নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Stay Hungry. Stay Foolish.
আজকে খুব খুশি লাগছে সাজিয়ার। যদিও ওর কষ্ট লাগার কথা। কিন্তু মুখে বারবার মৃদু হাসি ফুটেই মিলিয়ে যাচ্ছে। এদ্দিনে রেজওয়ানের বুদ্ধি খুলেছে। ছোট বাসায় থাকলে মনটাও যে ছোট ছোট লাগে, তা বুঝলে তো। তাই সাজিয়ার এতদিন লাগলো রেজওয়ানকে বোঝাতে। অবশেষে ওরা উত্তরার শেষ প্রান্তে নতুন ভাড়া বাসায় উঠে এসেছে আজ। খিলগাঁও এর আগের সাড়ে ছয়শ স্কয়্যার ফুটের বাসাটায় সাজিয়ার দম বন্ধ লাগত সবসময়। রেজওয়ানের কিন্তু কোন হেলদোল নেই। চলে তো যাচ্ছে। কিন্তু সাজিয়া সবসময় একটু খোলামেলা চেয়েছে। তাই বলা যায় ওরই উদ্যোগে রেজওয়ান এই বাসাটা ভাড়া নিয়েছে। প্রায় চোদ্দশ স্কয়্যার ফুট। ভাড়া কিছুটা বেশি। কিন্তু তাতে কি? সাজিয়ার অসম্ভব পছন্দ হয়েছে বাসাটা। নিরিবিলি, নির্জন জায়গাটা। আশেপাশের বেশ অনেকটা জায়গা খালি। ফ্ল্যাট উঠে যাবে হয়ত অচিরেই। কিন্তু এখন তো চারদিক খোলা। হ্যাঁ, একটু কষ্ট হবে জিনিসপত্র কিনতে। দোকান টোকান বেশ দূরে দূরে। রেজওয়ান তো ফেরে সেই রাত আটটা সাড়ে আটটা নাগাদ। এরমধ্যে কিছু দরকার হলে সাজিয়াকেই বেরোতে হবে। ওদের নতুন বাসাটা কোন এপার্টমেন্ট নয়, বরং দোতলা একটা বাড়ি। একতলায় অসমাপ্ত গ্যারেজ। দোতলায় তিনটে বেডরুম আর একটা এক-শেপের ড্রয়িং কাম ডাইনিং। মাস্টারবেডটা বেশ বড়। বোঝাই যায়, মালিক নিজের থাকার জন্য বানিয়েছিল। কিন্তু তারা এখন গুলশানে নিজেদের বিশাল ফ্ল্যাটে থাকে। উত্তরার শেষপ্রান্তে হওয়ায় নেহায়েতই ভাগ্যক্রমে বাসাটা ওরা পেয়ে গেছে। ভাড়া মাত্র বিশ হাজার, সবকিছু মিলিয়েই।
সিঁড়ি ভেঙ্গে চলাফেরা করতে সাজিয়ার কষ্টই হয় ইদানিং। কারন ও প্রেগন্যান্ট। এই তো সাড়ে সাত মাস চলছে। এসময় মেয়েদের কাছে কেউ না কেউ থাকে। কিন্তু সাজিয়া বা রেজওয়ান - কারওই সেই সৌভাগ্য নেই। সাজিয়ার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। রেজওয়ানেরও তাই। সে কারনেই বাসা শিফট করার পুরো ঝক্কি ওদের দু'জনের ওপর দিয়েই যাচ্ছে। রেজওয়ান আছে একটা ব্যাংকে। ওর অফিসও উত্তরায়। তাই বেরিয়ে যায় সাড়ে আটটা নাগাদ। সাজিয়াও চাকরি করত। একটা বুটিক হাউসে। কিন্তু গতমাস থেকে রেজওয়ানের পিড়াপিড়িতে কিছুটা আর নিজের শরীরের কথাও কিছুটা ভেবে চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। এখন তাই অখন্ড অবসর। অবশ্য অবসরের অনেকটা সময়ই কেটে যায় পেটের মধ্যে গুটিসুটি মেরে থাকা অনাগত মেয়েটার সাথে কথা বলে। কত কথাই যে বলে ও ওর মেয়ের সাথে। একটা নামও দিয়েছে - সানজানা। রেজওয়ান আর সাজিয়ার নামের সাথে মিল রেখে। তো এখনও পৃথিবীর আলোর মুখ না দেখা সানজানাকে ওর বাবার গল্প বলে। বলে এই ফ্ল্যাটটার কথা। বলে কিভাবে ওকে আদর করবে সেই সব কথা।
সাজিয়া খুশি খুশি মনে ওর নতুন বাড়ি গুছাচ্ছিল। আর মাঝে মাঝে দম ধরে গেলে একটু বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। এই সময়টা ও ওর বাচ্চাটার সাথে কথা বলে। তখন বিকেল হয়ে এসেছে। সাজিয়া বলছিল, 'জানো গুল্টু মামনি, আর কিছুক্ষন পরই বাবা চলে আসবে। তারপর বাবাটা তোমাকে কত্ত আদর করবে।' এটা রেজওয়ানের প্রিয় একটা কাজ। সাজিয়ার পেটে মুখ চেপে ধরে বাচ্চার সাথে কথা বলা আর আলতো করে পুরো পেটে হাত বুলিয়ে দেওয়া। সাজিয়ার লজ্জাও লাগে আবার ভালও লাগে। ও মনে মনে অপেক্ষা করে এজন্য প্রত্যেকদিন। আজও যখন কথা বলছিল, হঠাৎ ওর সারা শরীরটা কেমন কাঁটা দিয়ে উঠল। কেন, সাজিয়া বলতে পারবে না। মনে হলো, একটা হিম শীতল বাতাস যেন ঘরের মধ্যে, বিশেষ করে ওর পেটের ওপর দিয়ে বয়ে গেল। ও অনুভব করল, পেটের মধ্যে ওর মেয়ের নড়াচড়া একদম থেমে গেছে যেটা কিছুক্ষন আগেও ছিল। সাজিয়া ওর পেটে হাত রেখে অনুভব করার চেষ্টা করল। এবার ওর অনুভূতিটা হলো অন্যরকম। মনে হলো বাচ্চাটা যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এরকম তো কখনও হয়নি। তাড়াতাড়ি ও উঠে গিয়ে লম্বা আয়নাটার সামনে দাঁড়ায়। পেটটা দেখতে থাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। আর তখনই দেখে, পরিষ্কার একটা হাতের ছাপ ফুটে উঠেছে পেটের ভেতর থেকে। এরকম স্পষ্টভাবে হাতের ছাপ যে ফুটে উঠতে পারে সে ধারনাই সাজিয়ার ছিল না। ছাপটা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হলো। তারপর মিলিয়ে গেল। সাজিয়া এত বেশি অবাক হয়েছে যে ও আয়নার সামনে থেকে নড়তেও ভুলে গেছে। এ কি দেখল সে? চোখের ভুল? না কি মনের ভুল? উঁহু...! এরকম ভুল তার হতেই পারে না। সেই শীতল বাতাস, তারপর পেটের মধ্যে এই সাত মাসের মধ্যে প্রথম এরকম অভিজ্ঞতা হলো তার। এতক্ষন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল সাজিয়া। ঘোর কেটে যেতেই ও ফোন করল রেজওয়ানকে। হড়বড় করে যা বলল তাতে মূল বিষয়টা পরিষ্কার না বুঝলেও এটা বুঝল রেজওয়ান যে সাজিয়া অসম্ভব ভয় পেয়েছে। কাজেই ও তাড়াতাড়ি ম্যানেজারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় রওনা দিল। বেশি দূরে না হওয়ায় আর জ্যাম কম থাকায় পৌঁছেও গেল বেশ তাড়াতাড়ি।
চাবি দিয়ে দরজা খুলে রেজওয়ান যখন বাসায় ঢুকছে, তখন ফোন করার পর প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট কেটে গেছে। বেডরুমে ঢুকে দেখে সাজিয়া তখনও আয়নার সামনে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে নিজের স্ফীত পেটের দিকে। রেজওয়ান পিছন থেকে এসে সাজিয়াকে জড়িয়ে ধরে। তারপর বিছানায় বসায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নেয় কি ঘটেছে। তারপর ও নিজেই পেটে হাত বুলিয়ে পরখ করে। এমনকি প্রত্যেকদিনের মত পেটে ঠোঁট লাগিয়ে কথাও বলে। কই? কোন অস্বাভাবিকতা নেই তো। রেজওয়ান আদর করে সাজিয়াকে শান্ত করে। বোঝায় এরকম অবস্থায় মেয়েরা অদ্ভুত অনেক কিছু ফিল করতেই পারে। হরমোন্যাল ডিসব্যালেন্সের জন্যই তাদের মন এবং দেহে অনেক পরিবর্তন ঘটে যায়। রেজওয়ানের কথায় সাজিয়া শান্ত হয় কিছুটা।
পরেরদিনটা মানে শুক্রবার রেজওয়ান আর সাজিয়া মিলে ঠিক করে, আজ পুরো বাসাটা সম্পূর্ণ গুছিয়ে ফেলবে। সেই ভেবে দুজনেই কাজ শুরু করে দেয়। সারাদিনে গুছিয়েও ফেলে সবকিছু। সব শেষ হলে রেজওয়ান প্রস্তাব করলঃ "চলো, আজ বাইরে ডিনার করি।" যেই ভাবা সেই কাজ। দারুন করে সেজে সাজিয়া বের হয় স্বামীর সাথে। খুব চমৎকার কাটে পরের তিনটি ঘন্টা। অনেকদিন এরকম বাইরে খাওয়া হয়নি। সেদিন রাতে দুজনই তীব্রভাবে চাইতে থাকে পরষ্পরের সান্নিধ্য। এরকম সময়ে সাধারনত রেজওয়ান সতর্ক থাকে সাজিয়ার পেটে যেন চাপ না লাগে। কিন্তু সে রাতে একটু বেসামাল হয় দু'জনই। ভালবাসাবাসির গভীরতম সময়টাতে হঠাৎ রেজওয়ান অনুভব করে, সাজিয়ার শরীর, ঠিক করে বলতে গেলে পেটের কাছ থেকে কিছু একটা তার পেটে চাপ দিচ্ছে। প্রথমে রেজওয়ান অতটা পাত্তা দেয়নি। কিন্তু যখন জিনিসটা নড়াচড়াও করতে থাকে তখন সে লাফ দিয়ে উঠে বসে। লাইট জ্বালাতেই সে জীবনের অদ্ভুততম দৃশ্যটা দেখে তার স্ত্রীর পেটের চামড়ায়। স্পষ্ট একটা হাতের ছাপ। তাতে পাঁচটা আঙ্গুল। প্রথমে মনে হয় তর্জনীটা ভেতর থেকে পেটে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। একটু খেয়াল করতেই বুঝল, সেটা আসলে শুধু নড়ছে না বরং পেট ছিঁড়ে বাইরে বের হওয়ার মত খামচাচ্ছে। সাজিয়া থরথর করে কাঁপতে থাকে তীব্র আতংকে। রেজওয়ানও হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। এ তো শিশুর হাত নয়। কোন গর্ভস্থ শিশু এরকম শক্তিশালী আর ভয়ংকরভাবে পেটের ওপর চাপ তৈরি করতেই পারেনা। তারপরই ভয়ংকরতম দৃশ্যটা দেখে দু'জন। হাতের ছাপ মিলিয়ে গিয়ে সেখানে ফুটে ওঠে একটা মানুষের মুখ। খুব অস্পষ্ট নয়। নাক, চোখ, মুখ - সবই বোঝা যায়। মুখটা হাঁ করে এরপর। যেন কিছু বলতে চায়। তার সারি সারি দাঁতের ছাপ ফুটে ওঠে পেটের চামড়ার অন্তরালে। সাজিয়া একটা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারায়। রেজওয়ান বহুকষ্টে নিজেকে অজ্ঞান হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখে। অদ্ভুত ভাবে সাজিয়া অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরই সবকিছু মিলিয়ে গেল। রেজওয়ানের বিশ্বাস হয় না। সে হতবিহবলভাবে তাকিয়ে থাকে সাজিয়ার ফর্সা মসৃন পেটের দিকে। যেন ওটা পেট নয়, টিভির পর্দা। সে সাজিয়াকে স্পর্ষ করতেও ভয় পায়। কিন্তু জ্ঞান তো ফেরাতে হবে। আর প্রেগ্ন্যান্সির এই এডভান্স স্টেজে এরকম মানসিক চাপ ভয়ংকর হতে পারে। তাড়াতাড়ি সে পানির ঝাপটা দেয় স্ত্রীর মুখে। প্রায় পনের মিনিট পর সাজিয়ার জ্ঞান ফেরে। বাকি রাতটা স্বামী স্ত্রী না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয়।
সকাল হতেই রেজওয়ান সাজিয়াকে নিয়ে ছোটে ডাক্তারের চেম্বারে। একটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে দেখা করে ডাক্তারের সাথে। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে জানান শিশু একদম সুস্থ আছে। কোন কম্পলিকেসি নেই। সাজিয়ার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চান তিনি। ওরা আগেই ঠিক করেছিল, গত রাত্রের ঘটনাটা আপাতত কাউকে জানাবে না। তাই সাজিয়া উত্তর দেয় যে সে তেমন কোন সমস্যা অনুভব করছে না। ডাক্তার কিছু উপদেশ দিয়ে ওদের ছেড়ে দেন।
সপ্তাহের বাকি দিনগুলো স্বাভাবিক ভাবেই কেটে যেতে লাগল। ওরাও আস্তে আস্তে ব্যাপারটা ভুলে যেতে থাকে। এভাবে সপ্তাহ ঘুরে আবার শুক্রবার আসে। সেদিন ওরা বাসায়ই ছিল। রাতে ঘুমানোর আগে দুজন পাশাপাশি শুয়ে গল্প করছিল। সেদিনের পর থেকে রেজওয়ান শরীরের ব্যাপারটাতে যায় নি। কেমন যেন একটা অস্বস্থি অনুভব করত মনে হলেই। রাত এগারটা বাজে। ঠিক তখনই ঘরটা কেমন যেন শীতল হয়ে যায় হঠাৎ। দুজনই ব্যাপারটা খেয়াল করে। আর তারপরই সাজিয়া চিৎকার করে ওঠে। আবার তার পেটে সেদিনের মত হাতটা কিছু লিখছে। এই আপাত অসম্ভব অতিপ্রাকৃত ব্যাপারটা এবার রেজওয়ান ভাল করে খেয়াল করার চেষ্টা করে। সাজিয়াকে সে আয়নার সামনে দাঁড়া করায়। লেখাটা আয়নায় সোজা পড়া যাচ্ছে। একটা মাত্র শব্দ - 'মর'। আতংকে শিউরে ওঠে দুজনই। সাজিয়ার অবস্থা বেশি খারাপ। এবারও সেদিনের মত হিংস্র দাঁতের সারি ফুটে ওঠে। যেন বলতে চায় - পালাও, না হলে মরবে। কিন্তু কিভাবে পালাবে ওরা? নিজের শরীর থেকে কি পালানো যায়? এভাবেই সেই বিভিষিকাময় রাতটা কেটে যায়।
পরের দিন সাজিয়াকে দেখে চেনা যায় না। এক রাতেই তার বয়স যেন দশ বছর বেড়ে গেছে। এ কেমন অদ্ভুত অসুখ? আর অসুখই বা বলে কিভাবে? রেজুওয়ান অনুমান করে, এ বাড়িতে নিশ্চয়ই কোন রহস্য আছে। আর তা জানবে কেয়ারটেকার। সে কেয়ারটেকারকে ধরে। ঘটনাটা শুনে প্রথমে সে বেমালুম অস্বীকার করে যে তার কোন কিছুই জানা নেই। তারপর অনেক চাপাচাপির পর এবং নগদ পাঁচশ টাকা তার পকেটে গুঁজে দিয়ে রেজওয়ান যা জানতে পারে, তা হলো এইঃ
ঘটনাটা কেয়ারটেকার শুনেছে তার আগের দারোয়ানের কাছ থেকে। তখন কোন কেয়ারটেকার ছিল না। বরং একজন বুড়ো দারোয়ান বাড়ি পাহারা দিত। আজ থেকে দশ বছর আগে যখন বাড়িটা তৈরি হচ্ছিল, তখন অসমাপ্ত অবস্থাতেই এখানে এক দম্পতি ভাড়া নেয়, এই রেজওয়ান এবং সাজিয়ার মতই। কাকতালীয়ভাবে সেই মেয়েটাও অন্তঃস্বত্তা ছিল। মেয়েটা একাই থাকত সারাদিন স্বামীটা যখন কাজে যেত। তখন বাড়িটার তিনতলার নির্মানকাজ চলছে। এরকম এক নির্জন দুপুরে মেয়েটা দারোয়ানকে বাইরে পাঠিয়েছিল কিছু জিনিস কিনতে। তখন এলাকাটা আরও অনেক বেশি নির্জন ছিল বলে দারোয়ানের ফিরতে অনেকক্ষন লেগে যায়। সেই সুযোগে দুজন শ্রমিক সেই মেয়েটাকে রেপ করে অত্যন্ত নির্মম ভাবে। শুধু তাই নয়, সব শেষে তারা মেয়েটাকে ঝুলিয়ে দেয় এই বেডরুমের ফ্যানের সাথে, যেন তাদের ট্রেস করা না যায়। তারপর তারা স্রেফ পালিয়ে যায়। কোনদিনই তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। দারোয়ান যখন ফিরে আসে তখন সে জীবনের সবচে বিভৎস দৃশ্যটা দেখে। মেয়েটা ঝুলছে সিলিং ফ্যানের থেকে। গায়ে সুতোটিও নেই। আর তার জরায়ু থেকে বাচ্চাটার মাথা আর একটা হাত বেরিয়ে এসেছে। দুজনেই মৃত। অদ্ভুত ব্যাপার হলো দুজনেরই চোখ ছিল খোলা। এই ঘটনা নিয়ে তখন অনেক তোলপাড় হয়েছিল। কিন্তু খুনি ধরা পড়েনি। ফলে কেসটাও চাপা পড়ে যায় আস্তে আস্তে। কিন্তু তারপর থেকেই ভৌতিক ব্যাপারটার শুরু। সাধারন কোন মেয়ে যারা এই বাসায় থেকেছে তারা কেউ কেউ নাকি শুক্রবারে হঠাৎ হঠাৎ সেই মেয়েটাকে দেখেছে, একদম ওই অবস্থায়। আর প্রেগন্যান্ট যারাই থেকেছে তাদের অভিজ্ঞতা আরও ভয়ংকর। কেয়ারটেকার যা বলল সেটার সাথে গত রাতের ঘটনাটা পুরোপুরি মিলে যায়। কেয়ারটেকার আরো যোগ করে, কেউই এই বাসায় দুসপ্তাহের বেশি থাকতে পারেনি।
রেজওয়ান আর ভাবতে পারেনা। সে সাহসী এবং অবিশ্বাসী ধরনের মানুষ। অন্যসময় হলে এটাকে কেয়ারটেকারের গাঁজাপ্রসূত গালগল্প বলে উড়িয়ে দিত। কিন্তু গতরাতে নিজের চোখে সে যা দেখেছ এরপর সে আর কোন ঘটনাকেই অবিশ্বাস করার ক্ষমতা রাখে না। সে বুঝে উঠতে পারছে না এখন কি করা উচিৎ। এই কদিনে সাজিয়ার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। আজ আরেকটা শুক্রবার। আতংকে সকাল থেকেই সাজিয়া সিঁটিয়ে আছে। এমনকি সে নিজের পেটেও হাত দিচ্ছে না। রেজওয়ান এলাকার ইমাম সাহেবের সাথে দেখা করবে। আধিভৌতিক ব্যাপারটা উনি ছাড়া আর কেউ সামলাতে পারবে না। রেজওয়ান সাজিয়াকে রেখে ইমাম সাহেবের কাছে যায়। তাকে পুরো ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে ইমাম সাহেব কিছুক্ষন গম্ভীর হয়ে থাকেন। যেন তিনিও কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। অবশেষে তিনি একটা তাবিজ ধরনের জিনিস রেজওয়ানকে দিয়ে সেটা স্ত্রীর পেটের সাথে বেঁধে রাখতে বলেন যতদিন বাচ্চা না হয়। আর আগামীদিন সাজিয়াকে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে বলেন।
রেজওয়ান বাড়ি ফিরে আসে। তখন বিকেল এবং সন্ধ্যার সন্ধিক্ষন। চারদিক শুনশান। বাড়িতে পা দিয়েই তার অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়। মনে হতে থাকে সামনে খুব অমঙ্গল কিছু অপেক্ষা করছে। অকারণেই হৃদপিন্ডের গতি অসম্ভব বেড়ে যায় তার। কলিংবেলে হাত দিয়ে কেন যেন হঠাৎ মনে হয়, এই দরজা আর খুলবে না। কলিংবেল বাজায় রেজওয়ান। একবার..দুবার...বারবার। ভেতর থেকে কোন সাড়া আসেনা। এরপরই ক্ষীন একটা হাসির শব্দ শুনতে পায়। খলখল করে কোন বাচ্চা হাসছে যেন। কিন্তু শব্দটার মধ্যে বিভৎস কি যেন একটা আছে। যেন শব্দটা আসছে আমাদের চেনাজানা জগতের বাইরের থেকে। রেজওয়ান চিৎকার করে সাজিয়ার নাম ধরে ডাকতে থাকে। তার চিৎকারে কেয়ারটেকার দৌড়ে আসে। কিন্তু সাজিয়ার কোন সাড়া পায়না সে। এবার আতংকিত হয়ে পড়ে রেজওয়ান। সাজিয়া আসছে না কেন? ও ঠিক আছে তো? আর সাতপাঁচ না ভেবে দুজন মিলে গায়ের ধাক্কায় দরজা ভেঙ্গে ফেলে। তারপর এক দৌড়ে বেডরুমে এসে যা দেখে, তা না দেখলেই ভাল ছিল। বেডরুমের সিলিংফ্যানের সাথে সাজিয়ার দেহটা ঝুলছে। মুখটা বিকৃত হয়ে আছে আতংকে আর প্রচন্ড কষ্টে। সাজিয়ার বিশাল পেটটা এখন সমতল। ঝুলন্ত সাজিয়ার মৃতদেহের পায়ের নিচের মেঝেটা ভেসে যাচ্ছে রক্তে। আর সেই রক্তে কয়েকটা হাত এবং পায়ের ছাপ...একটা শিশুর।
(সমাপ্ত)
#গদ্যতাড়না
#ভৌতিক
২৮ অগাস্ট ২০১৭
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০০
মন থেকে বলি বলেছেন: ক্যাশ মিলাতে মনে হয় দেরি হয়...
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:০৩
আমি পোলাপাইণ বলেছেন: ভয় পাইসি তয় ব্যাংকের চাকরি কইরা প্রেগন্যান্ট বউরে থূইয়া আটটা পরযন্ত বাইরে কেমনে থাকে বুজলাম না