নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Stay Hungry. Stay Foolish.
নিমন্ত্রন ছিল। বিবাহের নিমন্ত্রণ।
স্ত্রীকে হাঁকিয়া কহিলামঃ "সত্ত্বর সাজসজ্জা করিয়া লও। খ্যাঁট মারিতে যাইবো।"
"অল্প সময়ের মধ্যেই সারিয়া লইতেছি।" - হাসিতে দন্ত বিকশিত করিয়া স্ত্রী অভয় দিল। নজর করিয়া দেখিলাম, আমারই মতো স্ত্রী'র চক্ষুদ্বয়ও আসন্ন সুখাদ্যের কল্পনায় চকচক করিতেছে।
অতীত অভিজ্ঞতা বলে, স্ত্রী জাতির 'অল্প সময়' আইন্সটাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মানিয়া চলে। একপক্ষে যাহা 'অল্প', অন্য পক্ষে তাহা 'অসীম' হইতে পারে।
সুতরাং...
যথেষ্ঠ পরিমান 'অল্প সময়' হাতে করিয়া কি করিব তাহা ভাবিতে বসিলাম। হঠাৎ স্মৃতি ঝলকাইয়া উঠিল। আরে...! আজিকে তো বন্ধুসকল এক সান্ধ্য-আলোচনার নিমিত্তে কাছেই মিলিত হইতেছে। আড্ডাস্থান - নিকটস্থ কফিশপ, যাহা 'গ্লোরিয়া জিনস কফি' নামে সমাধিক খ্যাতি অর্জন করিয়াছে। মৎ আবাস হইতে নিকটেই। অতএব অনর্থক কালক্ষেপণে ফায়দা কি? ধাইয়া গেলাম আড্ডাস্থলের পানে।
আড্ডা চলিতেছিল। কিন্তু পুরা দমে নহে। কারন তখনও কয়েকজন পৌঁছাইতে পারে নাই। একে একে তাহারা আসিল। শুনিলাম, আজিকে না কি রাজধানীর যানজট ISO-2016 স্ট্যান্ডার্ডের মাইলফলক অর্জন করিয়াছে। ৩০ মিনিটের পথ হাসিয়া খেলিয়া ১৫০ মিনিট খাইয়া ফেলিতেছে। ৬০ টাকার সিএনজি ভাড়া ২৬০ এ ঠেলিয়া উঠিতেছে। ইহাকেই বলেঃ রোম পোড়ে আর নীরো বাঁশি বাজায়। শুধু এস্থলে 'রোম' এর বদলে 'পাবলিক' আর নীরোর স্থলে সিএনজিচালক পড়িতে হইবে। বাঁশি হইলো শ্রান্ত, ঘুমন্ত 'হতভাগা' যাত্রীগণের নাসিকাবাদ্য।
বিস্মিত আমি জিজ্ঞাসিলামঃ
"বলি ও ছোঁড়ারা; কী হইয়াছে বল না ছাই। আমাকে তো সেই উলটা প্রান্তে যাইতে হইবে। এখন উপায়?"
কাবেল 'ছোঁড়ার' দল অনুকম্পার দৃষ্টিতে হাসিল। আমি স্পষ্ট পড়িলাম, তাহাদের দৃষ্টি কহিতেছেঃ
"রে অর্বাচীন!
অদ্যবধি তুই বসিয়া কালক্ষেপন করিতেছিস।
তোর মোবাইল ফোনে কি অন্তরজাল সংযোগ নাই? পত্রিকা পড়ার অভ্যাস কি একবারেই নাই? Go-Traffic দেখিতে জানিস না?
রে মূঢ়!
আজি সারা দিবস চৈনিকরাজ শহরের রাস্থায় রাস্তায় রোঁদ মারিয়া বেড়াইতেছে। তাই এই যানজট...জটাও কহিতে পারিস। আর তুমি অলম্বুষ এক্ষনে কালক্ষেপন করতঃ হা-হুতাশ করিতেছ?"
সুতরাং অবিলম্বে তাহাদের পরামর্শ গ্রহণকরতঃ ফিরিলাম গৃহে। ঘন্টা দেড়েক ইতোঃমধ্যে অতিক্রান্ত হইয়াছে। ওই যে, রিলেটিভলি 'অল্প সময়'। গৃহিনীর সজ্জা অদ্যবধি চলমান। এই অধর রাঙাইতেছেন, তো পরক্ষনেই কপোল লালিমারঞ্জিত করিতেছেন। কিছুক্ষন কাটিল উপর্যুক্ত বটুয়ার সন্ধানে।
আমি এলাইয়া পড়িলাম। পরনে প্যান্টালুন ছিল বলিয়া রক্ষা। বঙিয় লুঙি হইলে কষি খুলিয়া যাইত।
ঈশ্বর না কি ৬ দিনে পুরা জগৎ সাজাইয়া ফেলিয়াছিলেন। হইতেও পারে। তবে কিনা তখনও নারী সৃষ্টি করেন নাই তো। তাই সারিতে পারিয়াছিলেন। অন্যথায় ছয় লক্ষ বছরেও হইতো কি না সন্দেহ।
অবুঝ মন ভাবিতেছিলোঃ এর কি তবে শেষ নাই? বুঝ মন দেখিতেছিল - শেষ হইলেও হইতে পারে।
অবশেষে চরম সময়জ্ঞানের পরিচয় দিয়া কাঁটায় কাঁটায় দুই ঘন্টা পর স্ত্রীর নজর পড়িল আমার 'হা' করা মুখের দিকে। হয়তো ভাবিলেন - সৌন্দর্যছটায় জ্ঞান হারাইবো বলিয়া খাবি খাইতেছি।
কটাক্ষ মারিয়া করিলেনঃ
"মরণ..! আর দেখিতে হইবে না। নিকটে আইসো। এই নিরাপদ শলাকাটি (safety pin) লাগাইয়া দাও শাড়ি আর বেলাউজের সংযোগস্থলে।"
কম্পিত হস্তে গাঁথিয়া দিলাম। বুঝিলাম, পুরুষত্ব এখনও হারাই নাই।
সজ্জা শেষ। উনি রওয়ানা হইলেন দ্বার অভিমুখে।
এই পরিসরে আমি পিরান চাপাইয়া লইয়া দ্বারের কাছাকাছি অগ্রসর হইলাম। দেখিলাম, আমিই জিতিয়াছি। গৃহিনী তখনো পৌঁছাইতে পারেন নাই। জানিতাম....নারীর সাজ সজ্জা হইলো রবি'দার গল্পের মতো - শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। দেরি আমার হইবে না। হয়ও নাই।
ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে আটটা ছাড়াইয়া গিয়াছে। যন্ত্রযান চালু করিলাম। মনে আশা- খ্যাঁট শেষ হইবার পূর্বে পৌঁছাইলেও পৌঁছাইতে পারি। এত তপস্যা কি বিফলে যাইবে?
কিন্তু তখন জানিতাম নাঃ - পিকচার আভি বি বাকি হ্যায় দোস্ত!!
এরপরই শুরু হইলো দ্বিতীয় পর্ব।
স্বপরিবারে আরোহন করিলাম যন্ত্রশকটে। গৃহিনী পাশে উপবিষ্টা, পুত্রদ্বয় পশ্চাদ-আসনে। আপাতত শান্ত।
হঠাৎ গড়-গড় শব্দে চমৎকৃত হইলাম। চাবি অদ্যবধি প্রবেশ করাই নাই, অথচ যন্ত্রযান প্রাণচঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে। খ্যাঁটের টান বড় টান। যন্ত্রও যে কথা কয়! না কি নারীর স্পর্ষে যান্ত্রিকেও প্রাণ সঞ্চার হইয়াছে?
এইসব ভাবিতেছি, পরক্ষণেই...
"রে হতভাগার দল! আবার শুরু করিয়াছিস।
থাম বলিতেছি। না হইলে আজ রক্ত দর্শন করিয়া ছাড়িব।"
- গৃহিনীর হুংকারে সান্ধ্যস্বপ্নের জাল ছিঁড়িয়া গেল।
ও হরি!
ইহাতো আমার গাড়ির শব্দ নহে; বরং পুত্রধনেরা উঠিবা মাত্রই যে স্বভাবসুলভ ধুন্দুমার বাধাইয়া দিয়াছে - তাহারই উপজাত। উহাদের মুখ নিঃসৃত আওয়াজকেই গাড়ি স্টার্ট নিবার শব্দ ভ্রমিয়াছিলাম। বুঝা গেল, 'রক্ত দর্শনের' সাবধানবানীর 'মাজেজা'। নারী ধৈর্য্যশীলা সন্দেহ নাই। তাহা বলিয়া ধৈর্য্য অসীমও তো নহে।
'কারণ' জিজ্ঞাসা করিলাম না। করিয়া লাভও নাই যেহেতু শাখামৃগের অনুকরণে উন্মত্তের ন্যায় হস্তপদ চালনা করা দুই ভ্রাতারই স্বভাব। বিশেষ করিয়া যখন দুইজনের মধ্যে দুই হাতেরও অপেক্ষা কম ব্যবধান থাকে। গাড়ির ব্যাকসিট ইহাদের জন্য আদর্শ স্থান।
আমি কর্মবীর।
তাই বৃথা বাক্যব্যয় না করিয়া ভাবলেশহীন চেহারায় আচ্ছাসে কর্ণ মুচড়াইয়া বাবাজীবনদের শান্ত করিলাম। উহাদের মাতার ভঙিতে অনুমোদনের ভাব দেখিয়া বিমলানন্দ অনুভব করিলাম। -- 'পিতার কাজ পিতা করিয়াছে, মোচড় দিয়াছে কানে!'
আর তো দেরি চলে না। এবার সত্যি সত্যি চাবির কান মুচড়াইয়া গাড়ি চালু করিয়া সাঁৎ করিয়া বাহির হইয়া আসিলাম গর্ভগৃহ হইতে।
যাত্রা হইলো শুরু।
গাড়ি চলিতেছে।
শরতের মৃদুমন্দ বাতাস। পাশে উপবিষ্টা সুন্দরী রমনী। মন্দস্বরে বিলিতি বাজনা বাজিতেছে গাড়িতে। অহোঃ...! কি মোহময় এই রাত! নিজেকে মনে হইলো উত্তমকুমার। গুণগুণ করিয়া গাহিয়া উঠিলাম -
'এই পথ যদি না শেষ হয়,
তবে ক্যামন হতো তুমি বলতো?'
ঈশ্বর ভাবিলেন, গানটা তাঁহাকেই উদ্দেশ্য করিয়া গাহিয়াছি। তাই অলক্ষে হাসিলেন। হয়তো বলিলেনওঃ
"রোসো বাছা, তোমাকে হাতে-কলমে বুঝাইয়া দিতেছি। How many rice in how many paddy - এবার বুঝিবে তুমি Daddy."
ফলে শুরু হইলো ভানুমতির খেল।
যেদিক দিয়াই অগ্রসর হই, তেজগাঁও হইতে আর বাহির হইতে পারি না। পথের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি মোড় দড়ি দিয়া আটকানো। মানুষ যাইবে কিন্তু গাড়ি যাইতে পারিবে না। একস্থলে দেখিলাম এক অর্বাচিন তুমুল তর্ক জুড়িয়াছে 'দেবতা'র সাথে (পড়ুন ট্রাফিকপুলিশ)। উদ্দেশ্য, দড়ি ডিঙাইবে গাড়ি লইয়া। আবদার আর কি! দেবতা দৃকপাত করিলেন না। এক পাগলকে লইয়া থাকিলে তাঁহাদের চলেনা।
আমি বাস্তুচ্যুত শৃগালের ন্যায় পথ খুঁজিতেছি। নাহ। এই বুহ্য ভেদ করা আমার কর্ম নহে। ত্রেতাযুগ হইলে পারিতাম, এই কলি যুগে সবই বিফলে গেল।
তখনও খ্যাঁটের আশা ত্যাগ করি নাই।
আবার গুলশানের পথ ধরিলাম। উদ্দেশ্য, মহাখালী দিয়া সটকাইবো ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে। বারংবার একই রাস্তায় চক্কর কাটিতে দেখিয়া পুত্রদ্বয় টিপ্পনি কাটিলো পিছন হইতে -- 'পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছো?' সাথে খিলখিল হাসি। উহ...! এও কপালে ছিল! গৃহিনীর মুখ মনে হইলো কঠিন হইতেছে। 'ইনভেস্টমেন্ট'টা যে তাঁরই সর্বাপেক্ষা অধিক।
কিন্তু 'মারে হরি রাখে কে?' মহাখালীতে আর দড়ি নয়, মোটা কাছি। ধারণা করিলাম, কোন এক 'অর্জুন' হয়তো পূর্বেই বুহ্যভেদ করিয়াছিল। তাই ভবিষ্যত অর্জুনদের আটকানোর জন্য এই অতিরিক্ত সতর্কতা।
আবার গাড়ি ঘুরাইলাম। পথ যে আসলেই শেষ হইতেছে না।
ইতোমধ্যে সোওয়া ঘন্টা অতিবাহিত হইয়াছে। পেটের মধ্যে ছুঁচো ডন মারিয়া ক্লান্ত তো হয়ই নাই, বরং কুস্তি শুরু করিয়াছে। 'ভুড় ভুড়' শব্দ হইলো পাকস্থলিতে। গৃহিনীর নাসিকাকুঞ্চন করিলেন। বুঝিলাম, উনি 'শব্দের' ভুল ব্যাখ্যা করিতেছেন।
কি করি?
এই গোলকধাঁধায় ঘুরিতে থাকিবো প্রভাত পর্যন্ত? না কি বাসায় ফিরিয়া যাইবো? চৈনিকরাজ একি ইন্দ্রজালের খেল দেখাইতেছেন! আমি মিরপুরে পৌঁছানোর আগেই তো উনি চীনে পৌঁছাইয়া যাইবেন বোধ হইতেছে।
এইবার সত্যই হাল ছাড়িয়া দিলাম। প্রায় দশ ঘটিকা বাজিতে চলিল। পুত্রদ্বয় রণে ভংগ দিয়া নিদ্রাদেবীর আরাধনায় রত। গাড়ির তৈলও কমিতে চলিল।
কিন্তু বাড়ি ফিরিতে মন সরিলো না। আসলে সাহস হইলো না। সহধর্মিনীর ওষ্ঠাধর ততক্ষনে লৌহকবাটের ন্যায় শক্ত হইয়া চাপিয়া গিয়াছে। ক্ষনিকে মনে হইলো, দাঁতে দাঁত পিষিবার শব্দও যেন শুনিলাম।
বুকটা অজানা আতংকে হিম হইয়া গেল! অদ্য রজনীই কি এই হতভাগ্যের শেষ রজনী হইতে চলিল?
ক্ষণিকের জন্য আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিলাম। এরপরই সম্বিত ফিরিলো।
ধাবমান যন্ত্রশকট, শকটের পশ্চাদাসনে নিদ্রাভিভুত বাবাজীবনদ্বয়, পার্শবর্তিনী স্ত্রী-রূপী ভিসুবিয়াস আর বাস্তুচ্যুত শৃগালের ন্যায় চালকের আসনে হতভাগা এই লেখক - এই দৃশ্য হইতে কাহিনীর শেষাংশের শুরু।
ওহো...দৃশ্য বলিলাম আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কথা বলিব না? সেইটা হইলো স্ত্রীর দন্তপেষনের শব্দ আর গাড়ীর ঘটর ঘটর সংগীত।
উপায় বল না প্রভু।
এতো সাজসজ্জা করিয়া বাহির হইয়াছি।
চৈনিকরাজরূপী কপালের ফেরে পড়িয়া খ্যাঁটের আশা পরিত্যাক্ত হইয়াছে। উপরন্তু গোলকধাঁধার মত গুলশানের অলিগলিতে চক্কর কাটিতেছি। এক্ষনে গৃহে প্রত্যাবর্তন করা আর আত্মহত্যা করা একই কথা।
তাই তো, করিবোটা কি তাহা হইলে?
ক্ষণিকের তরে একবার মনে হইয়াছিল - রিস্ক নিয়াই দেখি না বাড়ি ফিরিবার। ভাবিতে না ভাবিতেই দেখি গৃহিনীর মুখমন্ডল লালচে আভাময় হইয়া উঠিতেছে। অগ্নিগিরি ফাটিল বলিয়া। শতকোটি দেবতাদের নাম লইয়া ভয়ে ভয়ে তাকাইতেই ভ্রম কাটিল। নাহ....। এ আলো সম্মুখবর্তী শকটের পাছার-আলো, মানে ব্যাকলাইট।
"মিনসে কি এমনি করিয়া রাত্রভর ঘুরাইয়া মারিবি?" - খ্যানখ্যানে প্রশ্নে কর্ণপটহ ছিঁড়িবার উপক্রম করিল। পুত্রদ্বয় আঁতকাইয়া উঠিয়া রামনাম জপিতে লাগিল।
"হা ভগবান! এ কোন অপগন্ডের হাতে পড়িয়া জীবন শেষ করিলাম!!" কপালে করাঘাতের শব্দও হইলো। ফোঁপানির শব্দও যেন শুনিলাম। নারীকন্ঠে অবশ্যই।
আমার স্বর্ণালী সন্ধ্যা মধ্যরাতের আতংকে পরিনত হইতেছে। বুঝিলাম - পথের শেষ প্রান্তে আসিয়া পড়িয়াছি। এইবার লালপানি, না হয় কালাপানি।
মরিয়া হইয়া বলিলাম, "চল না, কোন এক অভিজাত ভোজনালয়ে রাত্রের খাওয়াটা সারিয়া লই? বাহির যখন হইয়াইছি, পেটে কিল দিয়া পড়িয়া থাকিয়া তো লাভ নাই। অভিমান করিও না। দুটি মুখে দাও।"
উত্তম প্রস্তাব - বলিয়া পুত্রদ্বয়ও হইহই করিয়া সম্মতি জানাইলো।
জনমত ভারী দেখিয়াই কিনা, না কি ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করিতে না পারিয়া, কর্ত্রী নিমরাজি হইলেন। তাছাড়া তিনি জানিতেন, এই রাত্রে বাড়ি ফিরিলে তাঁহাকেই আবার রাঁধিতে বসিতে হইবে রাক্ষসের দলের পেট ভরাইবার জন্য।
সুতরাং সুযোগ যখন দ্বারে কড়া নাড়িলই, 'বদমাশ'টাকে যথোপযুক্ত নিংড়াইয়া লওয়াই ঠিক হইবে - এই মনোভাবও কাজ করিয়া ছিল কি না, তাহা কেবল 'ঈশ্বর'ই জানেন।
পৌঁছাইলাম এক রেঁস্তোরাতে। নামেই রেঁস্তোরা, আসলে রেস্ত হাওয়া করিবার গাড্ডা। নামটা পড়লাম, হিন্দিতে নাম - 'বিবি, কিঁউ চিকেন?" মানে হইলো গিয়া, "ও ম্যেরা বিবি, তুম চিকেন কিঁউ চাতা হো?"
হাবলার মতো স্ত্রীর দিকে তাকাইলাম। 'ইহা কিরূপ নাম হইলো?' একদম খাপে খাপ।
ততক্ষনে গৃহিনীর চাঁদমুখে হাসি খেলিতে শুরু করিতেছে।
খিলখিল করিয়া হাসিয়া সস্নেহে বলিলেন, "আমার বোকচন্দর কি বুঝিলো। আরে, ইহা হইলো BBQ Chicken - অতি উত্তম কুক্কুটমাংসের রেঁস্তরা। চল চল, আর দাঁড়াইয়া বকর বকর করিতে হইবে না।"
সামনেই নিরাপত্তাচৌকি। যাহাকে বাংলায় বলে আর্চওয়ে।
প্রথমেই পরীক্ষা হইলো পেটে করিয়া বোমা বাঁধিয়া আনিয়াছি কি না। ভুড় ভুড় শব্দ বহুক্ষন হইল থামিয়া গিয়াছে। না হইলে খবর ছিল। সর্বস্ব খুলিয়া দিয়াও নিশঃব্দে আর্চওয়ে অতিক্রম করিতে পারিলাম না। একেরপর এক পরিধেয় খুলিয়া রাখিতেছি, কিন্তু সন্দেহনিনাদ (warning bell) বাজিয়াই চলিল। দ্বাররক্ষকের ভ্রুকুটি দেখিয়া মনে হইলো, এইবার হয়তো অন্তর্বাসটাও খুলিবার হুকুম হইবে। কিন্তু না। কোমরবন্ধনী ত্যাগ করিতেই মহাশয় শব্দ বন্ধ করিলেন। বৈতরনী পার হইয়া স্বর্গে প্রবেশের অনুমতি পাইলাম।
ইতোঃমধ্যে সর্দার-বেয়ারা ছুটিয়া আসিলোঃ যেন আমরা দুইজন মেলায় হারানো শিশু, পিতা দেখিতে পাইয়াছেন। তাই উদ্ববাহু নৃত্যে আগাইয়া আসিতেছেন। আসলে কিন্তু বেড়ালভাব। ইন্দুর নিজ আগ্রহে আগাইয়া আসিতেছে তো।
বসিলাম এক পার্শে, আলো-আঁধারিতে। পুত্রদ্বয় খেলিতে গেলো 'শিশু-কোণে'।
ইত্যবসরে অগ্নিগিরি ঠান্ডা হইয়াছে। মৃদুমন্দ বাক্যালাপও শুরু করিলাম। বেয়ারা আসিয়া স্মিতহাস্যের সহিত অভিবাদন জানাইয়া দুইটি 'মেন্যু কার্ড' নামাইয়া রাখিলো। মূল্য দেখিতে চেষ্টা করিলাম না। একে খালি পেট - হঠাৎ মানসিক ধাক্কা সহ্য না হওয়ারি কথা। পাকস্থলিরর ভাব বুঝিয়া খাদ্যাদেশও (পড়ুন অর্ডার) দেওয়া গেল। গৃহিনীই যা কহিবার কহিলেন। এইসব পরিস্থিতিতে অন্যমনস্কের ভান করাই দস্তুর।
অনতিবিলম্বে ধুম্র উদগিরনকরতঃ মসলায় আবৃত কুক্কুটমাংস হাজির হইয়া গেলো। উভয়েরই রসনা সিক্ত হইয়া প্রায় গড়াইয়া পড়ে আর কি। কথ্য বাংলায় যাহাকে বলে 'লোল'। সাথে সুপ, ভর্জিত অন্ন - তাহাতে আবার দুনিয়ার সর্বপ্রকার আমিষ ও নিরামিষ মিশানো। পরিবেশিত হইতেছে একটি ডিম্বভাজাদ্বারা মুড়াইয়া। অনুপান হিসেবে আছে শীতল কি সব পানীয়। ইচ্ছা আছে, এইগুলা গলাধঃকরণ করিয়া মরুভূমি, মানে ওই ডেজার্ট আর কি, তাহারও আদেশ দিব। খ্যাঁট মারিতে বাহির হইয়া ছিলাম। ট্যাঁক খালি করিয়া হইলেও মারিব।
আর কি সামলাইয়া রাখা যায়?
হস্তদ্বয় নিজ হইতেই আগাইয়া গিয়া দুইটি খন্ড আমার সম্মুখে রাখা তশতরিতে উঠাইয়া লইলো। বাহ্যজ্ঞান তো আগেই লোপ পাইয়াইয়াছে গন্ধে। এইবার দিগবিদ্বিক বোধ হারাইলাম খাদ্য দর্শনে।
আর তখনই বাধিল বিপত্তি...!!!
কাঁটায় গাঁথিবার পূর্বেই সজোরে ছুরি চালাইয়াছিলাম। সতর্ক ছিলাম কিন্তু সংযম রাখিতে পারি নাই এই আমি গর্দভ।
ফলে একখন্ড মাংস গুড়ুলের মতো ছিটকাইয়া গিয়া থ্যাপ করিয়া ল্যান্ড করিলো হার হাইনেসের দক্ষিন কপোলে। সযত্নে চর্চিত প্রসাধন ধ্যাবড়াইয়া অপয়া মাংসখন্ড সেইখানেই লটকাইয়াই রহিল, খসিল না। তিনি মাত্রই হস্ত প্রসারিত করিতেছিলেন সুপের গামলার দিকে। ওই অবস্থাতেই প্রস্তরিভূত হইয়া গেলেন।
এতক্ষনে দুষ্ট মাংসখন্ড ল্যাদ করিয়া খসিয়া পড়িল। আর পড়বি তো পড় সামনের বাটিতে রাখা 'সুপ'এর মধ্যে। টুলুপ শব্দ হইলো আর পদ্মার ঢেউ এর মত স্ত্রীর বহুমূল্য শাড়িতে সুপ নামক আঠালো তরল ছলকাইয়া পড়িয়া ল্যাটকাইয়া গেল।
বহু আগে যখন ডেভ হোয়াটমোর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের গুরু ছিলেন, তখন কোন এক খেলায় দুর্দান্ত খারাপ পারফর্মেন্সের পর পরেরদিন পত্রিকায় শিরোনাম বাহির হইয়াছিলঃ
"অল্প শোকে কাতর,
অধিক শোকে পাথর,
তারও অধিক শোকে হোয়াটমোর"
স্ত্রীর অবস্থা তখন ওই 'হোয়াটমোর' এর মত। আর তাঁর দৃষ্টি বলিতেছে - What More? Oh God..! What More??
ইহার পর যে কি হইয়াছিল, তাহা আজ স্মরণে নাই। শুধু জানিবেন, অতিরিক্ত আতংকে মানুষ জ্ঞান হারায়।
আমি সেই জ্ঞানই হারাইয়াছিলাম।
২৬ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:১৬
মন থেকে বলি বলেছেন: ক্ষমা প্রার্থনীয়। কতক্ষন আর সাবধান থাকা যায়?
কেমন লাগল, সেটা জানতে পারলে ভাল লাগত।
অনেক অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:১৭
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ্প্রথমে মুচকী হাসি, তারপর স্মিতহাসি,তারও পর দাত বের হাসি।। অবশেষে অট্টহাসি।। স্বার্থক লেখা।।
২৬ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:১৮
মন থেকে বলি বলেছেন: এত দারুন মন্তব্য কখনও পাইনি। লেখাটা সার্থক মনে হচ্ছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
৩| ২৬ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:২৪
ইলি বলেছেন: মজা পাইলাম। ধন্যবাদ।
২৬ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:১৮
মন থেকে বলি বলেছেন: এত দারুন মন্তব্য কখনও পাইনি। লেখাটা সার্থক মনে হচ্ছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
৪| ২৬ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:৪৪
কলাবাগান১ বলেছেন: "প্রস্তরিভূত"
বেস্ট বাংলা ওয়ার্ড অফ দ্যা ইয়ার। বাংলা ডিকশনারীতে সংযুক্ত করার দাবী জানায়ে গেলাম। এই শব্দের (এই রকম উইটি) আরো কিছু প্রয়োগ দেখিবার মন চায়.......
২৬ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:৫৩
মন থেকে বলি বলেছেন: কি যে বলব....ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
এত অসাধারন প্রশংসা কি সত্যিই পাওয়ার মত?
আমি মুগ্ধ...বিস্মিত...আনন্দিত!!!
লেখা চলবে...আপনার জন্য হলেও লিখে যাব।
৫| ২৬ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:২৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বহুদিন পর একখানা অতি সু রম্য পড়িবার সুযোগ হইলো। আপনার হাতখানা খাসা। আপনার হাতের একখানা আঙ্গুলও যদি আমার থাকিত, বড়ই ভালো হইতো। লোকেরা অন্তত আমার লেখা পড়িয়া নাক কুচকাইতো না।
ইহা একখানা মাস্টারপিস। পদে পদে (পড়ুন প্যারায় প্যারায়) হাস্য।
বড়ই ভালো লিখিয়াছেন।
২৬ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:৫৩
মন থেকে বলি বলেছেন: কি যে বলব....ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
এত অসাধারন প্রশংসা কি সত্যিই পাওয়ার মত?
আমি মুগ্ধ...বিস্মিত...আনন্দিত!!!
লেখা চলবে...আপনার জন্য হলেও লিখে যাব।
৬| ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:২৪
নগরবালক বলেছেন: আপনার লেখনী উচ্চ মানের । খুবই ভাল লাগলো
২৭ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:০০
মন থেকে বলি বলেছেন: অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এরকম উৎসাহ পেলেই তো আরও লিখবার ইচ্ছা তৈরি হবে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪০
বর্ষন হোমস বলেছেন:
গুরুচণ্ডালী করিয়া ফেলেছেন যে