নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Stay Hungry. Stay Foolish.
স্মৃতিরা ফিরে ফিরে আসে।
পার হয়ে গিয়েছে তিরিশটি বছর। কিন্তু সেই একই ঘটনা। একই বাক্যবিনিময়। পার্থক্য শুধু তখন আমি ছিলাম সন্তান, বাবার সাথে নামাজ পড়েছিলাম। আর এখন আমার সন্তানরা তাদের বাবার সাথে পড়ছে।
শব-ই-কদরের রাত। বসার ঘরে চাদর পাতা হয়েছে। একপাশে জ্বলছে আগরবাতি। আমরা দুই ভাই আব্বু আর দাদুর সাথে নামাজে দাঁড়িয়েছি। এশার নামাজ শেষ করেছি বড়দের সাথে। এরপর শুরু হলো দু'ভায়ের নফল কম্পিটিশন। নামাজ তো নয়, যেন কেবল কপাল ঠকাশ ঠকাশ করে বাড়ি খাচ্ছে জায়নামাজে। যে বেশি রাকাত পড়তে পারবে, সেইই জিতবে। মনে আছে, দাদুর উৎসাহে একশ রাকাত পড়ে ফেললাম একবার। আরেকবার সারারাত ধরে পড়েছিলাম নামাজ। সবশেষে 'বেতর' নামাজ দিয়ে ব্র্যাকেটবন্দী করা নফলকে। ফজরের নামাজ পড়ে তারপর ঘুম।
মনে আছে ওজু করার ভয়ে পানি কম খেতাম, যেন পেশাব না লাগে। কিন্তু তা-ও শেষ রক্ষা হতো না সবসময়। একবার না একবার দৌড়াতেই হতো। আর নামাজের ফাঁকে ফাঁকে খাওয়া দাওয়া। টেবিল ভর্তি খাবার। খাও আর নামাজ পড়। খাওয়ার দিকেই আগ্রহটা থাকত বেশি।
মাঝে মাঝে দরজা খুলে বাইরে বের হতাম। আশেপাশের বাড়ির সবাই বাইরে। সমবয়সীরা গল্পগুজব করে আবার ঢুকে যেতাম নামাজে।
এভাবেই কদরের রাত পার হতো আমার ছোটবেলায়। তারপর আস্তে আস্তে কোথায় যেন হারিয়ে গেল অভ্যাসটা। দাদু নেই হয়ে গেল। আব্বু বুড়ো হয়ে গেল। আমিও ছোট থেকে বড় হয়ে গেলাম কখন যেন। সারারাত জাগা আর হয় না। কোনমতে বারো রাকাত নফল শেষ করে ফেসবুক খুলে বসি। কদরের রাত পার হয়ে যায়।
আজ বহু বছর পর আমি আমার শৈশবের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি দেখিলাম। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই আমি দুই ছেলেকে নিয়ে জায়নামাজে দাঁড়িয়েছি। দু'পাশে দু'জন। ওদের কথোপকথন কানে এলোঃ
"আমি কিন্তু সারা রাত পড়ব।" বড়টি টার্গেট ঠিক করে।
"আর আমি যদি ১০০ রাকাত না পড়ি তাহলে আমার নাম তওসিফই না।" ছোটোর ধনুর্ভঙ্গ প্রতিজ্ঞা।
আমি নামাজের নিয়মকানুন বলে দেই। তারপর অবাক হয়ে দেখি, দুই ভাই সেই একই ভঙ্গিতে দ্রুতগতির কম্পিটিশন লাগিয়েছে নামাজের। সেজদার ধাক্কার চোটে জায়নামাজ স্থানচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। আমার শৈশব যেন ফিরে এলো এক মুহূর্তের জন্য।
কিন্তু জেনারেশন গ্যাপ বলে কথা। কিছু অদ্ভুত তো থাকবেই। আমি আট রাকাত পড়ে একটু কোরান শরীফ পড়ার চেষ্টা করছি। বহুদিন অভ্যাস নেই। তাই অক্ষর চিনতে সমস্যা হয়। বড় ছেলেকে পাশে বসিয়ে বললামঃ
"বাবা, আমার উচ্চারন ঠিক আছে কিনা দেখে দাও।"
মানারাতে পড়া ছেলে আমাকে সুন্দরভাবে কোরান পড়িয়ে দিল। বুকটা আনন্দে ভরে উঠল। হঠাৎ শুনি ছোটটা বলছেঃ
"ভাইয়া, তুমি এইটিতে এলবিডাব্লিউ হয়ে গেছ। আমি সেভেন্টি ফোর।" ছোট ক্রিকেটের পোকা। নামাজের বর্ণনাও তাই ইনিংসের হিসেবে। এই শুনে বড় ছেলে তড়াক করে দাঁড়িয়ে গেল জায়নামাজে। ভয়, যদি হেরে যায় ছোট ভাইয়ের কাছে।
আমি কোরান পড়ছি আর ওরা নামাজ। কিছুক্ষন পর বড়টা রণে ভঙ্গ দিল। আর পড়বে না নামাজ। সেও কিছুক্ষন কোরান পড়ল। এরমধ্যে ছোট ছেলে, মানে তওসিফ কিন্তু সেজদা দিয়েই যাচ্ছে। বেচারা কোন সুরাই পুরো পারেনা। "ক্বুলহু আল্লাহ"র দুই লাইন সম্বল করে চালিয়ে যাচ্ছে। ছোট মানুষ। এর থেকে বেশি আর কি করবে? এইই ঢের।
হঠাৎ একসময় দেখি, ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে এসেছে। তাক করে ধরেছে আমার দিকে। ঠিক যেভাবে সেঞ্চুরিয়ান ব্যাটসম্যান তার প্যাভিলিয়নের দিকে দেখায়। সেই সাথে মুখে বোলঃ "সেঞ্চুরি বাবা, সেঞ্চুরি।"
এই ক্রিকেটিও যুগে শব ই কদরের রাতে ১০০ রাকাত নফল নামাজ পড়ার উদযাপন নিজ চক্ষে দেখে জীবন সার্থক করলাম।
#স্মৃতিতাড়না
(২৩ জুন ২০১৭ | রাত ২:০৮ মিনিট)
২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:৩৭
মন থেকে বলি বলেছেন: হাহ হাহ হাহ...
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৫৫
পারভেজ রশীদ বলেছেন: এই ক্রিকেটিও যুগে শব ই কদরের রাতে ১০০ রাকাত নফল নামাজ পড়ার উদযাপন নিজ চক্ষে দেখে জীবন সার্থক করলাম।