নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক কিছু লিখতে চেয়েছিল। কিন্তু লেখাগুলো খুঁজে পায়নি। অনেক কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু সেগুলো শোনারও সময় কারও ছিল না

মন থেকে বলি

Stay Hungry. Stay Foolish.

মন থেকে বলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ অপার্থিব

১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:১৪


বাথরুমে হাত মুখ ধুচ্ছিল অয়ন। এমন সময় কানে এলো কান্নামেশানো জড়ানো কথাগুলো।

...............
"তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছ।"
...............
"না..না...তুমি যা ইচ্ছা তা করেছ আমার সাথে। রিলেশন আজ রেখেছ। এখন বলছ..."
...............
"আমি কিচ্ছু বুঝতে চাইনা। শুনতেও চাই না। তুমি একটা জানোয়ার। তুমি....."
...............
"আর কোনদিন তুমি আমাকে ফোন করবে না। এসএমএসও পাঠাবে না। তুমি আমার জীবন নষ্ট করে এখন কি খেলা খেলতে চাও।"
...............
তুমি কিভাবে পারলে? বল...

এরপরই কথাগুলো অস্পষ্ট হয়ে গেল। এতক্ষন অয়ন চুপ করে কথোপকথনটা শুনছিল। আর বোঝার চেষ্টা করছিল। মেয়েটা নিশ্চয়ই কথা বলছে তার প্রেমিকের সাথে। অয়ন অনুমান করার চেষ্টা করল কি হতে পারে। অনেক কিছুই ধারণা করে নেওয়া যায়। হয়ত ছেলেটা সম্পর্কটা আর চালিয়ে যেতে চাইছেনা। হয়ত প্রতারণার স্বীকার মেয়েটি। অথবা এমনও হতে পারে, ছেলেটার এখন অন্য কাউকে ভাল লেগেছে, তাই রিলেশন ভেঙ্গে দিতে চাইছে।

তবে একটা জিনিস মনে হলো অয়নের - মেয়েটার সাথে যতদিন সম্পর্ক ছিল, সে হয়ত অনেক গভীরে গিয়েছিল। তা না হলে মেয়েটা বলত না জীবন নষ্ট করার কথা। আজকালকার দিনে এগুলো এত ডালভাত। হয় মেয়েগুলো বোকা, না হয় অতিরিক্ত নির্ভরশীল।

যাক গে। অয়নের কি। জানলা বেয়ে আসা ক্ষণিকের বুকভাঙ্গা কান্নায় অয়ন কিইবা করতে পারে। শুধু শোনা ছাড়া।

অয়নদের বাড়িটার পাশেই একটা ওয়ার্কিং গার্লদের হোস্টেল। এমনই কপাল, অয়নের রুমের জানালাটার দিকেই ওদের ছাদটা। প্রায়ই কয়েকটা মেয়ে ছাদে ওঠে। কখনও বিকেল বেলায়, কখনও দুপুরে কাপড় শুকোতে। বিকেলেই বেশি ওঠে - দলবেঁধে। এমনকি কখনও রাতের বেলা কারও জন্মদিনের পার্টিও হয় হইচই করে। অয়নের রুম থেকে ওদের কলকাকলী শোনা যায়।

একটু লাজুক স্বভাবের ছেলে সে। পারতপক্ষে জানালার সামনে যায় না। গেলেও যখন কেউ থাকে না, তখন। ওর মনে হয়, জানলাটা ওর হলেও প্রাইভেসিটা ওদের। সেই প্রাইভেসি সে নষ্ট করতে চায় না।

কিন্তু সেদিন আর পারল না। ও জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। চওড়া রেলিং এর ওপরে বিপজ্জনকভাবে পা তুলে একটি মেয়ে বসে আছে। মাথাটা দু'হাঁটুর মধ্যে গোঁজা। দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে। অয়ন চোখ সরাতে পারল না। মনে হলো, মেয়েটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। কান্নায় কি? তাইই হবে। এ-ই তাহলে সেই মেয়েটি।

অয়নের খুব ইচ্ছে হতে লাগল মেয়েটিকে স্বান্তনা দেয়। হাত ধরে বলে, জীবন এত ঠুনকো নয়। কিন্তু ভাবা এক জিনিস আর সেটা করা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। জানালার কোনা দিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অয়নের হঠাৎই বুকটা একটু মুচড়ে ওঠে। নিজের অনুভুতিতে ও নিজেই অবাক হয়ে যায়। আরে....! অচেনা একটা মেয়ের জন্য এরকম লাগার মানে কি? এমনতো নয় যে মেয়েটার সাথে ওর কোন পরিচয় আছে বা তার অবস্থার জন্য ও কোনভাবে সম্পর্কীত। আসলে ওই নিশঃর্ত আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে বসে থাকাটাই অয়নকে চুম্বকের মত টানতে থাকে।

জানালা থেকে সরে এসে বিছানায় বসল অয়ন। চিন্তা করছে।

আচ্ছা, ও যদি এখন মেয়েটাকে ডেকে কথা বলে, মেয়েটা কি কথা বলবে? অয়নের হঠাৎ খুব ইচ্ছে করতে লাগল কথা বলার জন্য। সত্যি বলতে কি, মুখচোরা অয়নের সাথে এইরকম পাগলামি একেবারেই যায় না। কিন্তু আজকে যে কি হচ্ছে...! হয়ত ও বাসায় একা বলেই কি না। যাবে না কি আরেকবার জানালার কাছে? দেখবে উঁকি দিয়ে মেয়েটা আছে কি না।

কেন যেন অয়নের মনে হলো মেয়েটার নাম নীলা। কেন নামটা মনে এলো আল্লাহই জানে। কিন্তু অয়নের দৃঢ় বিশ্বাস, ওর নাম নীলা। মাঝে মাঝে এই নামটা ওর কানে এসেছে। মেয়েটাকে ও দেখেনি কখনও। তা-ও মনে হচ্ছে এইই সেই নীলা। ডাকবে না কি একবার? যেভাবে বসে আছে আর যে রকম মানসিক অবস্থা মনে হচ্ছে, তাতে এক্ষুনি কারও উচিৎ নীলার, মানে মেয়েটার কাছে যাওয়া। ওকে ওখান থেকে নামিয়ে আনা। অয়নের জানলা থেকে খুব দূরে বসে নয়। এই ৪/৫ ফিট হবে। অয়ন মনস্থির করে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মেয়েটা এখনও একইভাবে বসে আছে।

"এই যে....শুনছেন...।" অয়ন হালকা করে ডাকে। মেয়েটার কানে হয় ডাকটা পৌঁছায় না অথবা অন্যমন্সকতার জন্য খেয়াল করে না।

"এই যে....আপনাকে বলছি....এই...শুনছেন।" অয়ন গলা চড়ায়। এবার বুঝি মেয়েটার ধ্যান ভাঙ্গে। আস্তে আস্তে করে মাথা তুলে সে এদিক ওদিক তাকায়। তারপর অয়নের দিকে চোখ পড়তেই ফ্রিজ হয়ে যায় কয়েক মুহুর্তের জন্য। তারপর....যেন স্বপ্নের ঘোরে আবার হাঁটুতে মুখ গোঁজে।

অয়ন যারপরনাই বিব্রত! কি হয়ে গেল..!! ওকে কি খেয়াল করল না? কি জানি। কিন্তু একবার যখন ডেকেই ফেলেছে তখন দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে এবার বেশ ঝরঝরে গলাতেই আবার ডাকে অয়ন।

"আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি? প্লিজ...একটু শুনবেন?"

মেয়েটা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। তখন শেষ বিকেলের নরম আলো এসে পড়েছে মেয়েটার গালে। যাকে বলে 'কনে দেখা আলো'। অয়ন দু'চোখ ভরে দেখে। এত সুন্দর..!!! ও কল্পনাও করতে পারেনি। আকাশী নীল জামায় আর বিকেলের নরম আলোয় মেয়েটার সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ছে। মুখটা অসম্ভব করুন। দু'গালে ভেজা দাগ। কাঁদছিল এতক্ষন। এখনও দু'চোখে পানি টলটল করছে।

কিছুক্ষন অয়ন কথা বলা যেন ভুলে যায়। লাজুক বলে মেয়েদের সাথে তেমন মেশেটেশে না। ইউনিভার্সিটির বান্ধবীও দু'তিন জন ছাড়া কারও সাথে যোগাযোগ নেই। মেয়েদের সাথে কথা বলার তেমন অভ্যাস নেই। আজকেই কি যেন হয়ে গেল। এমন মায়াবী চেহারার মানবী অয়ন এপর্যন্ত দেখেনি। এই মেয়ে এতক্ষন কাঁদছিল..!! এরই সাথে অন্যায় হয়েছে...!! অয়নের মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে গেল হঠাৎ।

মেয়েটা কিন্তু তাকিয়েই আছে। যেন সম্বিত হারিয়ে ফেলেছে কিছুক্ষন আগে তার সাথে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনায়।

"আপনি প্লিজ দেয়ালটা থেকে নেমে বসুন।" অয়নের মুখে কথা যোগায় অবশেষে। "আমার খুব ভয় করছে।" দ্বিতীয় বাক্য যোগ করে। মেয়েটা বসে থেকেই খুব হালকা, বিষন্ন গলায় জিজ্ঞেস করেঃ "কেন নামব?"

অয়ন কি বলবে, ভেবে পায় না। তারপর হঠাৎ তার মুখে কথা ফোটেঃ

- শুনুন, আমি না কিছুক্ষন আগে আপনার টেলিফোনে বলা কথাগুলো শুনেছি। আড়ি এতে ছিলাম না। এমনিই কানে এসেছে।

- কি শুনেছেন?

- আপনি জানেন আমি কি শুনেছি। হয়ত পুরোটা শুনিনি।
কিন্তু বুঝতে পেরেছি।

- কি বুঝতে পেরেছেন?

- আপনাকে একজন, বিশেষ একজন খুব কষ্ট দিয়েছে। আমার মনে হলো, আপনার সাথে আপনার খুব কাছের কেউ অনেক বড় অন্যায় করেছে।

- বাহ..! আপনার তো অনেক বুদ্ধি। তাহলে তো বোঝার কথা আমি এখানে কেন বসে আছি।

- শুনুন, আপনি যে জন্য বসে আছেন আর যার কারনেই বা কোন একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, সেটা কি করতেই হবে? একবার ভেবে দেখবেন প্লিজ যে আপনার এই কষ্ট পাওয়াতে তার কিচ্ছু যাবে আসবে কি না।

- আপনি কে যে আমাকে এত জ্ঞান দিচ্ছেন? আমার কষ্টের কি তা আপনাদের মত ছেলেরা কোনোদিনও বুঝবে না। আসলে আপনারা সবাই এক।

একনাগাড়ে এতগুলো কত্থা বলে মেয়েটা চুপ করে। অয়নও কি বলবে, বুঝতে পারে না। চুপ করে থাকে কিছুক্ষন। এরমধ্যে মেয়েটা অবশ্য চোখের পানি মুছে নিয়েছে। ভারী চোখের পাতা তুলে আবার তাকায় অয়নের দিকে।

- আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে? প্রশ্ন করে মেয়েটি।

- নান...না। কি যে বলেন। অয়ন যেন লজ্জা পায় প্রশন্টা শুনে।

- তাহলে আপনি গুডি বয়। বুঝবেন না প্রেম কি।

- দেখেন, আমি নিতান্তই ডালভাত ধরনের ছেলে। মেয়েবন্ধুই নেই বিশেষ, তার আবার ফিঁয়াসে। তবে কিনা প্রেম না করলেও এতটুকু বুঝি, কোন প্রেমিকরূপী প্রতারকের জন্য কষ্ট পাওয়াটা হয়ত আটোকানো যায় না। তবে তার জন্য নিজের জীবন নষ্ট করতে চাওয়া একেবারেই বোকামো।

- কিভাবে বুঝলেন আমি প্রতারিত হয়েছি?

- আপনার কথোপকথন থেকে এতটুকু অনুমান করে নিয়েছি। ভুল হয়েছে? - অয়ন প্রশ্ন করে। আসলে ওর উদ্দেশ্য কথাবার্তা বলে মেয়েটার কনসেন্ট্রেশনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া। একটু চুপ থেকে আবার বলে ওঠেঃ

- কিছু মনে না করলে একটা কথা বলব?

- কি?

- আমার না তেমন কোন বন্ধু নেই। আপনিই প্রথম অপরিচিত মেয়ে যার সাথে আমি নিজে থেকে কথা বললাম। আমরা কেউ কাউকে চিনি না। যদিও প্রতিবেশী। আপনি যদি ইচ্ছে করেন তাহলে আপনার কথাগুলো আমাকে বলবেন প্লিজ? হয়ত কিছুই করতে পারব না। তবে এতটুকু গ্যারান্টি দিতে পারি যে আমি ভাল শ্রোতা। আপনার মনটা হয়ত একটু হালকা হতো। ওহো...আমার নাম আপনাকে বলিনি। আমি অয়ন। আপনি?

- আমি নীলা।

অয়ন চমকে ওঠে প্রচন্ডভাবে। এভাবে কল্পনার সাথে সত্যিই নাম মিলে যাবে, ও বিশ্বাসই করতে পারছে না। অয়নের এই চমকে ওঠাটা নীলার চোখ এড়ায় না। ভেজা চোখে এই প্রথমবারের মত কৌতুহল ঝিলিক দিয়ে ওঠে।

- চমকে উঠলেন যে। কি হয়েছে?

- না....মানে....বললে বিশ্বাস করবেন না।

- কি বিশ্বাস করব না?

- আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আপনার নাম নীলাই হবে। কেন এরকম মনে হয়েছে, প্লিজ জিজ্ঞেস করবেন না। বলতে পারব না। শুধু মনে হচ্ছিল, নীলা নামটাই আপনাকে মানায়।

- সত্যি...! সত্যিই আপনি আমার নাম নীলা ভেবেছেন? কেন বলুন তো? আমার জামাটা নীল, এইজন্য?

- বললাম না, উত্তর দিতে পারব না। তবে বিশ্বাস করা না করা আপনার ইচ্ছে।

- আমি বিশ্বাস করলাম। আপনাকে দেখে খুব ইনোসেন্ট লাগে। মনে হয়না মিথ্যে বলতে পারেন।

অয়ন স্মিত হাসে। সাথে সাথে খুব সাবধানে একটা নিঃশ্বাসও ছাড়ে। কথার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পেরেছে ও। এখন শুধু কথা চালিয়ে যাওয়া যতক্ষন না পর্যন্ত নীলা দেয়ালটা থেকে না নামে। তাছাড়া অদ্ভুত একটা অনুভূতিও হচ্ছে ওর। জীবনে এই প্রথম কোন মেয়ের জন্য কিছু করতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে লাফ দিয়ে ওই ছাদে চলে যায় আর নীলার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।

ধুর...! যত্তসব পাগলামি চিন্তা। প্রথম দেখায় প্রেম হয়ে গেল না কি? হাহ...!! এতই সোজা হলে তো কথাই ছিল। এইসব বায়বীয় কথায় অয়নের কোন বিশ্বাস ছিল না এতদিন। আজ কি অন্য কিছু মনে হচ্ছে? তাহলে কেন কথা বলতে এত ভাল লাগছে? কেন শুধুই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে?

নীলার কথায় মনটাকে ফিরিয়ে আনে নীলার দিকে। কি দারুন একটা মেয়ে...! অয়ন উত্তর দেয় নীলার প্রশ্নের।

- ইনোসেন্ট কি না জানি না। তবে চেষ্টা করি মিথ্যা না বলতে। জীবনে জটিলতা কম হয়।

- ঠিক বলেছেন। আচ্ছা আমাকে বলতে পারেন ও কেন আমার সাথে এতদিন মিথ্যার খেলা খেলল? সত্যি বলে দিলেই পারত যে আমাকে ভাল লাগছে না। আমাকে মিথ্যার বেসাতিতে ভুলিয়ে ও আমারই বান্ধবীর সাথে প্রেম চালিয়ে গেছে। কি অমানুষ!

- এই তো ঠিক বলেছেন। অমানুষ। একটা অমানুষ থেকে মুক্তি পেয়েছেন, এর জন্য খুশি হোন। একটা অমানুষ আপনার জীবন শেষ করে দিতে পারে না নীলা। ভুলে যান। ছুঁড়ে ফেলুন আপনার জীবন থেকে অমানুষটাকে। উপড়ে ফেলুন ওর সব স্মৃতি। নিজেকে নিয়ে বাঁচুন নীলা। আপনার সত্যিকার বন্ধুদের জন্য বাঁচুন। আমিও আপনার বন্ধু হতে পারি, যদি আপনি চান। শুধুই বন্ধু।

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে যায় অয়ন। মনে হচ্ছিল, কথাগুলো বুকে চেপে আছে। নীলাও চুপ করে শোনে। তারপর আস্তে আস্তে চমৎকার একটা হাসি এতক্ষন পর নীলার মুখে ফুটে ওঠে। অয়নের মনে হয়, একেই বলে চাঁদের হাসি। ছাদটা যেন আলোকিত হয়ে গেল।

- থ্যাংকস অয়ন। আমার কঠিন সময়ে সাহায্য করার জন্য। আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি ওই শয়তানটার জন্য বাঁচব না। নিজেকে খুশি রাখব। একটা মিথ্যুক, প্রতারক, লুচ্চা, বদমাইশের জন্য নিজের জীবন কেন ধবংস করব? আপনি না বোঝালে আমি হয়ত সত্যি সত্যিই বোকার মত কিছু করে ফেলতাম।

- তাহলে আমরা ফ্রেন্ডস...!! অয়ন হাত বাড়ায় জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে।

- ডান। ফ্রেন্ডস। - নীলার কোমল হাত ছুঁয়ে যায় অয়নের আঙ্গুলগুলো। অয়নের মনে হয়, এই স্পর্ষ যেন আরও অনেকক্ষন থাকে।

- যাচ্ছি আমি। - আস্তে করে বলে নীলা। আকাশে তখন সন্ধ্যা নেমেছে।

- যাচ্ছি নয়, আসি বলুন। কাল আমি আবার এখানে থাকব। আসবেন তো? - ব্যগ্রভাবে অয়ন প্রশ্ন করে।

- হুম...আসব। আসি। - হালকা পায়ে একরাশ মুগ্ধতা আর মন উথালপাথাল করা ছড়িয়ে নীলা চলে যায়। অয়ন দাঁড়িয়ে থাকে গ্রিল ধরে।
.
.
.
.
.
"হায়...হায়...!
গেল রে...!! ইশ...!!!
কি হইলো এইটা?
একদম শ্যাষ। উফ...!!
তাকানো যায় না।"

এরকম একটা তুমুল হইচই এ অয়নের চটকা ভাঙ্গে। শোরগোলটা আসছে নিচের থেকে। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পায় অয়ন। আরে...! ও খাটে বসে কি ভাবছে তখন থেকে? নীলা কই? এক্ষুনি যে ছিল। চলে গেল না? কিন্তু....! ও এতক্ষন খাটে বসে কল্পনা করছিল। পুরো কথোপকথনটাই কাল্পনিক। নীলা নামের কেউ নেই। কিন্তু মেয়েটা কোথায়? ওই যে ছাদের কার্নিশে বসে ছিল। কোথায় ও? আর শোরগোলটাই বা কিসের?

অয়নের বুকের ভেতরটা হঠাৎ আতংকে হীম হয়ে আসে। নিজের অজান্তেই পা দুটো ছুটে যায় বারান্দায়। আটতলার এই বারান্দা থেকে রাস্তাটা পরিষ্কার দেখা যায়। অয়ন নিচের দিকে তাকিয়েই টলে ওঠে। থরথর করে কেঁপে ওঠে সারা শরীর। হাঁটুতে যেন জোর নেই।

অনেক নিচে, রাস্তায় ওটা কি? একটা পুতুল পড়ে আছে। চারপাশে মানুষের ভীড়। পুতুলটার পরনে আকাশী নীল জামা। আর চারপাশে লাল রঙের আলপনা কেটে দিচ্ছে কে যেন।

অয়ন আর ভাবতে পারে না। বারান্দাতেই বসে পড়ে। ওই পুতুলটাই কি নীলা? নাহ...! অয়ন মানবেই না। নীলা তার আকাশবন্ধু। নীলা তার অপার্থিব প্রিয়া।

নীলারা বড্ড বোকা। পার্থিবতার মিথ্যেমিতে বড় সহজেই অপার্থিব হয়ে যায়। বাঁধভাঙ্গা কান্নায় অয়ন লুটিয়ে পড়ে।

(সমাপ্ত)

#গদ্যতাড়না

(১০ জুলাই ২০১৭ | ১২:০৪ মিনিট)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:০৬

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: বড্ড চমকে দিলেন!!

১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৫৮

মন থেকে বলি বলেছেন: টুইস্টটার কথা বলছেন?
এটা ছাড়া পানসে হয়ে যেত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.