নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Stay Hungry. Stay Foolish.
কখনও কি আপনার এরকম মনে হয়েছে যে কোন পার্টিতে যেতে অস্বস্তি হচ্ছে? আমাদের সবারই কম বেশি এরকম অভিঞ্জতা আছে। আমরা বেশিরভাগই কোন প্রেজেন্টশন দিতে ভয় পাই। ভয় পাই, হয়তো আমার কথাবার্তা শুনে অন্যরা হাসবে। অথবা ডেটিংএ গিয়ে কার কার পা বা গলা কাঁপেনি, বলেন? এগুলো খুবই সাধারন এংজাইটি যা আমাদের সবারই আছে। কিন্তু চিন্তা করুন এমন একজনের অবস্থা যে কিনা ফোনের রিং শুনে চমকে ওঠে। আর কোনভাবেই ফোন রিসিভ করতে পারে না। অথবা কোন মানুষের সাথেই সহজভাবে কথা বলতে পারে না। পারে না কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে বা যে কোন কিছুর জন্যই নিজেকে দোষারোপ করে? এরকম মানুষও কিন্তু আমরা অনেকে দেখেছি।
এরা সেই দুর্ভাগারা যারা শিরোনামের অসুখটায় ভুগছে।
নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এসএডি হলো এমন একটা মানসিক ব্যাধি যখন সাধারণ সামাজিক ইন্টার্যাকশনগুলো কারও মনে অহেতুক কিন্তু প্রচন্ড রকমের ভীতির সঞ্চার করে যার ফলশ্রুতিতে আক্রান্ত ব্যক্তি ভাবতে থাকে সবাই তাকে লক্ষ্য করছে এবং সমালোচনাও করছে। এতে সে অস্বাভাবিক রকমের ’আত্মসচেতন’ হয়ে ওঠে যা তাকে ক্রমাগতভাবে উৎকন্ঠিত করে তুলতে থাকে। একসময় এই উৎকন্ঠা তার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় এবং সে হয়ে যায় Social Anxiety Disorder’র একজন পেশেন্ট। এটা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তা Panic Attack এ মোড় নেয় এবং আত্রান্ত ব্যক্তি ওই সব অবস্থায় প্রচন্ড রকমের শারীরিক সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হার্টবিট, শরীর ঘামা, হাত-পা কাঁপা, ডায়েরিয়ার মতো সমস্যায় আক্রান্ত হয়। এতক্ষন যা যা বললাম আপনি যদি ওইসব বিশেষ অবস্থায় এগুলো অনুভব করেন তাহলে আপনার সময় হয়েছে একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার।
সাধারাণত সোশ্যাল এংজাইটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোন একটা বিশেষ সামাজিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে ভীতি অনুভব করেন; যেমন ভাষণ দেয়া বা সবার সামনে কথা বলা। তবে বেশিরভাগ আক্রান্ত ব্যক্তিরাই একাধিক পরিস্থিতিতে ভীত হন। সাধারণত এরা নিচের পরিস্থিতিতে উৎকন্ঠা অনুভব করেনঃ
১. সবার সামনে খাওয়া বা পান করা
২. সবার সামনে কাজ করা বা লেখা
৩. সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা
৪. সামাজিক মেলামেশা, যেমন পার্টিতে যাওয়া বা দাওয়াতে যাওয়া বা ডেটিংএ যাওয়া
৫. প্রশ্ন করা বা রিপোর্ট করা
৬. পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করা
৭. টেলিফোনে কথা বলা, ইত্যাদি।
একটা তথ্য দেইঃ আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ১৮% এই রোগে ভুগছে। যদিও এটা নিরাময়যোগ্য, তারপরও আমেরিকার মতো দেশেও মাত্র এক তৃতীয়াংশ চিকিৎসা সেবার আওতায় আসে।
অনেক সময়ই Social Anxiety Disorder অন্যান্য মানসিক রোগের সাথে সম্পর্কিত অবস্থায় থাকে, যেমন প্যানিক ডিসঅর্ডার, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, ডিপ্রেশন, ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো, আক্রান্ত ব্যক্তিরা ডাক্তারের কাছে যায় এই রোগগুলোর ব্যাপারে পরামর্শ নিতে, সোশ্যাল এংজাইটি ডিসঅর্ডারের ব্যাপারে নয়। আরেকটা ব্যাপার হলো শিশুরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
কেন হয় সোশ্যাল এংজাইটি ডিসঅর্ডার?
যদিও নির্দিষ্ট করে একটা কারন নির্দেশ করা যায় না, তারপরও বলা যায়, কিছু শারীরিক, মানসিক এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এই অবস্থাকে ট্রিগার করতে পারে।
অ. শারীরিকঃ মনে করা হয়, মস্তিষ্কের একটা বিশেষ অঞ্চল যেটা ’fight or flight’ কে নিয়ন্ত্রন করে সেটার ডিসফাংশানের কারনে হয়ে থাকে। জেনেটিক ফ্যাক্টরও এক্ষেত্রে ভুমিকা রাখতে পারে। সাধারনত দেখা যায়, যদি first degree relative যেমন বাবা-মা, ভাই-বোন, বা সন্তান এদের কারও থাকলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ই. মানসিকঃ ছোটবেলায় যারা অপমান বা অসম্মনের মুখোমুখি হয়েছে, তাদের এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ঈ. পারিপার্শ্বিকঃ যখন কেউ অন্য কাউকে সবার হাসির পাত্র হতে দেখে বা অপমানিত হতে দেখে, তখন তার মধ্যে এ ধারনা গড়ে উঠতে পারে যে আমার সাথেও একই রকম পরিস্থিতিতে এরকম ঘটবে। তখন আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে এই ডিসঅর্ডার বেড়ে উঠতে পারে। তাছাড়া যেসমস্ত শিশুরা শৈশবে বাবা-মা’র দ্বারা over protected হয়ে বেড়ে ওঠে, তাদের মধ্যে সামাজিক দক্ষতাগুলো যথাযথ ভাবে বিকশিত হয় না। ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে এই সমস্যা গড়ে উঠতে পারে।
দুঃখজনকভাবে Social Anxiety Disorder নিরাময়যোগ্য নয়। তবে একে অনেকটাই নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব যদি যথাযথ চিকিৎসা গ্রহন করা হয়। এখন পর্যন্ত এ রোগের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা হচ্ছে Cognitive Behavior Therapy (CBT) । এছাড়া মেডিটেশনও করা যায়। অনেকসময় কিছু ড্রাগের ব্যবহার দেখা যায়। আমরা এখানে Cognitive Behavior Therapy (CBT) এর ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত করতে চেষ্টা করব।
Cognitive Behavior Therapy (CBT)
সিবিটি একধরনের সাইকোথেরাপি পদ্ধতি যেখানে অনুমান করা হয় আমাদের নিজেদের চিন্তাভাবনা আমাদের অস্বস্তিকর মুড আর অস্বাভাবিক আচরণের জন্য দায়ী। তাই এ পদ্ধতিতে এমন কৌশল শেখানো হয় যেন রোগী তার নেগেটিভ চিন্তাভাবনাকে পজেটিভ চিন্তায় পরিনত করতে পারে এবং তার ফলে তার জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি আরও কৌশলগতভাবে মোকাবিলা করতে পারে।
লক্ষ্য করুন নিচের অবস্থাটা।
রাসেল পড়ে একটা স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে তার প্রথম সেমিস্টারে অনেক খাটাখাটনি করেও গনিতে ৬০% নম্বর পেল। ফলে সে খুবই হতাশ হয়ে পড়ল একই সাথে বিষন্নও। তার মনে হলো তার আসলে গনিতে মোটেও মেধা নেই। ফলে সে ক্লাস করার ইচ্ছা কমে যেতে থাকল এবং সে ক্লাস বাদ দিতে লাগলো এবং এর ফলশ্রুতিতে তার পরের পরীক্ষাটাতে সে আরও অনেক কম স্কোর করল। রাসেল এখন সায়েন্স ছেড়ে কমার্সে যাওয়ার কথা ভাবছে, অর্থাৎ তার ক্যারিয়ার গোলই বদলে ফেলতে চাইছে।
এক্ষেত্রে গনিতে ৬৩% নম্বর পাওয়ার পর রাসেলের অটোম্যাটিক চিন্তা ছিলো ”আমি তো পুরাই ডাব্বা মেরেছি। আমাকে দিয়ে এসব হবে না কারন আমার মেধাই নেই। খামাকা সময় নষ্ট। আগামীতে তো আমি ফেল করব। তার থেকে সায়েন্সই ছেড়ে দেই।” ফলাফলঃ ক্রমাগত ব্যর্থতা এবং ব্যর্থতা আর বিষন্ন হয়ে নিজেকে নিজের মধ্যে আরও গুটিয়ে ফেলা।
Cognitive Behavior Therapy বলে তুমি তোমার চিন্তাভাবনা কে পরিবর্তন কর। তাহলে দুনিয়াটাও বদলে যাবে। রাসেল যদি Cognitive Behavior Therapy নিতো, তাহলে হয়তো তার চিন্তাভাবনা হতো ভিন্ন রকমের। অনেকটা এরকমঃ ”আরে! আমি তো দারুন স্কোর করেছি। তাছাড়া টিচারটাও বেশি মার্ক দেয়নি। অন্যদের স্কোরও তো দেখি কাছাকাছি। আমি তো ম্যাথে ভালোই। পরের পরীক্ষাটা আরও খেটে পড়লে স্কোর আরও বাড়াবো।” রাসেলের এই পজেটিভ চিন্তা তার পুরো কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করল। মোটামুটি এই হলো Cognitive Behavior Therapy (CBT)।
[পর্ব-১ সমাপ্ত]
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট এবং সাইকোথেরাপিস্টের সাথে আলাপচারিতা
©somewhere in net ltd.