই আত্মবিশ্লেষণ খুব জরুরি। দেখা যাবে আপনি হয়তো নিজের আচরণের ব্যাপারে এমন কিছু আবিষ্কার করে ফেললেন এই চিন্তার সময়টায় যেটা রেকটিফাই করলে নিজেরই উপকার আখেরে।
২। আমাকে কি আগে কোন ইঙ্গিত দিয়েছিল? দিয়ে থাকলে সেটা কী? আর আমি কেন খেয়াল করিনি? আর খেয়াল করে থাকলে কেন গুরুত্ব দেইনি?
৩। সব জায়গা থেকে ব্লক করেছে, নাকি কোন পার্টিকুলার মাধ্যমে থেকে? এই মাধ্যমটাতেই কেন?
৪। আমার মনে এখন কী অনুভূতি চলছে? যদি রাগ, দুঃখ, অপমান - এরকম কিছু চলে তাহলে এই অনুভূতি যে ফিল করছি সেটা কতটুকু যৌক্তিক?
৫। আমার কি শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আত্মীক, মনস্তাত্ত্বিক কোন ক্ষতি সরাসরি হয়েছে? না হয়ে থাকলে তো মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আর যদি হয়েই থাকে তাহলে সেটা কী আদৌ কোন ক্ষতি? নাকি আমি ভাবছি ক্ষতি হিসেবে?
৬। আমি কি ব্লককারীর কাছে জানতে চাইব কেন ব্লক করেছে? সম্ভবত না। কারণ তাতে দুজনেরই বিব্রত হওয়ার আশংকা। আর ব্লক করার মানেই তো সে একটা দেয়াল তুলে দিল যোগাযোগের আটকানোর জন্য। এখন যদি আমি আবার সেই জিজ্ঞেসই করতে গেলাম তাহলে ব্যাপারটা হবে এরকম যে, দেয়াল তোলার পর আমি দরজা খটখট করে জানতে চাইছি এই দেয়ালটা কেন দেয়া হলো। যে যোগাযোগ বন্ধ রাখতে চাইছে, তাকে তার প্রাইভেসি বজায় রাখতে দেয়াটাই ম্যাচ্যুরড আচরণ।
৭। আমি কি এখন তাকে অন্য মাধ্যমগুলোতে ব্লক করে প্রতিশোধ নেব?
ওয়েল, এই লাস্ট প্রশ্নটা উত্তর একেকজনের কাছে একেকরকম। তবে আমি এক্ষেত্রে কী ভাবি, সেটা বলতে পারি আপনাদের।
ব্যাপারটা যেহেতু কারও ব্যক্তিগত প্রাইভেসি প্রটেক্ট করা, সেক্ষেত্রে তার প্রাইভেসিবোধকে সম্মান দেখাই। এখানে প্রতিশোধ নেয়ার কোন চিন্তাই মাথায় আসে না আমার। আর যদি সর্বোচ্চ খারাপ চিন্তাটাও করি যে কাজটা আমাকে অপমান করার জন্য করেছে, তাতেও প্রতিশোধ নেয়ার চিন্তা আসে না। আমাকে চাইলেই তো একজন অপমান করতে পারে না যদি না আমি নিজে সেইরকম কিছু করে না থাকি বা আমি সেইরকম অনুভব না করি। আমার ম্যাচুরড আচরণই বরং তাকে লজ্জায় ফেলবে একদিন এবং বাকিদের চোখেও দেখিয়ে দেবে, মানবিকভাবে কে উন্নত। শতকরা নিরানব্বইভাগ ক্ষেত্রে ব্লককারীই একদিন ক্ষমাপ্রার্থনা করে। বাকি একভাগ নিয়ে মাথা ঘামানোর আসলেই কিছু নেই।
মনে রাখবেন, আমাদের চিন্তার গতিবেগ খুবই ফাস্ট, তাই না? কাজেই অভ্যাস হয়ে গেলে এই পুরো থেরাপিটা নিজের ওপর চালাতে সময় লাগবে খুব কম।
চিন্তাভাবনার এই পুরো সেশনটা পড়তে যতক্ষন লাগলো, করতে ততক্ষন লাগবে না। আর ব্লককারী আপনার কাছে যতই অগুরুত্বপূর্ণ হোন না কেন, ব্লক খেয়ে গেলে এই থেরাপিটা নিজের ওপর চালানো দরকার। কারণ আপনি ব্লককারীকে বিশ্লেষণ করছেন না বরং ব্লকড হওয়ার কারণে নিজেকে বিশ্লেষণ করার একটা দূর্লভ সুযোগ পেয়েছেন। এই সুযোগ হারাবে একমাত্র বোকারা।
-------------------------------------------
আনব্লক করার এবং হওয়ার পর আচরণ কেমন হয়?
যিনি আনব্লক করেন আর যাকে আনব্লক করা হয় – দুজনের প্রতিক্রিয়া আলাদা হতে বাধ্য। প্রথমে দেখা যাক ব্লককারী কেমন অনুভব করতে পারেন।
স্বাভাবিকভাবেই আনব্লক করার সিদ্ধানটি একটি সাইকোলজিক্যালি চার্জড ডিসিশন। ব্লককারী তখন মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত রিকনসাইল ক্রয়ার জন্য কারণ যে কনফ্লিক্ট তাদের মধ্যে ছিল, সেটা ‘তার দৃষ্টিতে’ মিটে গিয়েছে। আনব্লক করার একইসাথে এই মেসেজটা যায় যে, ব্লককারী অপরপক্ষকে ক্ষমা করে ভুলে গিয়ে সামনের দিকে সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক।
কিন্তু ব্লকড ব্যক্তিটি কী ভাবেন? উনি কি এতোটাই ইতিবাচক মনোভাব দেখান?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওই আগের যেটা বললাম, অর্থাৎ ব্লককারী আনব্লক করার সময় যা ভাবেন এবং অনুভব করেন, আনব্লকড ব্যক্তিটিও সেইরকম মেসেজই পাবেন। অর্থাৎ আড়ি থেকে ভাব হয়ে গেল। এবারে আবার আমরা আগের মতো।
কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আনব্লক করার অন্য একটা অর্থও আনব্লকড ব্যক্তিটি পারসিভ করতে পারেন। সেটা কী?
সেটা হলো উনি নিজেকে শক্তিশালী এবং ডমিনেটিং ভাবতে পারেন। মানে আমি এমনই হ্যাডাম যে ব্যাটা ব্লক করে রাখার সাহস পায়নি। এর প্যাসিভ অর্থ হলো ব্লককারী একজন দূর্বল এবং ভালনারেবল ব্যক্তি। সাধারণত নিজের থেকে সামাজিক অবস্থানে বা ক্ষমতার বিচারে ওপরে কাউকে ব্লক করে আনব্লক করলে এই চিন্তাটা আসতে পারে। ব্লককারী প্রকান্তাররে স্বীকার করে নিলেন যে তার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল তাই অপরপক্ষের দাবীর কাছে (মানসিক চাপ) নতিস্বীকার করলেন। এর ফলে ব্লকড ব্যক্তিটি তার আগের আচরণের জাস্টিফিকেশন খুঁজে পাবেন এবং সেই আচরণ আরও বাড়িয়ে দেবেন – এই সম্ভাবনা প্রবল।
সুতরাং যা-ই করেন, আনব্লক করার মাধ্যমে যেন এই শেষোক্ত মেসেজটা আনব্লকড ব্যক্তিটির কাছে না যায় -এটাই মাথায় রাখা জরুরি।
এক্ষেত্রে আপনি একদমই স্বাভাবিক আচরণ করতে পারেন যেন ব্যাপারটা ঘটেইনি। কোন সুবিধামতো সময়ে দুজনে ব্যাপারটা নিয়ে অ্যাডাল্টের মতো আলোচনাও করতে পারেন কোন বাড়তি ইমোশন্যাল সার্জ না দেখিয়ে। আপনিও অপরপক্ষকে জানিইয়ে দিতে পারেন এরকম পরিস্থিতিতে আপনি কী ভেবেছেন এবং তারও আগামীতে কী করা দরকার এরকম কোন ঘটনা ঘটাবার আগে। সেই সাথে জানিয়ে দিন, আগামীতে আপনার প্রতিক্রিয়া কী হবে যদি ব্যাপারটা আবার ঘটে।
অর্থাৎ পুরো আলোচনাটাই যেন হয় অব্জেক্টিভ মোডে এবং একদম পরিষ্কার ভাষায়, তা ওপাশের ব্যক্তিটি যে-ই হোন না কেন।
-------------------------------------------
ফাইনালি কী বুঝলাম?
"ব্লক করা কোন সমাধান নয়। আলোচনা করে মিটিয়ে নেয়া ভালো" - শেষটায় এসে অবশ্যই এরকম ঈশপমার্কা উপদেশ দেব না। অবশ্যই পরিস্থিতি বিচারে ব্লক করার ব্যাপারটা একটা খুবই কার্যকরি সমাধান, নইলে এই টুল বানানোই হতো না।
আমাদের জীবনে প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্ক ভেঙে পড়া এক অত্যন্ত কঠিন অভিজ্ঞতা। এমন সময় আসে যখন আমাদের নিজেদের সুরক্ষা এবং মানসিক শান্তির জন্য এই সম্পর্ক থেকে দূরে সরে আসা জরুরি হয়ে পড়ে। এই ক্ষেত্রে, প্রিয়জনকে ব্লক করা একটি কঠিন কিন্তু কখনও কখনও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত হতে পারে।
কাজেই ব্লক করা কোনো হালকা সিদ্ধান্ত নয়। এটি একটি স্ট্র্যাটেজিক পদক্ষেপ যা নির্ভুলতা এবং স্পষ্টতার সাথে নেওয়া উচিত। এটি এমন একটি সরঞ্জাম, আমাদের আবেগগত টুলকিটের একটি অংশ, যা আমাদেরকে নিজেদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান তৈরি করতে সাহায্য করে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্লক করা শুধুমাত্র কাউকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য নয়, বরং নিজেকে নিরাময় করার এবং বৃদ্ধির জন্য জায়গা তৈরি করার একটি উপায়। এটি আমাদেরকে নিজেদের প্রতি আরও ভালোবাসা এবং যত্ন নেওয়ার সুযোগ দেয়।
আর ঠিক এই জন্যই ব্লক করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, আমাদের সুবিধা এবং অসুবিধা ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে। এটি একটি শক্তিশালী সরঞ্জাম, এবং যদি এটি ভুলভাবে ব্যবহৃত হয় তবে তা ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই, এটি বুদ্ধিমানের সাথে ব্যবহার করা জরুরি।
ব্লক করার মাধ্যমে আমরা নিজেদের জন্য একটি সীমানা স্থাপন করি। এটি আমাদেরকে বোঝায় যে, আমরা নিজেদের যত্ন নেওয়ার জন্য কী করতে ইচ্ছুক। এটি অন্য ব্যক্তির প্রতি অসম্মান নয়, বরং নিজেকে সম্মান করার একটি চিহ্ন। ব্লক করা একটি শেষ নয়, বরং একটি নতুন শুরুর সূচনা হতে পারে। এটি আমাদেরকে নিজেদেরকে পুনর্নির্মাণ করার এবং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠার সুযোগ দেয়।
মনে রাখবেন:
• ব্লক করা একটি সিদ্ধান্ত: এটি কোনো খেলা নয়, তাই এটি ভালোভাবে ভেবে চিন্তে করা উচিত।
• নিজেকে প্রথমে রাখুন: আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
• নতুন শুরুর জন্য প্রস্তুত থাকুন: ব্লক করা আপনাকে নতুন সম্পর্ক গড়ার এবং নিজেকে আবিষ্কার করার সুযোগ দিতে পারে।
শেষ করি একটা কৌতুক দিয়ে।
এক গ্রামের অল্পবয়সী এক কুমারী মেয়ে হটাৎ করে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেল । মুরুব্বিরা একত্র হয়ে আলোচনা করে প্রথম অপরাধ হিসেবে তাকে ক্ষমা করে দিয়ে বললঃ আর এ ধরনের ভুল করবে না । মাসছয়েক পর সে আবার প্রেগন্যান্ট হয়ে গেল । এবার তাকে হাল্কা শাস্তি দিয়ে চূড়ান্তভাবে শাসিয়ে দেওয়া হল । কিন্তু কয়েকমাস পর আবার সে একই ভুল।
এবার আর ক্ষমা করা যায় না । বিচারক কঠিন স্বরে জানতে চাইলেন, বারবার সতর্ক করার পর ও তুমি কেন এমন ভুল করছো ?
মেয়েটি বললঃ আমি কাউকে না করতে পারি না যে।
বহুলচর্চিত (এবং বস্তাপচা) হলেও এই টপিকের সাথে কি কোন কানেকশন পাচ্ছেন? পেলে তো ভালোই। আর না পেলে? প্লিজ, আমাকে ব্লকখোর বানিয়ে দিয়েন না।
©somewhere in net ltd.