নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Stay Hungry. Stay Foolish.
(এ গল্প সেই ল্যান্ডফোনের দিনগুলোর। যখন হঠাৎ বেজে উঠত সেই রিনঝিন...! এই গল্প অপেক্ষার। এ গল্প তিন্নি আর সুজনের। এ গল্পের শুরু তাই...)
ক্রিং... ক্রিং.... ক্রিং....
তৃতীয়বার বাজনা শেষ হওয়ার আগেই আমি লাফ দিয়ে এসে রিসিভারটা ক্রেডল থেকে প্রায় ছিনিয়ে নিলাম।
'কেমন আছিস, তিন্নি?'
- তখনও হাঁপাচ্ছি আমি। ফোনটা আম্মু তোলার আগেই পৌঁছানোর জন্য আমাকে পুরোটা বাড়ি পার হতে হয়েছে।
ওপাশ থেকে অকৃত্রিম ঝরঝরে বিষ্ময় ঝরে পড়লোঃ
'কি করে বুঝলি, আমি?'
উফ...! এত্ত মায়াময় স্বর কি করে হয় কোন মানুষের? আমি কিছু বলার আগেই আবার সেই মুক্তোদানার শব্দ -
'অন্য কেউও তো হতে পারত। এক্কেবারে নাম ধরে ডাকলি ক্যামন করে?' - তিন্নি অবাক গলায় জিজ্ঞেস করলো।
আমি হাসলাম।
কি করে বোঝাই, ক্যামন করে আমি বুঝতে পারি আগে থেকেই যে তিন্নির ফোন আসছে। তা সে যখনই হোক। এখন বাজে বিকেল সাড়ে চারটা। অন্যদিন হলে এতক্ষনে আমি লাবু আর আরমানের বাসার পথ প্রায় অর্ধেক পার হয়ে গেছি। কিন্তু আজ যাইনি। সেই সকাল থেকেই মনটা বলছিল - আজ না গেলেই ভাল। আজ বাজবেই। কি যে অদ্ভুত একটা অনুভূতি!
প্রায় দেড় মাস পর আজ তিন্নির ফোন আসলো। একে তো বাসায় ফোন নেই, তার ওপর ওর মা'র নখদর্পনে মেয়ের প্রতিটা গতিবিধি। কখন, কোথায় একটা ফোন পাবে - সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয় ওর। তাহলে যদি একবার পারে ফোন করতে। আমার জানার কোনও সুযোগ নেই তিন্নি কি আজ ফোন করবে, না কি। কিন্তু ঠিক ফোন করার দিনটাতেই কেমন করে যেন বুঝে যাই - আজ ওর গলা শুনবো।
আমি বললামঃ
"আজ কেন যেন মনে হচ্ছিল, তুই ফোন করবি। বাসায়ই ছিলাম।" বেশি ব্যাখ্যায় গেলাম না। "তারচে' তোর কথা বল। এতদিন পর ফোন করলি যে? কোত্থেকে করেছিস? আন্টি কই?" - হড়বড় করে প্রশ্নগুলো বেরিয়ে এলো মুখ দিয়ে।
"আম্মুকে নিয়ে রেহানা আন্টির বাসায় এসেছি। আম্মু আর আন্টি পাশের বিল্ডিংএ গেছে। এই চান্সে আমি ওদের ফোন থেকে করলাম। আর সেদিন না কথা হলো? উমমম....কবে, বলতো? ওহ মনে পড়েছে। গত শুক্রবারের আগের আগের সপ্তাহে।" - তিন্নি উত্তর দিল।
আসলে এইই হয়। এত অপ্রত্যাশিত ভাবে তিন্নি ফোন করে, তাও-ও আবার অনেকদিন পর পর, একেক জায়গা থেকে। আগে থেকে বোঝার কোন উপায়ই নেই। কথা বলার পরের কয়েকদিন খুব অস্থির লাগে। আবার ফোন আসার দুই- তিনদিন আগে থেকে একই রকম লাগা শুরু হয়। এরপর যতক্ষন কথা না হয়, ততক্ষন স্বস্তি নেই। এদিকে আমি যে ফোন করবো ওকে, সে সুযোগও বন্ধ। বাসার ফোন আব্বু লক করে রেখেছে। ফোনটাও তাদের বেডরুমে রাখা। বাইরে থেকে করা যায়। কিন্তু করবো কোন নম্বরে? উফ...! এই একতরফা যোগাযোগ আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
আমি কল্পনা করার চেষ্টা করলাম, তিন্নি কিভাবে বসে আছে। আবছা একটা ছবি তৈরি হয় মনে। চেহারা আসে না। আসবে কি করে? আমি তো ওকে দেখিই নি। ও-ও না। শুধু গত দু'বছর ধরে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়।
কথা হয় আমার খুব প্রিয় একজন বন্ধুর সাথে - তার নাম, তিন্নি।
হাসি লাগে এখনও ভাবলে।
চিনি না, দেখি নি - অথচ সেই-ই হয়ে গেছে প্রাণের বন্ধু! যা ইচ্ছা বলা যায়। আড্ডা চলতে থাকে। ফোনে যদিও, কিন্তু ওই সময়টুকুতে কিচ্ছু মনে থাকে না। ওই ই একমাত্র মেয়ে, যাকে আমি 'তুই' বলি নির্দ্বিধায়। আসলে, ওকে তুমি বলতেই আড়ষ্ঠ লাগে আমার।
তিন্নিটা যে কেমন...! এত গ্যাপ দিয়ে ফোন করে যে ভুলেই যাই যে ও আছে। আমি বলি -
"একটা ফোনের কানেকশন নে না। সমস্যা কি?"
"আম্মু রাজি না। যদি উল্টোপাল্টা ফোন আসে? সেই ভয়েই নিতে চায় না।"
বুঝি - কথায় যুক্তি আছে।
আমরা গল্প করি। অনেকদিনের জমানো কথা গুলো স্রেফ উগরে দেই। আমার ফিঁয়াসের কথা বলি। কি নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে প্রায়ই - সেটার সমাধান চাই। তিন্নি মন দিয়ে শোনে। অনুরোধ করে ঝগড়া মিটিয়ে ফেলতে। ওর অনুরোধের আকুলতা দেখে মনে হয়, নিজের বোনের জন্য বলছে। মাঝে মাঝে রাগ লাগে। আরে...! তুই কার বন্ধু - আমার, না কি আমার প্রেমিকার?
আমার রাগী গলা শুনে তিন্নি ঝরঝর করে হাসে।
ও-ও শেয়ার করে ওর প্রিয় কথা গুলো। কিভাবে সেই ছেলেটা ওকে কষ্ট দেয় শুনে আমার হাত-পা রাগে রি রি করে। ব্যাটাকে একহাত দেখে নিতাম সুযোগ পেলে। এইরকম একটা প্রাণবন্ত মেয়ের সাথে যে কেউ দূর্ব্যবহার করতে পারে, বিশ্বাসই হতে চায় না। ওকে বলিঃ
"শোন, তোর রাব্বিকে বলে দিস, ওর সাত কপাল যে তোর সাথে প্রেম করছে। গাধা..!"
মন খারাপ থাকলে তিন্নি চুপ করে থাকে। রাগে না আমার কথা শুনে।
"না রে..। রাব্বিকে তুই এরকম বলিস না। ও আসলে এরকমই। আমি বেশি কষ্ট পাই নি।"
রাব্বিকে আমি চিনতাম। একসেন্ট্রিক টাইপের ছেলে। অহংকারীও খুব। কোনভাবেই আমার বন্ধুটার সাথে যায় না। কিছু বলরাম না আর। থাকুক...তিন্নি খুশি থাকলে আমার সমস্যা কি?
হয়তো কোন একদিন সন্ধ্যায় ফোন বাজল। আব্বু ধরেছে। আমি পৌঁছানোর আগেই। বাসায় থাকে তো এই সময়টা।
"কে বলছো?" - মেয়ের গলায় হ্যালো শুনেই বাবার কপালে তিন ভাঁজ। 'বন্ধু' শুনে তো এমন লাফ দিয়ে উঠলেন, যেন কালা জাহাঙির চাঁদা চেয়েছে, তাও আবার এক ঘন্টার মধ্যে।
"সুজন, এই সুজন। এদিকে আয়। কে এই মেয়ে? বন্ধু কি? হ্যাঁ...কিসের বন্ধু? আর যেন কোনদিন ফোন না করে। বলে দিস।" - ফোনটা ঠক করে ওয়ারড্রোবের ওপর রেখে আব্বু চলে গেল।
আমার মনে হলো, আমি আর কোনদিন তিন্নির সাথে কথা বলতে পারব না। আমার বাসায় ফোন করে এরকম অপমান...! উফ...!!!
হঠাৎ মনে হলো, লাইনে কি এখনও আছে? রিসিভারটা কানে চেপে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম - "হ্যালো। হ্যালো তিন্নি...। আছিস?"
"হুম...আছি তো।" - সেই উচ্ছ্বল স্বর। কিন্তু কোথায় যেন তারটা ছিঁড়ে গেছে।
"এই শোন...আমি খুব স্যরি রে।
আসলে আব্বু...মানে....তুই কিছু মনে করিসনা দোস্ত। কি যে হয়ে গেল।" - আমি সাফাই গাইবার অক্ষম চেষ্টা করি।
"নাহ....মনে করব কেন? বুঝেছি। তুই ভাবিস না। আর এরকম কত করে মানুষ আমার সাথে। আমার সহ্য হয়ে গেছে।" - একটু যেন কান্নাভেজা শোনালো ওর গলাটা।
বুকটা মুচড়ে উঠল।
সামান্য একটা ফোনই তো। এই শালার ফোনটাই আছড়ে ভেঙে ফেলতে মন চাইছে। কিন্তু ফোন ভাঙলে যে আমার বন্ধুটাও হারিয়ে যাবে। নিজেকে তাই সামলাই।
এইভাবেই কাটে আমার দিন। আমার বন্ধুর সাথে। আমার বাবা মা অবশ্য প্রেমের কতগা জানে না। তবে আমার ফিঁয়াসেকে দেখেছে অনেকবার। একসাথেই পড়তাম তো। তার ওপর ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। তাই তাদের আপত্তি ছিলনা - একটা মেয়ে তাদের ছেলের সাথে মিশবে। কিন্তু কোথাকার কোন মেয়েবন্ধু ফোন করে ছেলের সাথে কথা বলবে, তাতেই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে তাঁদের কাছে। কি আর বলব। এইই কপাল।
তা-ও যেন কি রকম হয়ে যাচ্ছিলাম দিন দিন। যতই দিন গড়ায়, তিন্নি আমার আপন থেকে আপনতর হতে থাকে। আর আমিও ওর। প্রায় এক দেড় মাস পর পর তিন্নির ফোন আসে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার যে কোনদিনও আমার মিস হয় না। সকাল থেকেই আমার সিক্সথ সেন্স বলতে থাকে - আজ ফোন বাজবে।
আমি টের পাচ্ছিলাম - সুমনা, মানে আমার প্রেমিকার সাথে সম্পর্কটা কেমন যেন আলগা হয়ে যাচ্ছে। ও-ও সেটা অনুভব করছিল। আমি যেরকম ব্যাকুল হয়ে একটা অদেখা মেয়ের জন্য অপেক্ষা করতাম, সুমনার জন্য ততটা হতো না। হয়ত সুমনার সাথে প্রায় প্রতিদিন দেখা হত বলেই। আর কেন যেন তিন্নির সাথে আমি যতটা সহজ হতে পারতাম, সুমনার সাথে ততটা পারতাম না।
এরমধ্যে ঘটে গেল একটা ঘটনা। খবর পেলাম, তিন্নি খুব অসুস্থ্য। অস্থির হয়ে উঠলাম। খোঁজ নেবার কোন উপায় নেই কারন ওর ফোন নেই। ও নিজেও বাইরে গিয়ে ফোন করতে পারছে না। এভাবেই কেটে গেল অনেকগুলো দিন। আর আমি টের পেলাম সেই অমোঘ সত্যি।
আমি তিন্নিকে ভালবেসে ফেলেছি। একদমই একতরফা ভাবে। জানি, ও আমাকে বন্ধুর বেশি কিছু ভাবে না। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিলাম - নিজের কাছে সৎ থাকব। তাই যেদিন সুমনার সাথে শেষ দেখা হলো, ওকে বলে ফেললাম আমার মনের কথা।
সুমনার রিয়্যাকশন কিরকম ছিল, তাতো অনুমান করাই যায়। একটাও কথা না বলেই ও চলে গেল। আমি ভারমুক্ত হলাম। নিজেকে অপরাধী লাগছিল। কিন্তু যে সম্পর্ক ছিঁড়ে গেছে, তাকে মিথ্যা আশ্বাসে চালিয়ে যাওয়ার মত প্রতারক নিজেকে করতে চাইনি।
কিন্তু এরপরই আমার টেনশন শুরু হলো। তিন্নিকে আমি ভালবেসেছি। কিন্তু ও টো আমাকে বাসেনি। কোনরকম প্রকাশও করেনি। তাহলে?
তিন্নির ফোন আসল অবশেষে। সকালের দিকটায়। সাধারনত ও এই সময় করে না। আমি ফোন ধরলাম। বুকের মধ্যে যেন ড্রাম বাজছে।
"এই তিন্নি, শোন, আমি না একটা কথা বলব? তুই রাগ করিস না প্লিজ।"
তিন্নি জিজ্ঞেশ করলঃ
"কি বলবি, বলে ফেল। আবার অনুমতি নিচ্ছিস কেন?"
"সুমনার সাথে আমাদের রিলেশনটা আর নেই।"
"নেই মানে? বলিস কি? কেন? কি হলো?" তিন্নির গলায় অকৃত্রিম বিষ্ময় ঝরে পড়ল।
"সে অন্য ব্যাপার। তুই বুঝবি না। আমরা দু'জনে মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু....কিন্তু....!!"
"কিন্তু কি? বল।" তিন্নি বলে উঠল।
সুজন তার হৃদপিন্ডের উন্মাতাল ড্রামবিট উপেক্ষা করে তার সেই 'না-দেখা' বন্ধু তিন্নিকে বলেছিলঃ
"তোকে না আমি ইদানিং অন্যরকম ভাবি। ঠিক বোঝাতে পারছি না। বন্ধুত্বের বাইরে। কিন্তু লাভ কি এরকম ভেবে, তাই না?"
ল্যান্ডফোনের অন্য প্রান্তে থাকা সেই 'না দেখা' তিন্নি উত্তরে বলেছিলঃ
"আমিও যে ওই অন্যরকমই ভাবছি তোকে, অনেকদিন ধরেই। এতদিন লাগল এটা বলতে?"
.
.
এরপর.....সকালটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সকাল হয়ে গেল। সূর্য নতুন আলো নিয়ে রাঙালো চারিদিক।
.
.
এরপর..
.
.
কেটে গেছে ঠিক বিশটি বছর।
০২ রা জুন, ২০১৭ রাত ২:৩৫
মন থেকে বলি বলেছেন: একদম যথার্থ বলেছেন।
অনেকদিন পর আপনার দেখা পেলাম।
কেমন আছেন?
২| ০২ রা জুন, ২০১৭ রাত ২:৪২
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ভাল। আপনিও তো বোধহয় তেমন আসেন না!! ভাল আছেন তো??
০২ রা জুন, ২০১৭ রাত ৩:২০
মন থেকে বলি বলেছেন: ভাল আছি।
তবে লেখালেখি কিছুটা কমেছে সত্যি।
৩| ০২ রা জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৫২
সুমন কর বলেছেন: সাবলীল বর্ণনা, ভালো লাগল।
০৩ রা জুন, ২০১৭ সকাল ৯:২৮
মন থেকে বলি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুন, ২০১৭ রাত ১:৫৬
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: সত্যিকারের ভালবাসা প্রকাশে না অনুভবে।। হৃদয়ের অনুভুতিতে।।