নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক কিছু লিখতে চেয়েছিল। কিন্তু লেখাগুলো খুঁজে পায়নি। অনেক কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু সেগুলো শোনারও সময় কারও ছিল না

মন থেকে বলি

Stay Hungry. Stay Foolish.

মন থেকে বলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যগল্পঃ কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:১৭

"এই...এই..।
আরে কুম্ভকর্ণ উঠো।
আমি কলেজে যাইতেছি। ফিরিতে দেরি হইবে। ভাল করিয়া বুঝিয়া লও বাচ্চাদের কি পড়াইবে।"

নাসিকাবাদ্যকে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করিয়া আমি তখন বেহেশতের নন্দনকাননে কেলি করিবার উদ্যোগ লইতেছিলাম। আমার জন্য বরাদ্দকৃত হুরগন তখন আমার হস্তে শরাবন তহুরা তুলিয়া দিতেছে। কেহ চামর দুলাইয়া বাতাস করিতেছে। কেহ কটাক্ষ মারিতেছে। এইসব দারুন ব্যাপার-স্যাপার চলিতেছিল।

মৃদুমন্দ হাস্যে শরাবের পাত্রে চুমুক মারিতে যাইব, ঠিক সেই মুহুর্তে হুরগণের নেত্রী কেন জানি আমার চুলের মুঠি ধরিয়া ঝাঁকাইয়া দিল হঠাৎ। বিস্মিত আমি রাগিয়া উঠিব কিনা সিদ্ধান্ত লইতে বিলম্ব করিতেছি, তাহারই মধ্যে পার্শবর্তী বৃক্ষ হইতে এক বানর আমার মস্তকের উপর পেচ্ছাপ করিয়া দিল। আর তাহাতে আমার চুল, দাড়ি মায় লুঙি পর্যন্ত সিক্ত হইয়া উঠিল।

খাবি খাইতে খাইতে লাফাইয়া উঠিয়া বসিলাম শয্যায়। কোথায় হুর, আর কোথায়ই বা শরাবন তহুরা? আধ মগ ভর্তি জল লইয়া শয্যাসঙ্গীনী আমার সম্মুখে দন্ডায়মান। চুলের গীড়া টনটন করিতেছে।

ওহো... এতক্ষন স্বপ্ন দেখিতেছিলাম তাহা হইলে।

এইবার বোধদয় হইলঃ স্বর্গ এবং অপ্সরাগন হয় শিশুদের রূপকথায়, নয় বড়দের স্বপ্নেই থাকে। বাস্তবে থাকে গৃহিনী এবং মগ ভর্তি শীতল পানি। সাথে মৃদু কেশাকর্ষণ।

হাঁ করিয়া তাকাইয়া ছিলাম গৃহিনীর পানে। তৎক্ষনাৎ উপোরোল্লিখিত শব্দাবলী একদম কর্ণকুহর ফাড়িয়া সাঁৎ করিয়ে মস্তিষ্কে সেঁধাইয়া গেল। ইত্যবসরে আমার হস্তে একখানা কাগজ গুঁজিয়া 'মাদাম' উল্কাবেগে নিষ্ক্রান্ত হইয়া গেলেন। অফিসের না কি দেরি হইয়া যাইবে।

কপাল...! কি আর বলিব। আস্তে আস্তে উঠিয়া বসিলাম।

ধাক্কার তোড়ে কোমরের কষি আলগা হইয়া গিয়াছে। সেই সিক্ত বসনেই শৌচাগারের উদ্দেশ্যে প্রস্থান করিলাম। গ্রীষ্মকাল বলিয়া রক্ষা। শীত হইলে ক্যালাইয়া যাইতাম।

শৌচাগার হহইতে বাহির হইয়া দেখি আরেক কান্ড।

গৃহপরিচারিকা প্রত্যহ এই সময়ে শয্যা গুছাইয়া রাখে। আজও সে আসিয়াছে। কিন্তু শয্যায় হস্ত স্পর্ষ না করিয়া দেখি সে অবাক দৃষ্টিতে শয্যার সিক্ত অংশটির দিকে তাকাইয়া আছে। নির্ঘাৎ ভাবিতেছে এই বুড়া বয়সে মুতিয়া দিয়াছি। হায় কপাল! দরজা খোলার শব্দে প্রথমেই তাহার দৃষ্টি ঘুরিয়া গেল আমার সিক্ত লুঙিখানার দিকে। সেইখান হইতে আমার মুখমন্ডলে আসিয়া থামিল। তাহার দৃষ্টিই বলিয়া দিল - এইমাত্র সে নিশ্চিত হইল যে মুত্রকার্যটি আমাদ্বারাই সংঘটিত হইয়াছে।

কি আর করিব?

চিরকালই উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়াছে। আজিবা তাহার ব্যতিক্রম হইবে কেন? সবই কপালের ফের। গম্ভিরমুখে তাহাকে একটি শুকনা লুঙি আনিবার হুকুম করিলাম।

ইত্যবসরে কর্তব্যবোধ চাড়া দিয়া উঠিয়াছে। দ্বায়িত্ব যখন পালন করিতেই হইবে, তবে বৃথা কালক্ষেপনে কি ফয়দা? প্রথমেই পুত্রদ্বয়কে মিলিটারি কায়দায় উঠাইবার দৃঢ় মানসিকতা লইয়া তাহাদের কক্ষে প্রবেশ করিলাম এবং মেঘমন্দ্র স্বরে হুংকার ছাড়িলামঃ

"উঠ বেয়াদপ। বেলা দুপুর হইল, পড়াশুনার নামগন্ধ নাই। খালি ঘুম।"

আমার এই বজ্রগর্জনের ফলাফল হইল দেখিবার মত।

কনিষ্ঠপুত্র উল্টাদিকে পাশ ফিরিয়া শুইল। আর জ্যেষ্ঠ পুত্র মুদ্রিত নয়নে বলিলঃ

"ড্যাড, ত্যাক্ত করিও না। মম আমাদের ৯টা পর্যন্ত ঘুমাইতে বলিয়াছে। পরে উঠিব।"

উলটা ফাপড় খাইয়া খাবার টেবিলে আসিয়া বসিলাম। হঠাৎ খেয়াল গেল হাতে ধরা কাগজের দিকে। নির্দেশাবলী পড়িয়া লই প্রাতঃরাশ করিতে করিতে।

১নং নির্দেশেই বলা রহিয়াছেঃ
খবরদার..!! বাচ্চাদের নয় ঘটিকার আগে ডাকিবে না।

হুম...! আগে পড়িলে ভাল হইত। মাতা-পুত্রের গতরাত্রেই কি প্ল্যান হইয়াছে তাহা আমার গোচরে আসার কোন কারন ছিল না। তাই এই মিসফায়ার। আচ্ছা...! আমারও টাইম আসিবে। নয় ঘটিকা বাজিতে আর বিশ মিনিট বাকি।

টিক...টিক...টিক...টিক...ঢং। নয়টা বাজে।

মুহূর্তেই পুত্রদ্বয়ের কর্ণে মোলায়েম মোচড় মারিয়া উঠাইয়া দিলাম। অহোঃ....এ হইলো শঠে শঠ্যাং। যেমনি 'ইয়ো ইয়ো' দেখাইয়াছিলি তেমনি মোচড় খাইলি। এইবার দেখিবি আমি কি ইশটাইলে তোদের পড়াই।

নির্দেশাবলীর দ্বিতীয় অংশে লিখা রহিয়াছে কাহাকে কি পড়াইতে হইবে। তড়িৎগতিতে দুই শাখামৃগকে দুই টেবিলে বসাইয়া দিলাম। মধ্যে রহিল একটি জালি বেত।

অবাক হইবার মত কিছু নহে।

বিদ্যাদানে আমি প্রাচীন গুরুকুল প্রথায় বিশ্বাসী। সঠিক মাত্রায় ঘা কতক পড়িলে বিদ্যা প্রবেশের রাস্তা সুগম হয় - ইহাই নিপাতনে সিদ্ধ বলিয়া জানিয়াছি। যদিচ উহাদের মাতা আধুনিক পদ্ধতিতে 'শিশুদেরকে হ্যাঁ বলুন' নীতিতে পাঠদান করেন, কিন্তু এক্ষনে তাহারা তো আমার কবলে। পণ করিলাম, আজ এমন পড়া পড়াইব যে মাতৃদেবী গৃহে প্রবেশ করিয়া আমার কলাকুশীলতায় বিমোহিত হইবেন।

সুতরাং আবার বজ্রগম্ভীর স্বরে পুত্রদ্বয়কে উহাদের সিলেবাস বুঝাইয়া দিলাম। কড়া হুকুম হইলঃ কোন শব্দ হইলেই প্রহার। পড়া শেষ হইবে ঠিক তিন ঘন্টায়।

সিলেবাস দেখিয়া দুইজনেই দেখি উসখুস করিতেছে। কিছু হয়ত বলিতে চায়, কিন্তু শুনিতেছে কে? পড়া হইবে মিলিটারি স্টাইলে। আজ আমিও দেখাইয়া দিব - যে অফিস করে সে পড়াইয়া বিদ্যাদ্বিগগজও করিতে পারে।

ইতোমধ্যে সামান্য প্রতিবাদ করিতে গিয়া বড় পুত্র থাবড়া এবং ছোটটি চাঁটি খাইয়াছে। লাঠি সহযোগে বিদ্যা পরিবেশন এখনও শুরু করি নাই। তবে শিঘ্রি সেই সুযোগ আসিবে আশা রাখি।

বলিয়া রাখি, পুত্রদ্বয়ের উসখুস কিন্তু কমে নাই। উহারা কি যেন একটা বলিবেই পণ করিয়াছে। শুধুমাত্র 'জালি বেতের' প্রভাবে মুখ বন্ধ রাখিয়াছে। আমিও প্রাতঃকালের ভাঙা স্বপ্নটি জোড়া দিবার চেষ্টায় চক্ষু মুদ্রিত করিয়া প্রাণপণে অপ্সরাদিগকে ভাবিতে লাগিলাম।

দুই ঘন্টা অতিক্রান্ত হইয়া গেল। তিন ঘন্টা গেল। আমি এখনও সুখস্বপ্নে বিভোর।

টিং..টং...টিং..টং...। কলিংবেল যেন বজ্রগর্জনে আছড়াইয়া পড়িল। চমকাইয়া সজাগ হইয়া দেখি, দুইজনই হতাশ মুখে বসিয়া আছে। দরজা খুলিতে যাইবার পূর্বে জিজ্ঞাসিলামঃ

"এইয়ো...পড়া সমাপ্ত করিয়াছিস?"

উহারা মস্তক আন্দোলিত করিল। কিন্তু অভাগা আমি শুধু আন্দোলনটাই দেখিলাম, উহাদের অনিশ্চিত ভাবটি আমার পোড়া চক্ষু এড়াইয়া গেল।

সিনা টান টান করিয়া দ্বার উন্মোচন করিলাম। লাল শাড়িতে রূপের ঝলকে চোখ ধাঁধাইয়া মর্ত্যের অপ্সরা, ওর্ফে গৃহিনী প্রবেশ করিলেন। আমার চেহারায় একটা প্রেমময় আভা ফুটিয়া উঠিতেছিল। কিন্তু মিলাইয়া গেল পরের ক্যাটক্যাট শব্দে। উফ...! কথা তো নহে, যেন মেশিনগানের গুলি।

"কি...ঠিকমত পড়াইয়াছ তো? না কি সারাক্ষন মুঠোফোন গুঁতাইতেছিলে? চক্ষু দেখিয়া তো ঠাহর হইতেছে একচোট ঘুমও দিয়া দিয়াছ।"

অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স - এই আপ্তবাক্য স্মরণ করিয়া তেজের সহিত পাল্টা গুলি ছুঁড়িলামঃ

"যাও না...উহাদিগের পড়া ধরিলেই বুঝিতে পারিবে। তুমি নিজেও এত চমৎকারভাবে পড়াইতে পারিতে না।"

গৃহিনী পাঠকক্ষে আসিয়া প্রবেশ করিলেন। দু'দন্ড অবলোকন করিলেন।

আর তাহার পরই...উফ...!!

তাহার পরই যেন নরক ভাঙিয়া পড়িল।

"এই তোমার পড়ানো। তা-ও বেত লইয়া..!!! উলটাপালটা কি পড়াইয়াছ? আমি কি লিখিয়া দিলাম, আর তুমি কি ফলো করিলে? চক্ষুদ্বয় কি মস্তকে, না কি হাঁটুতে?

বলো। জবাব দাও।
কি করিতেছিলে? এই সামান্য কাজও পার না। হায় খোদা..!!
বাপ-মা ইহা কাহার গলায় আমাকে ঝুলাইয়া দিল রে..!!!"

মড়াকান্না শুনিয়া মৎ মস্তকে যেন বজ্রাঘাত হইল। কি ভাবিয়াছি, আর হইলোটা কি।

তড়িঘড়ি নির্দেশখানা বাহির করিলাম। ২ নং পয়েন্টে বলা আছে বড়টি ইতিহাস এবং বিজ্ঞান পড়িবে। আর ৩ নং-এ বলা আছে ছোটটি গণিত এবং বাংলা পড়িবে।

আমি তাহাই পড়াইয়াছি।

শুধুমাত্র বড়-ছোট উলট পালট হইয়া গিয়াছে। বড়কে পিটাইয়া গণিত এবং বাংলা পড়াইয়াছি যাহা গত রাত্রিতেই শেষ করা হইয়াছিল। একই ঘটনা ঘটিয়াছে কনিষ্ঠের বেলায়। উফ...কি ভীষন দুর্ঘটনা!

এই বিষয়টি-ই পুত্রদ্বয় এতক্ষন বুঝাইতে চাহিতেছিল। অর্বাচিন আমি চক্ষু থাকিতেও অন্ধ হইয়া গিয়াছিলাম। এখন 'প্রহার' মাটিতে পড়িবে, কি পিঠে পড়িবে সেই দোলাচলে দুলিতে দুলিতে ভাবিলাম -

নিস্তব্ধতা হিরন্ময়...তাই চক্ষু-কর্ণ বন্ধ করিয়া রাখাই শ্রেয়।

(সমাপ্ত)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:২৭

জল্লু ঘোড়া বলেছেন: হা হা হা। রম্য পড়িতে পড়িতে ভাত খাওয়ার মত জরুরী কম্যও ভুলিয়া গেলাম।

পি পি (প্রস্রাব নয়) লাচ।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৫৯

মন থেকে বলি বলেছেন: ভাত খাইয়া আরেকবার পড়িয়া লউন।
দেখিবেন, অন্যরকম লাগিবে।

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:২৮

ঢাকাবাসী বলেছেন: প্রায় অপ্রচলিত সাধু ভাষায় চমৎকার লেখাটি খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ লেখক।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:০২

মন থেকে বলি বলেছেন: সাধু ভাষা আমার অতীব প্রিয়।
যেহেতু ইহা আপনার ভাল লাগিয়াছে, নিচের লিংকের লিখা অবশ্যই মজা লাগিবে।
http://www.somewhereinblog.net/blog/tmh77bd/30187522

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৩৩

আমি চির-দুরন্ত বলেছেন: এইমাত্র সে নিশ্চিত হইল যে মুত্রকার্যটি আমাদ্বারাই সংঘটিত হইয়াছে।
এইবার আপনার গল্প পড়িয়া হাসতে হাসতে আমার মুত্রত্যাগের উপক্রম হইয়াছে। =p~ =p~ =p~ =p~ =p~

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:০৪

মন থেকে বলি বলেছেন: ব্লগে মুত্রত্যাগ বেয়াদপী হইবে। সামলাইয়া লউন

৪| ০১ লা মে, ২০১৭ দুপুর ১২:০০

ধ্রুবক আলো বলেছেন: হা হা হা, বেশ মজা পেলুম। সাধু

০১ লা মে, ২০১৭ রাত ১০:২৭

মন থেকে বলি বলেছেন: মজা দেওয়ার জন্যই তো লেখা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.