নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা প্রদীপ

আমার সমস্ত চেতনা যদি শব্দে তুলে ধরতে পারতাম

সন্ধ্যা প্রদীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবহমান ৩

২০ শে জুন, ২০২১ রাত ১০:০৫



এমন টিপ টিপ বৃষ্টির বর্ষাকালটা গ্রামের খুব অন্যরকম সময়।মাঠ,ঘাট, পুকুর রাস্তা সবকিছুই কেমন পানিতে থইথই করে।ব্যাঙেদের এই সময় খুব আনন্দ।লাফিয়ে ঝাপিয়ে গলা ফুলিয়ে ডেকে তারা বর্ষা উৎযাপন করে।

যার ঘরের চারিদিকে শক্ত দেয়াল আছে আর মাথার উপরে ছাদ আছে তার চিন্তা নেই কিন্ত অন্যদের চিন্তার শেষ নেই।আমাদের মাথার উপরে ছিল টিনের চাল।বৃষ্টি পড়লে ঝমঝম শব্দ হতো।সেই শব্দের মাধুর্য খুব মিস করি আজকের সময়ে।বৃষ্টির দিনে স্কুল নেই।জানালা খুলে দিয়ে বিছানায় বইপত্র নিয়ে বসতাম।টেউটিনের খাঁজে খাঁজে বৃষ্টির একেকটা ধারা পৃথক একেকটা ঝর্নার মত ঝরে পড়ত।সেই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকলে কি আর পড়া হয়?একটু হাওয়া বইলেই বৃষ্টির ছাঁট ভেতরে চলে আসতো।সেটাও খুব ভাল লাগতো।

আমাদের বাড়ির কাছে নদী নেই তবে ক্যানাল আছে।বর্ষায় ক্যানালে নদীর পানি আসে।সেই পানি মাটি খুড়ে চাষ জমির ভেতর দিয়ে ডেনের মত করে পুকুরে নিয়ে ফেলা হতো।সব পুকুরেই এভাবে পানি টেনে আনা হয় আমাদের গ্রামে।সেই পানির সাথে আসত নদীর মাছের রেনু। কত বিচিত্র মাছ যে আমাদের পুকুরে পাওয়া যেত তার শেষ নেই।


আমার বাবা ছিলেন মাছের পাগল।মাছ ধরা ছিল তার নেশা।আসেপাশে গ্রামে যেখানেই টিকেট পড়ত সেখানেই তিনি যেতেন।অন্য জেলাতেও তার আমন্ত্রণ থাকত।পুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরা ছিল নিত্যকার ব্যাপার।কখনো একা আবার কখনো সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে তিনি মাছ ধরে যেতে।বর্ষাকাল মাছেরও সিজন।টইটম্বুর নদী আর পুকুর তখন মাছে ভর্তি হয়ে উঠত।

বাঁশের চিকন কাঠি দিয়ে বানানো খাঁচার মত মাছ ধরার যন্ত্র কিনতেন তিনি বাজার থেকে।ক্যানালের মাঝে এটি কায়দা করে বসিয়ে দিলে স্রোতের সাথে ভেসে ছোট ছোট মাছ এতে ঢুকে পড়ে কিন্ত বের হয়ে যেতে পারেনা সেই যন্ত্র পেতে বর্ষাকালে প্রতিদিন বিচিত্র সব পাঁচ মিশালি মাছ পাওয়া যেত।মাঝে মাঝে বিচিত্র বর্ণের পানি সাপও উঠত।বাবা সেই যন্ত্র এনে উঠানে ঝেড়ে ফেলতেন।মাছ গুলো খুটতে লেগে যেতাম মায়ের সাথে।মাঝে মাঝে একটা দুইটা বর্নিল খলসে মাছ উঠতো।সেগুলো হরলিক্সের কাঁচের বোতলে পানি ভরে তাতে ছেড়ে দিতাম।বোতলটা রাখতাম পড়ার টেবিলে।রঙধনু ছড়িয়ে ভেসে বেড়াত সেগুলো।

আমাদের তখন আলাদা সংসার।কেরোসিনের স্টোভে মা সেই ধরে আনা মাছ ধনিয়া পাতা দিয়ে চচ্চড়ি করতেন,সাথে ধোঁয়া ওঠা ভাত আর মসুর ডাল।ছোট ছিলাম বলে বেশি খেতে পারতাম না কিন্ত সেই পাঁচ মিশালী মাছের স্বাদ জীবনে কখনো ভুলবো না।

আমাদের গ্রামে প্রতিটি বাড়ির পেছনেই পুকুর।সব বাড়িতে একদঙ্গল বাচ্চাকাচ্চা। কে কাকে দেখে রাখে?বাবা তাই ছোট বয়েসেই আমাকে সাঁতার শিখিয়ে ফেললেন। আমাদের পুকুরে পাকা ঘাট ছিলনা।কখনো গাছের গুড়ি কখনো বাঁশ দিয়ে বানানো ঘাট ব্যবহার করা হতো।আমার বয়স যখন চার,পাঁচ কিংবা ছয় বাবার সাথে গোসলে যেতাম।তার হাত ধরে ধরে ডুব দিতাম।মাও নিয়ে যেত,কম পানিতে দাঁড়িয়ে গোসল করতে হতো।বাবা আমাকে ধরে ধরে পানিতে ভেসে থাকা শেখালেন। তারপর ভেসে ভেসে হাত পা ছোড়া।এমন সময় বাবা পেটের নিচ থেকে হাত সরিয়ে নিলেই হুস করে ডুবে যেতাম।হাবুডুবু খেয়ে নাকমুখ দিয়ে পানি ঢুকে পড়ত।তখনি আবিষ্কার করেছিলাম নাক দিয়ে পানি ঢুকলে বেশ জ্বালা করে। এইসময় বাবা আমাকে পিঠে করে গভীর পানিতে নিয়ে যেতেন।তিনি ভেসে থাকতেন আমি তার গলা জড়িয়ে পা ছুড়ে সাঁতার দেয়ার চেষ্টা করতাম। এভাবেই একসময় ভেসে ভেসে হাতপা ছুড়ে সামনে আগানো শিখে গেলাম।এবার বাবা আমাকে একা ছেড়ে দিতে লাগলেন।একদম কম পানিতে হাতপা ছুড়ে নিজে নিজেই সাঁতার কাটলাম কিছুদিন।বাবা সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন।এরপর থেকে একটু একটু করে বেশি পানিতে যেতাম সাহস করে।এভাবে দেড় দুই মাসের মধ্যেই আমি সাঁতার শিখে গেলাম ভাল মতো।এরপর আর আমাকে পায় কে?প্রথমে বাবা-মা ছাড়া পুকুরে যাওয়া বারন ছিল।কিন্ত একসময় আমি হয়ে গেলাম পানির পোকা।মা-বাবা ছাড়াও সুযোগ পেলেই পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়তাম।দিনের বেলা বৃষ্টি এলে বৃষ্টিতে ভিজে,কাদাপানিতে ঝাঁপাঝাপি করে সমবয়েসীদের সাথে পুকুরে নেমে গোসল করতাম।বড়রা এসে বকাঝকা দিয়ে উঠাতো পুকুর থেকে।পানিতে ডুবে যাতে মারা না যাই এজন্য আমার দূরদর্শী বাবা অনেক ছোট বয়েসেই আমাকে সাঁতার শিখিয়েছিলেন।আমার বয়েসীদের মধ্যে আমিই মনেহয় প্রথম সাঁতার শিখেছিলাম।

বর্ষাকালে মাঝেমধ্যে বাবার সাথে আমি আর মা মাছ ধরতে নেমে যেতাম।তারপর পুকুরে গোসল। গোসল শেষে কাপড় পালটানোর পর বাবা তার চুল ব্যাক ব্রাশ করে আঁচড়াতেন।আমার ছোট ছোট চুলও ঠিক তার মত ব্যাকব্রাশ করে আঁচড়ে দিতেন।মা গরম ভাত - তরকারি বা খিচুড়ি- ডিম বেড়ে দিতেন পাতে।সেগুলো খেয়ে কাঁথামুড়ি দিয়ে বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে ঘুম নেমে আসত চোখে।মাঝে মাঝে ভাবি স্বর্গটা কি খুব বেশি দূরে ছিল সেই সময়?



ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫২

হু বলেছেন: বাহ্ বেশ ভালো লিখেছেনতো ..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.