নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক কিছু লিখতে চেয়েছিল। কিন্তু লেখাগুলো খুঁজে পায়নি। অনেক কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু সেগুলো শোনারও সময় কারও ছিল না

মন থেকে বলি

Stay Hungry. Stay Foolish.

মন থেকে বলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিডলাইফ ক্রাইসিস: বাঁচতে হলে জানতেই হবে

১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০০



"ধুর ছাই!
কিচ্ছু ভাল্লাগে না।
বা**, কী করলাম এতোদিন।
সব ফালতু।"


ক্যালেন্ডার কী বলছে? চল্লিশ পেরিয়েছে?

তাহলে দশটা মিনিট দিন। কারণ ব্যাপক সম্ভাবনা ৯৯% যে এই মুহূর্তে আপনি 'জীবনমধ্যাহ্নের টানাপোড়েনে' আছেন এবং সেটা সংকট হয়ে উঠছে আপনার অজান্তেই।

জীবনমধ্যাহ্নের টানাপোড়েন - খটোমটো বাংলাটার ইংরেজি পরিভাষাটা বেশি পরিচিত হওয়ার কথা; 'মিডলাইফ ক্রাইসিস'। এই মানসিক সংকটটা সময়মত চিহ্নিত করে সামাল দিতে না পারলে সমূহ বিপদ।

গুগলে একবার Midlife Crisis লিখে সার্চ দিয়ে দেখেন। ০.৫৬ সেকেন্ডের মধ্যে আপনার সামনে ২৯০,০০০,০০০টা ফলাফল হাজির করবে।

অনেকদিন ধরেই ইচ্ছে ছিলো বিষয়টা নিয়ে লিখবার। চেষ্টা থাকবে যথাসাধ্য আমাদের বোঝার মতো করে লিখতে। আমার বিশ্বাস, যে বয়সটা আমরা পার করছি, তাতে এক্ষুনি মিডলাইফ ক্রাইসিস নিয়ে একটা স্বচ্ছ ধারণা থাকাটা খুবই জরুরি।


✅ ব্যাপারটা আসলে কী?


জীবনের একটা পর্যায়ে, মানে এই মধ্যবয়সে এসে মানুষ নিজের আত্মপরিচয় (সেলফ আইডিন্টিটি) এবং আত্মবিশ্বাসের (সেলফ কনফিডেন্স) মধ্যে একটা দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। এক পর্যায়ে এটাই মানসিক সংকট তৈরি করে।

মিডলাইফ ক্রাইসিস আমাদের জীবনের একটা অলমোস্ট অবধারিত পর্যায়। অনেক মনোবিজ্ঞানী একে সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার বলেন যদিও বিতর্কও আছে।

এই মিডলাইফ আসলে কোনটা?

সাধারণত ৩৫ - ৫৫ বছরের রেঞ্জটাকে বোঝায়। আবার কেউ কেউ একে ৪৫ থেকে ৬৫'র মধ্যেও বেঁধেছেন।

এবারে আসল প্রশ্ন: কেন একে ক্রাইসিস বলে?

কারণ মানুষ এই অবস্থাতে জাস্ট আবেগপ্রবণতার বশে এমন অনেককিছুই করে ফেলে, যেটা স্বাভাবিক সময়ে হয়তো কখনই করতো না। এই যেমন 'ভাল্লাগে না' বলে চাকরিটা ছেড়ে দিলো, কি একটা দামী কিছু কিনে ফেললো বা বাড়িটা বেচে দিলো, নয়তো পার্টনারকে ডাম্প করে দিলো। জাস্ট ইচ্ছে হলো, তাই।

এই 'অস্বাভাবিক আচরণের' ব্যাখ্যা তো অবশ্যই আছে। সেজন্যই তো এই লেখাটা।

ও হ্যাঁ। মিডলাইফ ক্রাইসিস - এই শব্দগুচ্ছ প্রথম ব্যবহার করেন এলিয়ট জ্যাক্যুয়াস নামের একজন ক্যানাডিয়ান সাইকোঅ্যানালিস্ট, সমাজবিজ্ঞানী এবং ম্যানেজমেন্ট কন্সালট্যান্ট, সেই ১৯৬৫ সালে।


✅ কাদের হয়? কখনই বা হয়?


নারী, পুরুষ নির্বিশেষে; যারা কিনা ওই বয়সসীমা পেরোচ্ছেন।

মূলতঃ এই বয়সটাতেই আমরা নিজেদের এতোদিনকার জীবনকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা শুরু করি। আর ইদানিংকার অন্তর্জালিক জীবনযাত্রায় প্রচন্ডভাবে অভ্যস্ত আমাদের জন্য মিডলাইফ ক্রাইসিস ট্রিগার করবার মতো জিনিস ভুরি ভুরি

✅ কী এর ব্যাখ্যা?


এটাই সবচেয়ে ইন্টরেস্টিং পয়েন্ট। বোঝার পর আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি।

এর আলোচনাটা শুরু করেছিল ফ্রয়েডিয়ানরা। তাদের মতে মাঝবয়সে কমবেশি প্রতিটা মানুষের চিন্তাভাবনা তাড়িত হয় অবধারিত মৃত্যুচিন্তার ভীতি থেকে। ব্যাপারটা এভাবেও মেলানো যায়; তরুণদের রক্ত গরম, তারা যে কোন ঝুঁকি নিতে পারে কারণ মৃত্যু সম্পর্কে তাদের ভীতি নেই বরং রোম্যান্টিসিজম আছে। কিন্তু যখন এই ভীতিটাই সবকিছুর আগে চলে আসবে, তখন হুইমজিক্যাল এবং ইর‍্যাশনাল যে লক্ষণগুলোর কথা বললাম, সেগুলো বেরোবেই।

মানুষ এই বয়সে এসে পরের প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু করার তাড়ণা অনুভব করে। অর্থাৎ জীবনের গতিশীলতা। একইসাথে অবধারিত মৃত্যুভীতি তাকে স্থবির করে দেয়। ভাবে, কী লাভ? সময় তো শেষ। কিছুই তো করতে পারলাম না।

গতিশীলতা আর স্থবিরতার পরস্পরবিরোধী মানসিক দ্বন্দ্ব তাকে চাপে ফেলে দেয় মানুষকে আর জন্ম হয় মিডলাইফ ক্রাইসিসের।

কার্ল জাং এর মতে এই বয়সে মানুষ নিজের স্বাতন্ত্র সম্পর্কে আত্মসচেতন হয়ে ওঠে আর সেটার পিছনে থাকে এতোদিনের অভিজ্ঞতা। দুয়ে মিলে মনের মধ্যে জন্ম নেয় নানান ধরণের প্যারাডক্স।

এগুলো সবই মনস্তাত্বিক ব্যাখ্যা। ইন্টারেস্টিংলি, এর একটা ফিজিওলজিক্যাল ব্যাখ্যাও আছে।

সেটা কী?

মিডলাইফ ক্রাইসিস আসলে একটা রিয়্যাকশান।

পুরুষরা ভাবে, এই যে তাদের সঙ্গিনীদের কিছু বছরের মধ্যেই মেনোপজ হতে যাচ্ছে, যার ফলে তাদের জন্মদান ক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে এবং সম্ভবত স্বাভাবিক যৌনেচ্ছাও, এটাই পুরুষদের জেনেটিক্যালি ইনফ্লুয়েন্স করে অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সী নারীর প্রতি আকৃষ্ট হতে।

অন্যদিকে নারীরাও রজোঃনিবৃত্তির প্রাক্কালে অনুভব করতে পারে যে তার সঙ্গীটি অন্য নারীতে আকৃষ্ট হতে যাচ্ছে। সে-ও তখন আরেকজনের সাথে জড়িয়ে পড়তে মরিয়া হয়ে ওঠে। এই পর্যায়ে নারীর কাছে মুখ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় স্ত্রী এবং মা হিসেবে তার সাফল্যের ভ্যালিডেশন। নতুন সঙ্গী তাকে সেই ভ্যালিডেটটা করে। ওই যে জাং বলেছেন, আত্মসচেতনতা, সেটাই।

ব্যক্তিগতভাবে এই ব্যাখ্যাটা আমার কাছে কোন মিডলাইফ ক্রাইসিস কেনো হয়, তার স্বপক্ষমতবাদ মনে হয়নি। বরং পুরুষদের মিডলাইফ ক্রাইসিসের যে একটা আচরণ (অর্থাৎ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া), সেটার ব্যাখ্যা বলে মনে হয়েছে।


✅ কীভাবে বুঝবেন ক্রাইসিস চলে এসেছে?


'আর্কাডিয়ান কাউন্সিলিং' এর মতে মিডলাইফ ক্রাইসিসের কয়েকটা স্পষ্ট লক্ষণ আছে। এর এক বা একাধিক যদি নিজের বা আপনার সঙ্গীর মধ্যে লক্ষ্য করে থাকেন, তাহলে সম্ভাবনা প্রায়শতভাগ যে সেই ব্যক্তি মিডলাইফ ক্রাইসিসের মধ্যে পড়ে গিয়েছে।

আরেকটা কথা, মিডলাইফ ক্রাইসিস আর মিডলাইফ ডিপ্রেশন কিন্তু আলাদা ব্যাপার, যদিও দুটোর মধ্যে ভালোরকম কোরিলেশন আছে।

লক্ষণগুলো জানা যাক।


- আপনার মুড সুইং হবে। হঠাৎ রেগে যাওয়া অথবা 'কাভি খুশি কাভি গ্যম' এর সিকোয়েন্স আসবে খুব দ্রুত।

- সারাক্ষণই অন্যদের 'সুখী' (!!) জীবনের সাথে নিজের 'অসুখী' (!!) জীবনটার তুলনা করে আরও বিষন্ন হওয়া থেকে নিজেকে আটকাতে পারবেন না।

- ডিপ্রেশন (বিষন্নতা) এবং অ্যাংজাইটি (উদ্বেগ) যথেষ্ঠ বেড়ে যাবে। দুঃখবোধ, বিরক্ত হওয়া, অস্থিরতা, ইত্যাদি স্পাইক করবে।

- হয় রাত কাটবে একদম নির্ঘুম ভাবে, নয় চোখ মেলতেই পারবে না বেলা হলেও। অজানা ভীতিতে ইচ্ছে হবে না বিছানা থেকে নেমে দৈনন্দিন কাজ করতে।

- নিজের চেহারাসুরত (অ্যাপিয়ারেন্স) নিয়ে আচমকা একটা অবসেশন তৈরি হবে। নিজেকে আরও আকর্ষণীয় করবার তীব্র ইচ্ছা জন্মাবে।

- অ্যাডিকশন (অ্যালকোহল, ড্রাগ, ইত্যাদি) বেড়ে যাবে। কারণ এগুলো সাময়িকভাবে নেগেটিভ ইমোশানকে আড়াল করে দেয়।

- নিজের ফাঁদেই নিজেকে বন্দী মনে হবে। এই ফাঁদ হতে পারে যে চাকরিটা আপনি করছেন, সেটা অথবা কনজ্যুগ্য্যাল লাইফ। মনে হবে, এর থেকে এই জীবনে আর মুক্তি নেই।

- বিপরীত লিঙ্গের সাথে বিয়েবহির্ভুত সম্পর্কে জড়ানো।

- মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করাটা অবসেশনে পরিণত হতে পারে। তবে এর সাথে আত্মহত্যার চিন্তা গুলিয়ে ফেলবেন না। সেটা আলাদা ব্যাপার।

- ক্রমাগত নিজেকে মূল্যায়ন করে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাবে। কী পেলাম, কী করলাম, কী হতে পারতাম, কী হলাম - এইসব ভাবনা।

- ইম্পালসিভ আচরণ বেড়ে যাবে। ফলে হঠাৎ করে এমনসব সিদ্ধান্ত নিয়ে বসতে পারেন যেটা অস্বাভাবিক। যেমন হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দেওয়া, বিচ্ছেদ ঘটানো, বিরাট খরচ করে ফেলা, ইত্যাদি।

- জীবন নিয়ে অপরিপূর্ণতাবোধ জাগবে খুব। প্রচন্ডরকম অতীতরোমন্থনবোধ, স্মৃতিকাতরতা দেখা দিতে পারে নিজের মধ্যে।


এর বাইরে, পুরুষ এবং নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক যৌন ইচ্ছা একদম কমে যেতে পারে আবার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েও যেতে পারে।

পুরুষের ক্ষেত্রে সেটা ইরেকটাল ডিসফাংশান দিয়ে বোঝা যায়। শরীর তো মনেরই আয়না, তাই না?

অন্যদিকে নারীর ক্ষেত্রে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে তীব্র বিষন্নতায়। নারীরা যেহেতু রজোঃনিবৃত্তির (মেনোপজ) দিকে এগোতে থাকেন, তারা তোলপাড় করা একটা হরমোন্যাল চেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যান। এটা এই পুরো ব্যাপারটাকে আরও অ্যাগ্রেভেট করে। যদিও মেয়েরা ছেলেদের থেকে অপেক্ষাকৃত কম রাগ এবং বিরক্তি অনুভব করে, কিন্তু সেটা পুষিয়ে দেয় তাদের অসম্ভব দুঃখবোধ।

এবারে মিলিয়ে নিন।


✅ ট্রিগ্যারিং ফ্যাক্টরগুলো কী কী?


অন্যতম ট্রিগার হলো বয়স হয়ে যাওয়ার (মূলত বুড়িয়ে যাওয়া) ভাবনা এবং এর সাথে সম্পর্কীত কয়েকটা ব্যাপার।

- ক্যারিয়ার নিয়ে সমস্যা/হতাশা
- জীবনসঙ্গীর সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন/ডিভোর্স
- সন্তানরা বড় হয়ে যাওয়া অথবা নিঃসন্তান থাকা
- বয়স বেড়ে যাওয়া এবং এর সাথে হওয়া স্বাভাবিক শারিরীক পরিবর্তন
- বাবা-মা'র মৃত্যু


এই রকম সময়েই মিডলাইফ ক্রাইসিস আক্রান্ত ব্যক্তি জীবনে যা অর্জন করতে পারেননি কিন্তু চেয়েছিলেন, সেটা নিয়ে তীব্র হতাশায় ডুবে যেতে পারেন। তথাকথিত সফল ব্যক্তিদের দ্বারা হিউমিলিয়েট হওয়ার ভীতি জেঁকে বসতে পারে। নিজের যৌবনকাল ফিরে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছে জাগে। ইচ্ছে করে একাকী বেশি সময় কাটাতে। অতীতের না-পাওয়াগুলো খুব তাড়াতাড়ি পাওয়ার তীব্র আকাংখা তৈরি হয়। মনে হয়, সময় তো আর বেশি নেই। যা করবার তা এক্ষুনি করতে হবে।

আর এই সবকিছু না-পাওয়া বা না-হওয়াটা নিজের মধ্যে তৈরি করে প্রচন্ড বিভ্রান্তি, নিজেকে ভুল বুঝবার তিক্ততা এবং পরিশেষে তীব্র রাগ থেকে ভয়ংকর হতাশা। তখন মনে হয়, সবকিছু ভেঙ্গেচুরে ফেলি।

✅ Her Vs. His - অভিজ্ঞতা কি একই?


স্বাভাবিকভাবেই পুরুষ এবং নারীর মধ্যে লক্ষণগত কিছু বাহ্যিক পার্থক্য দেখা যায় যদিও মূল লক্ষণগুলো একই। আবার মনে রাখতে হবে, বয়স, অঞ্চল, সামাজিক কাঠামো, ব্যক্তির পারিপার্শ্বিকতা, সবকিছুই এর সাথে সম্পর্কীত। সবার মধ্যেই যে সবগুলো দেখা যাবে, ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়।

এজন্যই নারী আর পুরুষের মধ্যে মিডলাইফ ক্রাইসিস প্রকাশিত হয় কিছুটা আলাদাভাবে। ছেলেদের মধ্যে 'নিজেকে প্রমাণ করবার' প্রবণতা বেড়ে যেতে দেখা গিয়েছে। হয়তো একটা দামী গাড়ি কিনে ফেললো ঝোঁকের বশে। অথবা চাকরির পারফর্মেন্স দিয়ে নিজেকে সফল দেখানোর চেষ্টায় মেতে উঠলো।

অন্যদিকে মেয়েরা রিলেশনের ব্যাপারে নিজেদের মূল্যায়ন করা শুরু করে। তার তখন দরকার হয় ভ্যালিডেশনের – স্ত্রী বা মা হিসেবে সে সফল হয়েছে কি না।

মিডলাইফ ক্রাইসিসের ইম্প্যাক্ট নানাভাবে হতে পারে। এই বয়সটাতেই মানুষ নিজের প্রায়োরিটি আর লক্ষ্যগুলোকে রি-ইভ্যালুয়েট করতে শুরু করে। সুতরাং যদি ছেলেদের মধ্যে রান্না করা বা বাচ্চাকাচ্চার প্রতি যত্নশীল হওয়ার মতো 'মেয়েলি' ব্যাপার ঘটতে দেখেন, অবাক হবেন না। উল্টোদিকে মেয়েরা ভাবতে শুরু করে, তারা যথেষ্ঠ দায়িত্ব পালন করেছে, দে হ্যাভ পেইড ইট অফ; আর না।


✅ তাহলে, সামলানো যাবে না?


অবশ্যই যাবে। ১০০ বার যাবে।

শুধু ধরে নেন, মিডলাইফ ক্রাইসিস আসলে ক্রাইসিস না, বরং একটা ওয়েক-আপ কল। আপনার মনই আপনাকে জানাচ্ছে - 'ওহে, নিজের যত্ন আরও ভালোভাবে নাও।'

কাজেই কিছু স্টেপ নিয়ে এই ক্রাইসিস মোকাবেলা করা সম্ভব।


♥️ নিজের ক্রিয়েটিভ অংশকে এক্সপ্লোর করুন এবং একটু একটু করে চর্চা করুন। আমরা সবাই-ই কোন না কোন দিকে ক্রিয়েটিভ। প্রফুল্লতা আসবেই।

♥️ শুরু করে দিন মাইন্ডফুল মেডিটেশন। এটা আপনার চিন্তাভাবনা ব্যাপারে আপনাকে সচেতন করে তুলবে। নিজেকে সত্যিকারভাবে যাচাই করে নিতে সাহায্য করবে। নিয়মিত এক্সারসাইজও কিন্তু এক ধরণের মেডিটেশন, যদিও লাভ হয় দুনো।

♥️ কিছু একটা বদলান। ঘর রঙ করুন, গাছ লাগান, ছবি আঁকুন, রান্না করুন, এবং অতি অবয়াহ্যই 'ফালতু' মানুষদের জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। আপনার মন যা ইচ্ছে করবে - শুধু সেইটাই করুন। অনেকদিন তো অন্যের কী দরকার তা হিসেবে করলেন। এবার নিজের চয়েজ সাজুক একান্তই আপনার প্রয়োজন অনুসারে। এতে যদি নিজেকে স্বার্থপর মনে হয় তো হোক না। হু কেয়ার্স?

♥️ নিজের যা-ই আছে, সেটা নিয়ে কৃতজ্ঞতাবোধ জাগিয়ে তুলুন। প্রতিদিন নাত্র দশ মিনিট সময় নিয়ে লিখুন - কোন তিনটা জিনিসের জন্য আপনি গ্রেটফুল। জাস্ট ডাইরিতে লিখে যান। মিস দেবেন না। এভাবেই চিন্তাভাবনার প্যাটার্নটা আস্তে করে বদলে যাবে। (এই কাজটা আমি করি মাঝে মাঝে। জাস্ট ম্যাজিকাল।)

♥️ এই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে একটু ছুটি নিন না। একবার ভাবুন তো, শেষ কবে অন্যের হাইলাইটস আর স্টোরি দেখে খুব ইন্সয়ায়ার্ড বা ইতিবাচকতা বা মোটিভেটেড অনুভব করেছেন?

মনে করতে পারছেন না তো?

কাজেই মোবাইলটা নামিয়ে রেখে একটা বই পড়ুন। মিনিট বিশেক এক্সারসাইজ করাই যায় অথবা পাঁচ মিনিটের গভীর, মাইন্ডফুল ব্রিদিং। লাইফের গোল গুলোও রিভিউ করে নিতে পারেন। আর যদি ফোন হাতে নেনই, তবে কল করুন কোন বন্ধু নয় আত্মীয়কে, যাকে অনেকদিন দেখেননি।

♥️ হ্যাং আউট করবেন সমমানসিকতার মানুষের সাথে। সেই মানুষগুলো, যারা আপনাকে সবসময় মানসিক সাপোর্ট দিয়ে এসেছে, যারা আপনাকে ইন্সপায়ার করে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যাদের ইন্টরেস্ট আর প্যাশন আপনার সাথে একদম মিলে যায়।


✅ শেষের কথা - আশার কথা


সুখ কিন্তু ইউ-শেপের।

ইউ এর এক চুড়া থেকে শুরু করলে আপনি দেখবেন, টিন-এজের বছরগুলোতে জীবনের সুখ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। সেটা তলানিতে গিয়ে পৌঁছায় এই চল্লিশ পেরিয়ে। এরপর কিন্তু আবার 'ইউ' এর অন্য চুড়ায় সুখের যাত্রা শুরু। এজন্যই বেশিরভাগ মানুষ বলে থাকেন, তাঁরা পঞ্চাশ কি ষাট বছর বয়সে জীবনের সবচেয়ে সুখী অবস্থাটা খুঁজে পেয়েছেন।

এটা আমার মস্তিষ্কপ্রসূত নয়, রীতিমত গবেষণার ফলাফল। কাজেই নির্দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন।

সমস্যা হলো, এই 'সুখী জীবন' ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের কমন পারসেপশন হচ্ছে: বয়স যত বাড়ে, জীবন থেকে আনন্দ ততই বিদায় নিতে থাকে। আর বয়স যেহেতু বাড়তেই থাকে, সেহেতু মধ্য-চল্লিশের একজন মানুষ আর সামনে কোন আশা খুঁজে পান না। ধরেই নেন, যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। আর পড়ে যান 'মিডলাইফ ক্রাইসিসের' ভিশ্যাস সার্কেলে।

কিন্তু এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ব্যাপারটা সাময়িক (হ্যাঁ, হয়তো কয়েকবছর ধরে চলতে পারে)। কিন্তু যেহেতু এর লক্ষণ আর ম্যানেজ করবার উপায়গুলো জেনে গিয়েছেন, সুতরাং আপনি মিডলাইফ ক্রাইসিস কাটিয়ে উঠবার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।


কংগ্র‍্যাচুলেশন্স!!!

____________
পাদটিকা:
আমি কোনভাবেই মানসিক বিশেষজ্ঞ বা এই লাইনের অভিজ্ঞ কেউ নই। সবটুকুই আমার নিজের অভিজ্ঞতা আর নিজ আগ্রহে পড়াশোনার ফলাফল। তাই কয়েকটা রেফরেন্স লিংক দিয়ে দিচ্ছি কমেন্টবক্সে

_____________
তথ্যসূত্রঃ

১। উইকিপিডিয়া https://en.wikipedia.org/wiki/Midlife_crisis
২। ওয়েব-মেড Click This Link
৩। নিউরো-স্পা Click This Link
৪। ওয়েইনবার্জার ডিভোর্স অ্যান্ড ফ্যামলি ল গ্রুপ Click This Link
৫। আর্কেডিয়ান কাউন্সিলিং Click This Link
৬। ভেরি ওয়েল মাইন্ড Click This Link
৭। ফোর্বস কোচেস কাউন্সিল Click This Link
৮। দ্য গার্ডিয়্যান Click This Link
৯। হেলথলাইন Click This Link

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২৫

আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: অসাধারণ- সুন্দর ও গূরুত্বপুর্ণ একটি আলোচনা । বিশেষ করে, চল্লিশোর্ধ বয়সের সেইসব মানুষের জন্য যারা মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভুগছে । আমার’তো মনে হয় ৯৯% চল্লিশোর্ধ বয়সের মানুষের মধ্যে এই সমস্যা বিদ্যমান । অনেক ধন্যবাদ লেখককে এই বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরার জন্য ।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৩০

মন থেকে বলি বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই লেখাটা পড়ে চমৎকার মন্তব্যের জন্য। এই বয়সীরা যখন এ ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হন, তখন যেন তাঁদের একটু হলেও কাজে লাগে, সেই উদ্দেশ্যেই খেটেখুটে লেখা আর কি। আপনার যেহেতু মনে হয়েছে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, অনুরোধ থাকবে অন্যদের মাঝেও শেয়ার করার জন্য। এটা প্রচারের থেকেও বেশি দরকার মানুষে কাজে লাগার দিকটা বিবেচনা করে। ভালো থাকবেন।

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:৩০

শায়মা বলেছেন: বাহ!!


খুবই সুন্দর লিখেছো ভাইয়া.......

১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৩০

মন থেকে বলি বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ে চমৎকার মন্তব্যের জন্য। এই বয়সীরা যখন এ ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হন, তখন যেন তাঁদের একটু হলেও কাজে লাগে, সেই উদ্দেশ্যেই খেটেখুটে লেখা আর কি। আপনার যেহেতু মনে হয়েছে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, অনুরোধ থাকবে অন্যদের মাঝেও শেয়ার করার জন্য। এটা প্রচারের থেকেও বেশি দরকার মানুষে কাজে লাগার দিকটা বিবেচনা করে। ভালো থাকবেন।

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৮

নতুন বলেছেন: বর্তমানে মাঝে মাঝে মনে হয় চাকুরী করে এখনো বাকী জীবনের অর্থনৈতিক সিকিউরিটি করতে পারিনাই।

সম্ভবত এই সমস্যা থেকেই বাকী গুলি চলে আসে।

আবার আমার এক আত্নীয় অনেক টাকার মালিক ২য় বিয়ে করে ফেলেছেন, পরকিয়াতে ছিলো জানমাত, কিন্তু এখন দুই সংসার করছেন, বড় মেয়ে ইন্টার পরিক্ষা দিয়েছে :(

মিডলাইফ ক্রাইসিসের অন্য তম কারন সম্ভবত এই বয়সে এসে বাস্তবতার সাথে স্বপ্নের মিল খুজে না পেয়ে হতাসা থেকেই শুরু হয়।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

মন থেকে বলি বলেছেন: আপনার সাথে একমত আমিও। তবে প্রথমেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই এই বড় লেখাটা পড়ে চমৎকার একটা মন্তব্য করার জন্য। আপনি যে কারণ উল্লেখ করেছেন, অনেকটা সেটাই মূল কারণ। লেখার শুরুতেই দেখবেন বাস্তবতা আর স্বপ্নের মধ্য প্রথম যে কনফ্লিক্টটা হয়, সেটাই অন্যতম ট্রিগারিং ফ্যাক্টর।

এই বয়সীরা যখন এ ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হন, তখন যেন তাঁদের একটু হলেও কাজে লাগে, সেই উদ্দেশ্যেই খেটেখুটে লেখা আর কি। আপনার যেহেতু মনে হয়েছে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, অনুরোধ থাকবে অন্যদের মাঝেও শেয়ার করার জন্য। এটা প্রচারের থেকেও বেশি দরকার মানুষে কাজে লাগার দিকটা বিবেচনা করে।

ভালো থাকবেন।

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৭

নতুন বলেছেন: আমি নিজের অভিঙ্গতা থেকেই আপনার পোস্টের বিষয়গুলি মিলাতে পারছি।

আমি সব সময় পজিটিভ এবং সেল্ফ মোটিভেটেট তাই ঝামেলা আসলেও ভেঙ্গে পড়িনা।

কিন্তু অনেককেই দেখেছি এবং বুঝতে পারি যে দূর্বল পারসোনালিটির মানুষরা অবশ্যই এই সমস্যটা কাটাতে অনেক কস্ট করে।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৫১

মন থেকে বলি বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ে চমৎকার মন্তব্যের জন্য। এই বয়সীরা যখন এ ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হন, তখন যেন তাঁদের একটু হলেও কাজে লাগে, সেই উদ্দেশ্যেই খেটেখুটে লেখা আর কি।

আসলে এই ব্যাপারটা যেহেতু জীবনের একটা ফেইজ, স্বাভাবিকভাবেই সবাই-ই কমবেশি আক্রান্ত হন। এটা ঠিক যে শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের মানুষরা একে যত সহজে অতিক্রম করতে পারেন, বাকিদের জন্য কাজটা অনেক কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু আক্রান্ত হয়ে কষ্ট পেতে হয় কিন্তু সবাইকেই।

অনুরোধ থাকবে অন্যদের মাঝেও শেয়ার করার জন্য। এটা প্রচারের থেকেও বেশি দরকার মানুষে কাজে লাগার দিকটা বিবেচনা করে। ভালো থাকবেন।

৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:৩৫

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: পোস্টটি নিশ্চয় এই সমস্যা জড়িতদের উপকারে আসবে। অনেক উপকারী পোস্ট।

১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

মন থেকে বলি বলেছেন: সেই উদ্দেশ্যেই লিখেছি। যদি কারও কোনভাবে কাজে লাগে, তাহলেই স্বার্থকতা। অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৬| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৫৪

আমি পরাজিত যোদ্ধা বলেছেন: অসাধারণ ভাবে লিখেছেন, শুভ কামনা।

১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৮

মন থেকে বলি বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.