নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Stay Hungry. Stay Foolish.
ঘুমাচ্ছিলাম। শুনশান ফ্ল্যাট। গাঢ় ঘুমে আমি ছাড়া ফ্ল্যাটের বাকি বাসিন্দারা নিমগ্ন। বাকি বাসিন্দা বলতে আমার স্ত্রী মিথিলা আর আমাদের একমাত্র সন্তান আবির। আমি ফিরোজ। পুরো নাম ফিরোজ আদনান। আমার ঘুমের সমস্যা আছে। গাঢ় ঘুম আমার সহজে হয়না। কিন্তু সেই রাতে ঘুমটা জমাট বেঁধে গিয়েছিল। রাতটা ছিল ১৩ই জুলাই, রাত এগারটা চল্লিশ। এমনিতে আমরা দশটার মধ্যেই শুয়ে পড়ি। কারন ভোরে আবিরের স্কুল। সেদিন শুতে শুতে সাড়ে দশটা বেজে গিয়েছিল।
নিকেতনের এই ফ্ল্যাটে উঠেছি এক সপ্তাহ হলো। এর আগে খিলগাঁতে যে ছোট্ট ফ্ল্যাটটায় থাকতাম সেটা আমাদের জন্য যেমন ছোট ছিল তেমনি আবিরের স্কুল থেকেও অনেক দূর হয়ে যাচ্ছিল। তাই অনেক খুঁজে তিন কামরা আর ড্রয়িং ডাইনিং মিলিয়ে চোদ্দশ স্কয়ারফুটের এই বাসাটায় উঠে এসেছি। ভাড়া সেই অনুপাতে অনেক কম। এডভান্সের ঝামেলাও নেই যেটা নিকেতনের অন্যান্য ফ্ল্যাটের তুলনায় একদম অস্বাভাবিক ঘটনা।
আমরা, মানে মিথিলা আর আমি থাকি মাস্টার বেডরুমে। পাশের কামরাটা আবিরের। এই জুলাইতে ১৩ বছরে পড়ল। দশ বছর বয়স থেকেই আবির একলা ঘুমায় ওর নিজের কামরায়। ঘুমানোর আগে আমরা বাপ ছেলে কিছুক্ষন গল্প করি। একেকদিন একেক বিষয় নিয়ে। কিন্তু ভুতের গল্প করি না। কারন একবার যখন ওর বয়স এগারো, আমি ওকে একটা ভুতের গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে নিজের রুমে গিয়েছিলাম। মাঝরাতে ওর চিৎকারে আমরা দুজনেই ছুটে গিয়ে দেখি আবির থরথর করে কাঁপছে। কি দেখে যে ভয় পেয়েছে বুঝাতে পারছিল না। অনেকক্ষন জড়িয়ে ধরে থাকার পর ও যা বলল তাতে বুঝলাম ও স্বপ্নই দেখছিল। তবে স্বপ্নটা কিসের ছিল বলল না পুরোটা। মাকড়সার মত একটা মেয়েমানুষ নাকি আসছিল। যাই হোক। এরপর অনেকদিন আবির আমাদের সাথে ঘুমাতো।
অন্যসব দিনের মতোই সেদিনও আবিরের সাথে গল্প করে কিছুক্ষন কাটিয়ে ও ঘুমালে পরে এসে শুয়েছি নিজের বিছানায়। মিথিলা আমার পাশেই ঘুমাচ্ছে অঘোরে। অন্যান্য দিন ও অনেকক্ষন মোবাইলে কাটায় ঘুমিয়ে পড়ার আগে। আজ রাতে আমরা দু'জনই ক্লান্ত। তাই চট করে ঘুমটা এসে গিয়েছিল।
হঠাৎ একটা নিদারুন অস্বস্থিতে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল আমার। আমি নিশ্চিত, কোন স্বপ্ন দেখিনি। কিছু একটা শুনে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে। বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা এমন দুপদাপ করছে যে মনে হচ্ছিল বেরিয়ে আসবে। এমন সময় সত্যিই মৃদু শব্দটা কানে এলো। মড়মড় শব্দ। যেন বহুদূরে বসে কেউ কিছু ভাঙ্গছে। শব্দটার মধ্যে বিভিষিকাময় কি যেন একটা ছিল। হঠাৎ আমার প্রচন্ড ভয়ে বমি বমি লাগতে লাগল। মনে হতে লাগল খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।
বিছানা ছেড়ে উঠতে যাচ্ছি, এমন সময় মনে পড়ল, ভাড়া নেওয়ার সময় কেয়ারটেকার কি যেন একটা কথা বলেছিল ফ্ল্যাটটা সম্পর্কে। আগের ভাড়াটে কেন চলে গিয়েছিল, ফ্ল্যাটে দোষ আছে - এইসব হাবিজাবি। তখন মনযোগ দেই নি। হন্যে হয়ে আবিরের স্কুলের কাছাকাছি একটা থাকার জায়গা খুঁজছিলাম। এত সস্তায় এতবড় একটা ফ্ল্যাট, তাও আবার নিকেতনের মত জায়গায় - কে আজেবাজে কথায় কান দেয়। ব্যাটার নিশ্চয়ই ফ্ল্যাট মালিকের সাথে গন্ডগোল আছে। এখন আফসোস হলো, কেন যে তখন ভাল করে শুনে নেইনি।
আমি মশারীর ভেতর থেকে বের হলাম। তারপর আস্তে করে রুমের দরজাটা খুললাম। পুরো বাড়ি অন্ধকার। দরজা খোলার সাথে সাথে শব্দটাও বেড়ে গেল অনেকটা। এখন পরিষ্কার মনে হচ্ছে শব্দটা কোন কিছু ভাঙ্গার নয় বরং চিবানোর। হাড় চিবুনোর শব্দ। শব্দটা কোনদিক থেকে আসছে ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। এদিক ওদিক তাকাতে গিয়েই চোখে পড়ল ফ্ল্যাটের দূর প্রান্তের দিকে। আমার বাসাটা লম্বা ধরনের। মেইন দরজা থেকে বাম পাশে ঘুরলে একটা গেস্ট রুম পড়ে। পাশেই টয়লেট। ওই টয়লেটটা আমার বেডরুম থেকে অনেকটা দূর। ড্রয়িং আর ডাইনিং স্পেস একসাথে হয়ে প্রায় ২৩ গজ দূরত্ব তৈরি করেছে। পুরো প্যাসেজটাই অন্ধকার। শুধু ওই গেস্টরুমের জানালার কাঁচের মধ্য দিয়ে চাঁদের আলো এসে কিছুটা ঘোলাটে করে ফেলেছে টয়লেটের মুখটার অন্ধকারকে। সুইচের দিকে হাত বাড়িয়েও আমি থমকে গেলাম। আর সেই আবছায়া আলো-আঁধারিতে আমি ওটাকে দেখলাম।
যেন একটা বড় আকারের কাঁকড়া বা মাকড়সা। সামনে একটা মাথা। তার থেকে বড় বড় চুল ঝুলছে। যেটুকু আলো পড়েছে ওটার ওপর তাতে আকৃতিটা মানুষের মতই লাগল। চিৎ হয়ে কেউ যদি তার চার হাত-পা মুচড়িয়ে উলটো করে রাখে তাহলে এই অবয়বের সাথে মেলে। উলটানো চার হাত
মাথাটা পুরো একশ আশি ডিগ্রি ঘোরানো। মানে মুখ পিঠের দিকে। সেই মাথা থেকেই এলোমেলো চুলগুলো ঝুলছে। সারা দেহে সাদা একটা কাপড় প্যাঁচানো। আমি প্রস্তরীভূত হয়ে গিয়েছি আতংকে। এমন সময় এক ঝলক আলো এসে পড়ল জিনিসটার ওপর। ঠিক সেই মুহূর্তেই জিনিসটাও মাথা তুলল। আর আমি দেখলাম....
দেখলাম ধবধবে সাদা মুখমন্ডলটাতে কোন নাক বা চোখ বা ভুরু নেই। শুধু মুখের জায়গায় একান ওকান জোড়া একটা কাটা। সেই কাটা জায়গাটা দিয়ে ওটা ধরে আছে একটা অর্ধভুক্ত পা। মানুষের পা। ছেঁড়া ছেঁড়া মাংসের মত ঝুলছে। টপ টপ করে তখনও রক্ত পড়ছে কাটা পা-টা থেকে। দূর থেকে আঁধারে সেই রক্ত লাল নয় বরং কালো দেখালো।
লাইট জ্বালানোর কথা আমার মনেই রইল না। আতংকে আমি তখন ঠকঠক করে কাঁপছি। হাত পা মনে হচ্ছে প্যারালাইসড। এমন সময় জিনিসটা মাকড়সার মত ভঙ্গিতে এগুতে লাগল আমার দিকে। আর আমি অমানুষিক একটা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালাম।
এরপর যে ঘটনা আমার মনে আছে, সমস্ত লাইট জ্বালা আর মিথিলা আমার মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে। ওর চেহারায় অসম্ভব উৎকন্ঠা। আমি যে ভয় পেয়েছি, চিৎকার শুনেই ও বুঝেছিল। আমি চোখ খুলতেই ও জিজ্ঞেস করল কি দেখে আমি ভয় পেয়েছি। আমি শুধু হাত বাড়িয়ে দূরের টয়লেটের দিকে দেখালাম। মিথিলা জিজ্ঞেস করলঃ "কি ওখানে? তুমি কি কিছু দেখেছো?" আমি হ্যাঁ বলে মাথা নাড়লাম। মিথিলা অসম্ভব সাহসী। সে চট করে গেস্টরুম আর লাগোয়া টয়লেট ঘুরে এলো। বললঃ "কিচ্ছুই তো নেই। কি দেখতে কি দেখেছ। যাক গে। আমাকে না ডেকে একা একা উঠেছ কেন?" জবাবে আমি ঘুম ভাঙ্গা থেকে শুরু করে যা যা দেখেছি, সবই ওকে বললাম। উত্তরে ও বললঃ "নিশ্চয়ই ময়লা কাপড়ের স্তুপটাকে তুমি চোখের ভুল করেছ। ওই যে, সাদা চাদরটা। ওটাকেই তুমি দেখেছ।" তাই কি? এতবড় ভুল হবে আমার? আমি তো স্পষ্ট দেখেছি জিনিসটাকে। পা-টাকেও। নিজের কানে শুনেছি কড়মড় করে হাড় ভাঙ্গার শব্দ। তাহলে?
হঠাৎ একটা কথা মনে হতে আতংকে আবার আমার রক্ত হিম হয়ে গেল। এত কিছু হয়ে গেল, আবিরের ঘুম তো ভাঙ্গলো না। লাফ দিয়ে উঠে আমি আবিরের রুমের দরজা খুলে ঢুকলাম। পিছন পিছন মিথিলাও ঢুকল। আলো জ্বালিয়েই আমরা যে দৃশ্য দেখলাম তা না দেখলেই ভাল ছিল।
আবির উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। এক পলকেই বোঝা যায়, দেহে প্রাণ নেই। দুটো পা-ই হাঁটুর কাছ থেকে কামড়ে ছিঁড়ে নেওয়া। রক্তে পুরো বিছানাটা থকথকে হয়ে আছে। আর মাথাটা...সেটা মুচড়ে পিঠের দিকে ঘোরানো। সেই মৃত ঘোলাটে চোখে বিভৎস কিছু দেখার আতংক স্থায়ী হয়ে গেছে
আমি চিৎকার দিয়ে দ্বিতীয়বার জ্ঞান হারালাম।
#ভৌতিক
#গদ্যতাড়না
১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৩০
মন থেকে বলি বলেছেন: কি আর করা, গল্পই যে এরকম চাইছিল
২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৩০
ফাহিমা বলেছেন: ভুতের গল্প ভয় লাগে।
১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৩০
মন থেকে বলি বলেছেন: আমারও
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:১০
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ভূতের গল্পে নিজের ছেলেকেই মেরে ফেললেন? ভালো লাগলো না...